The rise and fall of Byju’s wh’s founder Byju Raveendran wants to take loan against his home to pay salary of the worker dgtl
Byju Raveendran
শূন্য থেকে হাজার কোটি, তার পরেই পতন! ভারতের তরুণ ব্যবসায়ীর পক্ষীরাজের ডানা ভাঙল কী ভাবে?
বাইজু’সই ছিল এশিয়ার প্রথম সংস্থা, যাদের বেছে নিয়েছিল ফেসবুক প্রতিষ্ঠাতার বিনিয়োগ সংস্থা। বাইজু’সকে বড় অঙ্কের অর্থসাহায্য করেছিল তারা।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতাশেষ আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০২৩ ১২:০৪
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২৪
বলিউডের সবচেয়ে দামি তারকাকে নিজেদের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর করেছিল এক স্টার্ট আপ সংস্থা। শাহরুখ খান প্রচার করতেন তাদের। বিজ্ঞাপনে মুখ দেখাতেন। ছ’বছর পর এখন সেই সংস্থার সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ছিঁড়তে মরিয়া কিং খান। কারণ এই সংস্থার জন্য তাঁকে আর্থিক গুণাগার দিতে হয়েছে। আঁচ পড়েছে নায়কের লালিত ভাবমূর্তিতে।
০২২৪
সংস্থার নাম বাইজু’স। এর প্রতিষ্ঠাতা একজন ভারতীয় তরুণ। নাম বাইজু রবীন্দ্রন। বয়স ৪৩ বছর। এই বয়সেই তিনি ১০ হাজার কোটি ডলারের সংস্থার মালিক হয়েছেন। আবার সেই সংস্থার জন্য এখন দেউলিয়াও হতে বসেছেন।
০৩২৪
কর্মচারীদের বেতন দিতে না পারায় সম্প্রতি নিজের বসতবাড়িটিকেও বন্ধক রাখতে হয়েছে তাঁকে। নিতে হয়েছে ঋণ। দিন কয়েক ইডির তল্লাশিও হয়েছে তাঁর বাড়িতে। তাঁর বিরুদ্ধে উঠেছে বিদেশি মুদ্রা পরিচালনা আইন (ফেমা) ভাঙার অভিযোগ।
০৪২৪
শূন্য থেকে শুরু বলতে যা বোঝায় বাইজু রবীন্দ্রনের গল্পটাও ঠিক সেই রকম। রূপকথার পক্ষীরাজ ঘোড়ার মতোই তার উত্থান। কিন্তু পতন তার থেকেও দ্রুত।
০৫২৪
কেরলের ছেলে। বাবা-মা দু’জনেই শিক্ষক। এক জন স্কুলে অঙ্ক শেখাতেন। অন্য জন পদার্থবিজ্ঞান। বাইজু নিজেও বিজ্ঞানের ছাত্র। ইঞ্জনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। হঠাৎই শিক্ষকতার পেশায় চলে আসেন। সে দিন থেকেই বীজ বোনা হয়ে গিয়েছিল তাঁর হাজার কোটির সংস্থার।
০৬২৪
ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের পড়াশোনা শেষ করে চাকরি করছিলেন। সেই সময় প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা ‘ক্যাট’-এর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল তাঁর বন্ধু। অবসরে তাঁকে অঙ্কে সাহায্য করতেন বাইজু।
০৭২৪
সেই বন্ধু পরীক্ষায় ভাল ফল করেন। উৎসাহিত হয়ে পরীক্ষায় বসেন বাইজুও। দেখা যায়, প্রথম বারের চেষ্টাতেই ক্যাটে শীর্ষ স্থানাধিকারীদের এক জন হয়ে গিয়েছেন!
০৮২৪
বাইজু অবশ্য একবারে থামেননি। পরের বছর ২০০৪ সালে আবার ক্যাট পরীক্ষা দেন। এ বারও তাঁর স্থান ছিল শীর্ষে। ধীরে ধীরে ছাত্রসংখ্যা বাড়তে থাকে তাঁর।
০৯২৪
দু’বছর পরে বাইজু চাকরি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন। সেটা ২০০৬ সাল। তত দিনে তাঁর ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা কয়েকশো পেরিয়েছে। বেড়েছে তাঁর কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে ক্যাটে সফল হওয়া পরীক্ষার্থীর সংখ্যাও।
১০২৪
২০০৭ সালে বাইজু নিজের পড়ানোর ক্লাসের একটি নাম দেন বাইজু। নিজের নামেই ব্যবসা— ‘বাইজু’স ক্লাস’। সেই ক্লাসের আয়তন অচিরেই বেড়ে স্টেডিয়ামের আকার নেয়।
১১২৪
ছাত্রছাত্রীদের তাতেও সামাল দেওয়া যাচ্ছিল না। ২০০৮ থেকে ২০০৯ সালের মাঝামাঝি ভিডিয়ো কোচিং শুরু করেন বাইজু। এবং শেষে দু’বছর পর স্ত্রীর সঙ্গে মিলে তৈরি করেন একটি স্টার্ট আপ সংস্থা। নাম দেন ‘বাইজু’স’।
১২২৪
বাইজুর স্ত্রী দিব্যা গোকুলনাথও একজন ক্যাটের ছাত্রী। এক সময় বাইজুরও ছাত্রী ছিলেন তিনি। সেখান থেকেই প্রেম এবং বিয়ে। শেষে বাইজুর ব্যবসার অংশীদার হন দিব্যা।
১৩২৪
বাইজু’স-এর ক্রমোন্বতি চোখে পড়ছিল শিল্প জগতের অনেকেরই। এই ধরনের স্টার্ট আপ সংস্থাকে অর্থসাহায্য করে তাদের সংস্থায় বিনিয়োগ করে বড় বড় বহু সংস্থা। এই ধরনের সাহায্যকে বলা হয় সিড ফান্ড। বাইজু’স এমন অজস্র সিড ফান্ডিং জোটাতে সমর্থ হয়।
১৪২৪
২০১৩ সালে বাইজু’সে প্রথম বিনিয়োগ করে আরিন ক্যাপিটাল। তাদের থেকে ৯০ লক্ষ ডলার সাহায্য পায় বাইজু’স। এর পর একে একে বহু সংস্থাই এগিয়ে আসে বাইজু’সে বিনিয়োগ করতে। মার্ক জ়াকারবার্গের সংস্থাও বাইজু’সে আগ্রহ দেখায়।
১৫২৪
বাইজু’সই ছিল এশিয়ার প্রথম সংস্থা, যাদের বেছে নিয়েছিল ফেসবুক প্রতিষ্ঠাতার বিনিয়োগ সংস্থা। বাইজু’সকে বড় অঙ্কের অর্থসাহায্য করেছিল তারা। এ ভাবেই ২০১৮ সালের মধ্যে ১০০ কোটি ডলারের স্টার্ট আপ সংস্থায় পরিণত হয় বাইজু’স। তবে তখনও পক্ষীরাজের আরও উড়ান বাকি।
১৬২৪
ঠিক দু’বছরের মাথায় বাইজু’স-এর সংস্থার মূল্য ১০ গুণ বৃদ্ধি হয়। ১০০ কোটি থেকে এক লাফে হাজার কোটির সংস্থায় উত্থান হয় বাইজু’স-এর। তখন দেশে লকডাউন চলছে। আর অনলাইনে পড়াশোনা করানোর প্রযুক্তি তত দিনে বাইজুর নখদর্পণে।
১৭২৪
২০১৫ সাল থেকেই স্মার্টফোনে পড়ানোর যাবতীয় প্রযুক্তি মজুত বাইজু’স-এর হাতে। সে বছর থেকেই স্মার্টফোনের কাচের পর্দার দৈর্ঘ্য বেড়েছিল। বাইজু’সও মোবাইলে পড়াশোনার সুবিধার কথা ভেবে তৈরি করেছিল তাদের নতুন অ্যাপ।
১৮২৪
২০১৮ সালের মধ্যে ব্রিটেন, আমেরিকা-সহ অধিকাংশ ইংরেজিভাষী দেশেই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল বাইজু’স-এর ওই অ্যাপ।
১৯২৪
করোনাকালে যখন সমস্ত স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইনে পড়াশোনা করানোর দিকে ঝুঁকতে শুরু করেছে, তখন সাজানো-গোছানো সহজ প্রযুক্তির ডালা নিয়ে তাদের সামনে হাজির হয় বাইজু’স।
২০২৪
২০২১ সালে বাইজু’স-এর সংস্থার মূল্য বেড়ে দাঁড়ায় ১৬৫০ কোটি ডলারে। ভারতের সর্বাধিক মূল্যের স্টার্ট আপ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয় বাইজু’স। টেক্কা দেয় পেটিএমকে। ওই বছরই বাইজু’স-এর মূল্য বেড়ে দাঁড়ায় ২২০০ কোটি ডলারে। ভারতীয় ক্রিকেট টিমের স্পনসরের দায়িত্বও দেওয়া হয় এই স্টার্ট আপ সংস্থাকে। কিন্তু এর পরেই ধাক্কা লাগে পক্ষীরাজের ডানায়।
২১২৪
২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে বাইজু’স-এর বড় ক্ষতির রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসে। জানা যায় শেষ অর্থবর্ষে ৪৫৮৮ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বাইজু’স-এর।
২২২৪
প্রভাব পড়ে সংস্থার কর্মীদের উপর। বোঝা কমাতে হাজার হাজার কর্মী ছাঁটাই করা হয় বাইজু’সে। প্রায় ২৫ কোটি ডলারের একটি ঋণও হাতে আসে বাইজু’স-এর।
২৩২৪
কিন্তু কোনও ভাবেই বিপুল ঋণের বোঝা কমে না বাইজু’স-এর। নিজেদের বাঁচানোর কোনও কসুরই বাকি রাখেননি রবীন্দ্রন। ডুবন্ত তরী ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছিলেন সকলেই। এর পরেও হাল ছাড়েনি বাইজু’স। জুলাই মাসে স্টেট ব্যাঙ্কের প্রাক্তন চেয়ারম্যান রজনীশকুমার এবং ইনফোসিসের প্রাক্তন সিএফও মোহনদাস পাইকে উপদেষ্টা বানায় বাইজু’স। এমনকি, নিয়োগ করে নতুন অডিটর। সমস্ত লাভ-ক্ষতির হিসাব জানানোর প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয় বিনিয়োগকারীদের।
২৪২৪
কিন্তু ছ’মাস কেটে গেলেও শেষ পর্যন্ত সুরাহা হয়নি। আর এখন বাইজু’স খড়কুটো আঁকড়ে ধরেছে। ১৫ হাজার কর্মীর বেতন দেওয়ারও ক্ষমতা নেই তাদের। তাই নিজের বাড়ি বন্ধক রেখেও এক কোটি ২০ লক্ষ ডলার ঋণ নিতে চাইছেন বাইজু। সেই ঋণ কি শেষ পর্যন্ত খড়কুটো থেকে কাঠের ভেলার জায়গা নিতে পারবে? আপাতত সে দিকেই তাকিয়ে বাইজু’স-এর বিনিয়োগকারীরা।