Advertisement
০৫ মে ২০২৫
Myanmar Civil War

ইরাবতীতে চিনা লগ্নির জলাঞ্জলি! আরাকান আর্মির দাপাদাপিতে পোয়াবারো ভারতের?

মায়ানমারের রাখাইন প্রদেশের অর্থনৈতিক অঞ্চল সংলগ্ন এলাকায় জুন্টা ফৌজের সঙ্গে তীব্র হয়েছে বিদ্রোহী আরাকান আর্মির লড়াই। শেষ পর্যন্ত সরকারি বাহিনীর পরাজয় হলে প্রশ্নের মুখে পড়বে সেখানকার বিপুল চিনা বিনিয়োগ।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৯ মার্চ ২০২৫ ০৮:০১
Share: Save:
০১ ২১
Myanmar Civil War

গৃহযুদ্ধে ক্ষতবিক্ষত মায়ানমার। সেই আগুনে পুড়ছে চিনও। পরিস্থিতি যা, তাতে ইরাবতীর তীরে ডুবতে পারে বেজিঙের যাবতীয় লগ্নি। বিপুল লোকসান আঁচ করতে পেরে ইতিমধ্যেই মাথায় হাত পড়েছে ড্রাগনের। অন্য দিকে সাবেক বর্মা থেকে উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলিতে যাতে অশান্তি ছড়িয়ে না পড়ে, তার জন্য সেখানে সতর্ক দৃষ্টি রেখেছে নয়াদিল্লি।

০২ ২১
Myanmar Civil War

গত বছরের শেষের দিকে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী রাখাইন প্রদেশ মায়ানমারের জুন্টা সেনা সরকারের থেকে একরকম ছিনিয়ে নেয় সেখানকার বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি বা এএ। তার পর থেকেই হারানো জায়গা পুনরুদ্ধারে মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছেন ইয়াঙ্গনের (সাবেক রেঙ্গুন) ফৌজি জেনারেলরা। ফলে রাখাইন রাজ্যে বেড়েছে যুদ্ধের তীব্রতা। আর এর ফলে বিপাকে পড়েছে চিন।

০৩ ২১
Myanmar Civil War

সম্প্রতি রাখাইনের ‘অর্থনৈতিক অ়ঞ্চল’ (ইকোনমিক জ়োন) সংলগ্ন একটি গ্রামে ব্যাপক বোমাবর্ষণ করে জুন্টা সেনা। ফলে নিমেষে ধ্বংস হয়ে যায় প্রায় ২০০ বাড়ি। এলাকাটিকে আরাকান আর্মির গুপ্তঘাঁটি বলে চিহ্নিত করেছিল মায়ানমারের সরকারি বাহিনী। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, রাখাইনের ওই ‘অর্থনৈতিক অঞ্চলে’ বিপুল বিনিয়োগ রয়েছে বেজিঙের।

০৪ ২১
Myanmar Civil War

জুন্টা ফৌজের বোমাবর্ষণের বিষয়টি নিয়ে ‘রেডিয়ো ফ্রি এশিয়া’র কাছে মুখ খুলেছেন এলাকাবাসীরা। তাঁদের দাবি, রাখাইন থেকে ইয়াঙ্গনের সেনা সরকারকে পুরোপুরি উৎখাত করার চেষ্টা চালাচ্ছে আরাকান আর্মি। আর তাই আক্রমণের ঝাঁঝ বাড়িয়েছে এই সশস্ত্র গোষ্ঠী। হামলার চাপ সামলাতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে সরকারি বাহিনী।

০৫ ২১
Myanmar Civil War

মায়ানমারের জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলির মধ্যে আরাকান আর্মি বা এএ সবচেয়ে শক্তিশালী। ২০২১ সাল থেকে রাখাইনে ধীরে ধীরে জুন্টা ফৌজকে কোণঠাসা করতে সক্ষম হয়েছে তারা। বর্তমানে এই এলাকার অধিকাংশ জায়গার নিয়ন্ত্রণ রয়েছে এই সশস্ত্র গোষ্ঠীর হাতে। সেখানে একরকম স্বাধীন সরকার প্রতিষ্ঠা করেছে আরাকান আর্মি।

০৬ ২১
Myanmar Civil War

মায়ানমারের রাখাইন প্রদেশে এখনও জুন্টা সেনার দু’টি শক্ত ঘাঁটি রয়েছে। এর মধ্যে প্রথমটির অবস্থান রাজধানী সিত্তেয়। আর দ্বিতীয় ফৌজিঘাঁটি রয়েছে কিয়াউকপিউ আর্থিক অঞ্চলে। সংশ্লিষ্ট এলাকাটির সঙ্গে চিনের স্বার্থ জড়িয়ে রয়েছে। এ ছাড়া ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ কর্মসূচির আওতায় কিয়াউকপিউতে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের কথা রয়েছে বেজিঙের।

০৭ ২১
Myanmar Civil War

স্থানীয় সংবাদ সংস্থাগুলির প্রতিবেদন অনুযায়ী, বর্তমানে কিয়াউকপিউ দখলের জন্য জুন্টা বাহিনীর সঙ্গে মরণপণ লড়াই করছে বিদ্রোহী আরাকান আর্মি। মূলত সেখানকার অর্থনৈতিক অঞ্চলের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা নৌ এবং বিমানঘাঁটিকে নিশানা করছেন এএ-র যোদ্ধারা। কারণ, বিদ্রোহীদের গোপন আস্তানাগুলিকে ধ্বংস করতে সেখান থেকেই বার বার আক্রমণ শানাচ্ছেন জুন্টার ফৌজি জেনারেলরা।

০৮ ২১
Myanmar Civil War

প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকদের একাংশের দাবি, আরাকান আর্মির হাতে কিয়াউকপিউর পতন হলে প্রশ্নের মুখে পড়বে সেখানকার চিনা লগ্নি। সে ক্ষেত্রে বেজিঙের গভীর সমুদ্রবন্দর তৈরির পরিকল্পনায় যে জল পড়বে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। রাখাইন রাজ্যে একের পর এক রণাঙ্গনে জুন্টা সেনার পরাজয়ে সেই আশঙ্কা আরও তীব্র হয়েছে।

০৯ ২১
Myanmar Civil War

‘রেডিয়ো ফ্রি এশিয়া’কে এলাকাবাসীরা জানিয়েছেন, ‘‘গত ৬ মার্চ ইউ জ়িন গ্রামে আত্মঘাতী ড্রোন হামলা চালায় ইয়াঙ্গনের সরকারি বাহিনী। এতে শতাধিক বাড়িতে আগুন লেগে যায়। বাসিন্দারা কেউই শেষ সম্বলটুকু ঘর থেকে বার করে আনতে পারেননি।’’ কিয়াউকপিউর নৌসেনা ঘাঁটি থেকে ওই আক্রমণ শানানো হয়েছে বলে দাবি করেছেন তাঁরা।

১০ ২১
Myanmar Civil War

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কিয়াউকপিউয়ের এক বাসিন্দা জানিয়েছেন, ‘‘মাঝরাতে গোটা গ্রাম দাউ দাউ করে জ্বলে ওঠে। তবে ড্রোন হামলায় কোনও জীবনহানির ঘটনা ঘটেনি। এই এলাকায় যুদ্ধের তীব্রতা বৃদ্ধি পাওয়ায় অধিকাংশ বাসিন্দাই বাড়িঘর ছেড়ে হয় অন্যত্র পালিয়েছেন, নয়তো যোগ দিয়েছেন আরাকান আর্মিতে।’’

১১ ২১
Myanmar Civil War

‘রেডিয়ো ফ্রি এশিয়া’র তরফে এএ যোদ্ধাদের মুখপাত্র খাইং থু খা-র সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। খুব দ্রুত জুন্টা সরকারকে ড্রোন হামলার জবাব দেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি। অন্য দিকে সরকারি ফৌজের মুখপাত্র হ্লা থেইন বিদ্রোহীদের ঘাড়েই যাবতীয় দোষ চাপিয়েছেন। তবে ড্রোন আক্রমণের ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য দেননি তিনি।

১২ ২১
Myanmar Civil War

সূত্রের খবর, গত ৪ মার্চ কিয়াউকপিউয়ের দানিয়াওয়াদ্দি নৌঘাঁটিতে সাঁড়াশি আক্রমণ চালায় আরাকান আর্মি। ঝটিতি হামলায় ঘাঁটির নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা তিনটি ফৌজি আউটপোস্ট দখল করে নেয় তারা। ফলে বাধ্য হয়ে নৌঘাঁটির আরও ভিতরের দিকে ঢুকে যায় জুন্টার সেনা। এর পতন ঠেকানোর মরিয়া চেষ্টা করছে তারা।

১৩ ২১
Myanmar Civil War

২০১৩ সালে ‘চিন মায়ানমার অর্থনৈতিক করিডোর’ (চায়না মায়ানমার ইকোনমিক করিডোর বা সিএমইসি) প্রকল্পের কাজ শুরু করে বেজিং। এতে ড্রাগনভূমির ইউনান প্রদেশ থেকে মায়ানমারের মুসে এবং মান্দালয় হয়ে রাখাইন প্রদেশের কিয়াউকপিউ পর্যন্ত নির্মাণ করা হবে চওড়া রাস্তা। ওই এলাকার গভীর সমুদ্রবন্দরে সড়কটির শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

