Why is Iran’s President Ebrahim Raisi visiting Pakistan dgtl
Iran-Pakistan Relation
ইসলামাবাদের অস্বস্তি বাড়িয়ে আচমকা পাক সফরে আমেরিকার শত্রু দেশের প্রধান, নজরে কি পরমাণু অস্ত্র?
ইরান এবং পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্ক খুব একটা মধুর নয়। গত জানুয়ারিতে দু’দেশের মধ্যে নতুন করে উত্তেজনা দেখা দেয়। হামলা-পাল্টা হামলায় জড়িয়ে পড়ে দুই প্রতিবেশী দেশ।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতাশেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ১০:০৪
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৮
ইরান-ইজ়রায়েল সংঘাতে উত্তপ্ত মধ্যপ্রাচ্য। হামলা-পাল্টা হামলায় লিপ্ত দু’দেশই। সরাসরি না হলেও এই যুদ্ধে ঢুকে পড়েছে আমেরিকাও। এ হেন পরিস্থিতিতে ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির আচমকা পাকিস্তান সফর নিয়ে আলোচনা শুরু হয়ে গিয়েছে বিশ্ব কূটনৈতিক মহলে।
০২১৮
তিন দিনের সফরে পাকিস্তানে গিয়েছেন ইব্রাহিম। সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, তাঁর এই সফর সম্পর্কে ইসলামাবাদের কাছে তেমন কোনও খবর ছিল না। আচমকাই ইব্রাহিমের সফর নিয়ে কৌতূহল দেখা গিয়েছে নানা মহলে।
০৩১৮
ইরান এবং পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্ক খুব একটা মধুর নয়। গত জানুয়ারিতে দু’দেশের মধ্যে নতুন করে উত্তেজনা দেখা দেয়। হামলা-পাল্টা হামলায় জড়িয়ে পড়ে দুই প্রতিবেশী দেশ।
০৪১৮
গত ২৩ জানুয়ারি পাকিস্তানের বালুচিস্তানে জঙ্গি সংগঠন জইশ আল অদলের ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন হামলা চালায় ইরান। কেন এই হামলা, তা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ইরানের বিদেশমন্ত্রী জানিয়েছিলেন যে, ওই হামলার লক্ষ্য ছিল জঙ্গি সংগঠন জইশ অল অদল বা ‘আর্মি অফ জাস্টিস’-এর ঘাঁটি ধ্বংস করা।
০৫১৮
তেহরানের দাবি ছিল, জইশ অল অদল নামক জঙ্গি সংগঠনের কার্যকলাপ মূলত ইরান-পাকিস্তান সীমান্ত জুড়ে। ওই জঙ্গি গোষ্ঠী ইরানের মাটিতে বেশ কয়েকটি হামলা চালিয়েছে বলেও দাবি তোলে ইব্রাহিম সরকার। সেই কারণেই তাদের ঘাঁটি নির্মূল করতে হামলা চালানো হয়েছে পাকিস্তানের মাটিতে।
০৬১৮
ইরানের এই যুক্তি মানতে নারাজ ছিল ইসলামাবাদ। পাকিস্তান সরকার দাবি করে, ইরানের হামলায় দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে। ইরানকে পাল্টা হামলার হুঁশিয়ারিও দেয় ইসলামাবাদ।
০৭১৮
পাকিস্তানের হুঁশিয়ারি যে ফাঁপা ছিল না, তার প্রমাণ মেলে দু’দিনের মধ্যেই। ইরানের উপর পাল্টা হামলা চালায় পাকিস্তান। ইরান এবং পাকিস্তানের হামলা-পাল্টা হামলার আবহে দু’দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কে ফাটল ধরে। পাক হামলাকে ভাল চোখে দেখেনি ইরান।
০৮১৮
তার পর থেকেই দু’দেশের মধ্যে চাপানউতর চলছে। এই আবহে ইরানের প্রেসিডেন্টের আচমকা পাক সফর খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। কেন তিনি পাকিস্তানে গেলেন? তেহরানের যুক্তি, দু’দেশের ভেঙে পড়া সম্পর্ক মজবুত করার লক্ষ্যেই এই সফর।
০৯১৮
সোমবারই ইসলামাবাদের মাটিতে পা রেখেছেন ইব্রাহিম। শুধু তিনি একা নন, এই সফরে ইরানের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে রয়েছেন তাঁর স্ত্রী। এ ছাড়াও ইব্রাহিমের সফরসঙ্গী তাঁর দেশের মন্ত্রিসভার একাধিক সদস্যও। কয়েক জন ব্যবসায়ীও রয়েছেন ইব্রাহিমের সঙ্গে।
১০১৮
সোমবারই পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট শাহবাজ় শরিফের সঙ্গে বৈঠক করেন ইব্রাহিম। দুই প্রতিবেশী দেশের অর্থনীতি, সীমান্ত, জ্বালানি সমস্যা ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা হয় দুই নেতার মধ্যে। পাকিস্তান সরকারও ইরানের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার করার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
১১১৮
পাকিস্তান এবং ইরানের সম্পর্ক চিরকালই অম্লমধুর। দুই দেশের সীমান্তে সর্বদাই উত্তেজনা রয়েছে। তার মধ্যেও দু’দেশের প্রধানদের একাধিক বার বৈঠক করতে দেখা গিয়েছে। কখনও পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে, আবার কখনও অবনতি হয়েছে।
১২১৮
ইব্রাহিমের পাক সফর কি শুধুই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নতি এবং বাণিজ্যিক কারণে? না কি এর নেপথ্যে অন্য কোনও অভিসন্ধি রয়েছে? শুরু হয়েছে জল্পনা। পাশাপাশি, কাশ্মীরও আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে।
১৩১৮
অনেকেই মনে করছেন, ইজ়রায়েলে আক্রমণের তেজ বৃদ্ধি করতে নতুন কৌশল অবলম্বন করছে তেহরান। তারা ইজ়রায়েলের উপর পারমাণবিক বোমা দিয়েও হামলা চালাতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। তাই নিজেদের পারমাণবিক শক্তির ভান্ডার বৃদ্ধি করতে পড়শি দেশের সাহায্য চাইছে ইরান।
১৪১৮
ইরান-ইজ়রায়েল এখনও সে ভাবে যুদ্ধে লিপ্ত হয়নি। কিন্তু দু’দেশই একে অপরের প্রতি হামলা করেছে। দিন কয়েক আগে ইজ়রায়েলের দিকে ৩৫০-এর বেশি ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে ইরান। যদিও সেই সব ক্ষেপণাস্ত্র মাটিতে পড়ার আগে আকাশেই ধ্বংস করে দেয় ইজ়রায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা।
১৫১৮
ইরানি হামলার খবর প্রকাশ্যে আসতেই আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ফোন করেন ইজ়রায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে। বন্ধু আমেরিকার থেকে সামরিক সহায়তার আশ্বাসও পায় ইজ়রায়েল।
১৬১৮
ইজ়রায়েলের পাশাপাশি পাকিস্তানও আমেরিকার বন্ধু। পাকিস্তানকেও অস্ত্র সরবরাহ করে বাইডেন সরকার। আমেরিকা যে ইরানের বিপক্ষে, তা ভাল ভাবেই জানে ইসলামাবাদ। এ হেন পরিস্থিতিতে ইরান প্রেসিডেন্টের সফর নিয়ে কিছুটা অস্বস্তিতেই পড়েছে পাকিস্তান।
১৭১৮
বিশ্ব কূটনৈতিক মহলে আরও একটি বিষয় কৌতূহল বাড়িয়েছে। সোমবার ইব্রাহিম এবং শাহবাজ় বৈঠক শেষে যৌথ সাংবাদিক সম্মেলন করেন। সেই সম্মেলনে দুই রাষ্ট্রপ্রধানের মধ্যে এক মতানৈক্যের ছবি প্রকাশ্যে এসেছে। আর এই মতানৈক্যের নেপথ্যে রয়েছে কাশ্মীর ইস্যু।
১৮১৮
সোমবারের সাংবাদিক বৈঠকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ় গাজ়ার পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করার পাশাপাশি কাশ্মীর নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন। ইব্রাহিমকেও একই বিষয়ে ইরানের অবস্থান জানানোর জন্য আহ্বান জানানো হয়েছিল। কিন্তু ইরানের প্রেসিডেন্ট কাশ্মীর ইস্যুতে নীরবই ছিলেন। তাঁর এই নীরবতা শাহবাজ় সরকার ভাল ভাবে নেয়নি, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তাই এখন পাকিস্তান এবং ইরানের সম্পর্ক কোন দিকে গড়ায়, সে দিকে নজর থাকবে সকলের।