The theme of Shah Rukh Khan’s Film Dunki is Actually about a Dangerous Path named Donkey Route dgtl
Dunki
‘ডাঙ্কি রুটে’ যেও না খবরদার! শাহরুখের ছবির নামে ভয়াবহ পথের গল্প, না ফেরার রহস্য
যেখানে নির্যাতিত নিজেই আইনভঙ্গের কাজ করছে সেখানে তাঁর উপর হওয়া অপরাধের রিপোর্ট লেখাবেই বা কে? পথে কারও মৃত্যু হলে তাঁর দেহ এখানেই ফেলে রেখে যেতে হয়। শেষকৃত্যের উপায় নেই, সময়ও নেই।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতাশেষ আপডেট: ২১ ডিসেম্বর ২০২৩ ২০:৫৯
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২২
আর যেখানেই যাও সব্বনেশে ‘ডাঙ্কি’ তে খবরদার নয়। ‘ডাঙ্কি রুট’ নিয়ে এ ভাবেই পই পই করে সাবধান করা হয় বিদেশযাত্রার স্বপ্নে বুঁদ হয়ে থাকা তরুণ-তরুণীদের।
০২২২
পঞ্জাব, হরিয়ানা, গুজরাতের সমাজ মাধ্যমে একটু উঁকি ঝুঁকি দিলেই চোখে পড়বে সেই সাবধানবাণী। সঙ্গে ‘ডাঙ্কিরুট’-এর ভিডিয়ো। বর্ণময় বিবরণও। যা পড়লে গায়ে কাঁটা দেবে। দেখলে শিউরে উঠবে শরীর।
০৩২২
ভিডিয়োগুলির কোনওটি তোলা হয়েছে পানামার জঙ্গলে। কোনওটা আবার মরুভূমির মতো ধূ ধূ জনহীন এলাকায়। কোনওটিতে ভিডিয়োয় দেখা যাচ্ছে, এই পথ দিয়ে হেঁটে চলা মানুষের মৃত্যুর দৃশ্য। কোথাও আবার তাঁরা অকথ্য অত্যাচারের শিকার।
০৪২২
এই সব ভিডিয়ো আর ছবির মূল বক্তব্য একটিই। আমেরিকা-ইওরোপে যাওয়ার স্বপ্নে বিভোর হয়ে কেউ এই ভয়ানক রাস্তা বেছে নিও না। ‘ডাঙ্কি রুটে’ যেও না। তার থেকে নিজের দেশেই থাক। পরিশ্রম করে বাঁচো। কিন্তু এই ‘ডাঙ্কি রুট’ আর রাজকুমার হিরানি পরিচালিত কিং খানের সিনেমা ‘ডাঙ্কি’ কি এক?
০৫২২
বৃহস্পতিবার ভোরে মুক্তি পেয়েছে শাহরুখের সিনেমা। জানা গিয়েছে, সেই সিনেমার মূল বিষয়বস্তু আবর্তন করেছে এই ভয়াবহ ডাঙ্কি রুট নিয়েই। সিনেমা মুক্তির দিন কয়েক আগে অবশ্য শাহরুখ নিজেও দুবাইয়ে এই নামরহস্য থেকে পর্দা সরিয়েছিলেন।
০৬২২
শাহরুখ বলেছিলেন, ডাঙ্কি আসলে এক অবৈধ সফর। বহু মানুষ এই সফর করেন দেশের সীমা পেরিয়ে বিদেশের মাটি ছোঁয়ার জন্য। এই সফরকে বলা হয় ‘ডাঙ্কি ট্রাভেল’।
০৭২২
কিন্তু এই সফর ভয়াবহ কেন? কেমন এর রাস্তা? ডাঙ্কি রুটে বিদেশে পৌঁছনোর ঝুঁকিটা কোথায়? যাঁরা এই পথে শেষ পর্যন্ত তাঁদের স্বপ্নপূরণ করতে পেরেছেন, তাঁরা বলছেন ঝুঁকি কোনও এক জায়গায় নয়। ঝুঁকি পদে পদে!
০৮২২
ডাঙ্কি রুটের প্রথম সিঁড়ি ভারত থেকে বিদেশ যেতে ইচ্ছুক তরুণ তরুণীদের লাতিন আমেরিকার কোনও একটি অখ্যাত দেশে পৌঁছে দেওয়া।
০৯২২
সাধারণত ইক্যুয়েডর, বলিভিয়া, গুয়ানার মতো লাতিন আমেরিকার দেশে ভারতীয়দের জন্য বিশেষ সুবিধা। ভারতীয়রা এ সব দেশে পৌঁছনোর পরও ভিসা পেতে পারেন। ব্রাজিল, ভেনেজুয়েলার মতো লাতিন আমেরিকার দেশও ভারতীয়দের সহজে পর্যটক ভিসা দিয়ে দয়।
১০২২
তবে বিদেশ যেতে চাওয়া এই ভারতীয় শরণার্থীরা কোন পথে কোন দেশে পৌঁছবেন, তা তাঁদের ইচ্ছের উপর নির্ভর করে না। পুরোটাই ঠিক করেন এঁদের ডাঙ্কি রুটে বিদেশে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব নেওয়া এজেন্টরা।
১১২২
এই এজেন্টরা আসলে বিভিন্ন দেশের মধ্যে ছড়িয়ে থাকা মানব পাচার জালের সদস্য। যাঁর যে দেশে যোগাযোগ রয়েছে, সেখানেই তারা নিয়ে যাবে বিদেশ যেতে ইচ্ছুক ভারতীয় শরণার্থীদের। শেষ পর্যন্ত অবশ্য তারা কাঙ্খিত গন্তব্যে পৌঁছবে কি না, কতটা নিরাপদ হবে সফর, তা কেউ বলতে পারবে না।
১২২২
যেমন বলা যায় না এই সফরে কত দিন সময় লাগবে, তা-ও। পঞ্জাব থেকে গত বছর আমেরিকায় পৌঁছনো এক শরণার্থী জানিয়েছেন, তাঁর ৮ মাস সময় লেগেছিল ডাঙ্কি রুটে গন্তব্যে পৌঁছতে। তবে এই ৮ মাসের প্রথম দেড় মাস ভারতেই অপেক্ষা করে কেটেছে তাঁর।
১৩২২
তাঁর এজেন্ট ব্রাজিল-এর সূত্রের সঙ্কেতের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। সেই অপেক্ষায় মুম্বইয়ে দেড় মাস কাটাতে হয়েছিল তাঁকে। খরচ হয়েছিল প্রচুর টাকা। ওই শরণার্থী জানিয়েছেন, এই অপেক্ষাই যদি আমাকে ব্রাজিলে বসে করতে হত, তবে আরও অর্থ খরচ হত।
১৪২২
কিছু কিছু এজেন্ট দুবাই থেকে সরাসরি আমেরিকার সীমান্তে মেক্সিকোয় নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করেন শরণার্থীদের। তবে সেখানে গ্রেফতার হওয়ার ভয় বেশি। তাই অধিকাংশ ক্ষেত্রেই লাতিন আমেরিকা হয়ে শরণার্থীদের কলম্বিয়ায় নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। কলম্বিয়াও আমেরিকার সীমান্তের কাছের দেশ। তবে সেখানে ভারতীয়দের ভিসা পাওয়া কঠিন।
১৫২২
কলম্বিয়া থেকে তাই শুরু হয় ভয়াবহ সফর। শরণার্থীরা সেখান থেকে প্রবেশ করে পানামায়। পানামার জঙ্গল ড্যারিয়েন গ্যাপ জুড়েছে দু’টি দেশকে। কিন্তু এই জঙ্গল নরকের আর এক নাম।
১৬২২
এ জঙ্গলে পরিষ্কার পানীয় জলটুকুও নেই। হিংস্র জন্তু সঙ্কুল এই জঙ্গল অপরাধীদেরও নিরাপদ ঘাঁটি। এই এলাকায় বহু শরণার্থী ডাকাতের কবলে পড়ে সর্বস্ব খুইয়েছে। ধর্ষিত হয়েছেন বহু মহিলা। খুনও হতে হয়েছে। কিন্তু সেই অপরাধের কোনও প্রতিকার নেই।
১৭২২
এই অপরাধের রিপোর্ট লিখবে কে? যেখানে নির্যাতিত নিজেই আইনভঙ্গের কাজ করছে সেখানে তাঁর উপর হওয়া অপরাধের রিপোর্ট লেখাবেই বা কে? ভাগ্য সহায় থাকলে এই জঙ্গল পেরোতে ৮-১০ দিন সময় লেগে যায়। পথে কারও মৃত্যু হলে তাঁর দেহ এখানেই ফেলে রেখে যেতে হয়। শেষকৃত্যের উপায় নেই, সময়ও নেই।
১৮২২
গুয়াতেমালায় হাত বদল করা হয় শরণার্থীদের। এজেন্টরা নতুন পাচারকারীদের হাতে তুলে দেয় তাঁদের। এ বার এই নতুন পাচারকারীদেরই দায়িত্ব শরণার্থীদের মেক্সিকো পার করে আমেরিকার সীমান্তে পৌঁছে দেওয়ার।
১৯২২
আমেরিকা আর মেক্সিকোর ৩১৪০ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত ঘেরা রয়েছে ধারালো ব্লেড দেওয়া কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে। সেই বেড়া এক লাফে পেরোতে হয় শরণার্থীদের। না পারলে জখম হবে শরীর।
২০২২
ঝুঁকি এড়াতে অনেকে তাই রিও গ্রান্ডে নদী সাঁতরে পার হওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু এখানেও ঝুঁকি প্রবল। রিও নদীর জল বিপদ সীমার উপরে থাকে অধিকাংশ সময়ে। এর জলের স্রোতও সাঁতারের প্রতিকূল।
২১২২
এই গোটা সফরের ন্যূনতম খরচ ১৫ লক্ষ টাকা। তবে তা বেড়ে ৭০ লক্ষ টাকাও ছুঁতে পারে কোনও কোনও ক্ষেত্রে। বেশি অর্থের বিনিময়ে কম ঝুঁকির সফরের একটি অন্য ডাঙ্কি রুট রয়েছে ঠিকই। কিন্তু সেই পথে প্রশাসনিক নজর পড়লেই শরণার্থীদের পুরনো পথে ফিরতে হয়।
২২২২
যাঁরা এই পথে শেষ পর্যন্ত গন্তব্যে পৌঁছতে পেরেছেন, তারা জানিয়েছেন, এজেন্টদের অর্থ একাধিক দফায় দেওয়া যায়। কিন্তু সময়ে অর্থ হাতে না পেলে এই এজেন্টরা প্রাণে মারতেও দ্বিধা করে না।