Why the US is passing Resolve Tibet Act and how China can react to it dgtl
Resolve Tibet Act
চিনকে পর্যুদস্ত করতে ‘তুরুপের তাস’ বার করল আমেরিকা! বাইডেনকে সই না করার আর্জি বেজিংয়ের
চিনের সঙ্গে সংঘাতে নতুন ইস্যুতে নজর দিয়েছে আমেরিকা। বার করেছে ‘তুরুপের তাস’। বাইডেনের একটি স্বাক্ষরের উপর ঘটনার গতিপ্রকৃতি নির্ভর করছে। বাইডেনকে স্বাক্ষর না করার আর্জি জানিয়েছে চিন।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতাশেষ আপডেট: ২৭ জুন ২০২৪ ০৮:০৩
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২১
আমেরিকা এবং চিন। বিশ্বের দুই ‘সবচেয়ে শক্তিশালী’ দেশ। ক্ষমতার দ্বন্দ্ব তাই লেগেই আছে ওয়াশিংটন এবং বেজিংয়ের মধ্যে। কখনও তাইওয়ান ইস্যু, কখনও বাণিজ্যিক প্রসার— নানা সময়ে নানা কারণে এই দুই দেশের মধ্যেকার সংঘাত মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে।
০২২১
সম্প্রতি চিনের সঙ্গে সংঘাতে অন্য একটি ইস্যুতে নজর দিয়েছে আমেরিকা। বার করে ফেলেছে ‘তুরুপের তাস’। পরিস্থিতি এমনই যে, জো বাইডেনের একটি স্বাক্ষরের উপর ঘটনার গতিপ্রকৃতি নির্ভর করছে। বাইডেনকে স্বাক্ষর না করার আর্জিও জানিয়েছে চিন।
০৩২১
আমেরিকার নতুন ইস্যু তথা এই ‘তুরুপের তাস’ আসলে তিব্বত। যে পাহাড়ি ভূখণ্ড দীর্ঘ দিন ধরে চিনের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে রয়েছে। তিব্বত চিনের মধ্যে থেকেই নিজেকে স্বতন্ত্র প্রশাসন হিসাবে ঘোষণা করে এসেছে। যদিও চিন তা মানতে নারাজ।
০৪২১
তিব্বতের ধর্মীয় নেতা দলাই লামা ১৯৫৯ সালে চিন থেকে পালিয়ে ভারতে এসে আশ্রয় নিয়েছিলেন। সেই থেকে তিনি হিমাচল প্রদেশের ধর্মশালায় থাকেন এবং সেখান থেকেই ‘স্বতন্ত্র’ তিব্বতের কাজ পরিচালনা করেন।
০৫২১
তিব্বত ইস্যু নিয়ে সম্প্রতি আমেরিকা নতুন একটি বিল এনেছে। আমেরিকান কংগ্রেসে ইতিমধ্যে সেই বিল পাশও হয়ে গিয়েছে। তিব্বত-চিন বিতর্ক আইন বা ‘রিস্লভ তিব্বত অ্যাক্ট’ আনতে চলেছে আমেরিকা।
০৬২১
কংগ্রেসে পাশ হলেও এই বিলে এখনও সই করেননি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বাইডেন। তাঁর স্বাক্ষর পেলেই বিল আইনে পরিণত হবে। যা একেবারেই চাইছে না চিন। তাই স্বাক্ষর না করার জন্য তারা বাইডেনকে অনুরোধও করেছে।
০৭২১
কী এমন আছে আইনে, যা বন্ধ করার জন্য আমেরিকার সামনে সুর নরম করছে চিন? ‘রিস্লভ তিব্বত অ্যাক্ট’ অনুযায়ী, তিব্বত নিয়ে চিনের যাবতীয় ‘ভুল তথ্যের’ সরাসরি বিরোধিতা করবে আমেরিকা। তার জন্য অর্থও ব্যবহার করবে।
০৮২১
চিন প্রথম থেকেই বলে এসেছে, তিব্বত তাদের অবিচ্ছেদ্য অংশ। নতুন আইন অনুযায়ী, সেই বক্তব্যকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ করবে আমেরিকা। সেই সঙ্গে দলাই লামা এবং তিব্বতীয় সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ আলোচনার জন্য বেজিংকে অনুরোধও করা হবে।
০৯২১
এ ছাড়া, তিব্বতের মানুষের বহুমুখী সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক পরিচয়, বিশেষ করে তাদের ‘স্বতন্ত্র ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় এবং ভাষাগত পরিচয়’কে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে আমেরিকার আইনে।
১০২১
এখানেই শেষ নয়, আমেরিকার আইনে স্বতন্ত্র তিব্বতের ভৌগোলিক অবস্থান নিশ্চিত করতে ‘টিবেটান পলিসি অ্যাক্ট’ নামক আইন সংশোধনের কথাও বলা হয়েছে।
১১২১
আমেরিকার কংগ্রেসে তিব্বত সংক্রান্ত এই বিল পাশের পরেই আমেরিকার বেশ কয়েক জন আইনজীবী ভারতে এসেছিলেন। ধর্মশালায় দলাই লামার সঙ্গে দেখা করে এ বিষয়ে আলোচনা করাই তাঁদের উদ্দেশ্য বলে জানিয়েছেন তাঁরা।
১২২১
তিব্বত নিয়ে আমেরিকার তৎপরতা এবং এই বিল পাশের পর চিনে শোরগোল শুরু হয়েছে। অনুরোধের পাশাপাশি হুঁশিয়ারিও দিয়েছে বেজিং। চিনের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র লিন জিয়ান জানিয়েছেন, বাইডেন বিলে সই করলে বেজিং কড়া পদক্ষেপ করবে।
১৩২১
চিনের মুখপাত্র বলেন, ‘‘চতুর্দশ দলাই লামা আদৌ বিশুদ্ধ ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব নন। তিনি রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এবং চিনবিরোধী বিচ্ছিন্নতাবাদী কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত। এই সংক্রান্ত যে রিপোর্ট আমরা পাচ্ছি, তা নিয়ে বেজিং উদ্বিগ্ন। আমেরিকার কাছে আমাদের অনুরোধ, তারা দলাই গোষ্ঠীর বিচ্ছিন্নতাবাদী মনোভাবকে চিহ্নিত করুক। বিশ্বকে এ বিষয়ে ভুল বার্তা দেওয়া বন্ধ করুক।’’
১৪২১
লিন আরও বলেন, ‘‘তিব্বত সংক্রান্ত বিষয়গুলি সম্পূর্ণ ভাবে চিনের অভ্যন্তরীণ বিষয়। বহিরাগত কোনও হস্তক্ষেপ সেখানে প্রয়োজন নেই। আমরা শিজ়্যাং (তিব্বত প্রদেশকে ওই নামেই পরিচিত করে থাকে চিন)-কে চিনের অংশ হিসাবে মেনে নিতে আমেরিকাকে অনুরোধ করছি। সেখানে বিচ্ছিন্নতাবাদী কার্যকলাপকে প্রশ্রয় না দেওয়ার অনুরোধ করছি। যদি তা করা হয়, তবে বেজিংও কড়া হবে।’’
১৫২১
উল্লেখ্য, তিব্বত সংক্রান্ত আমেরিকার বিল এই প্রথম নয়। এর আগে ২০০২ সালে ‘টিবেটান পলিসি অ্যাক্ট (টিপিএ)’ এবং ২০২০ সালে ‘টিবেটান পলিসি অ্যান্ড সাপোর্ট অ্যাক্ট (টিপিএসএ)’ এনেছিল ওয়াশিংটন।
১৬২১
তবে ‘রিস্লভ তিব্বত অ্যাক্টে’ আমেরিকা সরাসরি তিব্বতকে অর্থ দিয়ে সাহায্য করার কথা বলেছে। তিব্বতের স্বাধীনতার সমর্থনে যে কোনও বিদ্রোহকে সাহায্য করার কথা বলেছে। সর্বোপরি, তিব্বতের ইতিহাস নিয়ে চিনের বক্তব্য অস্বীকার করেছে। সেই কারণেই এই আইনকে বাড়তি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।
১৭২১
চিনের দাবি অনুযায়ী, গত ৭০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে চিনের অন্তর্গত তিব্বত। যদিও তিব্বতপন্থীরা বলে থাকেন, দীর্ঘ সময়ে এই ভূখণ্ড স্বাধীন এবং স্বশাসিত ছিল। চিন তা মানতে চায় না। তিব্বত ইস্যুতে আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপও তারা বরদাস্ত করে না।
১৮২১
তিব্বত স্বশাসিত হলেও তাকে স্বতন্ত্র রাষ্ট্রের আখ্যা দেওয়া যায় না। কারণ রাষ্ট্র হওয়ার অন্যতম শর্ত নিজস্ব ভূখণ্ড। তিব্বতের ভূখণ্ড এখনও চিনের সীমার মধ্যে পড়ে। স্বশাসিত তিব্বতের শাসন পরিচালনা করেন দলাই লামা। যদিও তাঁকে চিন মান্যতা দেয় না।
১৯২১
বর্তমানে তিব্বতের পরিচালনায় রয়েছেন চতুর্দশ দলাই লামা। তাঁর নাম তেনজিং গ্যাৎসো। ৮৮ বছরের এই প্রবীণ ধর্মীয় নেতা ১৯৫৯ সালে চিন ছেড়ে ভারতে পালিয়ে এসেছিলেন। সেই থেকে ধর্মশালায় রয়েছেন। ‘স্বশাসিত’ তিব্বতের একতার প্রতীক দলাই লামা।
২০২১
আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নীতি নিয়ে আমেরিকার সঙ্গে বিশ্বের বিভিন্ন অংশে চিনের মতানৈক্য রয়েছে। তাইওয়ান ইস্যু নিয়েও গত কয়েক বছরে দফায় দফায় এই দুই দেশের সম্পর্ক উত্তপ্ত হয়েছে।
২১২১
অনেকের মতে, তাইওয়ান থেকে নজর ঘোরাতেই এ বার চিনকে অন্য ভাবে ব্যস্ত রাখার পরিকল্পনা করেছে আমেরিকা। সেই কারণে তারা নতুন করে তিব্বতে মনোনিবেশ করেছে। তিব্বতকে কেন্দ্র করে বিশ্বের দুই শক্তিধর রাষ্ট্রের দ্বন্দ্ব কোন পথে এগোয়, সেটাই এখন দেখার।