১৪ ২১
Myanmar Civil War

সিএমইসির আওতাধীন ৪৩১ কিলোমিটার লম্বা মুসে-মান্দালয় রেলপথ তৈরিরও কথা রয়েছে চিনের। এটি প্রকল্পের সর্ববৃহৎ নির্মাণ বলে জানা গিয়েছে। এর আনুমানিক ব্যয় ৯০০ কোটি ডলার ধার্য করা হয়েছিল। মায়ানমারের রেলপথটিকে ইউনান প্রদেশের রুইলির রেললাইনের সঙ্গে সংযুক্ত করার স্বপ্ন রয়েছে ড্রাগনের।

১৫ ২১
Myanmar Civil War

এ হেন পরিস্থিতিতে কিয়াউকপিউয়ের পতন হলে চরম সমস্যার মুখে পড়বে জুন্টা সরকার। বিশ্লেষকদের একাংশের দাবি, সে ক্ষেত্রে মায়ানমার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পৃথক রাষ্ট্র হিসাবে আত্মপ্রকাশ করতে পারে রাখাইন প্রদেশ। অন্য দিকে নিজেদের আর্থিক স্বার্থ বজায় রাখতে আরাকান আর্মির সঙ্গে সমঝোতায় যেতে হবে বেজিংকে, যা ড্রাগনের জন্য মোটেই সুখকর নয়।

১৬ ২১
Myanmar Civil War

‘চিন মায়ানমার অর্থনৈতিক করিডোর’ প্রকল্পের মাধ্যমে দক্ষিণ চিনের ইউনান থেকে তেল এবং গ্যাসের পাইপলাইন তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে বেজিঙের। প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকদের দাবি, এর নেপথ্যে সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য রয়েছে ড্রাগনের। দীর্ঘ দিন ধরেই তাইওয়ানকে কব্জা করার ছক কষছেন সেখানকার প্রেসিডেন্ট তথা চেয়ারম্যান শি জিনপিং।

১৭ ২১
Myanmar Civil War

এ বছর মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসাবে ডোনাল্ড ট্রাম্প শপথ নেওয়ার পর থেকেই ওয়াশিংটনের সঙ্গে বেজিঙের সম্পর্কের যথেষ্ট অবনতি হয়েছে। দুই মহাশক্তিধর দেশের মধ্যে বেঁধে গিয়েছে শুল্কযুদ্ধ। এই পরিস্থিতিতে সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রকে যুদ্ধের হুমকি দিয়েছে ড্রাগন। পাল্টা হুঁশিয়ারির সুর শোনা গিয়েছে আমেরিকার গলাতেও।

১৮ ২১
Myanmar Civil War

বিশেষজ্ঞদের কথায়, তাইওয়ান হোক বা ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় আধিপত্য, আগামী দিনে এই দুই ইস্যুতে আমেরিকার সঙ্গে সম্মুখসমরে নামতে পারে চিন। যুদ্ধ শুরু হলে জ্বালানি সমস্যায় পড়তে পারে বেজিং। সেটা মেটাতেই ইউনান থেকে রাখাইন পর্যন্ত তেল এবং গ্যাসের পাইপলাইন নির্মাণ করতে চাইছে জিনপিং সরকার।

১৯ ২১
Myanmar Civil War

সামরিক দিক থেকে সিএমইসির তিনটি গুরুত্ব রয়েছে। প্রথমত, এর মাধ্যমে বঙ্গোপসাগরে আমেরিকাকে চ্যালেঞ্জ করতে পারবে চিনের ‘পিপল্‌স লিবারেশন আর্মি’ বা পিএলএ-র নৌসেনা। দ্বিতীয়ত, যুদ্ধের সময়ে মলাক্কা প্রণালী এড়িয়ে দুনিয়ার অন্যান্য প্রান্তের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বজায় রাখার সুযোগ পাবে বেজিং। তৃতীয়ত, দক্ষিণ চিন সাগরের জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ হলেও লড়াই চালাতে কোনও সমস্যা হবে না ড্রাগনের।

২০ ২১
Myanmar Civil War

কিন্তু মায়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি সবটাই ভেস্তে দিতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ, রাখাইন প্রদেশের রাজধানী সিত্তে ঘিরে ফেলেছে তারা। সেখানে অবশ্য ঢোকার ক্ষেত্রে সরকারি বাহিনীর প্রবল প্রতিরোধের মুখে পড়তে হচ্ছে তাদের।

২১ ২১
Myanmar Civil War

গত ৬ মার্চ সিত্তে সংলগ্ন ওয়ার বো গ্রামে হামলা চালায় জুন্টা ফৌজ। সেই আক্রমণে ৩৫টি বাড়ি ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। যদিও হতাহতের কোনও খবর পাওয়া যায়নি। নিজেদের মুখরক্ষায় ইয়াঙ্গনের জেনারেলরা এই ধরনের প্রত্যাঘাত শানাচ্ছেন বলে অনুমান প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকদের।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy