মহাশূন্যে এ বার সৌর প্যানেলের বাঁধ তৈরি করবে চিন। সেখান থেকে নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা রয়েছে বেজিংয়ের।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১২ জানুয়ারি ২০২৫ ১২:১৪
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৮
মহাশূন্যে এ বার বাঁধ দেবে ড্রাগন! তৈরি হবে বিদ্যুৎ প্রকল্প। চিনের এই উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনার কথা জানাজানি হতেই দুনিয়া জুড়ে পড়ে গিয়েছে শোরগোল। সূত্রের খবর, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের জোগান রাখতে এই কাজে হাত দিতে চলেছে বেজিং। যদিও এর বাস্তবায়ন নিয়ে যথেষ্ট সন্দিহান বিশ্বের তাবড় মহাকাশ গবেষকেরা।
০২১৮
সম্প্রতি অন্তরীক্ষে চিনের বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট। সেখান থেকেই গোটা বিষয়টি দুনিয়ার সামনে এসেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মহাশূন্যে বাঁধ তৈরির নীল নকশা এঁকেছেন ড্রাগনল্যান্ডের বিখ্যাত রকেট বিজ্ঞানী লং লেহাও। এই প্রকল্পের পোশাকি নাম ‘থ্রি গর্জেস ড্যাম প্রজেক্ট অন আর্থ’।
০৩১৮
কী ভাবে মহাশূন্য বাঁধ দিয়ে বিদ্যুৎ তৈরি করবেন ড্রাগনের বিজ্ঞানীরা? সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের প্রতিবেদনে তার রূপরেখা তুলে ধরা হয়েছে। রিপোর্ট অনুযায়ী, ভূপৃষ্ঠ থেকে ৩৬ হাজার কিলোমিটার উপরে পৃথিবীর জিয়োস্টেশনারি কক্ষপথে এক কিলোমিটার প্রশস্ত সৌর প্যানেল বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে চিনা মহাকাশ গবেষকদের।
০৪১৮
মহাশূন্যে সৌর প্যানেল বসানোর কাজ শেষ হলে সেগুলি দিয়ে নিরবচ্ছিন্ন ভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করবে ড্রাগন। চিনা গবেষকদের দাবি, দিন-রাতের চক্র, আবহাওয়া বা ঋতু পরিবর্তনের জেরে এই সৌর প্যানেলের কোনও ক্ষতি হবে না। সব সময় সেখান থেকে পাওয়া যাবে বিদ্যুৎ।
০৫১৮
চিনা মহাকাশ গবেষক লং বিদ্যুৎ তৈরির এই নিরবচ্ছিন্ন প্রকল্পকে তিন গিরিখাত বাঁধের সঙ্গে তুলনা করেছেন। বর্তমানে ড্রাগনল্যান্ডের ইয়াংজি নদীর উপর রয়েছে ওই বাঁধ। সেখান থেকে বছরে প্রায় ১০ হাজার কোটি কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে বেজিং।
০৬১৮
অন্য দিকে আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা জানিয়েছে, চিনের এই তিন গিরিখাত বাঁধ এতটাই বড় যে, সেটি পৃথিবীর ঘূর্ণন ০.৬ মাইক্রোসেকেন্ড কমিয়ে দিয়েছে। তাই এই ধরনের প্রকল্পকে মানবজাতির জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক বলে মনে করেন যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানীরা।
০৭১৮
চিনা গবেষক লং অবশ্য সম্পূর্ণ উল্টো কথা বলেছেন। তাঁর দাবি, ‘‘আমরা এই প্রকল্পের কাজ শুরু করে দিয়েছি। ভূপৃষ্ঠের ২২ হাজার ৩৭০ মাইল উপরে জিয়োস্টেশনারি কক্ষপথে ওই তিন গিরিখাত বাঁধ মতোই সৌর প্যানেল বসানো হবে। সেখান থেকে আমরা যে সৌরশক্তি পাব তা এক বছরে উত্তোলন করা অপরিশোধিত তেলের সমান হবে। এটা একটা অবিশ্বাস্য প্রকল্প। আমরা এখন শুধুই সামনের দিকে তাকিয়ে আছি।’’
০৮১৮
এই প্রকল্পের বাস্তবায়নে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন রকেটের প্রয়োজন। সূত্রের খবর, বর্তমানে এই বিষয়ে গবেষণা চালাচ্ছেন চিনা মহাকাশ বিজ্ঞানীরা। পুনর্ব্যবহারযোগ্য ভারী বস্তু বহনে সক্ষম রকেট নির্মাণের চেষ্টা হচ্ছে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন গবেষক লং। তবে সরকারি ভাবে এই নিয়ে একটি শব্দও খরচ করেনি বেজিং।
০৯১৮
সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টকে বিজ্ঞানী লং জানিয়েছেন, এই প্রকল্পের জন্য মোট দু’টি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন রকেটের প্রয়োজন হবে। তার মধ্যে একটি হল ‘সিজ়েড-৫’। এটি লম্বায় ৫০ মিটার বলে জানা গিয়েছে। দ্বিতীয় রকেটটির নাম ‘সিজ়েড-৯’ রেখেছেন চিনা মহাকাশ গবেষকেরা। মহাশূন্যে সৌর প্যানেল বসানোর কাজ দ্বিতীয় রকেটটি করবে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানী লং।
১০১৮
লংয়ের কথায়, ‘‘সিজ়েড ৯-এর উচ্চতা হবে ১১০ মিটার। এটি ১৫০ টন পর্যন্ত সামগ্রী বহন করতে পারবে। পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথে সৌর প্যানেল পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে যা আদর্শ। নাসার ‘স্যাটার্ন-৫’ এবং স্পেস লঞ্চ সিস্টেমে যে সমস্ত উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন রকেট রয়েছে, সেগুলি ১৩০ টন পর্যন্ত সামগ্রী বহন করতে পারে।’’ চিনা রকেট সেখানে রেকর্ড তৈরি করবে বলে মনে করেন তিনি।
১১১৮
ড্রাগনল্যান্ডের মহাকাশ গবেষকের এ হেন বক্তব্য মোটেই কল্পবিজ্ঞানের কাহিনি নয়। চিনের এই ধরনের প্রকল্পের বিষয়ে আগেও আলোচনা করেছে দুনিয়ার তাবড় শক্তিশালী দেশ। পৃথিবীতে ক্রমবর্ধমান বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে সৌরশক্তিকেই বিকল্প হিসাবে ব্যবহার করতে চাইছেন গবেষকেরা।
১২১৮
পৃথিবীর কক্ষপথে থাকা মহাকাশভিত্তিক সৌরশক্তি কেন্দ্রগুলি এই পদ্ধতিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে ভূপৃষ্ঠে পাঠিয়েও থাকে। আন্তর্জাতিক স্তরে এর নাম ‘ম্যানহাটন প্রকল্প’। চিন এই ধরনের কাজই মহাশূন্য করতে যাচ্ছে বলে মনে করেন দুনিয়ার তাবড় গবেষকদের একাংশ। তবে নিঃসন্দেহে তা অনেকটা বড় আকারের হবে বলে স্পষ্ট করেছেন তাঁরা।
১৩১৮
গত কয়েক দশক ধরেই সৌরশক্তি নিয়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যে আলোচনা চলছে। সে ক্ষেত্রে মহাশূন্যকে কী ভাবে ব্যবহার করা যায়, তাই নিয়ে চিন্তাভাবনা করছেন তাঁরা। চিনের উচ্চাভিলাষী প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে গবেষণার নতুন দিক খুলবে বলেই মনে করা হচ্ছে।
১৪১৮
গত শতাব্দীর স্নায়ুযুদ্ধের সময়ে মহাকাশ গবেষণা ক্ষেত্রে সোভিয়েত রাশিয়ার সঙ্গে লড়াতে নেমেছিল আমেরিকা। বর্তমানে এই দৌড়ে সামিল হয়েছে চিনও। ইতিমধ্যেই অন্তরীক্ষে নিজস্ব মহাকাশ স্টেশন স্থাপন করেছে ড্রাগন। এ বার সেখানে সৌর প্যানেল বসিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করলে যুক্তরাষ্ট্রকে তারা অনেকটাই পিছনে ফেলে দেবে, তা বলাই বাহুল্য।
১৫১৮
মহাকাশ গবেষণায় পিছিয়ে নেই ভারতও। সম্প্রতি মহাশূন্যে প্রবল গতিতে ঘূর্ণায়মান দু’টি কৃত্রিম উপগ্রহ জু়ড়ে একটি অন্তরীক্ষ যান তৈরির পরীক্ষা চালিয়েছে এ দেশের মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র ইসরো। ফলে খুব দ্রুত নয়াদিল্লি নিজস্ব মহাকাশ স্টেশন তৈরির দিকে নজর দিতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
১৬১৮
পাশাপাশি, সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পের উপরেও জোর দিয়েছে ভারত। গত বছরের (পড়ুন ২০২৪) বাজেটে সৌর প্যানেল এবং এই বিদ্যুতের দামের ব্যাপারে একাধিক ঘোষণা করেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন। তবে মহাশূন্যে সৌর প্যানেল বসানোর কোনও প্রকল্পে এখনও হাত দেননি ভারতীয় গবেষকেরা।
১৭১৮
সম্প্রতি তিব্বতে ব্রহ্মপুত্রের উপরে বিশ্বের বৃহত্তম বাঁধ নির্মাণের কথা ঘোষণা করে চিন। ওই বাঁধ তৈরি হলে সেখানেও জলবিদ্যুৎ প্রকল্প গড়ে তুলবে বেজিং। তার মধ্যেই মহাশূন্যে সৌর প্যানেল বসানোর কথা শোনা গেল ড্রাগনল্যান্ডের বিজ্ঞানীর গলায়।
১৮১৮
ব্রহ্মপুত্রের উপর চিনের বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প নিয়ে ইতিমধ্যেই আপত্তি জানিয়েছে ভারত। এ প্রসঙ্গে বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেছেন, ‘‘দেশের স্বার্থরক্ষায় যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ অন্য দিকে নয়াদিল্লিকে আশ্বস্ত করে বেজিং জানিয়েছে, উচ্চ অববাহিকায় বাঁধ নির্মাণের জন্য ব্রহ্মপুত্রের নিম্ন অববাহিকায় কোনও ক্ষতি হবে না।