Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
Short Story

সায়াহ্নে

ছেলেটা মৈথিলী ব্রাহ্মণ। পঞ্চগৌড় ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়ের। নাম ব্রিজেশ।

রাখী নাথ কর্মকার
শেষ আপডেট: ০৮ মার্চ ২০২০ ০০:০৩
Share: Save:

আন্টিজি, কেয়া আপ মুঝে আপনা ব্যাগ দেঙ্গে?” ছেলেটা একটু ঝুঁকে পড়ে তার ডান হাতটা বাড়িয়ে দিয়েছে। বছর পঁচিশ-ছাব্বিশের সুদর্শন যুবক, মাখনের মতো মসৃণ ত্বকে রোদ্দুরের ঝিলিক। অপরিচিতের দূরত্ব ভুলিয়ে দেওয়া দৃষ্টিতে অমায়িক শিষ্টতা। এক সময় এই ধরনের সাহায্যের হাতগুলোকে পরিশীলিত হাসি আর টুকরো ধন্যবাদ-সহ অত্যন্ত ভদ্রতার সঙ্গে ফিরিয়ে দিতেন বলাকা বসু। কিন্তু আজ... আজকের রোদ্দুরটা সত্যি বড় কড়া, বড় অসহনীয়! তীব্র দহনে নেতিয়ে পড়া বারান্দার দোপাটি গাছটার মতোই তাঁর সবটুকু প্রাণশক্তি কে যেন নিংড়ে নিয়েছে। বড় বড় শ্বাস নিচ্ছিলেন তিনি। দম নিতে কষ্ট হচ্ছিল তাঁর। পেনশনের লাইনে এত ক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর ব্যাঙ্কের সামনের বাজার থেকে একটুখানি আনাজপাতি কিনতে গিয়েই বুঝেছিলেন, আজ এতটা ধকল তাঁর রোগাক্রান্ত ক্ষীণ শরীরে সইবে না। জ্বর থেকে উঠে অবধি শরীরে তেমন জুত নেই, খাবারে রুচি নেই... সব কিছুতেই এক প্রবল অনীহার বোধ আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরছিল তাঁকে। ধমনী-শিরা-স্নায়ু— সর্বত্র গভীর ক্লান্তি। এই তো সামনের রাস্তাটুকু পার হলেই তাঁদের ফ্ল্যাট। চারতলায়। সামান্য ভাড়ায় এমন ফ্ল্যাট আজকাল পাওয়া মুশকিল। তাই লিফটবিহীন চারতলা থেকে ওঠানামা করায় চূড়ান্ত অসুবিধে হওয়া সত্ত্বেও ফ্ল্যাটটা ছেড়ে যেতে চাইছিলেন না তাঁরা। কিন্তু গত সপ্তাহে সিঁড়িতে পড়ে গিয়ে পুলকেশবাবুর ডান পা ভেঙে গিয়েছে। তার পর থেকে এই সব সমস্যা যেন বিধ্বস্ত বলাকাদেবীর কাছে হঠাৎই বোঝার উপর শাকের আঁটি বলে মনে হতে শুরু করেছে।

আনাজের তিনমনি ব্যাগটা কোনও মতে ছেলেটার হাতে তুলে দিয়ে কোমরে হাত রেখে দু’মিনিট দাঁড়িয়ে দম নেন বলাকাদেবী, বলেন, “আমি ওই ফ্ল্যাটে থাকি...”

“চলিয়ে, মুঝে আপকি মদত করনে দিজিয়ে আপকো ঘর তক পঁহুছানে মে...”ছেলেটা তার হাতটা এগিয়ে দেয়। এই মুহূর্তে খড়কুটোর মতো সেই অবলম্বনটুকুই আঁকড়ে ধরেন বলাকা দেবী। হঠাৎই মাথাটা কেমন ঘুরে যায়, চোখের সামনে সব কিছু অন্ধকার হয়ে আসে...

“অব ক্যায়সে হ্যায় আন্টিজি?” দরজা খুলতেই উজ্জ্বল হাসিমুখ। দরজার সামনেটা ঝাঁট দিতে দিতে মিঠুর মা মুখঝামটা দেয়, “আর কেমন! ঠিকঠাক নাওয়া-খাওয়া না করলে এই বয়সে মানুষ আর কেমন থাকে! আজকাল সব কিছু যেন বিষ হয়ে গিয়েছে ওঁর কাছে। রাতদিন খালি ভাল্লাগে না আর ভাল্লাগে না। বলি শরিলটাকে এত হতচ্ছেদ্দা করলে সেও তো তার শোধ নেবে না কি? শরিল হল আয়নার মতো। যেমন দেখাবে, তেমনই দেখবে!”

এক ঝলক ঠান্ডা বাতাসের মতো ছেলেটা ঘরে ঢোকে। হাতে একটা ফলের প্যাকেট। সামনে টি-টেবিলের উপর সেটা রেখে অভিযোগ করে, “আপ খুদ কো কিঁউ পরেশান কর রহি হ্যায় আন্টিজি? ইউ হ্যাভ টু টেক কেয়ার অব ইয়োরসেলফ। নেহি

তো আঙ্কলজি কা দেখভাল কোন করেগা?”

বসার ঘরে ইজ়িচেয়ারে বসে পুলকেশবাবু সকালের খবরের কাগজটা উল্টেপাল্টে দেখছিলেন। কপট রাগের স্বরে বলেন, “সে কথাটাই কে ওকে বোঝায় বলো তো!” তার পর আন্তরিক ভাবে প্রশ্ন করেন, “তা বাবা তুমি কেমন আছ? সে দিন তুমি আমাদের যা উপকার করলে, তার কৃতজ্ঞতা জানানোর ভাষা নেই আমাদের...”

“নেহি নেহি! অ্যায়সা মত বোলিয়ে...” পুলকেশবাবুকে থামিয়ে দিয়ে জিভ কাটে ব্রিজেশ, “ম্যায়নে কুছ ভি নেহি কিয়া...”

“না না বাবা, তুমি যা করলে সে দিন, আজকের দিনে এ ভাবে কেউ করে না। বলাকাকে ফ্ল্যাটে পৌঁছে দেওয়া থেকে শুরু করে ডাক্তারবদ্যি, সবই তো তুমি করলে... আমি নিজে পা ভেঙে পড়ে আছি, এ সব কি আমি করতে পারতাম?”

ব্রিজেশ লাজুক হাসে। তারিফটুকু মৃদু সঙ্কোচ হয়ে তার নিটোল গালের লালিমাই বাড়ায় শুধু।

কথায়-কথায় রবিবারের সকাল বয়স্ক হয়। ছেলেটাকে ধরেবেঁধে যত্ন করে দুপুরের মাছ-ভাত খাইয়ে তবে বুকের উপর থেকে যেন জগদ্দল পাথরের বোঝা নামে বলাকাদেবীর। ছেলেটা বাঙালি নয়। তবু যেন বলাকাদেবীর মনে হয়, ওর জায়গায় একটা বাঙালি থাকলেও তার প্রতি টানটা ঠিক একই রকম হত।

ছেলেটা মৈথিলী ব্রাহ্মণ। পঞ্চগৌড় ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়ের। নাম ব্রিজেশ। ব্রিজেশ পাঠক। একটা সুবিধে হল, ছেলেটা মাছমাংস সবই খায়। এখনও পুজোপার্বণে ওদের গ্রামে পাঁঠাবলি হয়। বলির পরে সেই মাংস রান্না করে খায় ওরা, প্রসাদ হিসেবে। তবে বাঙালিদের মতো মাছ, মাংসে আলু দেয় না। বলাকাদেবী মুচকি হাসেন, সেই কারণেই মাছের ঝোলে আলু দেখে মিটিমিটি হাসছিল ছেলেটা। কথায় কথায় আরও জানা গেল, ছেলেটা চিঁড়ে-দই খেতে বড় ভালবাসে। ভালবাসে আম খেতেও। পূর্ণিয়ার কাছে দেশের বাড়ি। বাড়িতে সবাই আছে। মা-বাবা, ভাই-বোন, চাচা-চাচি... এক সঙ্গে মিলেমিশে সেই ‘বড়াঘরে’ থাকে ওরা। এই অঞ্চলে ভাড়া নিয়ে উঠে এসেছে কিছু দিন হল। শিবতলার মোড়ে একটা পত্রিকার দফতরে চাকরি করে। একা থাকে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্র্যাজুয়েশন। যাদবপুর থেকে জার্নালিজ়ম। ফলে বাংলা ভালই বুঝতে পারে, তবে বলতে পারে না।

আহা রে! বাড়িঘরদোর ছেড়ে ছেলেটা এখানে একা পড়ে রয়েছে... বলাকাদেবীর বুকের মধ্যে যেন মায়ের চিরন্তন মমতাই দানা বাঁধতে থাকে।

সাদা ক্যানভাসে জড়ো হওয়া রঙেদের মতো ধীরে ধীরে ঘন হয় ভাল লাগার মুহূর্তেরা। শিষ্টাচার আর সুন্দর ব্যবহারের গুণই এই, তার সংস্পর্শে আলোকিত হয়ে ওঠে অনন্ত অন্ধকারও। ছেলেটির স্বাভাবিক সৌন্দর্যের অলঙ্কার বোধহয় তার মিষ্টি ব্যবহার, কর্তব্যপরায়ণতা, ভদ্রতা আর দায়িত্ববোধ। পুলকেশবাবু ও তাঁর স্ত্রী ক্রমান্বয়ে অনুভব করতে থাকেন, তাঁদের নিঃসঙ্গ, ঊষর জীবনে এক ভালবাসার ফল্গুধারা হয়ে উদয় হয়েছে ছেলেটি। আট বছর হল অবসর নিয়েছেন পুলকেশবাবু। বছরখানেক আগে পথ দুর্ঘটনায় তাঁদের একমাত্র মেয়ের অপ্রত্যাশিত মৃত্যুর পর থেকেই দু’জনে সমস্ত কিছু থেকে গুটিয়ে নিয়েছিলেন নিজেদের। আশ্রয় নিয়েছিলেন শামুকের খোলের মধ্যে। উপেক্ষা করে গিয়েছিলেন সামাজিকতার ছোটখাটো যত আচার, অনাচার। চূড়ান্ত অবসাদের অতল গভীরে তলিয়ে যেতে যেতে খালি মনে হত, আর কিছুর কী প্রয়োজন! জীবনের সংজ্ঞাটাই যখন হতাশায় বদলে যায়, পথ চলাটাই যখন উদ্দেশ্যহীন হয়ে পড়ে, তখন সত্যিই কি কিছুর প্রয়োজন থাকে আর? কিন্তু অপত্যস্নেহের যে রসটুকু মনে হয়েছিল এক দিন প্রবল শোকের লেলিহান শিখায় শুকিয়ে গিয়েছে, আশ্চর্যজনক ভাবে এখন তাতেই জারিত হতে শুরু করেছে শোকগ্রস্ত বাবা-মার আপাত-নরম হৃদয়। আসলে এই বয়সে পৌঁছে মাঝে-মাঝে হঠাৎ বড় নির্ভার হতে ইচ্ছে করে। তুলোবীজের ডানার মতো। বড় ইচ্ছে করে দেনাপাওনার অঙ্কে ভুল করে খুচরো অভিমান, আবদারে কারও উপর নির্ভর করতে!

ফ্ল্যাটের বেডরুমের চৌখুপি জানলার বাইরে চারকোনা আকাশ। সীমিত, হিসেবি। তবে একটু উঁকি মারলেই চোখে পড়ে নীল-সবুজের সমাহার। পুলকেশবাবুদের এই ফ্ল্যাটের উত্তর দিকে একটু ফাঁকা জমি রয়েছে। খানকয় আম-জামের গাছ। বসন্তের রং ভাগ করে নেয় ঝুরো সবুজ। জানলার অদূরেই দোতলা ছুঁই-ছুঁই একটা জামরুল গাছ। ফ্ল্যাটের চৌহদ্দির মধ্যেই। পাতার আড়ালে থোকা থোকা, রসালো জামরুল বৈশাখী হাওয়ায় উতাল হয়ে ওঠে। ছাতারে, বসন্তবৌরি, বুলবুলি, ঘুঘু... প্রায়ই নানা ধরনের পাখি আসে এই গাছটায়। অলস বিকেলে জানালার কাছে বসে পুলকেশবাবু তাকিয়ে দেখছিলেন, সেই গাছের ডালে বসে বাদামি ডানার একটা ছিটে ঘুঘু ক্রক ক্রক করে এক নাগাড়ে মাথা নাচিয়ে ডেকে চলেছে। পাশের পাখিটা বোধহয় মেয়ে ঘুঘু। চুপটি করে বসে আছে। সাধারণত ছেলে ও মেয়ে ঘুঘুর চেহারা একই রকম হয়। পুলকেশবাবুর মনে পড়ে গেল, এমনই এক জোড়া ঘুঘু দেখে ব্রিজেশ সে দিন একটা অজানা তথ্য দিয়েছিল— ঘুঘু নাকি একই সঙ্গীর সঙ্গে সারা জীবন কাটিয়ে দেয়। অনেক কিছু জানে ছেলেটা!

“জানো, ছোট মেয়েটার জন্যে পাত্র দেখা শুরু করেছে দিদি। আমাকেও এক দিন বলছিল, ভাল পাত্রের খোঁজ পেলে জানাতে...” খাটের পাশে কর্নার টেবিলে চায়ের কাপে চা ঢালতে ঢালতে বলাকাদেবী আনকোরা নতুন গল্প শুরু করেন। গিন্নীর কথার মূল সুরটা কিন্তু ঠিক ধরে ফেলেন পুলকেশবাবু। মাথা দুলিয়ে হাসেন, “বাঁধনহীন সম্পর্কটাকে ঘুড়ির লাটাইয়ে বাঁধতে চাইছ? সেটা বোধ হয় সম্ভব নয়, শত হলেও ব্রিজেশ বাঙালি নয়...আর তা ছাড়া শুনেছি, মৈথিলী ব্রাহ্মণরা বেশ গোঁড়া হয়।”

পুলকেশবাবুর মুখের কথা কেড়ে নিয়ে বলাকাদেবী ক্ষুণ্ণ স্বরে মন্তব্য করেন, “বাঙালি না হলেই বা কী মহাভারত অশুদ্ধ হয় শুনি? ওই তো দিদির বড় মেয়ে শুভ্রার বরটা, একেবারে ধোপদুরস্ত বাঙালি। বড়দিদেরই পাল্টি ঘর। চক্রবর্তী। সে কি মেয়েটার উপর কম অত্যাচার করেছে?” তার পর চায়ের কাপে আলতো একটা চুমুক দিয়ে জানলাটার কাছে গিয়ে দাঁড়ান, “আমার কী মনে হয় জানো, এ সব জাত-বেজাতের দোষ নয়। এ হল শিক্ষার অভাব। ছোট থেকেই প্রতিটি শিশুকে শেখাতে হবে ভালবাসতে। অন্যকে সম্মান করতে। মনের মধ্যে গেঁথে দিতে হবে, পারস্পরিক ভালবাসা আর সম্মানেই এগিয়ে চলে এই পৃথিবী। আমাদের ব্রিজেশের মধ্যেও কিন্তু অনেক গুণ আছে। সরল, পরোপকারী, বিদ্যানুরাগী, ধর্মপরায়ণ...” বেশ আত্মস্থ হয়ে বলে চলেন বলাকাদেবী, “তবে আমি নিমিত্ত মাত্র, শুধু যোগাযোগটাই করিয়ে দিতে পারি। দুই পরিবারের মত হলে তবেই না!”

ফুরিয়ে আসা বিকেলের আলোয় উদ্ভাসিত স্ত্রীর তৃপ্ত মুখের দিকে তাকিয়ে অনেক দিন বাদে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন পুলকেশবাবু। এই ব্যাপারে তাঁর মতামত নিষ্প্রয়োজন বুঝতে পেরে তিনি প্রসঙ্গান্তরে যান, “তবে হ্যাঁ, ছেলেটা ফ্ল্যাট নিয়ে যা বলছিল, সেটা নিয়ে একটু ভেবে দেখলে হয়। এ ফ্ল্যাটটা এ বার ত্যাগ করার সময় এসেছে। ফ্ল্যাটমালিক অনেক দিন ধরেই বলছিলেন, তিন বছরের এগ্রিমেন্ট শেষ হয়ে তো এক বার রিনিউ করাও হয়ে গিয়েছে। এ বার ভাড়া বাড়াতে হবে। এমনিতেও এই লিফটবিহীন ফ্ল্যাটের চারতলা থেকে পৃথিবীর কাছাকাছি গিয়ে পৌঁছনো আমাদের পক্ষে ক্রমেই বেশ ঝক্কির হয়ে যাচ্ছে। তার চেয়ে চলো, ব্রিজেশ যে ফ্ল্যাটটার কথা বলল, এক বার গিয়ে দেখে আসি। একতলায় ওয়ান বেডরুম ফ্ল্যাট। লোকেশনটাও মন্দ নয়। দামটাও সাধ্যের মধ্যে। তা ছাড়া ওর প্রোমোটার বন্ধু তো আছেই। ভাবছি, তার ম্যানেজমেন্ট কনসালটেন্সির অফিসে গিয়ে দেখা করে আসব এক বার। যদি একটু কমসম করে দিতে পারে, তা হলে একেবারে কিনেই ফেলব। এ ভাবে আর কত দিন চলবে। জীবনের কথা তো কিছু বলা যায় না, আমার কিছু হলে...”

“আরে! এ তো একটা আস্ত ঘুঘু! পুলিশ অনেক দিন ধরে খুঁজছে...” থানার ওসি চৌধুরীবাবু মোবাইলের ছবিটা দেখে দাঁতে দাঁত চিপে বিড়বিড় করলেন। বড় শালিকে পাঠানোর জন্যে পুলকেশবাবু এক বার ব্রিজেশকে না জানিয়েই মোবাইলে ওর ছবি তুলে রেখেছিলেন। সেটা যে আজ এ ভাবে কাজে লেগে যাবে, তা কোনও দিন ভাবতে পারেননি তিনি।

কিন্তু যা শুনলেন, তা বিশ্বাস করতে সত্যি খুব কষ্ট হচ্ছিল। মানুষকে ফ্ল্যাট দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে লাখ-লাখ টাকা হাতানোর অভিযোগ জমা পড়েছে এই ব্রিজেশ ওরফে উপমন্যু ওরফে... এই বহু ছদ্মনামওয়ালা ছেলেটির বিরুদ্ধে!

টেবিলের এক কোণে কত ক্ষণ থম মেরে বসে ছিলেন, পুলকেশবাবু নিজেই জানেন না। চরম অসহায়তা আর রিক্ততার বোধ তাঁর মনে পাক খেয়ে উঠছিল। শুধু শুনে যাচ্ছিলেন, কী ভাবে ওঁদের মতো এমন আরও অনেক দম্পতি প্রতারিত হয়েছেন। বিশ্বাস করে ঠকেছেন। এক জনকে তো তৈরি না-হওয়া ফ্ল্যাটের রেজিস্ট্রেশনও করে দিয়েছিল ছেলেটা!

দুর্বল শরীরে টলতে টলতে রিকশার হাতলটা খামচে ধরে ফেলেন পুলকেশবাবু। আঁধারঘন সন্ধ্যায় ঘোলাটে চোখে আচ্ছন্ন ভাবে রিকশায় বসে মনে মনে শুধু স্থির করে নেন, তাঁর যা আর্থিক ক্ষতি হওয়ার হয়ে গিয়েছে। কিন্তু... এত দিন বাদে তিলে তিলে জীবনে ফেরা বলাকার দৃঢ় বিশ্বাসটাকে, অটল ভরসাটাকে আর নষ্ট হতে দেওয়া যাবে না কিছুতেই।

এই বাংলায় রোজ কতশত ছেলে তো নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। পুলিশ কি আর সবার খবর রাখে, না রাখতে পারে?

ছবি: বৈশালী সরকার

অন্য বিষয়গুলি:

Short Story Book
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy