What are the main causes of conflict between Afghanistan Pakistan relationship dgtl
Pakistan Afghanistan Relationship
ভারত নয়, পাকিস্তানের একমাত্র ‘শত্রু’ ছিল অন্য এক দেশ! কাঁটাতারে অবিরাম তিক্ততা কাটেনি আজও
পাকিস্তানের ‘শত্রু’ দেশ হিসাবে প্রথমেই উঠে আসে ভারতের নাম। কিন্তু আরও এক দেশ রয়েছে, যার সঙ্গে পশ্চিমের এই পড়শির ‘মিত্রতা’ নেই মোটেই। বরং তাদের সম্পর্কও দিন দিন তিক্ততর হয়ে উঠেছে।
নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতাশেষ আপডেট: ২০ মার্চ ২০২৩ ০৮:০৫
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২০
১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ সরকারের হাতে ভারত ভাগ হয়ে জন্ম নেয় নতুন দেশ পাকিস্তান। এই দেশভাগের সঙ্গে জন্ম নিয়েছিল একাধিক ‘শত্রুতা’, তিক্ততা আর অনেক নেতিবাচক দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক।
০২২০
ভারতের সঙ্গে প্রতিবেশী পাকিস্তানের সম্পর্ক বরাবরই তিক্ত। দেশভাগের পর থেকে ধীরে ধীরে সেই তিক্ততার পারদ চড়েছে। বর্তমানে যা কারও অজানা নয়।
০৩২০
বিশ্বের দরবারে পাকিস্তানের ‘শত্রু’ দেশ হিসাবে প্রথমেই উঠে আসে ভারতের নাম। কিন্তু আরও এক দেশ রয়েছে, যার সঙ্গে ভারতের পশ্চিমের এই পড়শির ‘মিত্রতা’ নেই মোটেই। বরং তাদের সম্পর্কও দিন দিন তিক্ত থেকে তিক্ততর হয়েছে।
০৪২০
কথা হচ্ছে আফগানিস্তানকে নিয়ে। ভারতের উত্তর-পশ্চিমের এই দেশটির সঙ্গে ভারতের সীমানা মাত্র ১০৬ কিলোমিটারের। তবে পাকিস্তানের উত্তর এবং পশ্চিম দিকের বিস্তীর্ণ সীমানা জুড়ে রয়েছে আফগানিস্তান।
০৫২০
আফগানিস্তান এবং পাকিস্তানের সীমানা ‘ডুরান্ড লাইন’ নামে পরিচিত। এই সীমারেখার বিস্তৃতি প্রায় ২ হাজার ৬৭০ কিলোমিটার। পাকিস্তানের বালুচিস্তান এবং খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশ এই সীমান্তের সংলগ্ন।
০৬২০
এই ‘ডুরান্ড লাইন’কে ঘিরেই যত বিবাদের উৎপত্তি। পাকিস্তান এবং আফগানিস্তান— পিঠোপিঠি এই দুই মুসলিম প্রধান রাষ্ট্রের মধ্যে মিত্রতা গড়ে উঠতে দেয়নি এই সীমারেখা। তাকে কেন্দ্র করে বার বার রক্তাক্ত হয়েছে কাঁটাতার।
০৭২০
ভারতের স্বাধীনতা লাভের পর পাকিস্তানের একমাত্র বিরোধী রাষ্ট্র হিসাবে এক সময় উঠে এসেছিল এই আফগানিস্তানের নাম। কারণ, সেই দেশের সরকার রাষ্ট্রপুঞ্জে পাকিস্তানের প্রবেশের বিরোধিতা করেছিল। আর কোনও রাষ্ট্র পাকিস্তানের বিরোধিতা করেনি। এমনকি, ভারতও নয়।
০৮২০
আফগান সীমান্ত লাগোয়া পাকিস্তানের বালুচিস্তান এবং খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে মূলত পাশতুন সম্প্রদায়ের মানুষের বাস। এই এলাকায় কখনও পাকিস্তানের অধিকার স্বীকার করেনি আফগান সরকার। তাঁদের দাবি, ওই এলাকা তাঁদের সীমান্তের অন্তর্গত ছিল। অন্যায় ভাবে তা পাকিস্তানে পাঠিয়ে দিয়েছে ‘ডুরান্ড লাইন’।
০৯২০
১৮৯৩ সালে আফগানিস্তান এবং ব্রিটিশ ভারতের মাঝে এই ‘ডুরান্ড লাইন’ এঁকে দেওয়া হয়েছিল। তৎকালীন ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে আফগান সরকারের চুক্তির ভিত্তিতে এই সীমারেখা নির্ধারিত হয়।
১০২০
ব্রিটিশ কূটনৈতিক মর্টিমার ডুরান্ডের নামে এই সীমারেখার নামকরণ করা হয়েছিল। ১৮৯৩ সালে তাঁর সঙ্গে আফগান সম্রাট আব্দুর রহমান খানের যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, তার মাধ্যমেই ব্রিটিশ ভারত এবং আফগানিস্তানের সীমানা নির্ধারিত হয়েছিল।
১১২০
ব্রিটিশদের সঙ্গে যুদ্ধে আফগানেরা হেরে গিয়েছিলেন। অভিযোগ, সেই চাপেই ‘ডুরান্ড লাইন’-এ আফগান সরকার সম্মতি দিতে বাধ্য হয়েছিল। কিন্তু এই সীমাকে কখনওই তারা মেনে নিতে পারেনি। ফলে ব্রিটিশরাজ শেষ হওয়ার পর প্রায় প্রতি দিনই দুই দেশের সংঘর্ষে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে সীমান্ত।
১২২০
‘ডুরান্ড লাইন’কে কেন্দ্র করে যে বিবাদের উৎপত্তি, তার ব্যাপ্তি ক্রমশ চওড়া হয়েছে অন্য নানাবিধ সমস্যার হাত ধরে। কখনও পাকিস্তানে আফগান শরণার্থীর উপস্থিতি, কখনও নদীর জলের বণ্টনকে ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে দুই দেশের পরিস্থিতি।
১৩২০
ধীরে ধীরে পাকিস্তানের সঙ্গে আফগানিস্তানের সম্পর্কের অবনতির অন্যতম কারণ হয়ে উঠেছে ভারত। কারণ, ভারতের সঙ্গে আফগান সরকার বরাবর সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলে। যা ভাল চোখে দেখে না পাকিস্তান।
১৪২০
পাকিস্তান জন্মের কিছু দিনের মধ্যেই দেশটিতে সশস্ত্র বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন হয়। নেতৃত্বে ছিলেন মির্জালি খান। এই আন্দোলনকে সমর্থন করেছিল আফগানিস্তান। যা দুই দেশের সম্পর্ককে আরও তিক্ত করে তোলে।
১৫২০
আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে বরাবর সন্ত্রাসবাদকে মদত দেওয়ার অভিযোগ তুলে এসেছে পাক সরকার। অভিযোগ, তাদের মদতেই পাকিস্তানের অন্দরে সন্ত্রাসবাদের এত রমরমা। অন্য দিকে, আফগানিস্তানের অন্দরে নাক গলানো এবং অশান্তিতে ইন্ধন জোগানের পাল্টা অভিযোগ উঠেছে পাক সরকারের বিরুদ্ধে।
১৬২০
আফগানিস্তানের অভিযোগ, পাকিস্তান নিজের দেশের অন্দরে জঙ্গিগোষ্ঠীগুলিকে ক্রমাগত মদত দেয়। পড়শি দেশের বিরুদ্ধে তাদের লেলিয়ে দেওয়া হয় সুপরিকল্পিত ভাবে। এমনকি, তালিবানকে গোপনে মদত দেওয়ার অভিযোগও উঠেছে একাধিক বার।
১৭২০
বালুচিস্তান এবং খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের অধিকার এবং ‘ডুরান্ড লাইন’-এর বিস্তৃতি নিয়ে আফগান সরকারের যে অবস্থান ছিল, বর্তমানে তালিবান সরকারও সেই অবস্থানেই অনড়। ফলে প্রায় প্রতি দিনই রক্তাক্ত হয় সীমান্ত।
১৮২০
আফগান-পাক সীমান্তকে কখনও কখনও ভারতের সীমান্তের চেয়েও বেশি অশান্ত এবং প্রাণঘাতী বলে দাবি করেন কেউ কেউ। হামেশাই সেখানে কোনও না কোনও দেশের সৈনিকের প্রাণ যায়। তবে সব খবর সে ভাবে প্রচারের আলোয় আসে না।
১৯২০
আফগানিস্তানের সাধারণ মানুষের মধ্যে পাকিস্তান সম্পর্কে বিরূপ মনোভাব রয়েছে। একই ভাবে, পাকিস্তানের বাসিন্দারাও আফগান শরণার্থীদের ভাল চোখে দেখেন না। এমনকি, পাশতুন অধ্যুষিত পাক এলাকাও আফগান শরণার্থীদের প্রতি বিরূপ।
২০২০
সম্প্রতি, এই দুই দেশের পারস্পরিক সম্পর্কের উন্নতির জন্য সচেষ্ট হয়েছে সরকার। ২০২১ সালে যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানে হাসপাতাল নির্মাণ, স্কুল, কলেজ, রাস্তাঘাট সংস্করণের জন্য ৮ হাজার কোটি টাকা দান করেছে পাকিস্তান। কিন্তু সার্বিক ভাবে তা দুই দেশের সম্পর্কে কতটা উন্নতি ঘটাতে পারবে, তা নিয়ে সন্দিহান বিশেষজ্ঞেরা।