Advertisement
২০ নভেম্বর ২০২৪
ধারাবাহিক উপন্যাস  পর্ব ৪

শেষ নাহি যে

পূর্বানুবৃত্তি: দরিয়াদের পরিচারিকা রাখার মতো ক্ষমতা নেই। মা অসুস্থ হওয়ায় সব কাজ সে-ই করে। কিন্তু তার অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার ছ’মাস পর সব দায়িত্ব কাঁধে নেন সামব্রত। এই অভাবেও আনন্দ-হাসির কমতি নেই ‘বসবাস’-এ।পূর্বানুবৃত্তি: দরিয়াদের পরিচারিকা রাখার মতো ক্ষমতা নেই। মা অসুস্থ হওয়ায় সব কাজ সে-ই করে। কিন্তু তার অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার ছ’মাস পর সব দায়িত্ব কাঁধে নেন সামব্রত। এই অভাবেও আনন্দ-হাসির কমতি নেই ‘বসবাস’-এ।

ছবি: শুভম দে সরকার।

ছবি: শুভম দে সরকার।

ইন্দ্রনীল সান্যাল
শেষ আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০০:৫১
Share: Save:

মোবাইলের ঘড়ি বলছে সকাল সাড়ে আটটা বাজে। বিহান রোজ সকাল সাড়ে দশটার সময়ে ফোন করে। সকালের দিকে মেসে অনেক কাজ থাকে। ফোনে কথা শুরু করলে অফিস যেতে দেরি হয়ে যায়। বিশেষ দরকার না থাকলে রুটিন ভাঙে না দরিয়া। আজ ভাঙবে কি? বুঝতে পারছে না। এক বার সীমার সঙ্গে কথা বলবে?

দরিয়ার এই মানসিক টানাপড়েনের মধ্যে ‘বসবাস’-এর সামনে হঠাৎ গুড়ুম করে শব্দ হল, লরির টায়ার ফেটে গেলে এই রকম শব্দ হয়। চমকে উঠে কানে হাত চাপা দিল দরিয়া। ঠিক এই সময়ে রাস্তা দিয়ে একদল ছেলে হইহই করে চলে গেল। চায়ের কাপ বিছানা সংলগ্ন টেবিলে রেখে, লেপ সরিয়ে বিছানা ছাড়ল দরিয়া। দাঁড়াল জানালার সামনে। হঠাৎ কী শুরু হল!

সাম্যব্রত দরিয়ার পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। বললেন, ‘‘গণতান্ত্রিক মোর্চার ছেলেগুলো দৌড়চ্ছে কেন? বোমাটা ওরাই ফাটাল।’’

‘‘ওটা বোমা ফাটার আওয়াজ ছিল?’’ সাম্যব্রতর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল দরিয়া, ‘আমি ভাবলাম লরির টায়ার ফাটল।”

‘‘না, ওটা বোমা ফাটার আওয়াজ,’’ বললেন সাম্যব্রত।

পাড়ায় মধ্যে প্রকাশ্যে বোমাবাজি কখনও দেখেনি দরিয়া। তার ধারণা ছিল, ও সব দূরে হয়। খারাপ জায়গায় হয়। শুধু টিভির নিউজ়ে দেখা যায়। তাদের পাড়া খুব শান্ত, ভদ্র। এই পাড়ায় গুন্ডা বদমাশ নেই।

হঠাৎ দরিয়া দেখল, মুখে রুমাল বাঁধা একদল ছেলে বুধনকে ঝুপড়ি থেকে টেনে বার করে বেধড়ক পেটাতে শুরু করল। এলোপাথাড়ি কিল, ঘুষি, লাথি। যন্ত্রণায় বুধন চিৎকার করতে লাগল।

হ্যাঁচকা টান মেরে দরিয়াকে জানালার কাছ থেকে সরিয়ে সাম্যব্রত বললেন, ‘‘হাটুরে মার মারছে। লোকটা বোধ হয় বাঁচবে না।”

‘‘বুধনকাকাকে কেন মারছে ওরা?’’ বলতে বলতে দরজার দিকে দৌড়েছে দরিয়া। ‘‘লোকটা পার্টি-পলিটিক্স করে না। ওকে কেন মারবে?’’

সাম্যব্রত আটকানোর আগেই দরজা খুলে বারান্দায় চলে গিয়েছে দরিয়া। দেখছে, বুধন মাথায় হাত দিয়ে ছুটছে। চার-পাঁচ পা ছুটে গিয়ে রাস্তায় হুমড়ি খেয়ে পড়ল বুধন। সেটা দেখে দরিয়া চিৎকার করে ছেলেগুলোকে বলল, “নিরীহ মানুষকে ধরে মারিস। তোদের লজ্জা করে না?’’ মুখে রুমাল বাঁধা ছেলেটা দরিয়ার দিকে ঠান্ডা দৃষ্টিতে তাকাল। দেখে দরিয়ার পেট গুড়গুড় করে উঠল।

সাম্যব্রত মেয়ের হাত ধরে শোওয়ার ঘরে ঢুকিয়ে নিয়েছেন। দরিয়া হাঁপাতে হাঁপাতে খেয়াল করল, আশেপাশের বাড়ির দরজা জানালা ফটাফট বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। সমস্ত দোকানের শাটার নেমে যাচ্ছে ঘড়ঘড় করে। রাস্তা এখন জনহীন। পাড়ায় কোনও মানুষ আছে বলে মনে হচ্ছে না।

সাম্যব্রত নিজের শোওয়ার ঘরে ঢুকে টিভি চালিয়েছেন। নিউজ চ্যানেলে গিয়ে আঁতকে উঠে বললেন, ‘‘সে কী? কখন হল? জানতেই পারিনি!’’

সীমা টিভির দিকে তাকিয়ে উত্তেজিত হয়ে বললেন, ‘‘খুন হয়েছেন? কখন?’’

দরিয়া বাবা-মায়ের ঘরে ঢুকে টিভির দিকে তাকাল। চ্যানেলের সঞ্চালক পরিমল বলছে, ‘‘আজ সকাল সাড়ে সাতটায় রাসবিহারী অ্যাভিনিউতে মর্নিংওয়াক করার সময়ে অজানা এক আততায়ীর গুলিতে ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছে গণতান্ত্রিক মোর্চার নেত্রী মানসী বসুর শরীর। বেঙ্গল মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যাওয়ার পরে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেছেন। তাঁর মরদেহ এখনও রাখা রয়েছে বেঙ্গল মেডিক্যাল কলেজে। ময়না তদন্তের পরে দেহ তুলে দেওয়া হবে তাঁর স্বামী, গণতান্ত্রিক মোর্চার নেতা মনোজ বসুর হাতে।”

দরিয়ার মাথায় ঘুরছে মাথায় লাঠির আঘাত খাওয়া বুধনের মুখ। লোকটা হয়তো এখনও মরেনি। দরিয়া বলল, ‘‘বুধনকাকাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে কি বাঁচানো যাবে?’’

‘‘গন্ডগোলের মধ্যে বাইরে বেরোবি? পাগল হয়ে গেলি না কি?’’ মেয়ের হাত নিজের মুঠোর মধ্যে নিয়েছেন সাম্যব্রত। টিভিতে পরিমল বলছে, ‘‘মানসী দেবীর মৃত্যুসংবাদ পাওয়ার পর থেকেই বিক্ষিপ্ত হিংসার খবর আসছে। গণতান্ত্রিক মোর্চা এবং খরাজ পার্টির কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের জেরে নাকাল হচ্ছেন কলকাতার মানুষ। বিবাদীবাগ এলাকায় তিনটি মিনিবাস জ্বালিয়ে দেওয়ার পরে মিনিবাস মালিকেরা শহরের সমস্ত রুটে বাস বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে বেসরকারি বাস, সরকারি বাস, ট্যাক্সি, অ্যাপ-ক্যাব এবং মেট্রো পরিষেবা অব্যাহত আছে। এ বার আমরা চলে যাব গণতান্ত্রিক মোর্চার প্রধান, নিহত মানসী বসুর স্বামী, মনোজ বসুর কাছে। বলুন স্যর।’’

পর্দায় এখন মনোজ বসু। ষাট থেকে পঁয়ষট্টির মধ্যে বয়স। দুধসাদা ধুতি-পাঞ্জাবি পরা মানুষটির চুল অনেক দিনই সাদা। দাড়িগোঁফও পেকে গিয়েছে। সব মিলিয়ে মুখটা কদমফুলের মতো লাগছে। তিনি মাপা গলায় বললেন, ‘‘যাঁর সঙ্গে জীবনের সাতাশটা বছর এক সঙ্গে কাটিয়েছি, তিনি আমাকে ছেড়ে চলে গেলেন। সেটা আমার ব্যক্তিগত বেদনার জায়গা। নিজস্ব শোক আমি ঘরের কোণে পালন করব। কিন্তু মানসী বসু শুধু আমার পত্নীই ছিলেন না, তিনি ছিলেন গণতান্ত্রিক মোর্চার নেত্রী। বাংলার মানুষের মনে তিনি আশার প্রদীপ জ্বালাচ্ছিলেন। গত পনেরো বছর ধরে অগণতান্ত্রিক এবং স্বৈরাচারী কিশলয় পার্টি সরকার চালাচ্ছে। বিরোধী দল খরাজ পার্টি হল কিশলয় পার্টির বি টিম। কিশলয় পার্টির হাতের পুতুল। মানসী বাংলার মানুষের মনে এই ভরসা জোগাচ্ছিলেন যে এই দুই মাফিয়াগোষ্ঠীকে বাংলার মাটি থেকে চিরতরে উচ্ছেদ করা যাবে। এই দুই দলের হুলিগানদের হাত থেকে বাড়ির মেয়ে-বউদের বাঁচানো যাবে। মানসীকে খুন করে সেই আশার প্রদীপ নিভিয়ে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু চেষ্টা সফল হবে না। এই হত্যা প্রমাণ করে দিল, খরাজ পার্টি এবং তার সুপ্রিমো সুধাকর ঘোষ আমাদের ভয় পেয়েছে। তাই তারা মানুষ খুনের রাজনীতি করছে। বাংলার মানুষ এই মৃত্যুর বদলা চায়।’’

মনোজের কথা শেষ হওয়া মাত্র পাড়ায় হইহই রব উঠল। সাম্যব্রত বিরক্ত হয়ে বললেন, ‘‘কোথায় মানুষকে শান্ত হওয়ার জন্য অনুরোধ করবে! তা না, লোক খেপাচ্ছে! এ বারে গৃহযুদ্ধ বাঁধবে।’’

টিভির পর্দায় আবার পরিমল। সে বলছে, ‘‘মানসী বসুর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, হিংসা বন্ধ করতে প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।’’

সাম্যব্রত উত্তেজিত হয়ে সিগারেট ধরিয়ে হুশ করে ধোঁয়া ছেড়ে বললেন, ‘‘এক জন অন্তত সুস্থ মানুষের মতো কথা বললেন।’’

দরিয়া বা সীমা কেউই ঘরের মধ্যে সিগারেট খাওয়া নিয়ে সাম্যব্রতকে বকুনি দিল না। তাদের চোখ টিভির পর্দায় আটকে রয়েছে। টিভিতে দেখাচ্ছে কলকাতার রাস্তায় বোমাবাজির দৃশ্য। ডালহৌসি এলাকায় পর পর মিনিবাস জ্বলছে। লোকেরা ভয়ার্ত মুখে দৌড়োদৌড়ি করছে। সরকারি বাসে অসহনীয় ভিড়। এসপ্লানেড মেট্রো স্টেশনে টিকিটের জন্য লম্বা লাইন।

দরিয়া দাঁতে দাঁত চিপে রয়েছে। এই সব দৃশ্য দেখার পর থেকে তার পেটের ব্যথা বাড়তে শুরু করেছে। পুরো পেট মোচড় দিচ্ছে এখন। এই অনুভূতি আগে কখনও হয়নি। সীমাকে জড়িয়ে ধরে সে বলল, ‘‘মা, আমার খুব পেট ব্যথা করছে।’’

দরিয়ার কথা শুনে সীমা রিমোট টিপে টিভি বন্ধ করে বললেন, ‘‘কখন থেকে ব্যথা উঠেছে?’’

‘‘ভোর থেকেই। আমি ভেবেছিলাম ফুচকা খেয়ে...’’

সীমা বিরক্ত হয়ে বললেন, ‘‘তখন বললে এই ঝামেলা পোহাতে হত না। তোর বাবা টুক করে তোকে রিকশায় তুলে নিউ লাইফ মেটারনিটি ক্লিনিকে নিয়ে যেত।’’

‘‘এখন ও সব ভেবে লাভ নেই,’’ আলমারি থেকে পাজামা পাঞ্জাবি বার করে বাথরুমের দিকে এগোচ্ছেন সাম্যব্রত, ‘‘দরিয়ার শাড়ি, ম্যাক্সি আর টুকিটাকি জিনিসপত্র একটা ব্যাগে ঢুকিয়ে রেডি করা আছে। আমি ওটা নিচ্ছি। তুমি আলমারি থেকে কুড়ি হাজার টাকা আমাকে বার করে দাও।’’

দরিয়া বিছানা থেকে উঠেছে। ভাবে, মেটারনিটি ক্লিনিকে চলে গেলে ভালই হয়। সাম্যব্রতকে বাড়ি পাঠিয়ে ওখানে নিশ্চিন্তে থাকা যাবে। এই সব গন্ডগোল কিছু ক্ষণের মধ্যেই থেমে যাবে।

বাড়িতে পরার ম্যাক্সি বদলে একটা সাধারণ শাড়ি পরে নিল দরিয়া। তার উপরে চাপিয়ে নিল গরম পোশাক। কাঁধের ব্যাগ নিতে গিয়েও নিল না। বাবার কাছে টাকা থাকবে। নিউ লাইফে পৌঁছে টাকা চেয়ে নেওয়া যাবে। ব্যাগের কী প্রয়োজন? মোবাইলটা সঙ্গে থাক। মেটারনিটি ক্লিনিকে ভর্তি হয়ে যাওয়ার পরে বিহানকে ফোন করে জানিয়ে দেবে।

সাম্যব্রত ব্যাগ নিয়ে সদর দরজার সামনে গিয়ে দরিয়াকে বললেন, ‘‘আমি একটা টোটো ডাকছি। তুই আস্তে আস্তে আয়।’’ সীমা বিছানা থেকে কোঁকাতে কোঁকাতে উঠে বিপত্তারিণীর ফুল দরিয়ার আঁচলে বেঁধে বললেন, ‘‘ওখানে পৌঁছে আমাকে একটা ফোন করে দিস।’’ দরিয়া মায়ের হাতে হাত রেখে বলল, ‘‘আচ্ছা।’’ ‘‘আয়,’’ মেয়ের মাথায় চুমু খেয়ে আবার খাটে বসেছেন সীমা। হাতে নিয়েছেন টিভির রিমোট। আবার টিভিতে শুরু হয়েছে হিংসার খবর।

পাড়া থমথম করছে। রাস্তার উপরে পড়ে রয়েছে বুধনের দেহ। তার পাশ দিয়ে টোটো চালিয়ে আসছে লেডিস পিন্টু।

বছর চল্লিশের পিন্টুকে পাড়ার সবাই ‘লেডিস পিন্টু’ বলে ডাকে, কারণ তার হাবভাব মেয়েলি। লোকটা বিয়ে করেনি। দিনের বেলায় টোটো চালায় আর সন্ধেবেলা মুখে মেকআপ করে লিলুয়া স্টেশনে ঘুরে বেড়ায়। পাড়ার লোকে ওকে নিয়ে নানা কুকথা বলে।

সাম্যব্রত আর দরিয়ার সঙ্গে লেডিস পিন্টুর সম্পর্ক ভাল। ওর মোবাইল নম্বরও রাখা আছে দু’জনের কাছে। দরকারে ডেকে নেওয়া হয়। দরিয়া পিন্টুদা বলে ডাকে। সাম্যব্রত বলেন পিন্টু।

টোটো ঘুরিয়ে লেডিস পিন্টু বলল, ‘‘মরণ দশা! আজকের দিনেই ব্যথা উঠল? পার্টির ছেলেগুলো কী বিচ্ছিরি ভাবে মারপিট করছে তা জানিস? কখন কী হয়ে যায়।’’

‘‘জানি,’’ টোটোয় উঠে বলল দরিয়া,‘‘বুধন কাকাকে কী ভাবে মারল দেখেছ?’’

‘‘দেখব না আবার?’’ চোখের জল মুছে লেডিস পিন্টু বলল, “বুধনের বাড়ি বালিয়া জেলায়। বাংলায় ফুচকা বিক্রি করে দেশে সংসার চালাত। দুই মেয়ের বিয়ে দিয়েছে। বালিয়ায় গিয়ে এক সপ্তাহের বেশি থাকতে পারত না। বুধনের বৌ বলত, ‘বঙ্গাল আমার সতীন।’ সেই বাংলাই লোকটার কী অবস্থা করল দেখলি? বুধন ছিল আমার মতো। না ঘর কা, না ঘাট কা। না বাংলার, না বালিয়ার। তাই ও আমার ভাল বন্ধু ছিল। তোমরা ওকে মেরে দিলে।’’

“তোমরা মানে! তোমরা কারা?’’ জিজ্ঞেস করলেন সাম্যব্রত।

‘‘তোমরা, মানে যারা নর্মাল, তারা।’’ গলি থেকে বেরিয়ে প্রধান সড়কে পড়েছে লেডিস পিন্টু। ‘‘দেখছ না, তোমাদের মতো নর্মালরা দরজা এঁটে বাড়ির মধ্যে ঢুকে বসে আছে। এই সময় লেডিস পিন্টু না থাকলে পোয়াতি মেয়েটাকে নার্সিংহোম নিয়ে যেতে পারতে?’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy