এরিকের ‘মৃত্যুর’ ১২ মাস পরে কেন তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করল পুলিশ? তদন্তকারীদের দাবি, কোরির বিরুদ্ধে আটঘাট বেঁধে সমস্ত তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করে তবেই এ অভিযোগ করেছেন।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
সল্টলেক সিটি (উটা)শেষ আপডেট: ৩১ মে ২০২৩ ১১:৫৫
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২০
বছরখানেক আগে বাবাকে হারিয়েছে তাঁর তিন নাবালক সন্তান। তারা যাতে বাবার মৃত্যুশোক সামলাতে পারে, সে উপায় জানিয়ে বই লিখেছিলেন স্বামীহারা যুবতীটি। বইটি উৎসর্গও করেন স্বামীকে। তবে স্বামীকেই খুনের অভিযোগে চলতি মাসের গো়ড়ায় ওই যুবতীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
০২২০
আমেরিকার উটার ৩৩ বছরের ওই যুবতীর বিরুদ্ধে পুলিশের অভিযোগ, অতিরিক্ত মাদক মেশানো সুরা পান করিয়ে স্বামীকে চিরতরে সরিয়ে দিয়েছেন তিনি।
০৩২০
উটার কামাস শহরের বাসিন্দা কোরি রিচিন্সকে ৮ মে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। স্বামী এরিক রিচিন্সকে খুনের পাশাপাশি মাদক রাখার অভিযোগও রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।
০৪২০
২০২২ সালের ৪ মার্চ এরিকের অকালমৃত্যু হয়েছিল। তবে সে সময় তাঁর মৃত্যু নিয়ে প্রশ্নচিহ্ন ওঠেনি। কোরির দাবি ছিল, মার্চের ওই রাতে তাঁদের শোয়ার ঘরের মেঝেয় পড়েছিলেন এরিক। স্বামীকে ওই অবস্থায় দেখে পুলিশের জরুরি নম্বরে ফোন করেন। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে এরিককে মৃত বলে ঘোষণা করেন সেখানকার চিকিৎসকেরা।
০৫২০
স্বামীর মৃত্যুর পর ৩ নাবালক সন্তানের জন্য ৪১ পাতার একটি বই লিখেছিলেন কোরি। তাঁর সন্তানেরা যাতে বাবার মৃত্যুশোক সামলে উঠতে পারে, তার জন্য কী কী করা উচিত তাদের, সে উপায়ও জানিয়েছিলেন ওই বইয়ে।
০৬২০
‘আর ইউ উইথ মি?’— এই কিছু দিন আগেও কোরির লেখা এই বইটি অ্যামাজ়নে মিলত। ওই বইয়ের বিপণনে অ্যামাজ়নের তরফে লেখা হয়েছিল, ‘‘কোনও প্রিয় মানুষকে হারানোর পর সন্তানদের শোকের উপশম করতে কী কী উপায় রয়েছে, তা জানায় এই বই।’’
০৭২০
কোরির বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ ওঠার পর তাঁর লেখা বইটি অনলাইন থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে দাবি। ওই বইয়ে দাবি করা হয়েছিল, প্রিয়জনের মৃত্যুর পর জীবনে শূন্যতা থাকলেও তাঁদের অস্তিত্ব রয়ে যায়। তাঁরা সবর্দা সঙ্গে থেকে যান।
০৮২০
স্বামী এরিককে বইটি উৎসর্গ করে কোরি লিখেছিলেন, ‘‘আমার অসাধারণ স্বামী এবং এক জন অনন্য বাবাকে... ’’। এমনকি, ফেসবুকে ‘সুখী দম্পতি’র ছবি দিয়ে হ্যাশটাগ দিয়ে লিখেছিলেন, ‘‘ঘরে ফিরে এসো।’’
০৯২০
এরিকের ‘মৃত্যুর’ পর বই লেখা ছাড়াও গত মাসে স্থানীয় টেলিভিশনে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়েও ‘শোকতপ্ত’ কোরিকে দেখা গিয়েছে।
১০২০
সল্ট লেক সিটির এক টিভি চ্যানেলে স্বামীর মৃত্যু নিয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘‘একেবারেই অপ্রত্যাশিত! এরিকের মৃত্যুতে আমরা সকলেই হতবাক হয়ে গিয়েছিলাম।’’
১১২০
কোরি আরও বলেছিলেন, ‘‘বছরভর শোকের আবহে যে অনুভূতি হয়েছে, সেসব নিয়েই এ বই লিখেছি। বলতে পারেন, আমার পাশাপাশি সন্তানেরাও এ বইয়ের লেখক। আশা করি, এ থেকে অন্যেরাও কিছুটা সান্ত্বনা পাবে।’’
১২২০
কোরির গ্রেফতারির পর টিভি চ্যানেলেটি বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, স্বামীকে খুনের অভিযোগে তিনি যে পুলিশের সন্দেহভাজনদের তালিকায় রয়েছেন, তা জানতেন না তারা।
১৩২০
এরিকের ‘মৃত্যুর’ ১২ মাস পরে কেন তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করল পুলিশ? তদন্তকারীদের দাবি, কোরির বিরুদ্ধে আটঘাট বেঁধে সমস্ত তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করে তবেই এ অভিযোগ করেছেন।
১৪২০
তদন্তকারীদের আরও দাবি, এরিকের ময়নাতদন্ত এবং টক্সিকোলজি রিপোর্টে তাঁর দেহে স্বাভাবিকের থেকে ৫ গুণ বেশি ফেন্টানাইল মাদক পাওয়া গিয়েছে।
১৫২০
মার্চের যে রাতে এরিক চলে গিয়েছিলেন, সে রাতের কথা নিয়ে কোরির বয়ানে বেশ অসঙ্গতি মিলেছে বলে পুলিশের দাবি।
১৬২০
কোরির দাবি ছিল, ওই রাতে এরিকের সঙ্গে মিলে ভদকা পান করেছিলেন তিনি। এর পর স্বামীর পাশে ঘুমোননি তিনি। বরং ছেলে দুঃস্বপ্ন দেখায় তাকে সান্ত্বনা দিতে তার ঘরেই ছিলেন। রাত ৩টের সময় ঘুম ভেঙে শোয়ার ঘরে এসে দেখেন এরিক মেঝেয় পড়ে রয়েছেন। সে সময় এরিকের শরীর অস্বাভাবিক ঠান্ডা ছিল বলে পুলিশে খবর দেন।
১৭২০
তদন্তকারীদের কাছে কোরির আরও দাবি ছিল, নিজের মোবাইলটি শোয়ার ঘরেই রেখে এসেছিলেন ওই রাতে। তবে সেটি খতিয়ে দেখে পুলিশ জানতে পারে, রাতে যে কয়েক ঘণ্টা সন্তানের ঘরে ছিলেন বলে দাবি করেছিলেন কোরি, ওই সময়ের মধ্যে তাঁর মোবাইলটি বার বার ‘আনলক’ করা হয়েছে। এমনকি, টেক্সট মেসেজ দেখা এবং তা মুছেও ফেলা হয়। এর পরেই পুলিশের সন্দেহের তালিকায় ঢুকে পড়েন কোরি।
১৮২০
এরিকের মৃত্যুর সময় দম্পতির বাড়িতে কেবলমাত্র তাঁদের ৩ সন্তান এবং কোরি ছিলেন। পুলিশের দাবি, মৃত্যুর আগের মাসে এক ঘনিষ্ঠকে এরিক জানিয়েছিলেন, ভ্যালেন্টাইন্স ডে-তে রাতের খাবারের সঙ্গে বিষ মিশিয়ে তাঁকে খুন করার চেষ্টা করেছেন স্ত্রী।
১৯২০
পুলিশের আরও দাবি, চেনাজানা এক মাদক কারবারির কাছ থেকে ১৫ থেকে ৩০টি ফেন্টানাইল ট্যাবলেট কিনেছিলেন কোরি। সে জন্য তাঁকে ৯০০ ডলার দিয়েছিলেন। এক ৩ দিন পরেই ওই ভ্যালেন্টাইন্স ডে-র পরের দিন অসুস্থ হয়ে পড়েন এরিক।
২০২০
এরিক সুস্থ হয়ে উঠলে নাকি আবার ওই মাদক কারবারির কাছে ছুটেছিলেন কোরি। এ বার নাকি আরও কড়া মাদকের জন্য ৯০০ ডলার খসিয়েছিলেন। এর দিন কয়েক পরে মৃত্যু হয়েছিল এরিকের। যদিও কী কারণে স্বামীকে ‘খুন’ করলেন কোরি, তা নিয়ে কোনও যুক্তি দেখাতে পারেনি পুলিশ।