Manipur rebels using Starlink communication Elon Musk organisation is seen security threat for North East India dgtl
Elon Musk Starlink
আন্দামান সাগরের পর এ বার মণিপুরে সশস্ত্র গোষ্ঠীর ডেরা! স্টারলিঙ্কে বিপদের গন্ধ পাচ্ছেন গোয়েন্দারা
মণিপুরে সশস্ত্র গোষ্ঠীর গোপন ডেরা থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ধনকুবের শিল্পপতি ইলন মাস্কের সংস্থা স্টারলিঙ্কের উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন যন্ত্র উদ্ধার করেছে সেনা ও পুলিশের যৌথ বাহিনী।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতাশেষ আপডেট: ২১ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৮:০০
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৮
উত্তর-পূর্ব ভারতে অশান্তির নেপথ্যে আমেরিকা? পর্দার আড়ালে থেকে সেখানকার সশস্ত্র গোষ্ঠীদের উস্কানি দিচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের ধনকুবের শিল্পপতি ইলন মাস্ক? তাঁর ইন্টারনেট পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থা স্টারলিঙ্কের উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন যন্ত্র নিষিদ্ধ সংগঠনের গোপন ডেরা থেকে উদ্ধার হওয়ায় উঠেছে এই প্রশ্ন। যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করে দ্রুত প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন মাস্ক। যদিও এই বিষয়ে অস্বস্তি এড়াতে পারছে না ওয়াশিংটন।
০২১৮
চলতি বছরের ১৬ ডিসেম্বর স্থানীয় পুলিশের সঙ্গে মণিপুরের রাজধানী ইম্ফলের পূর্বে বিরাট এলাকা জু়ড়ে যৌথ অভিযানে নামে ভারতীয় সেনা। চান্দেল জেলার চূড়াচাঁদপুরের পাহাড় ও উপত্যকা এবং কাগপোকপিতে তল্লাশি চালায় যৌথ বাহিনী। আর তখনই বিপুল হাতিয়ারের সঙ্গে উদ্ধার হয় এই যন্ত্রটিও।
০৩১৮
তল্লাশিতে পাওয়া অস্ত্রশস্ত্র এবং অত্যাধুনিক যন্ত্রের ছবি ইতিমধ্যেই সমাজমাধ্যমে পোস্ট করেছে যৌথ বাহিনী। সেখানে যন্ত্রটির গায়ে স্টারলিঙ্কের লোগো জ্বলজ্বল করতে দেখা গিয়েছে। এর পর এই বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে সমাজমাধ্যমে ঝ়়ড় তোলেন নেটাগরিকদের একাংশ।
০৪১৮
সমাজমাধ্যম ব্যবহারকারীদের কেউ কেউ আবার মাস্ককে ট্যাগ করে এক্স হ্যান্ডলে (সাবেক টুইটার) বিভিন্ন প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছেন। পাশাপাশি, এ দেশে আদৌ স্টারলিঙ্ককে ব্যবসা করার সুযোগ দেওয়া উচিত কি না, তাই নিয়েও চলছে তর্ক। কেন্দ্রের তরফে এসেছে তার জবাবও।
০৫১৮
তদন্তকারীদের দাবি, স্টারলিঙ্কের ওই যন্ত্রের সাহায্যে মণিপুরের পাহাড়ি ও জঙ্গল এলাকায় দিব্যি ইন্টারনেট পরিষেবা ব্যবহার করে যাচ্ছিল দু’টি সশস্ত্র গোষ্ঠী, ‘পিপলস্ লিবারেশন আর্মি’ এবং ‘রেভলিউশনারি পিপলস্ ফ্রন্ট’। মেইতেই জনজাতি পরিচালিত দু’টি সংগঠনকেই নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।
০৬১৮
গত বছর (পড়ুন ২০২৩) থেকে মণিপুরের কুকি ও মেইতেই জনজাতির মধ্যে চলছে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে উত্তর-পূর্বের রাজ্যটিতে সেনা নামিয়েছে কেন্দ্র। বেশ কিছু এলাকায় জারি হয়েছে ‘আর্মড ফোর্সেস স্পেশাল পাওয়ার অ্যাক্ট’ বা আফস্পা। রাজ্য জুড়ে ব্যাহত ইন্টারনেট পরিষেবা।
০৭১৮
এই পরিস্থিতিতে বাইরের দুনিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে মাস্কের সংস্থার এই যন্ত্র বিবদমান গোষ্ঠীদের থেকে উদ্ধার হওয়ায় কেন্দ্র ও রাজ্য উভয় সরকারের কপালেই পড়েছে চিন্তার ভাঁজ। এ ভাবে জঙ্গলে বসে ইন্টারনেটের ব্যবহার মাদক ও চোরাপথে হাতিয়ার পাওয়ার ক্ষেত্রে যে অনেকাংশে সাহায্য করবে, তা বলাই বাহুল্য।
০৮১৮
তবে ডিসেম্বরেই প্রথম নয়। গত নভেম্বরে একই ধরনের যন্ত্রের সন্ধান পায় ভারতীয় উপকূলরক্ষী বাহিনী। আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের কাছে একটি মাছ ধরার নৌকা থেকে ছ’হাজার কেজি মাদক উদ্ধার করেন তাঁরা। গ্রেফতার করা হয় ছয় পাচারকারীকে। ধৃতেরা সকলেই ছিলেন পূর্ব পাড়ের প্রতিবেশী দেশ মায়ানমারের বাসিন্দা। অভিযুক্তেরা দিক নির্ণয়ের জন্য স্টারলিঙ্কের যন্ত্রের সাহায্যে ইন্টারনেট পরিষেবা ব্যবহার করেছিলেন বলে অনুমান পুলিশের। অত্যাধুনিক যন্ত্রগুলিকে বাজেয়াপ্ত করেন তাঁরা।
০৯১৮
বার বার তাঁর প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এই ধরনের মারাত্মক অভিযোগ ওঠায় আর চুপ করে থাকেননি মাস্ক। ১৭ ডিসেম্বর এই বিষয়ে এক্স হ্যান্ডলে একটি পোস্ট করেন ধনকুবের আমেরিকান শিল্পপতি। সেখানে তিনি লিখেছন, ‘‘আমাদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তোলা হচ্ছে, তা সর্বৈব মিথ্যা। ভারতে কোনও রকম ইন্টারনেট পরিষেবা প্রদান করে না স্টারলিঙ্ক।’’
১০১৮
ইলন মাস্কের মহাকাশ সংক্রান্ত সংস্থা হল ‘স্পেস এক্স’। ইন্টারনেট পরিষেবাকে দ্রুত পৃথিবীর দূরতম প্রান্তে পৌঁছে দিতে ৮০০-র বেশি কৃত্রিম উপগ্রহ অন্তরীক্ষে পাঠিয়েছে মাস্কের এই সংস্থা। সেগুলির মাধ্যমেই সরাসরি দ্রুতগতির ইন্টারনেট পরিষেবা দিচ্ছেন তিনি। দুনিয়া জুড়ে যা ‘স্টারলিঙ্ক স্যাটেলাইট ইন্টারনেট’ নামে পরিচিত।
১১১৮
সাধারণের ব্যবহারের জন্য ভারতের কোথাও উপগ্রহ মারফত সরাসরি ইন্টারনেট পরিষেবা নেই। এ দেশে টাওয়ারের মাধ্যমে এই পরিষেবা দেওয়া হয়। কৃত্রিম উপগ্রহ থেকে সিগন্যাল প্রথমে আসে টাওয়ারে। তার পর সেটি গ্রাহকের মোবাইল, ল্যাপটপ বা কম্পিউটারে পৌঁছয়। মাস্কের সংস্থাকে এখনও এ দেশে ব্যবসা করার অনুমতি দেয়নি কেন্দ্র। তা হলে মণিপুরের সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলি কী ভাবে স্টারলিঙ্কের পরিষেবা চুরি করছেন?
১২১৮
তদন্তকারীদের দাবি, মাস্কের সংস্থা মায়ানমারের প্রতিবেশী তাইল্যান্ড এবং লাওসে ইন্টারনেট পরিষেবা দিয়ে থাকে। সেখানে বিক্রি হয় স্টারলিঙ্কের যন্ত্র। চোরাপথে সেগুলি সংগ্রহ করে ইতিমধ্যেই ওই পরিষেবা যথেচ্ছ ব্যবহার করছে সেখানকার বিদ্রোহী গোষ্ঠী ও মাদক ব্যবসায়ীরা। তাঁদেরই হাত ঘুরে যন্ত্রগুলি মণিপুরে ঢুকেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
১৩১৮
স্টারলিঙ্কের পরিষেবা প্রথম চুরি করা শুরু করে ‘ফ্রি বর্মা রেঞ্জার্স’ নামের মায়ানমারের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। কিন্তু সেই খবর বেশি দিন চাপা থাকেনি। পরবর্তী বছরগুলিতে মূলত তাইল্যান্ড থেকে হাজার হাজার যন্ত্র চোরাচালান হতে থাকে মায়ানমারে। বর্তমানে সেখানকার বিদ্রোহীদের হাতে মাস্কের সংস্থার ওই অত্যাধুনিক যন্ত্র প্রায় তিন হাজারের বেশি সংখ্যায় রয়েছে বলে অনুমান গোয়েন্দাদের।
১৪১৮
সূত্রের খবর, মেইতেই বিদ্রোহীদের সঙ্গে মায়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলির ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে। আর তাই সীমান্ত পেরিয়ে প্রতিবেশী রাষ্ট্রে ঢুকে গেরিয়া যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন ‘পিপলস্ লিবারেশন আর্মি’ এবং ‘রেভলিউশনারি পিপলস্ ফ্রন্ট’-এর সদস্যেরা। সেখান থেকেই হাত ঘুরে ফের মণিপুরে ওই যন্ত্র ঢুকেছে বলে একরকম নিশ্চিত তদন্তকারী দল।
১৫১৮
আন্দামানে মাদক উদ্ধারের ঘটনার পর স্টারলিঙ্ককে আইনি নোটিস পাঠায় পুলিশ। এই ধরনের যন্ত্র বিক্রির ক্ষেত্রে মাস্কের সংস্থা কী কী সতর্কতা অবলম্বন করছে, তা জানতে চাওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে এখনও কোনও জবাব দেয়নি স্টারলিঙ্ক।
১৬১৮
ভারতে সরাসরি উপগ্রহভিত্তিক দ্রুতগতির ইন্টারনেট পরিষেবা চালু করার ব্যাপারে আগ্রহ রয়েছে মাস্কের। ইতিমধ্যেই অনুমতি চেয়ে কেন্দ্রের কাছে আবেদন জানিয়েছে তাঁর সংস্থা স্টারলিঙ্ক। কিন্তু এর নিরাপত্তা সংক্রান্ত অনুমোদন এখনও দেয়নি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। এই আবহে পর পর দু’বার সংশ্লিষ্ট সংস্থার যন্ত্র মাদক পাচারকারী এবং বিদ্রোহী গোষ্ঠীর ডেরা থেকে উদ্ধার হওয়ায় এই ছাড়পত্র পাওয়া কঠিন হবে বলেই মনে করা হচ্ছে।
১৭১৮
এ বছরের নভেম্বরে বিষয়টি নিয়ে মুখ খোলেন কেন্দ্রীয় টেলিকমমন্ত্রী জ্যোতিরাদিত্য শিন্ডে। তাঁর কথায়, ‘‘স্পেস এক্সের উপগ্রহভিত্তিক ইন্টারনেট পরিষেবার ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে টেলিকম রেগুলেটরি অথরিটি অফ ইন্ডিয়া (ট্রাই)। যাবতীয় নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে পদক্ষেপ করবে সরকার।’’
১৮১৮
সূত্রের খবর, স্টারলিঙ্কের পরিষেবা চালু করার ব্যাপারে ইতিমধ্যেই বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা শুরু করেছেন ট্রাইয়ের পদস্থ কর্তারা। আগামী বছর (পড়ুন ২০২৫) পাকিস্তানে এই পরিষেবা চালু হওয়ার কথা রয়েছে। তবে আপাতত বাংলাদেশ এবং নেপাল স্টারলিঙ্কের পরিষেবা পাওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই।