ক্ষোভ বাড়ছিল। একে একে সংগঠিত হচ্ছিলেন ক্ষুব্ধরাও। শেষে ২০১৯ সালের মার্চ মাসে প্রথম নিয়োগ দুর্নীতি বিরোধী প্রতিবাদ একটি আপাদমস্তক আন্দোলনের চেহারা নেয়। তখন রাজ্যে এবং গোটা দেশে লোকসভা ভোটের প্রস্তুতি। সেই সময়েই কলকাতায় প্রেস ক্লাবের সামনে দুর্নীতির প্রতিবাদে অনশনে বসলেন চাকরিপ্রার্থী আন্দোলনকারীরা। ২৯ দিন ধরে চলল সেই অবস্থান!
কিন্তু ভোটের সময় উৎখাতও হতে হল। এর পর একে একে সল্টলেকের করুণাময়ীতে ১৮৭ দিনের ধর্না অবস্থান। সেখান থেকে আন্দোলন উঠে আসে ধর্মতলায় গান্ধীমূর্তির পাদদেশে। তত দিনে কেটে গিয়েছে প্রায় আড়াই বছর। চাকরিপ্রার্থীদের আন্দোলন আরও জমি পেয়েছে। সংখ্যা বেড়েছে আন্দোলনকারীদের। নিজেদের অভিযোগ নিয়ে কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন তাঁরা।
স্কুলে নিয়োগে দুর্নীতির ক্ষেত্রে এসএসসির উপদেষ্টা কমিটির একটা বড় ভূমিকা রয়েছে— এই মর্মে তত দিনে আদালতের কাছে নানা তথ্য এবং নথি জমা পড়েছে। আনসারির আইনজীবী শামিম বলেন, পরিকল্পিত ভাবে দুর্নীতি করতে পার্থের নির্দেশেই এই উপদেষ্টা কমিটি গঠন করা হয়েছিল। হাই কোর্টে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে এই নথি জমা পড়ার পরই তিনি নির্দেশ দেন মন্ত্রী পার্থকে সিবিআইয়ের দফতরে গিয়ে হাজিরা দেওয়ার।
ববিতার ওই অভিযোগে হইচই পড়ে যায়। তথ্যপ্রমাণ দিয়ে ববিতা আদালতে দেখান, রাজ্যের মন্ত্রী পরেশ অধিকারীর কন্যা অঙ্কিতা অধিকারীর নাম মেধাতালিকায় না থাকা সত্ত্বেও তাঁকে প্রথম হিসাবে দেখানো হয়েছে। ফলে ওই তালিকার শেষে থাকা ববিতা তালিকা থেকে ছিটকে গিয়েছেন। বঞ্চিত হয়েছেন তাঁর প্রাপ্য চাকরি থেকে। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় এই মামলা শোনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেন।
ইডি পার্থের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের নামে কেনা দু’টি বাড়ি থেকে প্রায় ৫০ কোটি টাকার নগদ অর্থ উদ্ধার করে। সেই টাকার পাহাড় থেকে উদ্ধার হয় প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের খামও। তত দিনে প্রাথমিকের নিয়োগেও দুর্নীতির কথাও প্রকাশ্যে আসতে শুরু করেছে। এই ঘটনার পর পার্থ এবং অর্পিতা দু’জনকেই গ্রেফতার করে ইডি। গ্রেফতার হন শান্তিপ্রসাদ, কল্যাণময়-সহ এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত অনেকেই।
২০১৬ সালের এসএসসি মামলায় মোট ২৪ হাজার পদে নিয়োগে দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ ছিল। এর মধ্যে প্রায় পাঁচ হাজার চাকরি বাতিলের নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। শেষ পর্যন্ত অবশ্য সেই নির্দেশ সম্পূর্ণ ভাবে কার্যকর হয়নি। বিচারপতির নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যান চাকরি হারানো ‘শিক্ষক’ এবং শিক্ষাকর্মীরা।
সুপ্রিম কোর্ট প্রথমেই চাকরি বাতিলের নির্দেশে স্থগিতাদেশ দেয়। পরে এসএসসি সংক্রান্ত সমস্ত মামলা ২০২৩ সালের ৯ নভেম্বর এসএসসির সমস্ত মামলা হাই কোর্টেরই বিশেষ বেঞ্চে ফেরত পাঠায় দেশের শীর্ষ আদালত। সেই সঙ্গে নির্দেশ দেয়, ছ’মাসের মধ্যে স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি)-এর যাবতীয় মামলার শুনানি শেষ করতে হবে বিশেষ বেঞ্চে।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মতো এর পরে এসএসসি সংক্রান্ত সমস্ত মামলার শুনানি হয় কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং বিচারপতি মহম্মদ শব্বর রসিদির ডিভিশন বেঞ্চে। সুপ্রিম কোর্টের বেঁধে দেওয়া সময়সীমা অনুযায়ী আগামী ৯ মের মধ্যে শেষ করার কথা ছিল এই মামলার শুনানি। তার আগেই ২২ এপ্রিল এসএসসি মামলার রায় ঘোষণা করল আদালত।
সোমবার কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং বিচারপতি মহম্মদ শাব্বার রশিদির বিশেষ ডিভিশন বেঞ্চ এসএসসি মামলা রায়ে সব মিলিয়ে মোট ২৫ হাজার ৭৫৩ জনের চাকরি বাতিল করেছে। অর্থাৎ, ২০১৬ সালে যাঁরা চাকরি পেয়েছিলেন, তাঁদের সকলের নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, প্যানেলের মেয়াদ শেষের পরে যাঁরা চাকরি পেয়েছেন, জনগণের টাকা থেকে বেতন নিয়েছেন, তাঁদের চার সপ্তাহের মধ্যে সুদ-সহ বেতন ফেরত দিতে হবে। বছরে ১২ শতাংশ সুদে টাকা ফেরত দিতে হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy