Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
India China Conflict

প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা কী? ভারত-চিন সম্পর্কের ক্ষেত্রে কেন তা এত গুরুত্বপূর্ণ?

৯ ডিসেম্বর প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা (লাইন অফ অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল বা এলএসি) অতিক্রম করে চিনের পিপলস লিবারেশন আর্মি বা পিএলএ অরুণাচল প্রদেশের তাওয়াংয়ে হামলা করে। এলএসি অতিক্রম করে চিনা সেনাবাহিনী বারংবার কী কারণে ভারতের এলাকায় হামলা করে?

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০২২ ১০:৫৬
Share: Save:
০১ ২৬
৯ ডিসেম্বর প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা (লাইন অফ অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল বা এলএসি) অতিক্রম করে চিনের পিপলস লিবারেশন আর্মি বা পিএলএ অরুণাচল প্রদেশের তাওয়াংয়ে হামলা করে।

৯ ডিসেম্বর প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা (লাইন অফ অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল বা এলএসি) অতিক্রম করে চিনের পিপলস লিবারেশন আর্মি বা পিএলএ অরুণাচল প্রদেশের তাওয়াংয়ে হামলা করে।

০২ ২৬
সংবাদ সংস্থা এএনআই জানিয়েছে, শুক্রবার গভীর রাতে পেরেকযুক্ত লাঠি নিয়ে ভারতীয় জওয়ানদের উপর চড়াও হয়েছিল চিনা সেনাবাহিনী। ভারতীয় সেনা তা ‘দৃঢ়তার সঙ্গে প্রতিরোধ’ করে বলে জানা যায়। সে সময় সংঘর্ষে দু’পক্ষেরই বেশ কয়েক জন আহত হন। হাতাহাতি এবং লাঠি-পাথর নিয়ে সংঘর্ষে ভারতীয় সেনার ৬ জন জওয়ান ‘সামান্য আহত’ হন বলেও সেনা সূত্রকে উদ্ধৃত করে জানায় সংবাদ সংস্থা।

সংবাদ সংস্থা এএনআই জানিয়েছে, শুক্রবার গভীর রাতে পেরেকযুক্ত লাঠি নিয়ে ভারতীয় জওয়ানদের উপর চড়াও হয়েছিল চিনা সেনাবাহিনী। ভারতীয় সেনা তা ‘দৃঢ়তার সঙ্গে প্রতিরোধ’ করে বলে জানা যায়। সে সময় সংঘর্ষে দু’পক্ষেরই বেশ কয়েক জন আহত হন। হাতাহাতি এবং লাঠি-পাথর নিয়ে সংঘর্ষে ভারতীয় সেনার ৬ জন জওয়ান ‘সামান্য আহত’ হন বলেও সেনা সূত্রকে উদ্ধৃত করে জানায় সংবাদ সংস্থা।

০৩ ২৬
তবে, ভারত এবং চিনের মধ্যে সংঘর্ষ এই প্রথম নয়। প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার পার্শ্ববর্তী এলাকা দখল নিয়ে এর আগেও চিনা আক্রমণ হয়েছে। ২০১৭ সালে ডোকলাম সংঘর্ষ হোক বা ২০২০ সালের গালওয়ান উপত্যকায় ভারত-চিন সংঘর্ষ— প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা ২ দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এলএসি কি আদতে ২ দেশের সীমান্তরেখা নির্ধারণ করে? কী কারণে বারংবার এলএসি অতিক্রম করে চিনা সেনাবাহিনী ভারতের এলাকায় হামলা করে?

তবে, ভারত এবং চিনের মধ্যে সংঘর্ষ এই প্রথম নয়। প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার পার্শ্ববর্তী এলাকা দখল নিয়ে এর আগেও চিনা আক্রমণ হয়েছে। ২০১৭ সালে ডোকলাম সংঘর্ষ হোক বা ২০২০ সালের গালওয়ান উপত্যকায় ভারত-চিন সংঘর্ষ— প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা ২ দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এলএসি কি আদতে ২ দেশের সীমান্তরেখা নির্ধারণ করে? কী কারণে বারংবার এলএসি অতিক্রম করে চিনা সেনাবাহিনী ভারতের এলাকায় হামলা করে?

০৪ ২৬
ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের মধ্যে লাইন অফ কন্ট্রোলের (এলওসি) চেয়ে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার পটভূমি একদমই আলাদা। এলএসি অনুযায়ী, আকসাই চিন এলাকাটি চিন নিয়ন্ত্রিত। যদিও তা জম্মু-কাশ্মীরের অন্তর্ভুক্ত। ফলে কোন এলাকা কোন দেশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, তা নিয়ে বহু বছর ধরে বিতর্ক চলে আসছে।

ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের মধ্যে লাইন অফ কন্ট্রোলের (এলওসি) চেয়ে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার পটভূমি একদমই আলাদা। এলএসি অনুযায়ী, আকসাই চিন এলাকাটি চিন নিয়ন্ত্রিত। যদিও তা জম্মু-কাশ্মীরের অন্তর্ভুক্ত। ফলে কোন এলাকা কোন দেশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, তা নিয়ে বহু বছর ধরে বিতর্ক চলে আসছে।

০৫ ২৬
‘লাইন অফ অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল’ নামটি প্রথম উল্লেখ করা হয় ১৯৫৯ সালে। চিনের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী চৌ এন লাই ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুকে লেখা একটি চিঠিতে ‘লাইন অফ অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল’ নামটির উল্লেখ করেছিলেন।

‘লাইন অফ অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল’ নামটি প্রথম উল্লেখ করা হয় ১৯৫৯ সালে। চিনের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী চৌ এন লাই ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুকে লেখা একটি চিঠিতে ‘লাইন অফ অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল’ নামটির উল্লেখ করেছিলেন।

০৬ ২৬
১৯৬২ সালে ভারত এবং চিনের যুদ্ধের পর ‘লাইন অফ অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল’ অস্ত্র সংবরণ রেখা হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। ১৯৯৩ সালে দুই পক্ষের তরফে স্বাক্ষরের পর আনুষ্ঠানিক ভাবে তা স্বীকৃতি পায়।

১৯৬২ সালে ভারত এবং চিনের যুদ্ধের পর ‘লাইন অফ অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল’ অস্ত্র সংবরণ রেখা হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। ১৯৯৩ সালে দুই পক্ষের তরফে স্বাক্ষরের পর আনুষ্ঠানিক ভাবে তা স্বীকৃতি পায়।

০৭ ২৬
আনুষ্ঠানিক ভাবে স্বীকৃতি পাওয়ার পরেও এলএসি নিয়ে দুই দেশের মধ্যে সংঘর্ষের অন্ত ছিল না। ভারতের তরফে এলএসি-র দৈর্ঘ্য ৩,৪৮৮ কিলোমিটার মানা হলেও চিনের তরফে এলএসি-র দৈর্ঘ্য ২,০০০ কিলোমিটার মেনে চলা হয়।

আনুষ্ঠানিক ভাবে স্বীকৃতি পাওয়ার পরেও এলএসি নিয়ে দুই দেশের মধ্যে সংঘর্ষের অন্ত ছিল না। ভারতের তরফে এলএসি-র দৈর্ঘ্য ৩,৪৮৮ কিলোমিটার মানা হলেও চিনের তরফে এলএসি-র দৈর্ঘ্য ২,০০০ কিলোমিটার মেনে চলা হয়।

০৮ ২৬
প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা ৩ ভাগে বিভক্ত— পূর্ব (ইস্টার্ন), মধ্যবর্তী (মিডল) এবং পশ্চিম (ওয়েস্টার্ন)। ইস্টার্ন লাইনের মধ্যে পড়ে ম্যাকমহন লাইন। ১৯১৪ সালে ব্রিটিশ শাসনাধীন ভারত এবং তিব্বত সরকারের মধ্যে শিমলা চুক্তির মাধ্যমে নির্ধারিত হয়।

প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা ৩ ভাগে বিভক্ত— পূর্ব (ইস্টার্ন), মধ্যবর্তী (মিডল) এবং পশ্চিম (ওয়েস্টার্ন)। ইস্টার্ন লাইনের মধ্যে পড়ে ম্যাকমহন লাইন। ১৯১৪ সালে ব্রিটিশ শাসনাধীন ভারত এবং তিব্বত সরকারের মধ্যে শিমলা চুক্তির মাধ্যমে নির্ধারিত হয়।

০৯ ২৬
অসম, বর্মা (মায়নমার) এবং হিমালয় সংলগ্ন বহু এলাকা ইস্টার্ন লাইনের অন্তর্গত। এই লাইনের দৈর্ঘ্য ৮৯০ কিলোমিটার। পূর্ব ভুটান থেকে বার্মার সীমান্তের ইসু রাজি পাস পর্যন্ত অবস্থিত।

অসম, বর্মা (মায়নমার) এবং হিমালয় সংলগ্ন বহু এলাকা ইস্টার্ন লাইনের অন্তর্গত। এই লাইনের দৈর্ঘ্য ৮৯০ কিলোমিটার। পূর্ব ভুটান থেকে বার্মার সীমান্তের ইসু রাজি পাস পর্যন্ত অবস্থিত।

১০ ২৬
চিনের দাবি, শিমলা চুক্তির সময় তাদের তরফে কোনও আধিকারিক উপস্থিত ছিলেন না। তিব্বত সরকারের সীমানা নির্ধারণ করার কোনও ক্ষমতা নেই। তিব্বত নাকি বরাবর চিনের দখলে রয়েছে। তাই তিব্বতের তরফে যে কোনও সিদ্ধান্ত চিন সরকার নিতে পারে। এমনকি, সমগ্র অরুণাচল প্রদেশ তাদের দখলেই রয়েছে বলে দাবি করে চিন সরকার।

চিনের দাবি, শিমলা চুক্তির সময় তাদের তরফে কোনও আধিকারিক উপস্থিত ছিলেন না। তিব্বত সরকারের সীমানা নির্ধারণ করার কোনও ক্ষমতা নেই। তিব্বত নাকি বরাবর চিনের দখলে রয়েছে। তাই তিব্বতের তরফে যে কোনও সিদ্ধান্ত চিন সরকার নিতে পারে। এমনকি, সমগ্র অরুণাচল প্রদেশ তাদের দখলেই রয়েছে বলে দাবি করে চিন সরকার।

১১ ২৬
এ ছাড়াও লং জু, আসাফিলা এবং তাওয়াং উপত্যকার দিকেও চিনের নজর রয়েছে। ১৯৬২ সালের ভারত-চিন যুদ্ধের সময় থেকে ১০০ বর্গ কিলোমিটারের অরণ্য এবং পর্বতবেষ্টিত আসাফিলা দখল করতে চায় চিন।

এ ছাড়াও লং জু, আসাফিলা এবং তাওয়াং উপত্যকার দিকেও চিনের নজর রয়েছে। ১৯৬২ সালের ভারত-চিন যুদ্ধের সময় থেকে ১০০ বর্গ কিলোমিটারের অরণ্য এবং পর্বতবেষ্টিত আসাফিলা দখল করতে চায় চিন।

১২ ২৬
বর্তমানে আসাফিলা খাতায় কলমে কোনও দেশের দখলে না থাকলেও মাঝেমধ্যেই ভারত এবং চিন সেনার মধ্যে এই এলাকায় গোলমাল বাধে। ২০০৩ সালে ভারতীয় সেনা এই এলাকায় টহল দিতে এলে তাঁদের কাছ থেকে অস্ত্র ছিনিয়ে নেন চিনের সেনারা।

বর্তমানে আসাফিলা খাতায় কলমে কোনও দেশের দখলে না থাকলেও মাঝেমধ্যেই ভারত এবং চিন সেনার মধ্যে এই এলাকায় গোলমাল বাধে। ২০০৩ সালে ভারতীয় সেনা এই এলাকায় টহল দিতে এলে তাঁদের কাছ থেকে অস্ত্র ছিনিয়ে নেন চিনের সেনারা।

১৩ ২৬
২০১৪ সালে এই এলাকার উপর দিয়ে রাস্তা নির্মাণ করতে চাইলে চিনকে বাধা দেয় ভারতীয় সেনাবাহিনী। চিন পরে দাবি করে, ভারতীয় সেনারা সীমা লঙ্ঘন করে আসাফিলা এলাকায় চলে আসে।

২০১৪ সালে এই এলাকার উপর দিয়ে রাস্তা নির্মাণ করতে চাইলে চিনকে বাধা দেয় ভারতীয় সেনাবাহিনী। চিন পরে দাবি করে, ভারতীয় সেনারা সীমা লঙ্ঘন করে আসাফিলা এলাকায় চলে আসে।

১৪ ২৬
লং জু এলাকাতেও আগে ভারতের একটি সীমান্ত চৌকি ছিল। কিন্তু ১৯৬২ সালে যুদ্ধের পর তা চিনের দখলে চলে আসে। চিন এই এলাকা থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে একটি চৌকি তৈরি করে। এ ছাড়াও চিনের দাবি, তাওয়াং এলাকাও তাদের দখলে রয়েছে।

লং জু এলাকাতেও আগে ভারতের একটি সীমান্ত চৌকি ছিল। কিন্তু ১৯৬২ সালে যুদ্ধের পর তা চিনের দখলে চলে আসে। চিন এই এলাকা থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে একটি চৌকি তৈরি করে। এ ছাড়াও চিনের দাবি, তাওয়াং এলাকাও তাদের দখলে রয়েছে।

১৫ ২৬
এলএসি-র মধ্যবর্তী অংশ নিয়েও বিতর্কের শেষ নেই। লাদাখ থেকে নেপাল সীমান্ত পর্যন্ত এই লাইনের দৈর্ঘ্য ৫৪৫ কিলোমিটার। উত্তরাখণ্ডের চামোলি জেলার বারাহোতি এলাকা নিয়ে ভারত-চিনের মতবিরোধ রয়েছে। মাঝেমধ্যেই চিনা সেনাবাহিনীকে এই এলাকায় টহল দিতে দেখা যায়।

এলএসি-র মধ্যবর্তী অংশ নিয়েও বিতর্কের শেষ নেই। লাদাখ থেকে নেপাল সীমান্ত পর্যন্ত এই লাইনের দৈর্ঘ্য ৫৪৫ কিলোমিটার। উত্তরাখণ্ডের চামোলি জেলার বারাহোতি এলাকা নিয়ে ভারত-চিনের মতবিরোধ রয়েছে। মাঝেমধ্যেই চিনা সেনাবাহিনীকে এই এলাকায় টহল দিতে দেখা যায়।

১৬ ২৬
এর পর আসা যাক লাইনের পশ্চিমাংশে। কারাকোরাম পাস থেকে ডেমচক পর্যন্ত এই লাইনটি অবস্থিত। এখানেই চিনের সঙ্গে ভারতের সেনাবাহিনীর সবচেয়ে বেশি সংঘর্ষ হতে দেখা যায়। ৩৮ হাজার বর্গকিলোমিটারের আকসাই চিন এই অঞ্চলেই অবস্থিত।

এর পর আসা যাক লাইনের পশ্চিমাংশে। কারাকোরাম পাস থেকে ডেমচক পর্যন্ত এই লাইনটি অবস্থিত। এখানেই চিনের সঙ্গে ভারতের সেনাবাহিনীর সবচেয়ে বেশি সংঘর্ষ হতে দেখা যায়। ৩৮ হাজার বর্গকিলোমিটারের আকসাই চিন এই অঞ্চলেই অবস্থিত।

১৭ ২৬
২০২০ সালে গালওয়ান উপত্যকায় ভারত সেনাবাহিনীর সঙ্গে চিন সেনাবাহিনীর সংঘর্ষে ২০ জন ভারতীয় সেনা নিহত হন। গালওয়ান উপত্যকাও লাইনের পশ্চিমাংশে রয়েছে।

২০২০ সালে গালওয়ান উপত্যকায় ভারত সেনাবাহিনীর সঙ্গে চিন সেনাবাহিনীর সংঘর্ষে ২০ জন ভারতীয় সেনা নিহত হন। গালওয়ান উপত্যকাও লাইনের পশ্চিমাংশে রয়েছে।

১৮ ২৬
চিনের তরফে বিভিন্ন বিন্দু নির্বাচন করে একটি কাল্পনিক রেখা দিয়ে জুড়ে দেওয়া হয়েছে। সময় বিশেষে এই কাল্পনিক রেখা বদল হতে থাকে। ভারতের প্রাক্তন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিবশঙ্কর মেননের মতে, চিন এই সুযোগ নিয়েই বার বার ভারতের উপর হামলা করে আসছে।

চিনের তরফে বিভিন্ন বিন্দু নির্বাচন করে একটি কাল্পনিক রেখা দিয়ে জুড়ে দেওয়া হয়েছে। সময় বিশেষে এই কাল্পনিক রেখা বদল হতে থাকে। ভারতের প্রাক্তন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিবশঙ্কর মেননের মতে, চিন এই সুযোগ নিয়েই বার বার ভারতের উপর হামলা করে আসছে।

১৯ ২৬
তবে এর নেপথ্যে কিছু ঐতিহাসিক এবং কূটনৈতিক কারণও রয়েছে। আকসাই চিনের উচ্চতা ১,৭০০ ফুট। যুদ্ধের সময় এই এলাকায় চিনের সেনাবাহিনী থাকলে তাদের জেতার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

তবে এর নেপথ্যে কিছু ঐতিহাসিক এবং কূটনৈতিক কারণও রয়েছে। আকসাই চিনের উচ্চতা ১,৭০০ ফুট। যুদ্ধের সময় এই এলাকায় চিনের সেনাবাহিনী থাকলে তাদের জেতার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

২০ ২৬
পাকিস্তানের সঙ্গে জোট বাঁধতেও আকসাই চিন দখল করা গুরুত্বপূর্ণ। পাক অধিকৃত কাশ্মীর (পাকিস্তান অকুপায়েড কাশ্মীর বা পিওকে) এবং আকসাই চিনের মাঝে রয়েছে সিয়াচেন হিমবাহ। চিন সুকৌশলে এই এলাকা দখল করে রেখেছে।

পাকিস্তানের সঙ্গে জোট বাঁধতেও আকসাই চিন দখল করা গুরুত্বপূর্ণ। পাক অধিকৃত কাশ্মীর (পাকিস্তান অকুপায়েড কাশ্মীর বা পিওকে) এবং আকসাই চিনের মাঝে রয়েছে সিয়াচেন হিমবাহ। চিন সুকৌশলে এই এলাকা দখল করে রেখেছে।

২১ ২৬
১৯ শতকের ইতিহাস ঘাঁটলে জানা যায়, আকসাই চিন ব্রিটিশ ভারতের অন্তর্গত ছিল না। জম্মু ও কাশ্মীরের রাজার অধীনে ছিল এই এলাকা। ১৮৬৫ সালে ‘জনসন লাইন’-এর প্রস্তাব আনা হয়। জম্মু ও কাশ্মীরের রাজা সেই সময় এই প্রস্তাবে রাজি হলেও চিনের কাছে এই প্রস্তাব রাখা হয়নি।

১৯ শতকের ইতিহাস ঘাঁটলে জানা যায়, আকসাই চিন ব্রিটিশ ভারতের অন্তর্গত ছিল না। জম্মু ও কাশ্মীরের রাজার অধীনে ছিল এই এলাকা। ১৮৬৫ সালে ‘জনসন লাইন’-এর প্রস্তাব আনা হয়। জম্মু ও কাশ্মীরের রাজা সেই সময় এই প্রস্তাবে রাজি হলেও চিনের কাছে এই প্রস্তাব রাখা হয়নি।

২২ ২৬
তিন দশক পর ১৮৯৫ সালে ম্যাককার্টনে-ম্যাকডোনাল্ড লাইনের প্রস্তাব রাখা হয়। যার সঙ্গে এখনকার এলএসি-র সাদৃশ্য রয়েছে। এই প্রস্তাবে আকসাই চিন এলাকাটি চিনের দখলে পড়ে। চিনের সামনে এই প্রস্তাব রাখার পরেও তাদের তরফে কোনও জবাব আসেনি।

তিন দশক পর ১৮৯৫ সালে ম্যাককার্টনে-ম্যাকডোনাল্ড লাইনের প্রস্তাব রাখা হয়। যার সঙ্গে এখনকার এলএসি-র সাদৃশ্য রয়েছে। এই প্রস্তাবে আকসাই চিন এলাকাটি চিনের দখলে পড়ে। চিনের সামনে এই প্রস্তাব রাখার পরেও তাদের তরফে কোনও জবাব আসেনি।

২৩ ২৬
স্বাধীনতার পর ভারতের তরফে ১৮৬৫ সালের জনসন লাইন মেনে মানচিত্র বানানো হয়। কিন্তু ১৯৫০ সাল নাগাদ চিন আকসাই চিনের পার্শ্ববর্তী এলাকার উপর দিয়ে রাস্তা নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়।

স্বাধীনতার পর ভারতের তরফে ১৮৬৫ সালের জনসন লাইন মেনে মানচিত্র বানানো হয়। কিন্তু ১৯৫০ সাল নাগাদ চিন আকসাই চিনের পার্শ্ববর্তী এলাকার উপর দিয়ে রাস্তা নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়।

২৪ ২৬
তবে ভূ-প্রাকৃতিক গোলযোগ এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা দুর্গম হওয়ার কারণে ভারত ১৯৫৭ সালে এই খবর পায়। অন্য দিকে ১৯৫৮ সালে চিন তাদের মানচিত্রে আকসাই চিন এলাকাটি দেখানোর সিদ্ধান্ত নেয়। এই নিয়ে ভারত এবং চিনের মধ্যে বিতর্কের সৃষ্টি হয়। এই বিতর্কই পরে বড় আকার ধারণ করে ১৯৬২ সালে ভারত-চিন যুদ্ধে গড়ায়।

তবে ভূ-প্রাকৃতিক গোলযোগ এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা দুর্গম হওয়ার কারণে ভারত ১৯৫৭ সালে এই খবর পায়। অন্য দিকে ১৯৫৮ সালে চিন তাদের মানচিত্রে আকসাই চিন এলাকাটি দেখানোর সিদ্ধান্ত নেয়। এই নিয়ে ভারত এবং চিনের মধ্যে বিতর্কের সৃষ্টি হয়। এই বিতর্কই পরে বড় আকার ধারণ করে ১৯৬২ সালে ভারত-চিন যুদ্ধে গড়ায়।

২৫ ২৬
১৯৯৩ সালে দুই দেশের শান্তি বজায় রাখার জন্য প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখাকে আইনি স্বীকৃতি দেওয়া হয়। তবে দুই দেশের তরফে এই সমস্যার সমাধান এখনও করা হয়নি। ভারতের কয়েক জন বিশারদের মতে, চিন এলএসি নিয়ে কোনও দিনও ভারতের সঙ্গে সমঝোতায় আসবে না। চিন বরাবর একতান্ত্রিক ক্ষমতায় বিশ্বাসী। এলএসি নিয়ে সমঝোতায় এলে চিন বিশ্বে নিজের একচেটিয়া আধিপত্য বজায় রাখতে পারবে না বলে মনে করেন বিশারদরা।

১৯৯৩ সালে দুই দেশের শান্তি বজায় রাখার জন্য প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখাকে আইনি স্বীকৃতি দেওয়া হয়। তবে দুই দেশের তরফে এই সমস্যার সমাধান এখনও করা হয়নি। ভারতের কয়েক জন বিশারদের মতে, চিন এলএসি নিয়ে কোনও দিনও ভারতের সঙ্গে সমঝোতায় আসবে না। চিন বরাবর একতান্ত্রিক ক্ষমতায় বিশ্বাসী। এলএসি নিয়ে সমঝোতায় এলে চিন বিশ্বে নিজের একচেটিয়া আধিপত্য বজায় রাখতে পারবে না বলে মনে করেন বিশারদরা।

২৬ ২৬
ভারত এবং চিনের মধ্যে এলএসি নিয়ে চলে আসা সংঘর্ষ যত দ্রুত শেষ হয় ততই ভাল। অনেকের মতে, দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ লাগলে তা যে কোনও মুহূর্তে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আকার নিয়ে নিতে পারে। তবে ভারত-চিন সম্পর্কে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা ক্রমশ জটিলতা বাড়িয়েই চলেছে। তাওয়াং হামলার ফলে  ভারতের সঙ্গে চিনের সংঘাতের বিষয়টি আবার স্পষ্ট হল।

ভারত এবং চিনের মধ্যে এলএসি নিয়ে চলে আসা সংঘর্ষ যত দ্রুত শেষ হয় ততই ভাল। অনেকের মতে, দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ লাগলে তা যে কোনও মুহূর্তে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আকার নিয়ে নিতে পারে। তবে ভারত-চিন সম্পর্কে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা ক্রমশ জটিলতা বাড়িয়েই চলেছে। তাওয়াং হামলার ফলে ভারতের সঙ্গে চিনের সংঘাতের বিষয়টি আবার স্পষ্ট হল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy