পথপ্রদর্শক: ভীমরাও রামজি অম্বেডকর। ডান দিকে, জাতিভেদপ্রথার বিরুদ্ধে তাঁর অন্যতম উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ ‘অ্যানাইহিলেশন অব কাস্ট’ (ছবি: উইকিমিডিয়া কমনস)।
কানপুর স্টেশনে বসে দেবরাজ ইন্দ্র, বরুণ ও ব্রহ্মার তামাক সেবনের সময় এক কায়স্থ যাত্রীরও তামাক খেতে ইচ্ছে হয়। পদ্মযোনির হাত থেকে হুঁকা নেওয়ার জন্য হাত বাড়াতেই, ব্রহ্মা তাকে শুধোয়, “তুমি কি শূদ্র?”
উত্তরে কায়স্থ বলে, “আজ্ঞে পাঁচ জন জুটে আমাদিগকে কায়স্থ করেছিল, সম্প্রতি আমাদের ব্রাহ্মণ হবার উদযোগ হইতেছে। অনেক কাগজপত্রে আমরা ব্রাহ্মণ ছিলাম প্রমাণ হওয়ায় কলিকাতা অঞ্চলের কায়স্থরা পৈতা লইবার জন্য হাত ধুয়ে বসেছে।”
দুর্গাচরণ রায়ের ‘দেবগণের মর্ত্যে আগমন’-এ আপাত মজলিশি ঢঙের এই কথোপকথনে কায়স্থ ও ব্রহ্মার লব্জে ইংরেজ শাসনের বাংলায় সামাজিক ওঠানামার ছাপ স্পষ্ট।
বাবাসাহেব অম্বেডকরের জন্মদিনের এপ্রিল বা ‘দলিত হিস্ট্রি মান্থ’-এর এপ্রিলে দাঁড়িয়েও কি এই ওঠানামার খেলা আমাদের চোখে পড়ে? পড়ে বইকি! অবশ্য জলঅচল-এর সামাজিক বহিষ্কারের ঘটনাও শোনা যায় অহরহ। বাঁকুড়ানিবাসী শুঁড়ি সম্প্রদায়ের এক অধ্যাপক আজও তাঁর সমাজজীবনে মাঝে মাঝেই কী ভাবে নিজের অগোচরে, সবার অলক্ষ্যে ব্রাত্য হয়ে পড়েন, সে গল্প শুনেছি আমার এক দাদার কাছে। এমনিতে বাংলায় বর্ণবাদের অস্তিত্ব নিয়ে তো কোনও সংশয়ের অবকাশ নেই। সুশীল কুমার দে প্রণীত ‘বাংলা প্রবাদ: ছড়া ও চলতি কথা’ বইতে তো এ-হেন প্রবাদ আকছার মেলে— ‘কলমে কায়স্থ চিনি, গোঁফে রাজপুত/ বৈদ্য চিনি তারে, যার ওষুধ মজবুত’।
আবার ব্রাহ্মণ, কায়স্থ বা বৈদ্যদের সামাজিক চৌহদ্দির মধ্যে তথাকথিত নিম্নবর্ণের মানুষদের চলে আসার ঘটনাও ঘটেছে সমান তালে, তা সে প্রতিভা দিয়ে হোক বা বিত্ত। উনিশ শতকের শুরুর দিকে কেষ্ট মুচি, রঘুনাথ দাস, ভোলা ময়রা বা কুকুরমুখো গোরার কথা ভুললে চলবে না। জন্মসূত্রে পর্তুগিজ, হেন্সমান অ্যান্টনি ওরফে অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি ভোলা ময়রার প্রশংসায় গান বাঁধতে গিয়ে তাঁকে ভোলানাথও বলে বসেন। অবশ্য সে গানের উত্তরে গান গেয়েই ভোলা ময়রা তার পেশাগত পরিচয় খোলসা করে দেন। ভোলার কথায়, “আমি সেই ভোলানাথ নই/ আমি ময়রা ভোলা, হরুর (হরু ঠাকুর) চেলা/ বাগবাজারে রই।” শুধু কি তাই, স্বয়ং ঈশ্বর গুপ্তও এই উচ্চবর্গে জায়গা করে নেওয়া কবিদের প্রতিভা অস্বীকার করতে পারেননি। তবে এটাও জুড়েছিলেন, দেশের মুচি-মেথররা এত উঁচু দরের কবিতা লিখতে পারলে এক বার ভাবুন ভদ্রলোক কবিরা কী কবিতাই না লিখবেন! তাতে অবশ্য রঘুনাথ দাসের মতো কবিদের সামাজিক স্বীকৃতি ঠেকানো যায়নি। ব্রাহ্মণ কবি হরেকৃষ্ণ দীর্ঘাঙ্গী, ওরফে হরু ঠাকুর তাঁকে গুরু বলে মেনেছিলেন।
‘দেবগণের মর্ত্যে আগমন’-এ জাতিতে কৈবর্ত প্রীতরাম মাড় আর তার ছেলে রাজচন্দ্র মাড়ের পরিচয় পেয়ে নারায়ণ জানতে চান, “বরুণ! ইংরাজরাজ লোককে যেমন রাজা, রানী করেন, সেই সঙ্গে কি তদ্রূপ বিষয় করিয়া দেন?”
জবাবে বরুণ বলেন, “বিষয়ী লোক সৎকার্য্য করিলেই রাজা উপাধি প্রাপ্ত হন ; নচেৎ, ইংরাজরাজ কি পথের লোককে ডেকে উপাধি বিলান?” প্রীতরাম মাড়, বাবু রাজচন্দ্র বা রানি রাসমণির বিষয়সম্পত্তি বা সৎকার্য নিয়ে তো কোনও সংশয় নেই। নিমতলার মরাঘাট থেকে স্ট্র্যান্ড রোডের বাবুঘাট ও হাটখোলা ঘাট কিংবা রাসমণির দক্ষিণেশ্বরের নবরত্ন, এ সবের প্রভাবে কলকাতার উচ্চবর্ণের বাবুসমাজও এদের মান্যিগন্যি করত। ইংরেজ আমলে বিষয়ী লোকের সৎকার্য তার হিন্দু সমাজের জাতপাতের সিঁড়ি বেয়ে উপরে ওঠার অবলম্বন হয়েছে। হুতোমের নকশা-তেও তো এ ছবি চোখে পড়ে। তাঁর কথায়, “টাকা বংশগৌরব ছাপিয়ে উঠলেন। রামা মুদ্দফরাস, কেষ্টা বাগদী, পেঁচো মল্লিক ও ছুঁচো শীল কলকেতার কায়েত বামুনের মুরুব্বী ও শহরের প্রধান হয়ে উঠলো।”
যদিও তাতে সামাজিক মশকরা বা খেউড় আটকানো যায়নি। প্রীতরামের মুখের বুলি হিসেবে সমাজে চাউর হয়েছে, “দুলোল হলো সরকার,অক্কুর হলো দত্ত/ আমি কিনা থাকবো যে কৈবর্ত্ত, সেই কৈবর্ত্ত!”
উনিশ শতকের বাংলায় বিশেষত কলকাতায় উঁচু-নিচু জাতের সঙ্গে অন্য মাত্রায় যুক্ত হতে থাকে ভদ্র-অভদ্রের ধারণা। ব্রুমফিল্ড-এর ‘এলিট কনফ্লিক্ট ইন আ প্লুরাল সোসাইটি’-তে পাওয়া যাচ্ছে, ভদ্র অভদ্র বা জাত নির্ণয়ের অন্যতম মাপকাঠি ছিল কায়িক পরিশ্রমের উপর নির্ভরশীলতা। কায়িক পরিশ্রমের সঙ্গে যুক্ত থাকলে তাঁর ভদ্র বা উঁচু জাতে পরিগণিত হওয়া প্রায় অসম্ভব ছিল। ইংরেজ আমলে এর সঙ্গে যুক্ত হয় ইস্কুলের ইংরেজি শিক্ষার ধারণাও। পশ্চিমায়নের প্রভাব প্রকট হচ্ছিল প্রভাবশালী বাঙালি সমাজে। ১৮৩৪ সালে লালবিহারী দে-র বাবা তো আর সাধে তাঁকে বর্ধমানের গ্রাম থেকে এনে কলকাতার ইস্কুলে ভর্তি করাননি।
কায়িক পরিশ্রম আর ভদ্র-অভদ্রের ধারণা অবশ্য সময়ে সময়ে বদলেছে। না হলে আর উনিশ শতকের কলকাতায় জলঅচল সোনার বেনেদের ক্রমবর্ধমান প্রতিপত্তি দেখতে হয় কেন? বল্লাল সেনের হাতে যে সুবর্ণবণিকদের অধঃপতন হয়, মতিলাল শীলদের মতো প্রভাবশালীদের হাতে যে ইতিহাস ঘুরে দাঁড়ায়। যাঁর বেলঘরিয়ার অতিথিশালায় রোজ চার-পাঁচশো লোকের অন্নসংস্থানের ব্যবস্থা হত, জাতপাতের বজ্র-আঁটুনিতে বিশ্বাসী সমাজ তাঁর অন্নসেবা নিতে দ্বিধা বোধ করেছিল বলে মনে হয় না। যেমন বোধ করেনি গৌরকিশোর ঘোষের ‘জল পড়ে পাতা নড়ে’ উপন্যাসে তাঁতিসমাজের অনুকূল বিশ্বাস, মকর বিশ্বাস বা গোপাল বিশ্বাসদের অন্ন গ্রহণ করতে। গোপাল বিশ্বাসের ছেলের অন্নপ্রাশনে ব্রাহ্মণ সমাজ তাঁর বাড়ি গিয়ে অন্নগ্রহণও করেছিলেন। জাতে ওঠার জন্য গোপাল বিশ্বাসকে “বিদ্রোহ করতে হয়নি, ঘটা করে শুদ্ধি আন্দোলন করতে হয়নি, ভিক্ষুকের মতন কারোর কৃপাপ্রার্থীও হতে হয়নি... সমাজ আপনা থেকেই তাকে কোলে তুলে নিয়েছে!”
শুধু বেলঘরিয়া বা তৎকালীন পূর্ববঙ্গই কেন, নদিয়ার শান্তিপুর? কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯৫৬-৫৭ সালের ছাত্রী ইলিকা চট্টোপাধ্যায়ের গবেষণা ঘেঁটে নৃতত্ত্ববিদ নির্মলকুমার বসু দেখিয়েছেন, উনিশ শতকে শান্তিপুরের তাঁতিরা শহরের বিভিন্ন প্রান্তে মন্দির বানাচ্ছিলেন। হিতেশরঞ্জন সান্যালের ‘সোশ্যাল মোবিলিটি ইন বেঙ্গল’ বইটি তো মন্দির নির্মাণের বহু অজানা তথ্য সামনে এনেছে। ১৯২১ সালের জনগণনার আগে রাধাগোবিন্দ নাথ তাঁর কমিশনার সাহেবকে একটা বই উপহার দেন। বইটার নাম ‘বঙ্গীয় যুগি জাতি’। যুগি সম্প্রদায় একটি জার্নালও এই সময়ে প্রকাশ করেছিলেন, নাম ছিল ‘যোগী সখা’। বাংলা ১৩১৮ থেকে ১৩২৮ সনের বিভিন্ন সময়ে বহু লেখা সেই জার্নালে প্রকাশিত হয়, যার মূল দাবিই ছিল ব্রাহ্মণদের মতো পৈতে পরার অধিকার অর্জন।
বিভিন্ন সময়ে এই ওঠানামার খেলার বলি হয়েছে তথাকথিত নিম্নবর্ণের মানুষদের অনেক মুক্তমনা সিদ্ধান্তও। নমশূদ্র সম্প্রদায়ে প্রাথমিক ভাবে বিধবাদের পুনর্বিবাহ নিয়ে কোনও বিধিনিষেধ ছিল না। তবে উচ্চবর্ণের প্রভাব চড়া হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিধবাদের পুনর্বিবাহ নিষিদ্ধ হতে থাকে। বাঁকুড়ার কানিডি গ্রামে বিশ শতকের গোড়ায় তিলিদের সভা করে বিধবাবিবাহ নিষিদ্ধ করার তথ্য ছিল বাঁকুড়া থানার সাপ্তাহিক গোয়েন্দা প্রতিবেদনে। নমশূদ্র নেতা মুকুন্দবিহারী মল্লিক তাঁর সমাজের মহিলাদের ভোটাধিকারেরও তীব্র বিরোধিতা করেছিলেন!
এই সমস্যার প্রভাব পড়েছিল তথাকথিত নিম্নবর্ণের মহিলাদের জীবনেও। তাদের স্বাধীনতা আপেক্ষিক ভাবে উচ্চবর্ণের মহিলাদের তুলনায় খানিক বেশিই ছিল। আর মুদ্রার অন্য পিঠে ছিল গুমরে মরার ছবি। শর্মিলা রেগের ‘রাইটিং কাস্ট, রাইটিং জেন্ডার’ বইয়ে ভীমরাও মুনির জলসার কথা আছে। সেখানে এক যুবতী ব্রাহ্মণকন্যা তার বাবার কাছে একটাই প্রার্থনা করেছিল, তার মাথা যেন মুড়িয়ে দেওয়া না হয়, তাকে যেন তথাকথিত নিচু জাতির মধ্যে প্রচলিত দ্বিতীয় বিয়ের সুযোগ দেওয়া হয়। নিচু বর্ণের মহিলাদের সে সব স্বাধীনতা খর্ব হতে থাকে, কারণ ওঠানামার খেলায় উঠতে চাওয়ার বাসনাকে ঠেকানো যায়নি।
১৪ এপ্রিলের অম্বেডকর-এর জন্মদিন বা পশ্চিমি সভ্যতার ‘ব্ল্যাক হিস্ট্রি মান্থ’ এর ধাঁচে ‘দলিত হিস্ট্রি মান্থ’ এর সাফল্যের জন্য এই বিচ্ছিন্ন দ্বীপপুঞ্জকে এক করা প্রয়োজন। ‘দলিত’ শব্দের ধারণা যে একমাত্রিক নয়, সে সম্পর্কে অবগত হওয়া প্রয়োজন। অন্তত বাংলার ক্ষেত্রে তো বটেই। কিন্তু একই সূত্রে গাঁথার কাজ উনিশ বা বিশ শতক পেরিয়ে আজ একুশে এসেও সম্ভব হয়নি। মতুয়া, রাজবংশী, বাউরি, বাগদি, হাঁড়ি অথবা মাহিষ্য বা তিলি সম্প্রদায়ের মধ্যে কোনও সামাজিক সহাবস্থান তৈরি হয়নি।
বছর কয়েক আগেও রাজবংশী সম্প্রদায় নিয়ন্ত্রিত উত্তরবঙ্গ তফসিলি জাতি ও জনজাতি সংগঠন ১৯৭১-এর পর বাংলাদেশ থেকে আসা মূলত নমশূদ্র সম্প্রদায়ের মানুষদের নাগরিকত্ব দেওয়ার তীব্র বিরোধিতা করেন। নমশূদ্ররাও সংখ্যাতত্ত্ব বা শিক্ষার বিচারে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব দাবি করে গিয়েছেন বারবার। ‘পতাকা’ পত্রিকার ১৯১৬ সালের এক সংখ্যায় সম্পাদকীয় কলমে বলা হচ্ছে, নমশূদ্র সম্প্রদায়ের আর বিশেষ চিন্তা নেই, কারণ স্বয়ং ব্রিটিশরাই তাদের সম্প্রদায়ের পড়াশোনা না-জানা মানুষের সাহায্যে এগিয়ে এসেছে। এই লেখায় ব্রাহ্মণ সমাজের প্রতি শ্লেষ আছে, কিন্তু দলিত সমাজের ঐক্যের চিত্র অনুপস্থিত।
উনিশ শতক বা বিশ, স্বাধীনতার আগে বা পরে, দলিত সমাজের এই স্তরায়ণ একই ভাবে চলেছে। এতে ক্ষতি যা হওয়ার হয়েছে দলিত সমাজেরই, এ ক্ষতি শুধু খাতায় কলমে বাবাসাহেবের জন্মদিন পালন করে পূরণ করা সম্ভব নয়। হালফিলের সমাজেও তো এই রকম ছবি বিদ্যমান, কেনেথ বি নিয়েলসন-এর গবেষণায় দেখা যায় সিঙ্গুরের জমি আন্দোলনের লড়াইতে থাকা বেশির ভাগ জমির মালিকানাই ছিল মাহিষ্য সম্প্রদায়ের মানুষের হাতে, আর জমিজমাহীন ভাগচাষি বা দিনমজুরের কাজ করা বেশির ভাগই ছিলেন বাউরি সম্প্রদায়ের। খাতায় কলমে তো মাহিষ্য ও বাউরি দুজনেই দলিত। কিন্তু এক জনের নুন আনতে পান্তা ফুরোয়, অন্য জনের বেশ সম্পন্ন অবস্থা।
মাহিষ্যদের কথা যখন উঠলই, বীরেন্দ্রনাথ শাসমল বা সতীশচন্দ্র সামন্তের মতো নেতার কথা না বললে বৃত্ত সম্পূর্ণ হবে না। মেদিনীপুরের অসহযোগ আন্দোলনের প্রধান মুখ ও কলকাতার মেয়র হওয়ার দৌড়ে একদা নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর প্রতিদ্বন্দ্বী বীরেন্দ্রনাথ শাসমল জনগণনা কর্তৃপক্ষকে চিঠি লিখে মাহিষ্য সম্প্রদায়কে ‘ডিপ্রেসড ক্লাস’-এর অন্তর্ভুক্ত না করার অনুরোধ রেখেছিলেন। সম্ভবত এতে দলিতের তকমা এড়ানো যায়। শ্রীশাসমল উচ্চবর্ণের হিন্দুদের সমকক্ষ হওয়ার দাবিও জানিয়েছিলেন। অবশ্য তাঁর এই দাবির ভিত খুব নড়বড়ে ছিল না। সেই সমাজের আইনজ্ঞ, জমিদার বা শিল্পপতিদের সংখ্যা দেখলেই তা বোঝা যায়। তবে এ সব পরস্পরবিরোধী দাবির পরম্পরায় আলগা হয়েছে দলিত সমাজের আন্দোলনের ভিত।
অম্বেডকরের জন্মদিনের প্রকৃত সার্থকতা অর্জন করতে সবার আগে প্রয়োজন দলিত সমাজের একমাত্রিক ধারণা থেকে বেরিয়ে আসা। অনেক সময়েই জাতপাতের নাগপাশ থেকে বেরিয়ে আসতে ব্যবহৃত হয়েছে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক বা অঞ্চলভিত্তিক প্রতিপত্তি। বিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধের পাত্র-পাত্রীর বিয়ের শ্রেণিবদ্ধ বিজ্ঞাপনে চোখে পড়ে জাত্যভিমান কমবেশি সর্বত্রই বিরাজমান। যে সমমাত্রিক সমাজের স্বপ্ন আমরা দেখি, তা হয়তো সোনার পাথরবাটি। মনুবাদের যে জাতপাতের বেড়াজাল ভেঙে ফেলতে চেয়েছিলেন দলিতরা, নিজেরাই হয়তো বুঝে বা না বুঝে সে ফাঁদে পা দিয়েছেন বার বার। তাই বিজ্ঞাপনে ব্রাহ্মণ পাত্র-পাত্রী চাই বা কায়স্থ পাত্র-পাত্রী চাই-এর সংখ্যা বেশি নিশ্চয়ই। তবে প্রায়শই মাহিষ্য, তিলি, সুবর্ণবণিক বা নমশূদ্র পাত্র-পাত্রী চাওয়াও নজর টানে।
আসলে জাতপাতের মলিন পথ হেঁটে অন্য দিকে এক বার পৌঁছনো গেলেই, এই বাটে আর পায়ের চিহ্ন পড়ে না। হয়তো তাই এই গুটিকয়েক দলিত সম্প্রদায়ের আড়ালে অনুচ্চারিত রয়ে গেছে হাঁড়ি, বাগদি, ডোম বা এ-হেন বহু সম্প্রদায়ের রোজকার দিনযাপন। তবু আশায় বাঁচে চাষা... একুশ শতকে এসে রামচন্দ্র ডোমের পলিটবুরোয় স্থান পাওয়া আশা জাগায় বইকি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy