ছবি: প্রসেনজিৎ নাথ
পূর্বানুবৃত্তি: বান্দোয়ান কাঠব্যবসায়ী সমিতির সেক্রেটারি সন্দীপ শেঠের আচরণে অসন্তুষ্ট রেঞ্জার অনিকেত অনুষ্ঠান ছেড়ে চলে গেলেন। অপমানিত দুয়ারিবাবু ফন্দি আঁটলেন, যাতে সব দিক থেকে অসহযোগিতা করে নতুন রেঞ্জার সাহেবকে এলাকাছাড়া করা যায়। কিন্তু কার্যকালে দেখা গেল, নতুন অনিকেতকে আলাদা করে বোঝানোর কিছু নেই, তিনি তৈরি হয়েই এসেছেন। কিন্তু ঘুরপথে সমস্যা তৈরি করলেন স্থানীয় সুশাসনিক সমিতির কর্মকর্তা, বদমেজাজি ধীরেন ধর।
অথচ একটা সময়ে এই কাজটাই অন্নুর মানসিক ভারসাম্য রক্ষা করেছিল! বিয়ের পর নতুন পরিবেশ আর পরিস্থিতিতে মানিয়ে নিতে ওর খুবই সমস্যা হচ্ছিল। কোনও কিছুর সঙ্গে অ্যাটাচমেন্ট নেই, কেবল খাও, দাও, ঘুমোও... সেজেগুজে বসে থাকো, বাড়ি থাকলে প্রীতকে সঙ্গ দাও, আর কখনও সখনও ওর বিজ়নেস-পার্টিতে গিয়ে শো-অফ করো! কেমন পাগল-পাগল লাগত নিজেকে! সেই সঙ্গে নববিবাহিত জীবনে অন্যের অজ্ঞাতে মানিকের প্রেতচ্ছায়া যখন-তখন ঢুকে পড়ছিল বেপরোয়া অনুপ্রবেশকারীর মতো। অন্নু তখন ওর স্মৃতিকে প্রেতচ্ছায়াই ভাবতে শুরু করেছিল। কারণ জোর গলায় নিজেকে মৃত ঘোষণা করে যে চলে গিয়েছে, তাকে আর কী নাম দিতে পারত অন্নু? বিবাহবাসর থেকে ফুলশয্যা, ওকে ভুলে থাকতে চাইলেও অন্নু দেখতে পেত, এক নাছোড় নীলমাছি কিংবা বোলতার মতো চারদিকে যেন ঘুরে বেড়াচ্ছে জেদি আর বেহায়া ছেলেটার স্মৃতিগুলো। সত্যি বলতে কী, প্রথম প্রথম আয়নায় নিজেকেও যেন মানিকের ফেলে-যাওয়া স্মৃতিরই একটা টুকরো বলেই মনে হত! প্রথম দিকে ও পটনায় শ্বশুরবাড়ি বা সুরাটে প্রীতের কাছে টানা বেশি দিন থাকতে পারত না। ওর অ্যানথ্রোপলজির থিসিসের কাজকর্ম শেষ হয়ে গেলেও ম্যানুস্ক্রিপ্ট লেখা, গাইডের মতামত অনুযায়ী সংশোধন, তার পর রি-টাইপ, বাঁধাই, থিসিস জমা দেওয়ার বিভিন্ন প্যারাফার্নেলিয়া ইত্যাদি নিয়ে ওকে অনেকটা সময়ই বাপের বাড়ি থেকে ইউনিভার্সিটি চষে বেড়াতে হত। কাজ মিটে যাওয়ার পরও কয়েকদিন এটা-সেটা করে সময় কাটাত আর সকলকে আভাস দেওয়ার চেষ্টা করত যে, স্রেফ গাইডের কথাতেই ওকে জোর করে থেকে যেতে হচ্ছে। না হলে বিয়ের পর কোন মেয়ে আর পুরনো প্রেমিক ওরফে নতুন স্বামীকে ছেড়ে থাকতে চায়? আসলে কিন্তু সেই সময় মনে মনে ও প্রীতের কাছ থেকে কিছুটা দূরত্ব বজায় রাখতেই চেয়েছিল।
কেন চেয়েছিল এমন? কারণটা নিজের কাছেই পরিষ্কার ছিল না। কখনও মনে হয়েছে, প্রীতকে বেশ খানিকটা ডিচ করা হয়েছে, এই অপরাধবোধ থেকে তাকে ও এড়িয়ে চলতে চেয়েছে। তার পরই মনে হয়েছে, কেন অপরাধবোধ থাকবে। অন্নু নিজে তো ভাল করেই জানে ওর মন কোন ঘটনায়, কেন দীর্ঘদিনের প্রেমিকের প্রতি বিরূপ হয়ে আর এক জনকে খুঁজে নিয়েছিল। সেই লজ্জার স্মৃতি ও আমৃত্যু মনে রাখতে বাধ্য হবে। এমনকি ওর মনের দক্ষিণের জানলা ছিল যে মানিক, তার সঙ্গেও সে সব শেয়ার করতে পারেনি।
কখনও মনে হয়েছে, মানিকের সঙ্গ আর পাবে না ও, তবু তার রেশ যতটুকু সম্ভব বাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতেও কি ওর নিজস্ব পরিসরে থেকে যাওয়ার সময়টা বাড়াতে চাইত— যদি মানিক এসে হাজির হয়!
পরক্ষণেই মনে পড়ে গিয়েছে ওকে বলে যাওয়া মানিকের বিদ্রুপাত্মক কথাগুলো, ‘‘জানো তো, মাতৃবৎ পরদারেষু... তুমি পরদার হলেই তোমাকে মাতৃবৎ ভেবে ফেলার মতো উদারতা আমার নেই, তবে একটা সময়ে পরদ্রব্য ভেবে লোষ্ট্রবৎ তোমাকে ত্যাগ করার মতো পাণ্ডিত্য আমাকে অর্জন করতেই হবে, না হলে চিরটা কালই তোমার স্মৃতির ক্রীতদাস হয়ে জীবন কাটাতে হবে আমাকে!’’
মানিক ওর ডাকে কোনও দিন কাছে এলেও ওকে আর ছোঁবে না, এটা জানা ছিল। সুতরাং ঠিক কী কারণে অন্নু ওদের দাম্পত্যজীবনের শুরুতে জড়তাগ্রস্ত হয়ে ছিল, তা এত বছর বাদে নির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব নয়। আজকাল ও আর বেশি ভাবতেও চায় না। অনেক সময় পেরিয়ে গিয়েছে। সময়ের চেয়ে বড় চিকিৎসক আর কেউ নেই। আর মানিকের নিষ্ঠুর, রুক্ষ ব্যবহার আর কথাবার্তা ওকে মানসিক দুর্বলতা কাটাতে অনেকটা সাহায্য করেছিল সে সময়। তখন তো মোবাইল, ইন্টারনেট, ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ ছিল না। ও দু’-তিনটে চিঠি দিলে একটার উত্তর আসত, কারণ মানিক তখন ভবঘুরের জীবন কাটাচ্ছে। সে সব চিঠিরই বা ভাষা কী! যেন অসমের ভূত-জোলোকিয়া লঙ্কার গুঁড়ো, যেন কেউটে সাপের বিষ-মাখানো ছুরি! বারবার ও জানতে চেয়েছে চিঠিতে, কেন ওর উপর এত রাগ মানিকের। উত্তরে মানিক লিখেছে, ‘‘ছেলে হয়ে জন্মাওনি তো, তাই এই পরিস্থিতিতে একটা ছেলের কী যন্ত্রণা, তুমি বুঝবে না। তুমি সুখী হও, আনন্দে থাকো, তাতে আমার কোনও আপত্তি নেই। শুধু তোমার কাছাকাছি হলেই কেন যেন নিজেকে বড় বোকা, বড্ড ব্যবহৃত মনে হয়! এখনও তুমি বুঝে উঠতে পারোনি, ঠিক কাকে তুমি ঠকিয়ে গেলে।’’
অন্নু ওকে বোঝাতেই পারেনি যে ও এক জন ভাল বন্ধু চেয়েছিল, যাকে ও সব কিছু খুলে বলতে পারে। এ দিকে মানিক যখন জিজ্ঞেস করেছে, ‘‘তোমার তো অনেক বন্ধু-বান্ধবী, তোমার দীর্ঘদিনের একনিষ্ঠ প্রেমিকও আছে, তোমার সুখ-দুঃখের ভাগিদার তো তাদেরকেই করতে পারতে! সবাইকে ছেড়ে আমার মতো সব দিক থেকেই অতি সাধারণ এক জনকে বাছলে কেন? আর যদি বা বাছলেই, তাকে তোমার সব সুখ-দুঃখের কথা খুলে বলতেই বা পারলে না কেন? তোমার সবটা জানলে আমি অন্তত এত বড় ভুলটা করতাম না!’’ তখনও অন্নু কোনও উত্তর খুঁজে পায়নি। কারণ মানিক নিজে থেকে এগিয়ে আসেনি এটা যেমন সত্যি, মানিককে ও চাইলেই বাধা দিতে পারত, দেয়নি— এটাও ততটাই সত্যি।
ওর মেজাজ-মর্জির হদিশ তখন প্রীতও ঠিক ভাবে করে উঠতে পারছিল না, ফলে প্রীতের সন্দেহ হয়ে থাকবে হয়তো। অন্নু নিশ্চিত ছিল না, তবে আন্দাজ করতে পারছিল যে, ওর নামে আসা কিছু চিঠিপত্র খুলে প্রীত পড়েছে, যেটা কিছু কথায় আর ব্যবহারে প্রকাশ হয়ে পড়ছিল মাঝে-মাঝে। এক দিন তো কথার পিঠে বলেই বসল, ‘‘কে তোমার এত পেয়ারের দোস্ত যে এ রকম বয়ানে তোমাকে খত লেখে? আমি সামান্য কিছু বললেই তোমার গায়ে ফোসকা পড়ে যায়! ওই ফালতু ছোকরার কথা তুমি তো বেমালুম হজম করো!’’
তখনই অন্নু ঠিক করে নেয় যে, এক বার অন্তত ওদের দু’জনকে মুখোমুখি দাঁড় করাতে হবে। ওর দেখা মানুষদের মধ্যে মানিক অন্য ধরনের বলেই ও ওই রকম ভাবে জড়িয়ে পড়েছিল। মানুষের মন পড়তে পারার অদ্ভুত দক্ষতা অন্নু মানিকের মধ্যে দেখেছিল। ওদের একটা প্রিয় খেলা ছিল নিজের নিজের ঘরে বসে পাতার পর পাতা লিখে যাওয়া। পরে ওরা লেখা হাতবদল করত। দেখা যেত কোনও আলোচনা না করেও ওরা হুবহু একই বিষয় নিয়ে প্রায় একই কথা লিখেছে। ফলে মানিক বুঝতে পারবে জেনেও ও বারবার করে লিখতে লাগল, এক বার যেন সে ওর সঙ্গে দেখা করে। সেই সঙ্গে জানাল, এমন ভাবে আর ভঙ্গিতে ও যেন চিঠি না লেখে, যা পড়ে তৃতীয় কেউ খারাপ কিছু অর্থ বার করতে পারে।
উত্তরে মানিক জানিয়েছিল, ওর মনের ভাব প্রকাশ করার ভঙ্গিই ও রকম। ভাল না লাগলে অন্নু চিঠি দেওয়া বন্ধ করতে পারে, মানিক অন্তত ওকে আর জ্বালাবে না। আর দেখা করা প্রসঙ্গে জানিয়েছিল যে, মৃতরা দূর থেকে পরস্পরের শুভকামনা করছে, এটুকুই তো ভাল উভয়ের পক্ষে।
অন্নু বুঝতে পেরেছিল, ওর বারবার আমন্ত্রণের অন্তর্নিহিত অর্থ মানিকের চোখে ধরা পড়ে গিয়েছে। প্রীতের সামনে মানিককে এনে দাঁড় করিয়ে ও যে প্রীতের সন্দেহের ভিত আলগা করতে চায়, সেটা মানিক সহজেই বুঝবে। তা সত্ত্বেও অন্নু মরিয়া চেষ্টা করেছিল সে সময়। এটা বাদে দ্বিতীয় কোনও উপায় ওর কাছে তখন আর ছিল না।
ও জেনে গিয়েছিল, ওর নিজের মনে যা-ই থাক, মানিক শুধু বন্ধু হয়ে থাকতে চাইবে না। সে রকম ক্ষেত্রে দূরে সরে যাওয়া লোকটা যদি এক বারের জন্যেও কাজে আসে, অন্তত ঘরের লোকটার পর হয়ে যাওয়া হয়তো আটকানো যাবে। মানিক তার জন্য কিছু মনে করলেও কিছু যাবে আসবে না। ওর জীবনের ছাঁচ এখন গড়া হয়ে গিয়েছে।
হঠাৎ করেই সুযোগটা এসে গিয়েছিল ওর কাছে। শেষ চিঠিতে মানিক জানিয়েছিল যে, কাজের সূত্রে ওকে বেনারস গিয়ে কয়েকদিন থাকতে হবে। কিছুটা জেদ করেই পটনা থেকে প্রীতকে নিয়ে অন্নু বেনারস হাজির হয়েছিল গঙ্গাস্নান করে শিবের মাথায় জল ঢালার জন্য। অকারণে নয়, মহাদেবের স্বপ্নাদেশ পেয়ে। অন্নু জানত যে, প্রীতরা সবাই অত্যন্ত ধর্মভীরু। সুতরাং আপত্তি করার প্রশ্নই নেই। বেনারসে সিং পরিবারের বিরাট বাগানবাড়ি গঙ্গার ধারেই। বেশির ভাগ সময় খালি পড়ে থাকে কেয়ারটেকারের তত্ত্বাবধানে। অন্নু আর প্রীত এক সপ্তাহের জন্য কাশীবাসী হল।
সকালবেলায় গঙ্গাস্নান করে মন্দিরে মন্দিরে পুজো দিয়ে বেড়ানো, অনেক বেলা পর্যন্ত মন্দিরগুলোর আশপাশেই শপিং করা, বিকেলে গঙ্গার ধারে ধারে ঘাটগুলোয় ঘুরে বেড়ানো বা বসে থাকা, তার পর সন্ধ্যারতি দেখে বাড়ি ফেরা। প্রতিদিনই এক রুটিন বাঁধাধরা, এ দিকে
হাজার লোকের মাঝে চেনা মুখ খুঁজতে চোখদুটো ক্ষয়ে গেল অন্নুর। তিন দিন পার হতে অন্নু বুঝতে পারল, সে বুনোহাঁসের পিছনে ছুটে বেড়াচ্ছে— বোধ হয় এ ভাবে পটনা থেকে ছুটে আসা অনর্থকই হবে শেষ পর্যন্ত।
চতুর্থ দিনেও সন্ধেবেলা অবধি অনিচ্ছুক প্রীতকে সঙ্গে নিয়ে অন্নু দ্বারভাঙা ঘাট, দশাশ্বমেধ ঘাট, সিন্ধিয়া ঘাট, ভোঁসলে ঘাট দেখা শেষ করেছে। হঠাৎই মনে হল, মড়া পোড়ানোর ঘাট বলে ওরা মণিকর্ণিকা আর হরিশ্চন্দ্র ঘাটকে বাদ দিয়ে গিয়েছে ঘোরাঘুরির সময়। কিন্তু মানিক তো ধরাবাঁধা হিসেবের বাইরে, তাই ওই দু’টো ঘাটও দেখা দরকার। প্রীত তো কিছুতেই যাবে না, ওর আবার ভূতের ভয় সাংঘাতিক, শ্মশান দেখলে সারা রাত ঘুমই হবে না হয়তো। অন্নুকে অনেক করে বোঝাতে হল, কাশীতে এসে ও দুটো ঘাট না দেখলে এত পুজো-আচ্চার সুফল মিলবে না।
অন্নুর খাটাখাটনির সুফল অবশ্য মিলল। মণিকর্ণিকায় নয়, হরিশ্চন্দ্র ঘাটে। তখন অন্ধকার নেমে এসেছে। কিছুটা দূরে একটা চিতা নিভু-নিভু আর একটা দাউদাউ করে জ্বলছে। সেই আলোতেই ও দেখতে পেল, ঘাটের শেষ দিকের ধাপে, জলের কিনারা বরাবর এক আবছা মূর্তি সিঁড়ির উপর বসে। বসার ভঙ্গিটা চেনা। প্রীতের হাত ছাড়িয়ে সিঁড়ি বেয়ে নামতে গিয়ে নিজেকে সংযত করতে হল, প্রীত যেন বুঝতে না পারে পুরোটাই ওর পরিকল্পিত। প্রীত এমনিতেই আড়ষ্ট হয়ে আছে, ওর হাত ধরে টানতে টানতে জলের কাছে নিয়ে এল ও, বলল, ‘‘এখানে এলে মাথায় গঙ্গাজল অবশ্যই ছোঁয়াতে হয়, না হলে রাতে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে খারাপ স্বপ্ন দেখলে আমাকে দোষ দিয়ো না কিন্তু!’’
তার পরই উচ্ছ্বাস, ‘‘আরে, মানিক না! হ্যাঁ, তাই তো কেমন যেন চেনা-চেনা লাগছিল দূর থেকে! ভাগ্যিস গঙ্গাজল মাথায় ঠেকাতে নীচে নামলাম! এখানে কী করছ তুমি, মানিক?’’ বুকটা ধড়ফড় করছে এর মধ্যেই, সেটা কি মানিককে অনেক দিন বাদে দেখে, না কি প্রীতের কাছে অভিনয়টা ধরা পড়ে যাওয়ার ভয়ে, কে জানে! মেয়েদের মন নাকি দেবতারাও বোঝেন না। মেয়েরাই কি বোঝে?
আস্তে আস্তে উঠে দাঁড়াল মানিক। পরনে সাদা পাজামা-গেরুয়া পাঞ্জাবি, আগের চেয়েও লম্বা লাগছে ওকে। বোধ হয় ছোট করে ছাঁটা চুল, আর খানিকটা রোগা হয়েছে বলে। আবার বুকটা ধক করে উঠল অন্নুর— ও যা ছেলে, প্রীতের সামনেই না সিন ক্রিয়েট করে বসে! চিতার আলো বাড়া-কমা করছে, মানিকের মুখেও আলো-ছায়ার খেলা। অন্নুর মনে হয়, চেহারার মতো মুখটাও খানিকটা ভেঙেছে মানিকের। ওকে বিষণ্ণ দেখাচ্ছে, যে বিষণ্ণতা ঠিক খাপ খায় না ওর চরিত্রের সঙ্গে।
বিয়ের তিন বছরেরও বেশি পরে দেখা হচ্ছে। এই দীর্ঘ সময়ে অন্নুর নিজেরও অনেক পরিবর্তন হয়েছে, তবে মানিকের তুলনায় তা কিছুই নয়। গায়ের রং কালো, কিন্তু মুখে হাসি থাকলে দেহবর্ণ ওকে আলাদা একটা লালিত্য দিত সেই সময়ে। এখন শ্মশানচুল্লির আলোয় ওকে প্রেতের মতোই দেখাচ্ছে, যার হাত থেকে অন্নু নিজের দাম্পত্যজীবনকে নিরুপদ্রব করতে চাইছে। ও কাছে আসে না, কথা বলতে চায় না, এমনকি চিঠি লিখতেও অনীহা। তবু অন্নু ওকে বারবার ডেকেছে এক বার দেখা করার জন্যে। সেটা তো ওর এই বাজ-পড়া চেহারা দেখার জন্যে নয়। তবে ও মনে মনে একটা ব্যাপারে নিশ্চিন্ত হয় যে, এই চেহারার মানিককে দেখার পর আর যা-ই হোক, অন্নুকে নিয়ে সন্দেহের লেশমাত্র প্রীতের মনে থাকবে না।
হাত ধরতে গিয়েও থমকে গেল অন্নু, দু’জনের কাউকেই বাড়তি ফুটেজ দেওয়া চলবে না। মুখে বলল, ‘‘এত্ত দিন বাদে দেখা হয়ে গেল যখন, আমাদের বাড়ি এক দিনের জন্যে হলেও যেতে হবে, মানিক! ও হ্যাঁ, এ আমার হাজ়ব্যান্ড প্রীত, মনপ্রীত সিং আর প্রীত, এ হল মানিক, যার কথা তোমাকে মাঝে-মাঝে বলি, খারাপ সময়ের ভাল বন্ধু।’’ একটু দম নিয়ে আবার শুরু করল, ‘‘যা-ই হোক, তুমি না বললেও শুনছি না। বিয়ের সময় ফাঁকি দিয়েছিলে, আজ কিন্তু তুমি আমাদের অতিথি। প্রীত, তুমিও একটু বলো, তা হলে ও আপত্তি করতে পারবে না।’’
অন্নুর ব্যক্তিত্বের কাছে প্রীত সর্বদাই অপ্রতিভ থাকে, তাই বিড়বিড় করে কিছু যেন বলল ও আর মানিকের মুখে একটু ক্লিষ্ট হাসি ফুটে উঠল, ‘‘না গেলে চলবে না, তাই না? ঠিক আছে, আমার বিশেষ কোনও আপত্তির কারণ নেই, তবে না গেলে হয়তো ভবিষ্যতে আবার এমন ভাবেই কোথাও দেখা হয়ে যেতে পারত। গেলে আর সেটা হবে না বোধ হয়! এ বার তুমিই ঠিক করো, সেটা এ বার, না অন্য কোথা, অন্য কোনওখানে!’’
ক্রমশ
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy