Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
আজ সাক্ষাৎকার দিলেন: ফাটাকেষ্ট

প্রঃ / উঃ

আজ সাক্ষাৎকার দিলেন: ফাটাকেষ্ট

ফাটাকেষ্ট, এখন যেমন। ফোটোগ্রাফারের হাত ভয়ে, খুব ভয়ে ও ভীষণ ভয়ে কেঁপে যাওয়ায়, ছবিটা নড়ে গেছে।

ফাটাকেষ্ট, এখন যেমন। ফোটোগ্রাফারের হাত ভয়ে, খুব ভয়ে ও ভীষণ ভয়ে কেঁপে যাওয়ায়, ছবিটা নড়ে গেছে।

চন্দ্রিল ভট্টাচার্য
শেষ আপডেট: ০৬ জুলাই ২০১৪ ০০:২০
Share: Save:

প্রতিবেদক: এখন কি কোনও অনুশোচনা হয়, যেমন ভাবে লাইফটা কাটিয়েছি, না কাটালেই পারতাম?

ফাটাকেষ্ট: খুব। ইনফিরিয়রিটি কমপ্লেক্সও হয়।

প্রতি: মনে হয় মস্তানি করা ঠিক হয়নি?

ফাটা: আরে না না! মনে হয় ঠিক-ঠিক মস্তানিটা করা হয়নি। কত আলগোছে, ক্যালাসের মতো কাজগুলো করেছি। বহুত র্যালা ছিল, ধমাকা ছিল, পাড়ায় দাঁড়িয়ে দুধে ডিম মিশিয়ে খাওয়ার সময় অপোনেন্টরা ছুরি মেরেছে, বাঘের মতো লড়াই দিয়েছি! কিন্তু বস, কোনও দিন কি মুঠো দাবড়ে বলতে পেরেছি, ছেলেদের ঢুকিয়ে দেব, রেপ করে ছেড়ে দেবে! মাইক নিয়ে কি চিল্লাতে পেরেছি, কোনও ব্যাটা ঢুকলে কেটে দিবি, আমি বুঝে নেব! স্যালুট! আমি ফাটাকেষ্ট হলে, এরা ফাটাফাটিকেষ্ট!

প্রতি: সাহসের তফাত বলছেন?

ফাটা: আরে না, অ্যাটিটুডের! কী কনফিডেন্স! কী দুকান-কাটা স্মার্টনেস! পেছনে শিয়োর রয়েছে পলিসি-র রানিং কারখানা, একটা সিস্টেমের অভয়-ভরসা! হোটেলে হুমকি দিয়ে ডেলি কা ডেলি ঘর বুকিং করে ফেলছে মদের আড্ডার জন্যে! সন্ধের ফুত্তিটাও টোটালি অন্যের ঘাড়ে ভর দিয়ে মচানো যায়, এই ভিশন-ই আমাদের ছিল না। কোন দিন এরা প্রাতঃকৃত্যের জন্যে মাল্টিপ্লেক্স বুক করে ফেলবে!

প্রতি: আপনারা তার মানে কনজার্ভেটিভ ছিলেন?

ফাটা: একদম। উদ্ভট সুপারস্টিশন ছিল। মেয়েদের দেখলে ন্যাকামো করে ‘মায়ের জাত’ কপচে উলটো দিকে তাকিয়ে থাকতাম। নাইট শো-র পর বাড়ি-ফেরা পাড়ার মেয়েদের যেচে প্রোটেকশন দিতাম। টোন কাটতাম না।

প্রতি: কিন্তু আপনি তো লাভ ম্যারেজ করেছিলেন আর সে বিয়েতে ভাবী শ্বশুর বাধা দিতে পারেন বলে তাঁকে সুদ্ধু কিডন্যাপ করে নিয়ে গেছিলেন?

ফাটা: আরে সেটা তো প্রেম! তার জন্যে তো জান কবুল। সেটা তো নোংরামি নয়। আমার বিয়েতে উত্তমকুমার এসে কনেকে দুল দিয়ে আশীর্বাদ করে গেছেন। কিন্তু আমি বলছি এখনকার নারী-হ্যারাসের টকঝাল ফ্লেভারটার কথা। সেই সোয়াদটা নিতাম না।

প্রতি: সেটা খারাপ করতেন?

ফাটা: আলবাত। এখন কত প্রোগ্রেসিভ দৃষ্টিভঙ্গি: ছেলে আর মেয়ে সমান। এর গালে যদি সটাসট ক্ষুর টানা যায়, ওকে ফটাফট ধর্ষণ করা যাবে না কেন? এর নাড়িভুঁড়ি ছিঁড়ে নেওয়া গেলে ওর সঙ্গে কাজ সেরে পা দুটো চিরে ফেলে আসা যাবে না কেন?

প্রতি: হরিব্ল!

ফাটা: একদমই নয়। মস্তানিই যদি করতে হয়, তার ৩৬০ ডিগ্রি বেনিফিট এনজয় করব। যদি মানুষকে অপমান করে টাকা রোজগার করাটা আমার পেশা হয়, তা হলে কিছু কিছু ক্ষেত্রে হঠাৎ মানুষকে সম্মান দেওয়ার মহিমা-ট্র্যাপে পড়ব কেন? সেটা কি দু’মুখোমি নয়? ইদিকে মার্ডারার উদিকে বেহ্মচারী? ধাস্টামি?

প্রতি: না দাদা, খুন আর রেপের কিন্তু স্টেটাস আলাদা। একটার মধ্যে বীরত্ব আছে...

ফাটা: ধুর গাড়ল, কোনও অন্যায়ের মধ্যেই বীরত্ব থাকতে পারে না। মানুষ গাধা প্লাস কেঁচো, তাই সে সাংঘাতিক অন্যায়কারীকে হেভি রেসপেক্ট দেয়। গব্বর সিং-এর মেগা-নিষ্ঠুরতাকে সে গ্ল্যামার-ছ্যাঁচা সমীহ করে, কিন্তু ছিঁচকে সাম্বাকে করে না। অথচ ফ্যাক্ট হল, সাম্বা অনেক কম ক্রাইম করেছে। খেলাটা বীরত্ব ভার্সাস ভীরুতা নয়, ইস্যুটা হল: অল আউট যাবে না আধখ্যাঁচড়া থাকবে? এখনকার মস্তানরা বলছে, গাঁতিয়ে গো ফর গোল। এরাই অ্যাকচুয়াল বীর।

প্রতি: আপনাকে এই বীর-বঙ্গে ফিরিয়ে আনলে কী করতেন?

ফাটা: কী আবার? প্রম্প্টলি শাসক দল জয়েন করতাম। তার পর শত্তুরগুলোকে সালিশি সভায় ডেকে পিটিয়ে খুন করতাম। তার পর মাইকের সামনে দাবড়ে বক্তৃতায় বলতাম, ওদের পায়ের তলে ধামসে দলে পিষে নিকেশ করেছি। তার পর বুক ফুলিয়ে তুড়ি মারতে মারতে ঘুরে বেড়াতাম! এ জিনিসের ঝিংকুচাকুই আলাদা। দেড়া মজা হত, যখন সাধু-সাজা ক্রাউড আমার কাছে কাঁউকাঁউ জবাবদিহি চাইত। পুড়ুক করে ক্ষমা-চিঠিটা পকেট থেকে বের করে টেক্কার তাসের মতো ওদের নাকের ডগায় আছড়ে, ‘চল্ অশিক্ষা ঝালাই, ভুলে মানের বালাই’ থিম-শিস দিয়ে, হেল্লেদুল্লে বেরিয়ে যেতাম। ম্যাটার এন্ডস দেয়ার!

প্রতি: আর কী করতেন?

ফাটা: ডাইভার্সিফাই করতাম। সোমবার চুকচুকিয়ে সিন্ডিকেটের মধু খেতাম, মঙ্গলবার নেতার গা ঘেঁষটে স্টেজে অ্যায়সা গ্যাঁট বসে থাকতাম যেন দেশের দুঃখে আমার হার্ট এক-পো ছানার মতো তলতল কচ্চে, তার পরেই সেলফোনে হাঁকডাক করে কলেজ-ভর্তির মুনাফা ট্যাঁকে পুরতাম। তবে মানতেই হবে, ভগবান তো শুধু আম দেন না, আঁটিও দেন। হার্ডলও এখন খুব টাফ!

প্রতি: তাই?

ফাটা: তা নয়? অন্ধকার গলিতে শান্তিমনে খুন করছ, কে কোন বাথরুমের জানলা থেকে সেলফোনে তুলে রেখে দিল। ফুটেজ তো আবার লাখ টাকায় বিক্কিরি হচ্ছে। ফেসবুকে আপলোড হলে ডবল চিত্তির! তাপ্পর, হোটেলে কাকে অল্প চড়-চাপাটি কষাচ্ছ, সিসিটিভিতে সব কে সব রেকর্ড! কী চক্ষু-পিলপিলে জমানা পড়ল রে ভাই! নিরিবিলি পালিয়ে নামগান করবে তার অবধি চান্স নেই, মোবাইলের টাওয়ার-ফাওয়ার কী সব ট্র্যাক করে হিড়হিড়িয়ে বের করে আনবে। আমাদের সময়ে একটা লোক রাস্তায় পড়ে থাকলে তার বাড়িতে খবর যেতে যেতে সে ক্যাঁতা-শিশু হয়ে অন্য দেশে জম্মে যেত! এখন মরার আগে ট্যাঁক থেকে পিচিক করে ফোন নিকলে, ভিলেনের নাম এসএমএস।

প্রতি: কলিযুগ একেবারে!

ফাটা: আর তার মধ্যে সবচেয়ে খতরনাক ফুলকলি হলি তোরা: মিডিয়া। ঘরের খেয়ে কামদুনির মোষ তাড়াচ্ছে! আরে, কোথায় চাম্পি আইটেম নাম্বার দেখাবি, নোংরা জোক্স ছড়াবি, তোদের আসলি কাজ এন্টারটেন করা, তা-ই করবি, তা না, হর সন্ধেয় চণ্ডীমণ্ডপ বসিয়ে টিআরপি পোয়াচ্ছে। এইটা ঠিক, ওইটা ভুল, এ ওকে পেটাল কেন, সে রেপ করল কেন আরে তাতে তোর কী বে? তোর ঘাড়ে কে সমাজ শুধরোনোর ভার দিয়েছে? নিজেকে সুপ্রিম কোর্টের বাবা ভাবছিস? পুলিশ আছে, নেতা আছে, ওরা বুঝবে। তুই জীবনমুখী গা না।

প্রতি: এটার মধ্যে যাচ্ছেতাই ফাঁকিবাজিও আছে।

ফাটা: অব কোর্স! মাথা খাটিয়ে গতর খাটিয়ে লোকে মার্ডার করবে, টাকা ঝাড়বে, আর এরা মুখে পাউডার বুলিয়ে আরামকেদারায় কেতরে বসে জ্ঞান দিয়ে সুপিরিয়র সাজবে! একটা কুকম্ম করতে কত প্ল্যান, কী প্রকাণ্ড হাড়ভাঙা লেবার, কত্ত ডাইনামিক পাবলিক রিলেশন লাগে, কোনও আন্দাজ আছে?

প্রতি: আপনি এই বখতিয়ার খিলজিদের ঢিট করতেন কী করে?

ফাটা: ইজি! আমার কালীপুজোয়, মা কালীর হাতের হ্যাংগিং কাটামুন্ডুগুলো সব ট্রেটর বুদ্ধিজীবীর আদলে করে দিতাম। মেয়ে-বুদ্ধিজীবী থাকলে ডাকিনী-যোগিনীর মুখে তাদের ছাঁচ দিতাম। তক্ষুনি হিট। ভাসান না দিয়ে তিরিশ দিন রাস্তা ব্লক!

অন্য বিষয়গুলি:

chandril bhattacharya
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE