Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
ধারাবাহিক উপন্যাস, পর্ব ২৪
Novel Series

মায়া প্রপঞ্চময়

স্যরকে ঘিরে রেখে ছেলেগুলো ছোট্ট একটা রিং তৈরি করে অফিসের গেট পর্যন্ত পৌঁছে দিয়ে গেল।

কানাইলাল ঘোষ
শেষ আপডেট: ১৫ মার্চ ২০২০ ০০:০১
Share: Save:

পূর্বানুবৃত্তি: বান্দোয়ান মোড়ে এক কাঠ-মাফিয়ার ট্রাককে ধরে ফেলেন বোসস্যর। কিন্তু সামনের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে শুরু হয় রাজনীতি। জনগণকে খেপিয়ে তোলা হয় বোসস্যরের বিরুদ্ধে। থানার দারোগাবাবু সশস্ত্র কনস্টেবলদের নিয়ে এলেও স্থানীয় শক্তির বিরুদ্ধে কিছুই করতে পারলেন না। আর এক ধূর্ত কর্মকর্তা অবিনাশ ব্যানার্জি সরাসরি বোসস্যরের নামে কিছু মিথ্যে কথা বলে ক্ষিপ্ত জনতাকে ইন্ধন জোগায়। সকলে ঝাঁপিয়ে পড়ে বোসস্যরের উপর...

স্যরকে এ বার অনেকটা নরম মনে হল। একটু ক্ষণ ভেবে বললেন, ‘‘সেই জন্য আপনারা রিস্ক নিয়ে ওই ভাবে মারমুখো জনতার মধ্যে থেকে একটা কভার তৈরি করে আমাকে বার করে আনলেন? আমি তো আপনাদের ভাল করে চিনি না, আপনারাও আমাকে জানেন না ঠিকঠাক বলতে গেলে... একটা অচেনা বাইরের লোকের জন্যে...’’ কথা শেষ করার আগেই দলের সর্দার-টাইপের ছেলেটা বলল, ‘‘স্যর, আমরা তো সারা দিনই এই মোড় আর দোকান নিয়েই থাকি, সব কিছুই দেখি-শুনি। আপনি এসে অবধি কী করেছেন আর আজ কী করলেন, কিছুই আমাদের নজর এড়ায়নি। এই সিস্টেমে থেকে আপনি যা করতে পেরেছেন, সেটাই অনেক। দলপত সিংয়ের মালে হাত দেওয়ার সাহস এ পর্যন্ত কোনও সরকারি অফিসার দেখায়নি। মনে হয় না এত কিছুর পর ও আর এই কাঠ নিয়ে যেতে পারবে! আপনি এ বার আপনার ঘরে যান, হয়তো রাতে অ্যাটাক হতে পারে আপনার উপর। কারণ প্রথমেই তো আপনি খালাসি ছেলেটাকে আপনার কাস্টডিতে নিয়েছেন। দেখুন না, কী হয় এর পর! ওকে ছাড়ানোর জন্যে ওরা অনেক দূর যেতে পারে।’’

স্যরকে ঘিরে রেখে ছেলেগুলো ছোট্ট একটা রিং তৈরি করে অফিসের গেট পর্যন্ত পৌঁছে দিয়ে গেল। স্যর কোলাপসিবল গেটের তালা খুলে ভিতরে ঢুকে ডবল তালা লাগানোর পর বেন্দা অনেকটা নিশ্চিন্ত হল। ছেলেগুলোর জন্যে স্যরের গায়ে আঁচড়টুকু পর্যন্ত লাগেনি। জানলা দিয়ে উঁকি মেরে ও দেখল, ঘরে ঢুকে স্যর মোমবাতি জ্বাললেন। অত রাতে আর হ্যাজাক জ্বালানোর ঝামেলা করার মানে হয় না। অনেকটা জল খেয়ে এক বার ভিতরের ঘরটাও দেখলেন, যেখানে ক্লিনার ছেলেটাকে রাখা হয়েছে। ভয়ে, দুশ্চিন্তায় ছেলেটা তত ক্ষণে ঘুমিয়ে পড়েছিল। স্যর তার পর স্ট্রংরুম খুলে দুটো ডবল-ব্যারেল আর দুটো সিঙ্গল-ব্যারেল গান বার করে আনলেন, সঙ্গে কার্ট্রিজের মাঝারি সাইজ়ের স্টিলের বাক্সটা। এ সবই বেন্দা চেনে, কেন না মাসে এক বার স্যর ওকে আর এক জন বিটবাবুকে নিয়ে গুলি-বারুদের হিসেব মেলান, আর বন্দুকগুলোও পরিষ্কার করিয়ে রাখেন। এখন উনি বাছাই করে ছ’টা হেভি কার্ট্রিজ চারটে বন্দুকে লোড করলেন, আরও অন্তত ডজন দেড়েক ফ্রেশ কার্ট্রিজ টেবিলে খাড়া করে সাজিয়ে রাখলেন, পাশে চারটে লোডেড গান।

শেষে হাতি তাড়ানোর জন্যে যে দু’টো ফ্ল্যাশ লাইট সদ্য আনা হয়েছে পুরুলিয়া ডিএফও অফিস থেকে, সে দু’টোকে টেবিলে রেখে স্যর একটা চেয়ার টেনে বসলেন। টাইমিংটা খুব পারফেক্ট হয়েছিল বলে মনে হল বেন্দার, কেন না এর পরই কম্পাউন্ডের গেট শব্দ করে খুলে অনেক মানুষের আসার আওয়াজ পাওয়া গেল। বেন্দা চট করে ঘুরে অফিসের পাশের দিকে চলে এল, জায়গাটা ঘন অন্ধকারে ঢাকা। অন্য সময় অল্প-অল্প দেখা যায় এ-বাড়ি ও-বাড়ির জানলা দিয়ে ছিটকে-আসা আলোয়, আজ কোনও বাড়িতেই আলো জলছে না৷ এমনিতেই বান্দোয়ানে ইলেকট্রিসিটি আসেনি, ফলে রেঞ্জ অফিসের হ্যাজাক আর স্টাফ-কোয়ার্টারগুলোর কেরোসিন-ল্যাম্পের আলোই ভরসা সন্ধের পর থেকে। আজ হয় কম্পাউন্ডের স্টাফরা বাড়ি ছেড়ে সাময়িক ভাবে সরে গিয়েছে বা আলো নিভিয়ে দরজা-জানালা বন্ধ করে রেখেছে, যাতে অশান্তির আঁচ না পোহাতে হয়৷

একাধিক বার বোসস্যরের কাছে উপকার না পেলে বেন্দাও কি এখানে থাকত না কি? থেকে কোনও উপকার করতে পারছে না, এমনকি স্যর যদি জানতে পারেন যে বেন্দা আশপাশে রয়েছে, তা হলে রেগে আগুন হয়ে যাবেন! সন্ধেবেলাই উনি পইপই করে বলে দিয়েছেন, স্টাফরা নিজেদের বাঁ দিক নিজেরা দেখে নিক, যেমনটা তারা রেড করার দিন করেছিল। এ লড়াইটা তাঁর নিজের লড়াই, উনি সেটা নিজের মতো করে লড়বেন। আসলে বেন্দার মনে হয়েছে, সিদ্ধান্তটা উনি স্টাফদের উপর ক্ষোভ আর অভিমান থেকে নিয়েছেন। বিপদে কেউ যে তাঁর পাশে থাকবে না সেটা যেমন উনি জানেন, তেমনই বোধ হয় আন্দাজ করে নিয়েছেন যে, লোহারবাবু- দুয়ারিবাবুর মতো লোকেরা সামান্য টাকা আর স্বার্থপূরণের জন্য ওঁর জীবনটা নিয়েও জুয়া খেলছে। তাই হয়তো উনি কারও সাহায্যই আর চান না।

লোকগুলো একেবারে কোলাপসিবল গেটের সামনে এসে গিয়েছে, ওদের চালচলনে লুকোছাপার কোনও ব্যাপার নেই। ভয়ে বেন্দার পেটের ভিতরটা গুড়গুড় করে ওঠে। এমনিতেই সারা শরীর ঘামে ভিজে আছে, নতুন করে ঘামার প্রশ্ন নেই। তবু আচমকা একটা শীতল শিহরন খেলে যায় সারা দেহে। স্যর এ বার কী ভাবে সামাল দেবেন অতগুলো বদমাশকে? গলার আওয়াজে ও বোঝে, শেঠ আর সামন্ত তো আছেই, বান্দোয়ান বাজারে মারকুটে বলে বদনাম যে দুই ভাইয়ের, সেই কাবলু আর ডাবলুও রয়েছে দলের সামনে। মোমবাতির আবছা আলোয় ওরা স্যরের চেহারার আভাস পায়। কাবলু এগিয়ে গিয়ে গেটটা ধরে ঝাঁকাতে যাবে, এমন সময় ফ্ল্যাশলাইটের তীব্র আলোর ঝলকানিতে সবার চোখ সাময়িক ভাবে ধাঁধিয়ে যায়।

জোরালো আলোটা প্রথমে আগন্তুকদের মুখের উপর পড়ে, তার পর টেবিলে সাজানো বন্দুকগুলো আর গুলির সারির উপর। স্যরকে জোরালো আলোর পিছনে ভূতুড়ে ছায়ামূর্তির মতো দেখাচ্ছে। এ বার গলা শোনা যায়, ‘‘এত রাতে সরকারি এলাকায় গুন্ডামি করতে এসেছেন? আত্মরক্ষার জন্যে গুলি চালিয়ে আমি যদি কাউকে হতাহত করি, তবে তার জন্যে আমাকে অসুবিধেয় পড়তে হবে না। বিশেষ করে থানার বড়বাবুর গায়েও অপরাধীরা হাত দিয়েছে, সেই রাগ ওঁর অবশ্যই থাকবে মনে মনে। বলেই দিচ্ছি, আমি কিন্তু ভয় দেখানোর জন্যে একটা গুলিও খরচ করব না, প্রত্যেকটা গুলির দাম উঠে আসবে। গেটে হাত ঠেকাবার দুঃসাহস করবেন না, এ বার আপনাদের মধ্যে এক জন কথা বলতে এগিয়ে আসুন। বাকিরা দশ হাত পিছনে থাকুন!’’

এখন বেন্দা বুঝতে পারে, কেন স্যর বলতেন যে ঠিকমতো প্ল্যানিং করতে পারলে এক জন লোকই একটা পুরো পল্টনকে ঠেকিয়ে দিতে পারে। বাইরের লোকগুলোর হাতে বেশ কিছু অস্ত্রশস্ত্র আছে, যার কোনওটাই কোলাপসিবল গেটের ফাঁক দিয়ে ছুড়ে লক্ষ্যভেদ করতে পারবে না। অথচ স্যর চাইলেই গেটের ফাঁকে বন্দুকের নল ঢুকিয়ে ফায়ার করতে পারবেন। বেগতিক বুঝে ওদের মধ্যে থেকে সন্দীপ এগিয়ে এল, বাকিরা পায়ে পায়ে পিছিয়ে আলোর বৃত্তের কিনারায় দাঁড়াল৷

সন্দীপ শেঠ একটু সমঝোতার সুরেই বলে, ‘‘অ্যাকটু ভেব্যে দ্যাখ্যেন স্যর! আপনি একা, আমরা অ্যাতগুলান লোক, আপনার লোকজন ত এ দিগরে নাই খ্যো! আপনি ছেল্যাটাকে ছেড়্যে দ্যান আজ্ঞা... হামরা উয়াক্যে লিয়্যেই চল্যে যাব... শপথ!’’

স্যর হাসেন, ‘‘উঁহু, সেটা হবে না। ছেলেটা আমার কাছে যেমন আছে, থাকবে। কাল সকালে ওকে নিয়মমাফিক পুলিশে হ্যান্ডওভার করব। আপনারা কালই আসবেন।’’

এ বার সামন্ত এগিয়ে আসে সন্দীপকে সরিয়ে, ‘‘আপনে কী ভেব্যেছেন কাল সকালে উয়াকে বার করল্যে আমাদের হাতে ও আস্ত থাকব্যেক? উয়ার লাশটো বান্দোয়ান-কুচিয়ার রাস্তার ধারে ঝিলের জল্যে ভাসব্যেক কিন্তু... কথাট্যো বল্যে রাখল্যম!’’

স্যর চড়া গলায় বলেন, ‘‘রাতে শয়তানদের রাজত্ব, দিনে আইনের। কালকের কথা কাল দেখা যাবে, আজ তো জেনে গেলাম যে, ছেলেটা বাইরে বেরোলে বাঁচবে না। সেই জন্যেই বিশেষ করে ওকে ছাড়া যাবে না। কথাটা বলে ভালই করলেন সামন্তবাবু, আপনাকে ধন্যবাদ।’’

এ বার ওদের নিজেদের মধ্যে খটাখটি বেধে যায়। অন্যরা সামন্তকে চেপে ধরে, পরে কী করা হবে না হবে সেটা শুরুতেই বলার কী দরকার ছিল! স্যর ধমক দেন, ‘‘নিজেদের মধ্যে যা লড়াই করার, কম্পাউন্ডের বাইরে গিয়ে করুন। এ দিক-ও দিক ঘোরাঘুরি করে আমার ধৈর্যের পরীক্ষা নেবেন না।’’

বেন্দা অবাক হয় লোকটার মনের জোর দেখে। খুব মরিয়া না হলে মানুষ কেউটে সাপের লেজ দিয়ে কান চুলকোয় না। তবে ওর মনে হয়, বাকিরাও যতটা না রেগে যাচ্ছে, তার থেকে বেশি অবাক হচ্ছে, এমনকি হয়তো কিছুটা ঘাবড়েও যাচ্ছে। মতবিরোধও চলছে নিজেদের মধ্যে।

থানার পেটা ঘড়িতে ঢংঢং করে রাত দু’টোর ঘণ্টা বাজে। বেশ খানিকটা দূরে হুড়মুড় করে অনেক ভারী ভারী জিনিসপত্র পড়ার আওয়াজ হয়। সবাই সচকিত হয়ে ওঠে, কারও বুঝতে বাকি থাকে না যে ওগুলো মোড়ের মাথায় দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকের ডালা খুলে কাঠের মোটা মোটা লগ গড়িয়ে পড়ার আওয়াজ। মিনিট পাঁচেক পরে ট্রাক স্টার্ট দেওয়া এবং ঠংঠং শব্দ তুলে হাওয়া-বিহীন চাকা নিয়ে ট্রাকটার চলে যাওয়ার শব্দও সকলের কানে আসে। সমবেত জনতার মুখ থেকে একটা হতাশার কোরাস শোনা যায়। কাঠ-মাফিয়া মুখের গ্রাস ফেলে ছ’টা টায়ার-টিউব নষ্ট হবে জেনেও যখন ট্রাক নিয়ে পালায়, তখন লড়াইটা এক রকম শেষই হয়ে গিয়েছে বলে ধরে নেয় সবাই।

এ বার সন্দীপ আর সামন্ত এক সঙ্গে এগিয়ে আসে। সন্দীপ বলে, ‘‘দ্যাখলেন ত স্যর, আপনারই জিত হল্যো, সিংজি আর এ দিগরে আসব্যেক নাই! ইবার ছোঁড়াটাকে ছেড়্যে দ্যান আজ্ঞা, বেক্যার উয়াকে জেল-জরিমানা করায়েঁ আপন্যার মত্যন ভালমানুষ কী সুখ পাবে, বল্যেন?’’

স্যর বলেন, ‘‘ছেলেটার কোনও ক্ষতি হোক, আমি সেটা চাই না। কিন্তু সামন্তবাবু একটু আগেই ছেলেটাকে মেরে ফেলার কথা বলেছেন, জেনেশুনে আমি সেটা হতে দিতে পারি না। আগে আপনারা ঠিক করুন ছেলেটাকে ঠিকঠাক বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব নেবেন, না কি সত্যিই মেরে ফেলার প্ল্যান করেছেন?’’

এ বার সামন্ত অনেকখানি জিভ বার করে কান ধরে, ‘‘হামি তো স্যর একটু হুঁকে দেখতেছিল্যম যদি কাজ হয়। আমাকে যথ্যটা বদনাম করে লোকে, তার আধাও সাচ লয়। হামি বেফজুল মাডার করি না, আজ্ঞা! আপনে ঝ্যা বলব্যেন সে ভাব্যেই কাজ করতে হামরা রাজি। ছেল্যাটাকে ছাড়ায়েঁ লিয়ে যাবার লেগ্যে।’’

বেন্দা আশ্চর্য হয়ে ভাবে, শেষ কবে সামন্তকে এমন নরম সুরে কথা বলতে শুনেছে ও! স্যর কিন্তু সুযোগটা নিতে দেরি করেন না। বলেন, ‘‘ঠিক আছে, তা হলে আমি যেমন বলছি, তেমন ভাবে আপনারা লিখে নিয়ে আসুন শেষে সবার সই করিয়ে। আপনাদের, মানে সামন্তবাবুর আর সব টিম্বার-মার্চেন্টের সই আমার চেনা, এ রকম দশ-বারো জন দায়িত্বশীল লোক সই করলেই হবে। যান তাড়াতাড়ি সেরে আসুন, অনেক কাজ পড়ে রয়েছে।’’ ওদেরকে কী লিখতে হবে সে সব উনি গুছিয়ে বলে দেন।

এর পরের ঘটনা সংক্ষিপ্ত। যেমন ভাবে চাওয়া হয়েছিল, সেই ভাবে লিখে সইসাবুদ করিয়ে ওরা রাত তিনটের সময় ছেলেটাকে নিয়ে গেল। হয়তো স্যর তখনই সিদ্ধান্তটা নিলেন, যখন বুঝলেন যে কাঠের চালানটা বন্ধ করা গিয়েছে। সেটাই ওঁর প্রথম উদ্দেশ্য ছিল। আর ট্রাকটাকেও বাজেয়াপ্ত করা গেল না, সেটা ছিল দ্বিতীয় উদ্দেশ্য। তবে এই ধরনের একটা ঘটনা ঘটে যাওয়ার ফলে অবৈধ ভাবে কাঠ পাচার করাটা এক রকম বন্ধই হয়ে গেল।

তা বলে স্যরের বিরুদ্ধে চক্রান্ত কিন্তু বন্ধ হল না, যার পুরোভাগে রয়ে গেলেন বিট অফিসার দুয়ারিবাবু। ট্রাকের ঘটনার পর লোহারবাবুর দবদবা আর নেই। ভিজে বেড়ালের মতো স্যর যা বলেন সেগুলো পালন করেন। তবে স্যর বিপদে পড়লে ওঁরও খুশির অন্ত থাকবে না। ওই ঘটনার পর স্যর যেন আরও বেশি পাগলের মতো হয়ে গিয়েছেন। ঠিকমতো নাওয়া-খাওয়া নেই, সবার কাজকর্ম চেক করে বেড়াচ্ছেন। আটটা বিট নিয়ে বিশাল জঙ্গল এলাকা, কখনও বেন্দাকে নিয়ে, কখনও একাই সর্বত্র দাবড়ে চলেছেন। মুখে একটাই বুলি— ‘‘এরা মানুষের বিশ্বাসের মর্যাদা দিতে জানে না। আর এদের কোনও ছাড় নেই, যাওয়ার আগে বিশ্বাসঘাতকতার শেষ দেখে ছাড়ব আমি!’’

বেন্দা কিছু বলতে গেলে লাল চোখে ওর দিকে তাকিয়ে থাকেন, ভয়ে ও সামনে থেকে সরে যায়। এক দিন রাগের মাথায় বলেই ফেললেন, ‘‘আমি আর কাউকে ভরসা করি না, বুঝলে বৃন্দাবন!

তুমিও হয়তো ওদেরই দলে!’’ বড় দুঃখে বেন্দা ঠিক করে ফেলল যে, সায়েবসুবোর ব্যাপারে ও আর নিজেকে জড়াবে না। সত্যিই তো, ও যে কোনও বিপদেই স্যরকে ফেলে পালায়নি, সেটা প্রমাণ করবে কী করে!

স্যর তিন জন বিট অফিসারের কাজকর্ম খুঁটিয়ে দেখলেন, যাতে কেউ বলতে না পারে যে একা দুয়ারিবাবুকেই টার্গেট করা হচ্ছে। দু’জনের কাজে সামান্য ভুলভ্রান্তি যা ধরা পড়ল সেগুলো ঠিক করে দেওয়ার জন্য এক সপ্তাহ সময় দিলেন। দুয়ারিবাবুর কাজের গলদগুলো ইচ্ছাকৃত ও মারাত্মক, স্যর ওকেও একই সময় দিলেন। বেন্দার খটকা লেগে গেল ব্যাপারটায়, মধুদাকে জিজ্ঞেস করতে চোখমুখের ভঙ্গি করে চাপা গলায় বলল, ‘‘চেপ্যে যা বেন্দা, তোর স্যর ইবার আর ফাঁদ কেট্যে বেইরোত্যে নারবেক রে! বড় জব্বর ফাঁদ বানাইছে রে বাবুরা, ইবার ফান্দে পইড়্যা বগা ক্যামন কান্দে দেখ্যে যা টুকু। বড় বড় মুনি-ঋষি ইয়াত্যে কাত হইয়্যেঁ যায় আর সেখানে...’’ এর বাইরে বেন্দা ওর কাছ থেকে একটা বাড়তি কথাও আদায় করতে পারল না। নমক খাওয়ার দোহাই দিয়ে মধুদা মুখে তালা দিয়ে রাখল।

সময় বেঁধে দেওয়ার পর থেকে দুয়ারিবাবু এক্কেবারে অন্য মানুষ। এখন স্যরের পারমিশন না নিয়ে দুপুরে ঘরে খেতে পর্যন্ত যান না।

অন্য বিষয়গুলি:

Novel Series Kanailal Ghosh
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy