Advertisement
২০ নভেম্বর ২০২৪
ছোটগল্প

স্বপ্ন কুহক

চোখ বুজেই এক হাতে প্যান্টের পকেট থেকে ফোন বার করে কথা সেরে ফোনটা পকেটে রেখে দিল। ফোনটা নতুন এবং দামি। সুখময় ধীরে ধীরে এগিয়ে গিয়ে দাঁড়াল তার গা ঘেঁষে। 

ছবি: দীপঙ্কর ভৌমিক

ছবি: দীপঙ্কর ভৌমিক

উপল পাত্র
শেষ আপডেট: ১৯ জুলাই ২০২০ ০০:১৭
Share: Save:

অফিস টাইমের ভিড়ে বাসটায় তিল ধারণের জায়গা নেই। পা-দানিতে কোনও রকমে পা ঠেকিয়ে সুখময় ঠেলেঠুলে ঢুকে গেল ভিতরে। হাত বাড়িয়ে টিকিট কেটে সুবিধেমতো জায়গায় দাঁড়াল। অভিজ্ঞ সন্ধানী দৃষ্টি চালিয়ে দেখে নিল, কোথায় দাঁড়ালে কাজের সুবিধে। মাঝবয়সি এক জন বাসের হ্যান্ডেল ধরে দাঁড়িয়েই ঝিমোচ্ছে। লোকটার মোবাইলটা বেজে উঠল। চোখ বুজেই এক হাতে প্যান্টের পকেট থেকে ফোন বার করে কথা সেরে ফোনটা পকেটে রেখে দিল। ফোনটা নতুন এবং দামি। সুখময় ধীরে ধীরে এগিয়ে গিয়ে দাঁড়াল তার গা ঘেঁষে।

বাস আটকে ট্রাফিক জ্যামে, লোকজন উসখুস করছে, বিরক্ত হচ্ছে গরমে। সুখময় অপেক্ষা করছে বাস ছাড়ার। সামনের লেডিজ় সিটে বসা আট-ন’ বছরের ছেলেটা তার দিকে চেয়ে আছে এক ভাবে। বাস চলতে শুরু করল। গতি একটু বাড়তেই ঠেলাঠেলি বাড়ল আর সুখময়ের হাতের আঙুল মাখনের উপর ছুরি চালানোর মতো মসৃণ ভাবে ঢুকে গেল লোকটার পকেটে। নিপুণ দক্ষতায় মোবাইল চলে এল তার হাতে। তার পর সেটা চালান করে দিল প্যান্টে বিশেষ ভাবে তৈরি পকেটে। কী আশ্চর্য, বাচ্চাটা এখনও তাকিয়ে আছে তারই দিকে! ও কি কিছু দেখল? পাশে বসা মায়ের কানে কানে কী যেন বলল। ওর মা ফিরে তাকাল সুখময়ের দিকে। এ বার নেমে পড়তে হবে। তাড়াহুড়ো করা চলবে না। নামার সময় শুনতে পেল মা বলছে, “দিদির গানের টিচার এখানে আসবেন কী করে?” যাক, তাকে তা হলে দেখেনি। স্টপেজ ছেড়ে বাসটা চলতে শুরু করতেই চলন্ত বাস থেকে টুক করে নেমে ভিড়ে মিশে গেল সুখময়।

সুখময়ের বয়স ছেচল্লিশ, দেখে মনে হয় ত্রিশ-পঁয়ত্রিশ। গ্র্যাজুয়েট, বিবাহিত। মেয়ে বুল্টি আর বৌ নিয়ে সংসার। দু’কামরার ভাড়া বাড়িতে থাকে। একটা বিস্কুটের কারখানার ম্যানেজার ছিল। কারখানা হঠাৎ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কাঠবেকার। বহু খুঁজেও কোনও স্থায়ী কাজ জোটাতে পারেনি। এ দিকে অসুখ-বিসুখ, বুল্টির পড়াশোনা, বিয়ে— খরচ অনেক। বসে থাকলে চলবে না। জমানো পয়সায় আর ক’দিন। হন্যে হয়ে কাজের সন্ধানে ঘুরতে ঘুরতে সোহরাবের সঙ্গে এক দুপুরে ময়দানে দেখা। এ লাইনের সুলুক-সন্ধান সেই দিল। ঠিক হল, চোরাই মাল বিক্রির ভার সোহরাবের আর ভাগ আধাআধি। তার কাজ শুধু মাল সাপ্লাই দেওয়া।

“কী ভাবছ বস, নেমে পড়ো কাজে...” সোহরাব বলে।

“খুব রিস্ক আছে ভাই, যদি ধরা পড়ে যাই! মেয়ে… বৌ… ইজ্জত নিয়ে টানাটানি,” সুখময় ইতস্তত করে।

“ইজ্জত নিয়ে কি ধুয়ে খাবে? আর কোথায় রিক্স নেই বলো তো! তোমার কারখানার চাকরিতে রিক্স ছিল না? সংসারটাও তো চালাতে হবে! কাজ নেই বললে পেট চলবে? না মেয়ে-বৌ শুনবে? তবে ধরা পড়লেও ভয় নেই, ছাড়ানোর সব ব্যবস্থাও আছে। তা ছাড়া... তোমার ধরা পড়ার চান্স কম।”

“কম! কম কেন?” সুখময় জিজ্ঞেস করে।

“তোমার থোবনায় এমন একটা ‘ভদ্দরলোক’ মার্কা ছাপ আছে না, কেউ তোমাকে পকেটমার সন্দেহ করবেই না। তোমার চেহারাটা আমার মতো চোয়াড়ে, লাথখোর টাইপ নয়,” হাসতে হাসতে বলেছিল সোহরাব।

সুখময় তার প্রমাণ পেয়েছিল। তখন লাইনে সবে দু’মাস। লোকাল ট্রেনে এক মহিলার পার্স সাফাই করে নামার মুখে মহিলা চেঁচিয়ে ওঠে। লোকজন ভিড় করে আসে, কিন্তু তাকে কেউ সন্দেহ করেনি। তার বদলে অন্য কাউকে বেধড়ক পিটিয়ে তুলে দিয়েছিল রেলপুলিশের হাতে। তত ক্ষণে মাল নিয়ে সুখময় হাওয়া।

দেখতে দেখতে পাঁচ বছর হয়ে গেল এ লাইনে। ধরা না পড়লেও থানায় যেতে হয়েছিল বারদুয়েক, জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দিয়েছিল পুলিশ। তাতে তার সাহস দুঃসাহসে পরিণত হয়েছে। অবস্থারও উন্নতি হয়েছে ক’বছরে। রোজ সকালে স্নান, খাওয়া সেরে বেরিয়ে যায় ‘কাজে’। রাতে ফিরে খেয়েদেয়ে শুয়ে পড়ে। সংসার মায়াই সামলায়। সবাই জানে সুখময় পুলিশে কাজ করে। ছুটির দিনে রাস্তাঘাটে ভিড় কম, কাজও কম। বাড়িতে থেকে নিজের কাজকে আরও নিখুঁত করার কথা ভাবে। ইংরেজি সিনেমা দেখে সামান্য মেকআপে নিজের চেহারা আমূল পাল্টানোর খেলায় মাতে। এর জন্য খরচাপাতি করে মেকআপের সরঞ্জামও কিনেছে।

এক বার মেকআপ নেওয়া সুখময়ের সঙ্গে বড় শালা শশাঙ্কর দেখা বাসে। শশাঙ্ক বার বার ওর দিকে তাকাচ্ছিল। শেষে কিন্তু-কিন্তু করে বলেই ফেলল, “আমাদের সুখময় না?” সুখময় খুব অবাক হওয়ার ভান করে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল শশাঙ্কর দিকে। হাতের ইশারায় জানতে চেয়েছিল তাকেই কিছু বলছে কি না। কথা বলেনি, পাছে গলার স্বরে ধরা পড়ে যায়।

“স্যরি, কিছু মনে করবেন না। আসলে আমার এক আত্মীয়ের সঙ্গে আপনার ভীষণ...” সুখময় মৃদু হেসে হাত নেড়ে ‘ঠিক আছে, ঠিক আছে’ গোছের একটা ইঙ্গিত করে নেমে গিয়েছিল সামনের স্টপে। এ বাসে আর কাজ হবে না। তবে শশাঙ্কও যে তাকে চিনতে পারেনি, তাতে সুখময় খুব তৃপ্তি পেয়েছিল সে দিন।

পান, বিড়ি-সিগারেট, গুটখা, মদ— কোনও কিছুরই নেশা নেই সুখময়ের। নেশা তার একটাই। হাতসাফাইয়ের কাজটা কী ভাবে আরও নিখুঁত করা যায়, তাই নিয়ে দিনরাত চর্চা। ফোলানো বেলুনের উপর ভিজে কাপড় বেলুন না ফাটিয়ে ব্লেড দিয়ে কাটা অভ্যেস করে। অভ্যেস করতে করতে হাত সাফাই বিষয়টাকে সে পুরো শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে যায়। নিজেকে সে এক জন সাধারণ পকেটমার নয়, শিল্পী ভাবে।

আর এই কারণেই সোহরাবের সঙ্গে তার ঝামেলা। সোহরাব তাকে পাতি পকেটমার ছাড়া কিছু ভাবে না। সুখময়ের প্রেস্টিজে লাগে। বাচ্চা এবং গরিব লোকের কেপমারি করবে না, এটা সুখময়ের নীতি। সোহরাবের ভাষায় এটা তার সতীপনা। ঝামেলার কারণ বিক্রির হিস্যা। সোহরাব নেশা-ভাঙ করে, বখরা নিয়ে অশান্তি নিত্য। সুখময়ের ভাল লাগে না। ঠিক করে, সোহরাবের সঙ্গ ছেড়ে একাই কাজ করবে। লাইনঘাট তো জানাই। শহরতলির বস্তিতে ঘরও ভাড়া নেয় চোরাই মাল, কাজের জিনিস রাখার জন্য। দরকার শুধু একটা শাগরেদ।

আর সেটা যে এত সহজে জুটে যাবে, সুখময় ভাবেনি। বজবজের বাসে সুখময় প্রথম দেখে ছেলেটাকে। হাবভাব দেখে সুখময়ের বুঝতে অসুবিধে হয়নি ছেলেটা লাইনে নতুন। ভিড়ে ঠাসা বাসটায় এক মহিলা দাঁড়িয়ে, কোলে বছরদুয়েকের বাচ্চা। বাচ্চাটার কোমরে রুপোর গোট। জামা-প্যান্টের ফাঁক দিয়ে উঁকি দিচ্ছে। ছেলেটার লক্ষ্য সেই গোট। সুখময় ছেলেটার একটু কাছ ঘেঁষে দাঁড়ায়।

একটু পরেই কোলের বাচ্চাটা আচমকা চেঁচিয়ে উঠল, আর মহিলাও “চোর! চোর!” বলে খপ করে ছেলেটার হাত ধরে বলল, “কী নিয়েছিস বল, শালা! তাই তখন থেকে এত গায়ে পড়া! হারামি!”

ছেলেটা তত ক্ষণে গোটটা পায়ের কাছে ফেলে দিয়েছে আর সুখময়ও মুহূর্তে সেটাকে পা দিয়ে টেনে চেপে রেখেছে জুতোর তলায়। তার পর সুবিধেমতো মালটা তুলে তফাতে গিয়ে নজর রাখছে ছেলেটার উপর।

ধরা পড়া অবস্থায় ছেলেটা দারুণ অভিনয় করল। ওর জামা, প্যান্ট, সার্চ করে কিছুই পাওয়া গেল না। মহিলাটিও সম্ভবত নিজের ভুল হয়েছে ভেবে চুপ করে গেল।

ছেলেটা বাস থেকে নামল, সঙ্গে সুখময়ও। তার পিছু নিয়ে খানিকটা এগিয়ে তাকে ডেকে নিল একটা ফাঁকা জায়গায়। প্রথমেই গোটটা ফেরত দিল। জিজ্ঞেস করে জানল ছেলেটার নাম তপন, মাসচারেক হল লাইনে এসেছে, একাই কাজ করে। আর সে তার সঙ্গে কাজ করতেও রাজি। তপন নাম জানতে চাইলে, সুখময় বলেছিল তার নাম রত্নাকর। লাইনে আসার পর সে এই নামটাই ব্যবহার করে। সুখময় এর বেশি কিছু জানতে চায়নি, জানাতেও চায়নি। এমনকি ফোন নম্বরও নয়। এ লাইনে পরস্পরের প্রতি নির্ভরতা যতটা, অবিশ্বাস তার চেয়েও বেশি।

তপনের বয়স কম, ঝকঝকে চেহারা, ফটাফট ইংরিজি বলে। সবচেয়ে বড় গুণ, ভাল অ্যাক্টিং করে। সুখময়ের ট্রেনিংয়ে মাস ছয়েকের মধ্যে পাক্কা খেলোয়াড় হয়ে উঠল সে। সুখময়কে সে ভালবেসে ‘রত্নদা’ বলে। দোষের মধ্যে, এক দিন কাজ করে তো এক হপ্তা কামাই। ছেলেমানুষিও আছে। এক বার একটা সোনার চেন এনে সুখময়কে বলল, “কত হতে পারে?” চেনটা ভারী, জোড়া মাছের লকেট, মাছের চোখে লাল পাথর বসানো। দেখেই সুখময়ের পছন্দ হয়েছিল মায়ার জন্য। বলেছিল, “আমায় দিবি? ষাট দেব। ঠকবি না।” হারটায় চুমু খেয়ে মুচকি হেসে বলেছিল, “সবই কি বেচা যায় রত্নদা?”

ছেলেমানুষি ছাড়া আর কী!

ক’দিন ধরেই টানা বৃষ্টি, রাস্তায় লোকজন কম, তাই কাজকাম নেই। সুখময় ভেবেচিন্তে ঠিক করেছে এ বার ছেড়েই দেবে এ লাইন। রত্নাকরের পাপের বোঝা আর সে বাড়াতে চায় না। তা ছাড়া বয়স হচ্ছে। হাত, পা, চোখ আর আগের মতো চলে না। এ দিকে বুল্টিরও বিয়ের কথা চলছে। বিয়ের পর নতুন কুটুম হবে। পুলিশে কাজ করার ভাঁওতা বেশি দিন দেওয়া যাবে না। হাতে পুঁজি মোটামুটি জমেছে। বিয়ের খরচখরচা বাদ দিয়ে যা থাকবে, তাতে চা-পাতা, গুঁড়ো দুধ, বিস্কুটের ব্যবসা শুরু করা যাবে। ছোটখাটো দোকানঘরও একটা বায়না দিয়ে রেখেছে বাজারে।

বুল্টির বিয়ের তোড়জোড় এগিয়েছে অনেকটাই। ইতিমধ্যে মায়া, তার দু’ভাই আর বৌদিকে নিয়ে ছেলেকে আশীর্বাদও করে এসেছে। ওই দিনই সুখময়ের দোকানের রেজিস্ট্রেশন নিয়ে হঠাৎ জটিলতা দেখা দেওয়ায় উকিল তাকে জরুরি তলব করেছিল কোর্টে। শশাঙ্ক আশীর্বাদের দিন পিছোতে চেয়েছিল। মায়া বলেছিল, “দাদা, মেয়ে আমাদের, আর আমরাই দিন পিছোব! ও গিয়েই বা করবে কী? তিন জনে যেতে নেই, ভাইকে সঙ্গে নাও।” সুখময়ও আর আপত্তি করেনি।

সুখময় যেতে যে তেমন ইচ্ছুক ছিল, তা-ও নয়। তার ভয়, কেউ তাকে চিনে ফেললে যদি বুল্টির পছন্দ করা পাত্র হাতছাড়া হয়ে যায়? সে এক কেলেঙ্কারি কাণ্ড হবে! শুনেছে সুখেন্দু ইঞ্জিনিয়ার, ভাল রোজগার, নিজেদের বাড়ি, তবে টালির চালের। তাতে সুখময় একটু আপত্তি তুলেছিল। মায়া ঝাঁঝিয়ে উঠে বলেছিল, “হোক টালির চাল, তবু তো নিজের বাড়ি। আমার মতো ভাড়া বাড়িতে তো মেয়েকে জীবন কাটাতে হবে না। ভাগ্যে থাকলে ওর পাকা বাড়ি হবে।” সুযোগ পেলেই মায়া তার দুর্বল জায়গায় আঘাত করে। ওকেও দোষ দেওয়া যায় না। ওর কোনও শখ-আহ্লাদই তো মেটাতে পারেনি সে। সংসারে সুখময়ের মতামতের কোনও মূল্যই নেই। তাই তার যাওয়া, না-যাওয়া দুই-ই সমান।

অক্ষয়তৃতীয়ায় ঘটা করে উদ্বোধন হল তার দোকান। পাড়ার ‘অল স্টার’ ক্লাবে মোটা টাকা ডোনেশন দিয়ে প্রেসিডেন্ট হয়েছে। ওদের কথা দিয়েছে, ব্যবসাটা দাঁড়ালে এলইডি টিভি কিনে দেবে। পাড়ায় এখন সে মাথা উঁচু করে চলে, সবার সঙ্গে কথা বলে। পুরনো বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে আবার যোগাযোগ করে। স্বপ্ন দেখে সুস্থ জীবনে ফেরার।

বুল্টির আশীর্বাদও ভাল ভাবেই মিটে গেল। নতুন শাড়ি-গয়নায় ভারী সুন্দর লাগছিল ওকে। বহু দিন পর মায়াকেও হাসিখুশি দেখাচ্ছিল। ছেলের মা-বাবা ছাড়া আরও দু’জন এসেছিল বুল্টিকে আশীর্বাদ করতে। সেই উপলক্ষে ছোটখাটো অনুষ্ঠান, আহারাদির আয়োজন ছিল। জনাকয়েক আত্মীয়, বুল্টির বন্ধুবান্ধব, প্রতিবেশী কয়েকজন নিমন্ত্রিত ছিল সে অনুষ্ঠানে। ক্লাবের ছেলেরা খাটল তাদের প্রিয় সুখদা-র জন্য। সুখময় খুশিমনে অতিথি আপ্যায়নে ব্যস্ত ছিল। শুধু ছেলের বাড়ি থেকে আসা এক জন তার খুশিতে একটু চোনা ফেলেছিল। লোকটা বার বার তার দিকেই তাকাচ্ছিল। দৃষ্টিটাও কেমন যেন অস্বস্তিকর। লোকটা কে? সে কি কোনও ভাবে চিনে ফেলেছে তাকে?

রাত গভীর। মেয়েকে নিয়ে মায়া ঘুমিয়ে আছে পাশের ঘরে। ওর মুখে গভীর পরিতৃপ্তির ছাপ। নতুন জীবনের স্বপ্নে বিভোর বুল্টিও ঘুমোচ্ছে নিশ্চিন্তে। নিশ্চিন্তে ঘুমনোর কথা তো সুখময়েরও। তার নতুন কারবার মোটামুটি দাঁড়িয়ে গিয়েছে। ব্যবসা বাড়াতে লোনের বন্দোবস্তও হয়েছে ব্যাঙ্কের সঙ্গে। ক’দিন বাদেই মেয়ের বিয়ে। তার সমস্ত জোগাড়যন্ত্র, কেনাকাটা শেষ। নিমন্ত্রণপত্রও বিলি হয়ে গিয়েছে।

তবু ঘুম নেই সুখময়ের চোখে। একটা দুর্ভাবনা অস্থির করে তুলেছে তাকে। ‘তবে কী… তবে কী…?

না, না… তা কী করে হয়…’ যত ভাবছে, ভাবনার চোরাবালিতে তলিয়ে যাচ্ছে ক্রমশ সুখময়। পাগলের মতো সে পায়চারি করছে ঘরে, একা। ওর সমস্ত সুখ, শান্তি, ঘুম কেড়ে নিয়েছে আশীর্বাদে পাওয়া বুল্টির ওই সোনার চেনটা— তাতে বসানো জোড়া মাছের লকেট। আর মাছের চোখে বসানো লাল পাথর প্রায়ান্ধকার ঘরেও জ্বলজ্বল করছে।

অন্য বিষয়গুলি:

short story upal gupta
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy