The Success story of Vadilal Gandhi’s Ice cream business dgtl
ice cream
Ice-cream: এক বিজ্ঞাপনেই ৬৫০ কোটির শিকে ছেঁড়ে এই নিরামিষ আইসক্রিমের! এ এক অন্য গাঁধীর গল্প
‘রঞ্ছোড় অ্যান্ড সন্সের’ হাতে ছিল একটি চাবি। ভারতীয় ক্রেতাদের মনের চাবি! যা বিদেশি ব্র্যান্ডগুলির পক্ষে কোনওদিনই বোঝা সম্ভব ছিল না।
নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতাশেষ আপডেট: ০২ জুন ২০২২ ১৯:১৭
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৭
ভাদিলাল গাঁধী নিজের নামে সোডার দোকান খুলেছিলেন গুজরাতে। ১৯০৭ সালে। ভারতে তখন ব্রিটিশরাজ। স্বাধীনতা আন্দোলনে উত্তাল দেশ। কিন্তু গুজরাত কিছুটা শান্ত। ব্যবসা-বাণিজ্যও চলছে। সোডার দোকানে চাহিদা বাড়তে দেখে আমদাবাদের ব্যবসায়ী তাঁর দোকানে নিজের হাতে বানানো আইসক্রিমও রাখতে শুরু করেন। কালক্রমে ফুলেফেঁপে সেই আইসক্রিমের ব্যবসা আজ ৬৫০ কোটি টাকার।
০২১৭
১১৫ বছরের পুরনো সংস্থা। তবে শুরু হয়েছিল একটি ছোট্ট দোকানে। কাঠের বালতিতে চিনি-বরফ আর নুন দিয়ে দুধ ফেটিয়ে আইসক্রিম তৈরি করতেন ভাদিলাল। তা-ই হুড়মুড়িয়ে বিক্রি হয়ে যেত।
০৩১৭
ভাদিলালা গাঁধীর ছোট হলেও চালু ব্যবসাটি উত্তরাধিকারসূত্রে তাঁর ছেলে রঞ্ছোড়লাল গাঁধীর হাতে আসে। তবে তিনি এসেই আইসক্রিম বানানোর পুরনো পদ্ধতি বদলে ফেলেন।
০৪১৭
দোকানে আইসক্রিমের চাহিদা ছিলই। জোগান বাড়াতে জার্মানি থেকে আইসক্রিম তৈরির মেশিন আনান রঞ্ছোড়লাল।
০৫১৭
তত দিনে সোডা বিক্রি পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছেন। আইসক্রিমের ব্যবসাতেই মন দেবেন, ঠিক করেছেন। ১৯২৬ সালে রঞ্ছোড়লাল তাঁর প্রথম আইসক্রিমের দোকান খোলেন আমদাবাদে।
০৬১৭
এর ২১ বছর পর ভারত যখন স্বাধীন হচ্ছে তখন সেই আমদাবাদেই চারটি আইসক্রিমের দোকান করে ফেলেছেন তিনি। পরের ২৩ বছরে গাঁধী পরিবারের আইসক্রিম ব্যবসা বাড়ে আরও আড়াই গুণ।
০৭১৭
১৯৭০ সালে তখন বংশের পরবর্তী প্রজন্মও ব্যবসায় যোগ দিয়ে দিয়েছে। রঞ্ছোড়লালের দুই ছেলে রামচন্দ্র এবং লক্ষ্মণচন্দ্র গাঁধী হাল ধরেছেন আইসক্রিম ব্যবসার। আমদাবাদ শহরেই মোট ১০টি আইসক্রিমের দোকানের মালিক হয়ে বসেছেন বাবা রঞ্ছোড়লাল ও তাঁর দুই পুত্র রাম-লক্ষ্মণ।
০৮১৭
ভারতে আইসক্রিমের ব্যবসায় একাধিক বিদেশি সংস্থা ভাগ বসিয়েছে তখন। গুজরাতেও একের পর এক দোকান খুলছে। তবু রঞ্ছোড়লালদের ব্যবসায় টান পড়েনি।
০৯১৭
কারণ ‘রঞ্ছোড় অ্যান্ড সন্সের’ হাতে ছিলএকটি চাবি। ভারতীয় ক্রেতাদের মনের চাবি! যা বিদেশি ব্র্যান্ডগুলির পক্ষে কোনওদিনই বোঝা সম্ভব ছিল না।
১০১৭
রঞ্ছোড়লালদের আইসক্রিম ছিল ১০০ শতাংশ নিরামিষ। কিন্তু আইসক্রিম কি আদৌ আমিষ হতে পারে? সেই প্রশ্নের জবাব দিয়েছিলেন তাঁরাই।
১১১৭
আমিষ বলতে সাধারণ ভাবে যা বোঝায়, সেই মাছ-ডিম-মাংস বা পেঁয়াজ-রসুন ব্যবহার হয় না আইসক্রিমে। তবে অনেক সংস্থাই আইসক্রিম তৈরির জন্য এক ধরনের ফ্যাটি অ্যাসিড ব্যবহার করেন, যা অ্যানিম্যাল বা পশুর দেহজাত চর্বি থেকে তৈরি।
১২১৭
এই ধরনের ফ্যাটি অ্যাসিডের নাম ক্যাপ্রিক অ্যাসিড বা ডি ক্যানিক অ্যাসিড। এ ছাড়াও অনেক সময়ে আইসক্রিমে জেলেটিনের ব্যবহার করা হয়, সেই জেলেটিনও আদতে পশুর শরীর থেকে সংগৃহীত প্রোটিন দিয়েই তৈরি।
১৩১৭
রঞ্ছোড়লালের সংস্থা বিজ্ঞাপন দিয়ে ঘোষণা করে, তাঁদের আইসক্রিম সম্পূর্ণ ‘সাত্ত্বিক’। এতটাই যে পুজোর জন্য উপোস করলেও তাঁদের তৈরি আইসক্রিম খাওয়া যায়।
১৪১৭
প্রতি ২০ থেকে ২৫ বছরে বড় বদল এসেছে আমদাবাদের এই আইসক্রিম সংস্থায়। ১৯৭০ সালে আমদবাদে ব্যবসা বিস্তারের পর ১৯৯০ সালে বিএসই-তে নাম ওঠে সংস্থাটির। এই সময়েই সংস্থার নিয়ন্ত্রণ আসে গাঁধীদের চতুর্থ প্রজন্মের হাতে। রামচন্দ্রের তিন সন্তান— বীরেন্দ্র, রাজেশ, শৈলেশ এবং লক্ষ্মণের একমাত্র পুত্র দেবাংশু গাঁধীর হাতে।
১৫১৭
এককালে আমদাবাদের ছোট্ট সোডার দোকানে আইসক্রিম রাখা দিয়ে যে ব্যবসার শুরু, তার এখন ৫০০ ডিস্ট্রিবিউটর, ৪০ হাজার খুচরো ব্যবসায়ী নিজেদের দোকানে শুধু ওই আইসক্রিমই রাখেন। ১২০ রকমের স্বাদের আইসক্রিম তৈরি করে সংস্থা। ২০১৯-২০ অর্থবর্ষে সংস্থাটির ব্যবসার পরিমাণও বেড়ে দাঁড়ায় ৬৫০ কোটিতে।
১৬১৭
তবে ভাদিলাল গাঁধীর চতুর্থ প্রজন্ম সেখানে থেমে যাননি। ভারতের বাজারে অন্যতম বড় আইসক্রিম বিক্রির ব্র্যান্ড হওয়ার পর তাঁরা সিদ্ধান্ত নেন বিদেশেও নিয়ে যাবেন ভারতের আইসক্রিমকে। ২০২১ সালে ২৫০ কোটি টাকার রফতানি বা়ড়ে ‘আমদাবাদী’ আইসক্রিমের।
১৭১৭
২০ -২৫ বছর পর হাতবদল হয় এই সংস্থার। এখন পঞ্চম প্রজন্মও যোগ দিয়েছেন ব্যবসায়। নাম কল্পিত গাঁধী। কল্পিত জানিয়েছেন, তাঁদের ব্যবসার মূলকথা হল সবার কাছে পৌঁছনো। তাঁদের ব্র্যান্ডের যেমন ১০টাকার আইসক্রিম রয়েছে, তেমনই ৭০০ টাকার আইসক্রিমও আছে। এই বিপুল বৈচিত্রই সব ধরনের গ্রাহক পেতে সাহায্য করেছে তাঁদের।