Why the withdrawal of 2000 rupee notes is a good move, explained by Former CEA Dr Krishnamurthy Subramanian dgtl
Two Thousand Rupee Withdrawn
দু’হাজারি ‘নোট’বন্দির সিদ্ধান্ত কি ভুল? কী বলছেন প্রাক্তন মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টা?
২০১৬ সালে ২ হাজার টাকার নোট বাজারে এলেও ২০১৮-’১৯ সালে সেই নোট ছাপানো থামিয়ে দেওয়া হয়। সেই সময় মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ছিলেন কৃষ্ণমূর্তি সুব্রহ্মণ্যম।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
নয়াদিল্লিশেষ আপডেট: ২০ মে ২০২৩ ১৩:৪৭
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২৩
শুক্রবার সন্ধ্যায় এক বিজ্ঞপ্তি জারি করে দু’হাজার টাকার নোট তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (আরবিআই)। এই ঘোষণা তৎক্ষণাৎ সাধারণ মানুষের মনে সাড়ে ছ’বছর আগেকার স্মৃতি উস্কে দিয়েছে। ২০১৬ সালের ৮ নভেম্বর ৫০০ এবং ১০০০ টাকার নোট বাতিলের সিদ্ধান্তে নাজেহাল হতে হয়েছিল দেশবাসীকে।
০২২৩
৫০০ এবং ১০০০ টাকার নোটের বদলেই বাজারে আনা হয়েছিল দু’হাজার টাকার নোট। সাড়ে ছ’বছর পর আবার কেন তা বাজার থেকে তুলে নেওয়া হচ্ছে তা নিয়ে প্রশ্ন জেগেছে সাধারণ মানুষের মনে। আরবিআই-এর এই সিদ্ধান্ত আদৌ যথাযথ কি না তা নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়েছে মানুষের মনে। বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে সরব হয়েছেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ।
০৩২৩
২০১৮ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টার পদে কর্মরত ছিলেন কৃষ্ণমূর্তি সুব্রহ্মণ্যম। ২০১৬ সালে ২ হাজার টাকার নোট বাজারে এলেও ২০১৮-’১৯ সালে সেই নোট ছাপানো থামিয়ে দেওয়া হয়। সেই সময় মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ছিলেন কৃষ্ণমূর্তি। তাঁর মতে, আরবিআইয়ের নেওয়া এই সিদ্ধান্তে কোনও ভুল নেই। বরং নোট তুলে নেওয়ার ফলে যে আদতে লাভ হবে, তার কারণও দেখালেন কৃষ্ণমূর্তি।
০৪২৩
কৃষ্ণমূর্তির দাবি, এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) যে জায়গাগুলিতে অভিযান চালিয়ে বেআইনি ভাবে টাকা উদ্ধার করেছে, তার মধ্যে সিংহভাগই দু’হাজার টাকার নোট।
০৫২৩
৮০-২০ শতাংশ হিসাবের একটি নিয়মানুযায়ী, ২০০০ টাকার নোটের ব্যবহারের বিভাজনও করেছেন কৃষ্ণমূর্তি। তিনি জানান, বাজারে দু’হাজার টাকার নোটের যে পরিমাণ মোট অর্থমূল্য রয়েছে, তার মাত্র ২০ শতাংশ আইনি ভাবে লেনদেন করা হয়েছে।
০৬২৩
কিন্তু ২০০০ টাকার নোটের মোট অর্থমূল্যের ৮০ শতাংশ রয়েছে দেশের মাত্র ২০ শতাংশ মানুষের কাছে। কৃষ্ণমূর্তির দাবি, এই ৮০ শতাংশ অর্থমূল্যের পরিমাণ ৩ লক্ষ কোটি টাকা। এই পরিমাণ অর্থ দেশের ২০ শতাংশ জনতা বেআইনি ভাবে লেনদেন করেন, এই টাকা দিয়ে কালোবাজারি করা হয় বলে দাবি তাঁর।
০৭২৩
আরবিআইয়ের তরফে যদি ২০০০ টাকার নোটগুলি তুলে নেওয়া হয়, তবে দুর্নীতি থামানো যাবে বলে ইঙ্গিত দেন কৃষ্ণমূর্তি। এর ফলে সাধারণ মানুষের বিশেষ অসুবিধা হবে না বলেও দাবি করেন তিনি।
০৮২৩
কৃষ্ণমূর্তির দাবি, সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে দু’হাজারি নোট তুলে নেওয়া হলে সাধারণ মানুষের যে খুব সমস্যা হবে তা নয়। তার কারণ, দেশবাসী আর্থিক লেনদেনের সময় ২০০০ টাকার নোট ব্যবহার করলেও সে সংখ্যা খুব বেশি নয়। খুব বড় পরিমাণ লেনদেন করার সময়েই এই বড় অঙ্কের নোটের প্রয়োজন হয়।
০৯২৩
২০০০ টাকার বদলে অন্য নোটের মাধ্যমেও দেশবাসী লেনদেন করতে পারবেন। তাই আইনি আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়বেন না আমজনতা। এমনটাই দাবি করেন কৃষ্ণমূর্তি।
১০২৩
কৃষ্ণমূর্তি এ-ও জানান, বর্তমানে ডিজিটাল মাধ্যমে অর্থ লেনদেনের পরিমাণ দ্রুত হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। সাধারণ জনতা নোটের ব্যবহারের বদলে বড় অঙ্কের টাকা লেনদেনের সময় ডিজিটাল মাধ্যমের সাহায্য নিচ্ছেন।
১১২৩
তাই বাজার থেকে দু’হাজারি নোট তুলে নিলে কোনও সমস্যা নেই। ব্যাঙ্কের ‘অনলাইন মানি ট্রান্সফার’ এবং ইউপিআই-এর মতো নানা উপায়ে অবাধে আর্থিক লেনদেন করা যাবে।
১২২৩
কৃষ্ণমূর্তি ২০০০ টাকার বিকল্প হিসাবে ৫০০ টাকার নোটকে আদর্শ বলে উল্লেখ করেছেন। ২০০০ টাকা তুলে নিলে সে ক্ষেত্রে ৫০০ টাকার নোটের মাধ্যমেও লেনদেন করা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে একটির বদলে নোটের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে হবে চারটি। কিন্তু মোট অর্থমূল্যের কোনও পরিবর্তন হবে না।
১৩২৩
এমনকি, কোনও বড় মাপের আর্থিক লেনদেন সময় ডিজিটাল মাধ্যমের পাশাপাশি, ৫০০ টাকার নোট ব্যবহার করতে পারেন জনতা। এর ফলে গ্রাহকদের সুবিধা বই কোনও ক্ষতি হবে না।
১৪২৩
এই প্রসঙ্গে বস্টন কনসালটিং গ্রুপ (বিসিজি)-এর একটি সমীক্ষার প্রতিবেদনের কথাও উল্লেখ করেছেন কৃষ্ণমূর্তি। সেই রিপোর্টে লেখা রয়েছে, ২০২৬ সালের মধ্যে আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে বিশাল পরিবর্তন আসতে চলেছে।
১৫২৩
এখন ডিজিটাল মাধ্যমে যে পরিমাণ অর্থ লেনদেন করা হয়, তা আর তিন বছরের মধ্যে বৃদ্ধি পেয়ে তিন গুণ হবে। দেশবাসীর সিংহভাগ নোটের বদলে ডিজিটাল মাধ্যমের দিকেই ঝুঁকে পড়বেন বলে বিসিজি-র রিপোর্টে উল্লেখ রয়েছে।
১৬২৩
ফলে, তিন বছর পর সাধারণ মানুষ যদি ডিজিটাল মাধ্যমকেই বেছে নেন, তবে বাজারে ২০০০ টাকার নোট থাকুক বা না থাকুক, বিশেষ হেরফের লক্ষ্য করা যাবে না বলেই দাবি কৃষ্ণমূর্তির।
১৭২৩
তবে, আরবিআইয়ের ঘোষণা নিয়ে অন্য দিকও তুলে ধরেছেন কৃষ্ণমূর্তি। তিনি বলেন, ‘‘আরবিআই শুধুমাত্র জানিয়েছে, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে বাজার থেকে তুলে নেওয়া হবে দু’হাজারের নোট। কিন্তু ২০০০ টাকার নোটগুলি ‘নিষিদ্ধ’ করেনি আরবিআই।’’
১৮২৩
আরবিআইয়ের ঘোষণায় জানানো হয়েছে, ২৩ মে থেকে বিভিন্ন ব্যাঙ্ক এবং আরবিআইয়ের আঞ্চলিক দফতরে ২০০০ টাকার নোট জমা করা যাবে। তবে সেপ্টেম্বর মাসের পর আর নোট জমা করা যাবে না বলেও জানায় আরবিআই।
১৯২৩
কিন্তু কৃষ্ণমূর্তির দাবি, সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে ২০০০ টাকার নোট বাজার থেকে তুলে নিলেও সেই নোট আদৌ বেআইনি কি না সে বিষয়ে আরবিআই তার বিজ্ঞপ্তিতে কিছু স্পষ্ট করেনি। ফলে ধোঁয়াশা রয়ে গিয়েছে।
২০২৩
আরবিআইয়ের তরফে জানানো হয়েছে, ২০১৬ সালে নোট বাতিলের সময় ৫০০ এবং ১ হাজার টাকার নোট বাতিল করা হয়েছিল। সেই সময় নোটের ঘাটতি পূরণ করতে বাজারে ২ হাজার টাকার নোট আনা হয়েছিল। বর্তমানে অন্য নোটগুলির জোগান যথেষ্ট পরিমাণে রয়েছে। তাই ২০১৮-১৯ সালে ২ হাজার টাকার নোট ছাপানো বন্ধ করে দেওয়া হয়।
২১২৩
আরবিআই জানায়, ব্যাঙ্কে গিয়ে ২ হাজারের নোট জমা করতে পারবেন গ্রাহকেরা। ২৩ মে থেকে ব্যাঙ্ক এবং আরবিআইয়ের আঞ্চলিক দফতরগুলিতে গিয়ে ২ হাজারের নোট জমা দেওয়া যাবে।
২২২৩
আরবিআই-এর বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, ২ হাজার টাকার নোট জমা করতে গিয়ে ব্যাঙ্কগুলির দৈনন্দিন কাজে যেন ব্যাঘাত না ঘটে কিংবা কোনও বিশৃঙ্খলা তৈরি না হয়, সেই কারণে কোনও এক দিনে ২ হাজারের নোটে সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা জমা দিতে পারবেন গ্রাহকেরা।
২৩২৩
আগামী সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত ২ হাজার টাকার নোটে লেনদেন করতে পারবেন সাধারণ মানুষ। তবে সেপ্টেম্বরের মধ্যে অবশ্যই তা ব্যাঙ্কে জমা করতে হবে। ২ হাজার টাকার নোট জমা দেওয়ার সময় কেওয়াইসি এবং প্রয়োজনীয় অন্য তথ্য ব্যাঙ্ককে জানাতে হবে গ্রাহকদের।