Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
ধারাবাহিক উপন্যাস, পর্ব ২৮
Bengali Literature

মায়া প্রপঞ্চময়

ওর জীবনে ওলট-পালট শুরু হল তার পর থেকেই। বা অন্য অর্থে অন্নু কাকতালীয় ঘটনাগুলোকে কো-রিলেট করতে শুরু করল তখন থেকেই।

কানাইলাল ঘোষ
শেষ আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০২০ ০০:০৫
Share: Save:

পূর্বানুবৃত্তি: জ়ুলজি ডিপার্টমেন্টে জুনিয়র ফেলো হিসেবে যোগ দিয়েই সকলের আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে উঠেছিল অনিকেত। বিশেষ করে অন্নুর মন্তব্যে মুখের মতো জবাবও যে সে দেবে, তা কারও ভাবনার মধ্যে ছিল না। অন্নুর সঙ্গে তার মুখোমুখি তরজা বাধে এক বিতর্কসভায়। প্রেমই মহান— এই বিষয়ের পক্ষে ছিল অন্নুর দল, বিপক্ষে অনিকেত। ফলাফল প্রত্যাশিতই ছিল। কিন্তু সবাইকে অবাক করে প্রেমের বিপক্ষে যুক্তির ঝড় তোলে অনিকেত। অন্নুর মনের মতো হোক বা না হোক, অনিকেতের যুক্তি সে কাটতে পারে না...

সমবেত করতালির মধ্যে বিচারকদের রায়ে বিপক্ষ দল বিজয়ী হল, অন্নুর না-পসন্দ হলেও। তবে ও মনে-মনে মানতে বাধ্য হল যে, ছেলেটার কথার বাঁধুনি আছে, বাংলা ছাড়াও সংস্কৃত সাহিত্যে কিছুটা দখল আছে, নেই শুধু সৌজন্যবোধ আর মানবিক গুণগুলো। ও যেন প্রতিজ্ঞা করেছে যে, স্বাভাবিক মানুষের মতো ভাবনাচিন্তা, আচার-ব্যবহার ও করবে না। হয়তো ওর জীবনেও অন্নুর মতোই কোনও ট্র্যাজেডি আছে। এমন কিছু, যা ও কারও সঙ্গে শেয়ার করতে চায় না বা পারে না। তবে এটা মানতেই হবে যে, স্রেফ যুক্তি আর উপমা দিয়ে আধ ঘণ্টার একটা হেরে-যাওয়া ম্যাচকে সোয়া এক ঘণ্টার একটা উপভোগ্য আলোচনায় বদলে দেওয়ার কৃতিত্ব কিন্তু ওই অ-সামাজিক, আনইম্প্রেসিভ ছেলেটারই। ওই দিন থেকে অন্নুর মনে মানিক সম্বন্ধে একটা মিশ্র অনুভূতি তৈরি হল। এক বার মনে হচ্ছিল ছেলেটা একটা বিগড়ে-যাওয়া দুষ্প্রাপ্য মেশিন, সঠিক হাতে পড়লে একটা দারুণ কাজের জিনিস হতে পারত। আবার তার পরই মনে হচ্ছিল, এ-ই ওকে বার বার অপদস্থ করেছে, এমনকি আজও ওর প্রায়-জেতা প্রতিযোগিতা নাকের ডগা থেকে ছিনিয়ে নিয়ে গেল। সুতরাং নো কম্প্রোমাইজ় উইথ অনিকেত ওরফে মানিক ওরফে বাবা শুকদেব পরমহংস!

ওর জীবনে ওলট-পালট শুরু হল তার পর থেকেই। বা অন্য অর্থে অন্নু কাকতালীয় ঘটনাগুলোকে কো-রিলেট করতে শুরু করল তখন থেকেই। মানিকের সঙ্গে সংঘাত না হলে হয়তো ও ভাবে ভাবতই না দুর্ঘটনাগুলোকে। সে বার সেপ্টেম্বরের শেষে এক বান্ধবীর বিয়ের অনুষ্ঠান ছিল পটনাতেই। বন্ধুমহলের প্রায় সবাই নিমন্ত্রিত ছিল, মনে হচ্ছিল যেন ইউনিভার্সিটিরই কোনও প্রোগ্রাম। অনেক রাত পর্যন্ত হই-হুল্লোড় করে ক্লান্ত অতিথিরা যে-যার মতো একটা করে কোণ বেছে নিয়ে একটু ঝিমিয়ে নিচ্ছিল। তখনও ভোর হয়নি, হঠাৎ করেই লোডশেডিং। তাতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু ছিল না, তবে ওকে অবাক করেছিল একটা হাত। না, বন্ধুত্বের নয়, ক্লেদাক্ত কামনার হাত! একটি মেয়ে হিসেবে সে হাতের ভাষা বুঝতে ওর অসুবিধে হয়নি। ঘন অন্ধকারে নিজেকে বাঁচানোর নীরব ধস্তাধস্তির সময় ওর হাতে ঠেকেছিল আগ্রাসনকারীর ডান হাতের ব্রেসলেট, যা ওর খুব পরিচিত। ছেলেটা ওরই দীর্ঘ দিনের বন্ধু ও সহপাঠী, আবার ওর ঘনিষ্ঠ বান্ধবী ঊর্মিমালার প্রেমিকও। একটা জোরালো থাপ্পড়ের প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল তাকে তার সীমারেখা বুঝিয়ে দিতে। মুহূর্তে কাজ হয়েছিল।

কিন্তু সেই থাপ্পড় কি ওর নিজের গালেও পড়েনি? না হলে হঠাৎ কেন মনে পড়বে মাসখানেক আগের ডিবেটে মানিকের বলা কথাগুলো? কেন এক জন বন্ধুর হাত লম্পটের হাতে রূপান্তরিত হবে? কেন এক জন প্রেমিক তার প্রেমের নিষ্ঠা আর দায়িত্ব জলাঞ্জলি দিয়ে অন্যের প্রেমিকাকে অধিকার করতে চাইবে? তা হলে কী মানিকের কথাই সত্যি— নির্বিকল্প প্রেম আসলে সোনার পাথরবাটি! ও কি ঊর্মিমালাকে জানাতে পারবে তার প্রেমিকের বিকৃত মানসিকতার কথা? ও কি পারবে বান্ধবীর স্বপ্নকে চুরমার করে দিতে?

না, পারেনি অন্নু সেই ঘটনার কথা কাউকে বলতে, এমনকি প্রীতকেও নয়। আগে হলে হয়তো করত, কিন্তু একটা হাভাতে বাউন্ডুলে ছেলে ওর ভরসা আর আত্মবিশ্বাসকে নড়িয়ে দিয়েছে তার নাতিদীর্ঘ লেকচারের মধ্যে দিয়ে। যদি প্রীত তার বন্ধুর বিরুদ্ধে বলা কথা বিশ্বাস না করে! যদি ভাবে, বন্ধুকে প্রোভোক করেছিল অন্নু নিজেই আর এখন উল্টো কথা বলছে! তার পরই মনে হয়েছিল মারাত্মক কথাটা, বলতে গেলে প্রায়ই বিষাণলাল ট্রাঙ্ককলে কথা বলে প্রীতের সঙ্গে, সকাল হতে না হতে নিশ্চয়ই ও যোগাযোগ করবে আজও এবং নিজের অ্যালিবাই এমন ভাবে তৈরি করে রাখবে যাতে সন্দেহটা অন্নুর উপরেই পড়ে। মেয়ে হয়ে জন্মানোর জন্যে এই প্রথম ওর আফসোস হয়।

এর মধ্যে ও মানিকের মুখোমুখি হয়েছে এখানে-ওখানে। অন্নু পরিচিতের ভাবভঙ্গি মুখে নিয়ে তাকালেও মানিক যেন চিনতেই পারে না ওকে, যেন আকাশে ঝুলে-থাকা ঝুল পর্যবেক্ষণ করতে করতে পাশ কাটিয়ে চলে যায়। রাগে, ক্ষোভে সারা শরীর জ্বলতে থাকে অন্নুর, মনে হয় এই ঔদাসীন্য আর অবজ্ঞার চেয়ে ওর হুল-ফোটানো কথাগুলোও বরং কম অসম্মানের। এর মধ্যে একদিন ছিল জ়ুলজি বিভাগের প্রতিষ্ঠাদিবস, সে দিনের ছোট্ট ফাংশনে মানিক একটা কবিতা পাঠ করে শোনাল, ওর প্রিয় কবি সুধীন্দ্রনাথ দত্তের কবিতা ‘সংশয়’।

সেই প্রথম ওর মানিকের মুখ থেকে কবিতা শোনা। প্রথমেই যখন আরম্ভ করল, ‘রূপসী ব’লে যায় না তারে ডাকা; কুরূপা তবু নয় সে, তাও জানি...’ তখনই অন্নুর মনে হয়েছিল আবার নতুন করে মেয়েদের লেগপুলিং শুরু করল বোধহয়। কিন্তু স্তবকের পর স্তবক তার মানসীর রূপবর্ণনা— মুখ, চুল, চোখ, স্বর, হাসি, কান্না, বুক ইত্যাদি হয়ে যখন মানিক শেষ স্তবক আবৃত্তি করল, ‘বিজয়ী মন তথাপি সেথা থামি/ মোক্ষ মাগে পরম পরাজয়ে।/ ভালো কি তবে বেসেছি তারে আমি?/ বিজ্ঞ হিয়া শিহরে তাই ভয়ে?’ তখন ভাল লাগার সঙ্গে সঙ্গে লজ্জায় ওর কান লাল হয়ে উঠল। অন্নু বাংলা ভালই বোঝে, তাই ওগুলোর প্রাপ্তবয়স্কতা ও প্রাপ্তমনস্কতা অনুধাবন করে শরীরে শিহরন জাগল— কে জানে কোন মেয়েটি ও রকম নীরস কেঠো মানুষের প্রশংসার পাত্রী! কাকে ভেবে ও কবিতাটা পাঠ করল!

এ ভাবেই দিনগুলো কেটে গেলে মন্দ হত না, কিন্তু ওর নিয়তি এ বার দ্বিতীয় চালটা চালল। পূজোর আগে কয়েকদিনের ছুটি নিয়ে প্রীত পটনা এল, সঙ্গে নিয়ে এল প্রচুর টাকাপয়সা আর আনন্দ-উল্লাসের পরিকল্পনা। পরে অন্নু আন্দাজ করেছিল, ওই বিষাণলালেরই প্ররোচনায় ওরা কয়েকটা জুটি এক রাত নিভৃতে কাটানোর জন্যে হোটেলে স্বামী-স্ত্রীর পরিচয়ে উঠেছিল। অন্নু অত্যন্ত বোকার মতো ভেবেছিল, সবার কাছে ফাঁকি দিয়ে একটা দারুণ কিছু অ্যাডভেঞ্চার হবে বোধহয়। কিন্তু মাঝরাতের পর কয়েক পেগ পেটে পড়তেই ছেলেদের স্বরূপ বেরিয়ে পড়ল। অন্য বান্ধবীরা স্বীকার না করলেও, অন্নুর আন্দাজ ওরা সে ভাবে বাধা দিতে পারেনি তাদের সঙ্গীদের। আর অন্নু প্রীতের ভোলবদল দেখে যথাসাধ্য বাধা দেওয়ার পর শেষে মরিয়া চেষ্টায় ধাক্কা মেরে মাতাল প্রেমিককে সরিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে ডবল ছিটকিনি দিয়ে বাকি রাতটুকু কেঁপে আর কেঁদে কাটিয়ে দিয়েছিল৷ হট্টগোল আর সিন ক্রিয়েটের ভয়ে প্রীত দরজা ভাঙার চেষ্টা করেনি, তবে অন্নুর ভালবাসার স্বপ্ন ভেঙে চুরমার করে দিয়েছিল চিরজীবনের মতো।

পর দিন যখন ওরা ফিরে এসেছিল নিজেদের আবাসনে, তখন কিন্তু আগের দিনের অনামিকা আর ফেরেনি। তখন তার ভালবাসার অহঙ্কার চলে গিয়েছে, টলে গিয়েছে প্রেমিকের প্রতি বিশ্বাস আর ভরসা। পড়ে আছে প্রেমের সম্পর্কের ভানটুকু, যাকে আর পাঁচ জনের চোখে স্বাভাবিক দেখানোর জন্য অভিনয় করে যেতে হবে ওকে। প্রীত হুঁশ ফেরার পর অনেক বার ক্ষমা চেয়েছে, কিন্তু ওর সেই রাতের চেহারাটা অনামিকা কী করে ভুলবে! প্রীত চলে যাওয়ার পর থেকে ওর অপেক্ষা করারও আর কোনও কারণ ও খুঁজে পায়নি। দিনের পর দিন কেটে যায়, কিন্তু তার মধ্যে আগের সহজ স্বাভাবিকতা আর ফিরে আসে না।

এ পর্যন্তও হয়তো ঠিক ছিল, কিন্তু নিয়তির পরিহাস তখনও শেষ হয়নি! সে-বছর নভেম্বর মাসের প্রথমার্ধে দিওয়ালি পড়েছিল, অনামিকা বাড়ি যায়নি। গেলেই তো মায়ের মুখোমুখি হতে হবে। মায়ের চোখে চোখ রেখে ও কথা বলবে কী করে! তার থেকে বাহানা দেখিয়ে ওর ক্যাম্পাসে থেকে যাওয়া ভাল। সায়েন্স বিভাগের গোল ঘরটাকে ঘিরে মাঝারি একটা প্যান্ডেল তৈরি হয় প্রতি বছর, সে বারও হয়েছে। সকালে স্নান করে একটা গরদের শাড়ি পরে ও যখন প্রতিমা দর্শন করতে এল, তখন মাত্র এক জনই প্যান্ডেলে রয়েছে, মনে হয় ডেকরেশনের কাজ করছে। কে সে লোকটা অনামিকা বুঝতে পারল না, কারণ প্রতিমার চার দিকে বড় একটা চতুষ্কোণ তৈরি করে পাতলা কাপড় দিয়ে আড়াল করা, তার পিছনে একটা পুরুষ মানুষের আবছা সিল্যুয়েট। তত দিনে পুরুষ সম্পর্কে অনামিকার বিতৃষ্ণা মাত্রা ছাড়িয়েছে— সব পুরুষই নারীলোলুপ, তাদের হাত থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে চলতে হবে, ব্যস!

পর্দার আড়ালে কাজ করতে থাকা লোকটির প্রতি ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় সজাগ রেখে অনামিকা প্রতিমার সামনের ফাঁকা জায়গাটায় আল্পনা দিতে বসল। মিনিট দুয়েকের মধ্যে ও কাজে ডুবে গেল। ঝুঁকে পড়ে খড়ি-গোলা আঙুলে নিয়ে আঁকছে বলে নতুন শাড়ির আঁচলটা বার বার সামনে লুটিয়ে পড়ছে আর কাজের ফাঁকে-ফাঁকে ও সেটা কাঁধের উপর দিয়ে পিছন দিকে ছুড়ে দিচ্ছে। হঠাৎই ওর মেয়েলি সহজাত অনুভূতি ওকে যেন সাবধান করতে চাইল, কোথাও যেন একটা গোলমাল হতে চলেছে! মনের কু-ডাক শুনে ও মাথা তুলে সামনে তাকাল, কাপড়ের পার্টিশনের ও ধারে ছায়ামূর্তিটা হাতের কাজ বন্ধ করে ওর দিকেই তাকিয়ে আছে মনে হচ্ছে! লোকটা কি নির্জন প্যান্ডেলে ওর একা হওয়ার সুযোগ নিতে চাইছে? ওর আশঙ্কা সত্যি প্রমাণ করে লোকটা তার হাতে-ধরা বড় একটা কাঁচির এক খোঁচায় কাপড়টা ফাঁসিয়ে ওর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল।

এক মুহূর্তের জন্য অবশ হয়ে গিয়েছিল অনামিকা সম্পূর্ণ ভিন্ন দু’টো কারণে— একে তো একা একটা মেয়ে ও, কী করে আততায়ীকে ঠেকাবে? দ্বিতীয়টা আরও অসাড় করে দিয়েছিল অনামিকার স্নায়ুতন্ত্র, কারণ ঝাঁপিয়ে পড়া সম্ভাব্য ধর্ষকটি আর কেউ নয়, স্বয়ং শুকদেব মানিকচাঁদ, যে কি না মেয়েদের ছায়ার দিকেও তাকায় না! মনে মনে আর এক বার মেয়ে হয়ে জন্মানোর ধিক্কার আর অভিশাপ দিয়েছিল নিজের ভাগ্যকে। মনে পড়ে গিয়েছিল, দিদিমার কাছে শোনা মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কালজয়ী উপন্যাসের লাইন, ‘শরীর! শরীর! তোমার মন নাই কুসুম?’ এখানেও সেই মানিক! তাকে চরম শত্রু ভেবে অপছন্দ করলেও ওর শরীরের লোভে যে মানিকের

এত নীচে নামার প্রবৃত্তি হতে পারে, এমনটা ও স্বপ্নেও ভাবেনি।

চিন্তাটা মাথায় আসতেই এক লহমায় অনামিকা নিজেকে তৈরি করে নেয়, কিন্তু মেদহীন ছিপছিপে চেহারার মানিক ওর চেয়ে বেশি ক্ষিপ্র, ও বসা অবস্থা থেকে সোজা হওয়ার আগেই মানিক চকচকে নতুন কাঁচিটা ডান হাতে ধরে বাঁ হাত দিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে। ঘৃণায় মুখ বিকৃত হয়ে ওঠে অনামিকার, তিক্ত গলায় ও বলে ওঠে, ‘‘ওঃ, পেটে-পেটে এত! এ দিকে লোককে শুনিয়ে বলা যে মেয়েরা ঈশ্বরের কী এমন অপূর্ব সৃষ্টি?’’ দু’হাতে শরীরের সমস্ত জোর এনে ধারালো নখগুলো আততায়ীর বুকে বিঁধিয়ে সজোরে টান দেয় ও। তত ক্ষণে মানিকের বাঁ হাত ঘুরে গিয়ে ওর ঝুলন্ত আঁচলটা ধরে ফেলেছে আর ডান হাতের কাঁচি পিঠের পিছনে ইঞ্চিছয়েক রেখে বাকি আঁচলটা কেটে দিয়েছে। কচ করে শাড়ি কেটে ফেলার শব্দটা অনামিকার কানে আসতেই শরীরের বাকি শক্তি একত্র করে নিজের ডান দিকে ধাক্কা দিয়ে মানিককে ফেলে দেয় ও।

অপ্রস্তুত মানিক বাঁ দিকে কাত হয়ে পড়তে পড়তে হাতের কাঁচি ফেলে দিয়ে ওর কাটা আঁচলের কাছে কাঁধ ধরে টানে, ফলে অনামিকাও সামনে হুমড়ি খেয়ে পড়ে যায়। সেই অবস্থাতেও দেখতে পায় যে মানিক একটা জ্বলন্ত প্রদীপ-সহ পিলসুজের উপরে পড়ে চাপা গলায় কাতরে উঠল। তার পরই কয়েকটা ঘটনা এক সঙ্গে নজরে আসে অনামিকার। ওর পিছন দিকে আর একটা জ্বলন্ত প্রদীপের নীচে ওর শাড়ির কাটা আঁচলের টুকরোটা দাউদাউ

করে পুড়ছে। কাপড়-পোড়ার তীব্র গন্ধ ছড়িয়ে যাচ্ছে বাতাসে। দু’হাতে ভর দিয়ে উঠে বসে মানিক ওরই দিকে তাকিয়ে আছে। তার দু’চোখে আহত বিস্ময়। ওর সাদা শার্টের বুকের মাঝামাঝি জ্বলন্ত প্রদীপের ছ্যাঁকা-লাগা দাগ আর মেঝেতে পড়ে-থাকা কিছুতে খোঁচা লেগে চোখের পাশটা কেটে গিয়ে রক্ত

গড়িয়ে নামছে। ঘোর কাটতে অনামিকার কয়েক সেকেন্ড লাগে।

মাথা ঝাঁকিয়ে চমকের রেশ কাটিয়ে অনামিকা এত ক্ষণে উপলব্ধি করে, মানিক অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে ওর উপর ঝাঁপায়নি।

(ক্রমশ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kanailal Ghosh Bengali Literature Novel
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy