যিনি দেশে চোগা-চাপকান পরেন, বিলেত-আমেরিকায় কোটপ্যান্ট, জনতার সামনে পাজামা পরেন আর বিদেশি প্রেসিডেন্টের সামনে দশলাখি স্যুট, তিনিই ঘ্যামা রাজনীতিক। তিনিই ঘ্যামা রাজনীতিক, যিনি পাড়ায় বুথ জ্যাম করেন, জনসভায় হাতজোড়, নির্বাচন কমিশনে শাপান্ত করেন, লোকসভায় কুস্তি। তিনি খবরের কাগজে গালি খান, আদালতে দাবড়ানি, ভোটের আগে ডুবে-ডুবে জল খান, ভোটের পরে ডিগবাজি। স্ক্যামে কাট-মানি খান, ঠাকুরঘরে কলা, বাজেটে লাভের গুড় খান আর দেশ নামক শকট-চালনায় সাক্ষাৎ সলমন খান। তিনি বেনামে শেয়ার কেনেন, কৃপা বিলিয়ে নাম, সংসদে ঘোড়া কেনেন, টাকা বিলিয়ে ভোট। আমলাদের কাছে কুর্নিশ পান, ক্যাডারদের কাছে লাল-নীল-গেরুয়া সেলাম, মোসায়েবের কাছে হাত-কচলানো পান, কন্ট্রাক্টরের কাছে কলা-মুলো। তাঁর সামনে-পিছনে কনভয় থাকে, ডাইনে-বাঁয়ে বাহুবলী, মাথার উপর ফৌজদারি মামলা আর পকেটে প্রশাসন। তিনি নির্বাচনী কেন্দ্রে মস্তানি দেখান, খবরের কাগজে তেল, কালাহান্ডিতে দরদ দেখান, টিভি চ্যানেলে দেশপ্রেম। সমালোচনা করলে বিরোধীদের দালাল বলেন, কার্টুন আঁকলে জেলে পোরেন, বিপদে পড়লে দেশবিরোধী চক্রান্তের গন্ধ পান।
দেশবিরোধিতা তাঁর চক্ষুশূল, কারণ দেশসেবাই রাজনীতিকের ধর্ম। তিনি শিষ্টপালনে ধর্মেন্দ্রসম, সেবায় ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেলপ্রতিম, সততায় সাক্ষাৎ বিভীষণ, যাঁর গায়ে কালিমালেপনের জন্য চতুর্দিকে দুষ্টচক্র সক্রিয়। তিনি মাতাল হলে তালগাছের দোষ, চুরি করলে সিবিআইয়ের, তোলাবাজি করলে সঙ্গদোষ, আর পাবলিক তাঁর কথায় বিশ্বাস করলে স্বপ্নদোষ— সবই নন্দ ঘোষের সুইস অ্যাকাউন্টে। তিনি নিজে দোষের অতীত, সর্বগুণের আকর ধর্মের ষাঁড়, নানা অবতারে ধর্মপালন করেন। ভোটের আগে তিনি কল্পতরু অবতার, ভোটের পর বাস্তববাদী। বিরোধী অবস্থায় পরিবর্তনপন্থী, অবস্থান্তরে কঠোর প্রশাসক। তিনি জমিদার হয়ে রায়ত ঠ্যাঙান, রবিনহুড হয়ে দুষ্টের দমন, কখনও ওঝা হয়ে ঝেড়ে জনসেবা করেন, কখনও সাপ হয়ে কেটে। নিজের এলাকায় তাঁর বৃহল্লাঙ্গুল অবতার, কিন্তু বেপাড়ায় গেলে ল্যাজটি সযত্নে গুটিয়ে রাখেন। তিনি স্বদেশে সিংহ, কালো পতাকা দেখালে পুলিশ লেলিয়ে ঠ্যাং খোঁড়া করে দেন, বিদেশে মূষিকাবতার, এয়ারপোর্টে সিকিয়োরিটির নামে স্ট্রিপ করতে বললে দেশের ধর্মরক্ষার্থে চুপচাপ চেপে যান। দেশের স্বার্থে সর্বত্র তিনি লোকপাল চান, কেবল নিজের দলে জোকপাল। তিনি ভোটের আগে কালো টাকা উদ্ধার করবেন বলে সুবিখ্যাত ছাতি ফুলিয়ে অঙ্গীকার করেন, জেতার পর বলেন, ও-সব কথার কথা। একে ভারতীয় মতে ইতিগজ পন্থা ও পশ্চিমি মতে সারপ্লাস মিনিং বলা হয়। যিনি সারপ্লাস মিনিং-এর বিশেষজ্ঞ, বক্তৃতায় ধূম্রজাল সৃষ্টি করেন, প্রতিশ্রুতি-রচনায় অনবদ্য, জনতাকে হুজুগ ও স্বপ্ন দেখাতে সিদ্ধহস্ত, তিনিই ঘ্যামা রাজনীতিক। ইতিগজ পন্থায় যাঁর দক্ষতা অবিসংবাদিত, রাজধর্ম পালনে যিনি অতিপটু, কেবলমাত্র সেই রাজনীতিবিদই সশরীরে ক্ষমতার স্বর্গে আরোহণ করেন, এ জন্য সফল রাজনীতিবিদের অন্য নাম ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠির।
bsaikat@gmail.com
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy