The reason behind India’s hardest posture against China dgtl
India
তাইওয়ানের প্রেসিডেন্টের শুভেচ্ছার জবাব মোদীর, চিনকে কোন বার্তা দিতে চাইল ভারত?
২০২০ সালে লাদাখে ভারত এবং চিনের সেনাবাহিনীর মুখোমুখি সংঘর্ষের পর তিক্ততা বৃদ্ধি পেয়েছে। এ বার আরও কিছুটা কড়া ভারত। কিন্তু কেন?
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতাশেষ আপডেট: ০১ জুলাই ২০২৪ ১২:১৯
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৯
গত কয়েক সপ্তাহে একটু হলেও চিনের প্রতি ভারতের মনোভাব বদলেছে। মনে করা হচ্ছে, নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন সরকার তৃতীয় বার ক্ষমতায় আসার পর চিনের প্রতি তাদের আচরণ কিছুটা কঠোর হয়েছে। ২০২০ সালে লাদাখে ভারত এবং চিনের সেনাবাহিনীর মুখোমুখি সংঘর্ষের পর তিক্ততা বৃদ্ধি পেয়েছে। এ বার আরও কিছুটা কড়া ভারত। কিন্তু কেন?
০২১৯
জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে কাজাখস্তানে সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও)-এর বৈঠকে যোগ দিতে যাওয়ার কথা মোদীর। সেখানে দেখা হতে পারে চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে। তার আগে কিছুটা কড়া হচ্ছে ভারতের অবস্থান।
০৩১৯
গালওয়ানে দুই দেশের মুখোমুখি সংঘর্ষের পর ২০২২ সালে বালিতে জি২০ সম্মেলনে সাক্ষাৎ হয়েছিল মোদী এবং জিনপিংয়ের। গত বছর দক্ষিণ আফ্রিকায় ব্রিকস সম্মেলনে আবার দুই রাষ্ট্রপ্রধান মুখোমুখি হয়েছিলেন। অন্য দিকে, দুই দেশে সেনাকর্তাদের মধ্যে বার বার আলোচনার পরেও বরফ গলেনি। গালওয়ান সীমান্তের দুই পারে এখনও হাজার হাজার জওয়ান মোতায়েন রয়েছেন।
০৪১৯
গত চার বছর ধরে ভারত এবং চিনের মধ্যে যাত্রিবাহী বিমান যাতায়াত করে না। চিনে যেতে হলে অন্য দেশের মাধ্যমে ঘুরে যেতে হয়। ভারত এবং চিনের মধ্যে সরাসরি যাত্রিবাহী বিমান চালু করার জন্য চাপ দিচ্ছে বেজিং। সংবাদ সংস্থা রয়টার্স দাবি করেছে, নয়াদিল্লি রাজি হচ্ছে না।
০৫১৯
চিনের এক সরকারি কর্তাকে উদ্ধৃত করে রয়টার্স জানিয়েছে, চিন সরকার বার বার ভারতকে দুই দেশের মধ্যে বিমান চালু করার জন্য অনুরোধ করেছে। তাদের কাছে এটা ‘বড় বিষয়’।
০৬১৯
চিনের বিদেশ মন্ত্রকের এক আধিকারিক রয়টার্সকে বলেছেন, ‘‘আশা করি এই বিষয়ে আমাদের সঙ্গে কথা বলবে ভারত সরকার।’’ কিন্তু ভারতের এক সরকারি আধিকারিক সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, সীমান্তে শান্তি না ফিরলে দুই দেশের বাকি দ্বিপাক্ষিক বিষয়ে কোনও পদক্ষেপ করা হবে না।
০৭১৯
সেই অতিমারির সময় দুই দেশের মধ্যে বিমান চলাচল বন্ধ হয়। শুধু আটকে পড়া বাসিন্দাদের দেশে ফেরানোর জন্য কিছু বিমান চলেছিল তখন। পরের বছর ভারত বিমান চলাচলে বিধিনিষেধ তুলে দেয়। ২০২৩ সালের শুরুতে চিনও অতিমারির জন্য আরোপ করা বিধিনিষেধে ইতি টানে। কিন্তু দুই দেশের মধ্যে তার পরেও চলেনি বিমান।
০৮১৯
অন্য দিকে, জুন মাসে লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর মোদীকে অভিনন্দন জানান তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লাই চিং-তে। তিনি জানান, দুই দেশের সম্পর্কের উন্নতির দিকে তাকিয়ে রয়েছেন। তিনি বাণিজ্য, প্রযুক্তি ক্ষেত্রে দুই দেশের সহযোগিতা বৃদ্ধির উপরেও জোর দিয়েছেন। এই নিয়ে এক্স (সাবেক টুইটার)-এ পোস্ট করেছেন।
০৯১৯
পাল্টা ধন্যবাদ জানিয়েছেন মোদী। এক্সে তিনি লিখেছেন, দুই দেশের মজবুত সম্পর্কের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন। অর্থনীতি এবং প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রে দুই দেশই পরস্পরকে সহযোগিতা করছে।
১০১৯
আর এতেই চটেছে চিন। তাইওয়ানের প্রেসিডেন্টের বার্তাকে স্বীকৃতি দিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী, এই বিষয়টি ভাল চোখে দেখেনি চিন। চিনের বিদেশমন্ত্রক ভারতকে অনুরোধ করেছে, তারা যেন এমন কিছু না করে, যা ‘এক চিন নীতি’-র পরিপন্থী হয়।
১১১৯
বেজিং দাবি করে, তাইওয়ান চিনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাইওয়ানের সরকারের সঙ্গে অন্য রাষ্ট্রের প্রধানদের সরকারি যোগাযোগ বা অন্য কোনও দেশের সঙ্গে তাইওয়ানের কূটনৈতিক সম্পর্কের বিরোধিতা করে বেজিং।
১২১৯
চিনের সঙ্গে যে সব দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে, তারা চিনের এই ‘এক চিন নীতি’ মেনে চলে। তাইওয়ানের সঙ্গে পৃথক ভাবে কূটনৈতিক সম্পর্ক রাখে না। ভারতও তাই করে এসেছে। চিন মনে করছে, তাইওয়ানের নতুন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথা বলে মোদীই প্রথম ‘সীমা লঙ্ঘন’ করেছেন। তাইওয়ানের প্রেসিডেন্টকে ‘বিদ্রোহী’ বলেই মনে করছে চিন।
১৩১৯
অরুণাচল প্রদেশের একাধিক জায়গার নাম পরিবর্তন করেছে চিন। একটি রিপোর্ট বলছে, এই নিয়ে কড়া অবস্থান নিতে চলেছে ভারতও। চিনের স্বায়ত্তশাসিত তিব্বতের বেশ কিছু জায়গার নাম বদল করার পরিকল্পনা করছে নয়াদিল্লি।
১৪১৯
রিপোর্ট বলছে, কোন কোন জায়গার নামবদল করা হবে, তার তালিকা শীঘ্রই প্রকাশ করা হবে। সেনার ইনফরমেশন ওয়ারফেয়ার ডিভিশনের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই এই নামবদল হবে। সে জন্য স্থানীয়দের মতামতও নেওয়া হয়েছে। তাঁদের অনেকেই চিনা নামের বিরোধিতা করেছেন।
১৫১৯
গত মার্চে অরুণাচল প্রদেশে নিয়ন্ত্রণরেখা সংলগ্ন ৩০টি এলাকার নামবদল করেছে চিন। তার মধ্যে ১১টি জনবসতি এলাকা, ১২টি পাহাড়, চারটি নদী, একটি হ্রদ, একটি গিরিখাত রয়েছে। এই নিয়ে ভারতের তীব্র আপত্তি উড়িয়ে চতুর্থ বার চিন এ রকম ভাবে অরুণাচলের বিভিন্ন জায়গার নামকরণ করল।
১৬১৯
সম্প্রতি ভারতে দলাই লামার সঙ্গে দেখা করতে এসেছে আমেরিকার প্রতিনিধিদল। দলে ছিলেন স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি। এই নিয়ে আগে থেকেই আপত্তি জানিয়েছিল চিন। তারা দলাই ধর্মীয় নেতা দলাই লামাকে বিচ্ছিন্নতাবাদী হিসাবেই দেখে। যদিও ভারত আপত্তি উড়িয়ে অনুমতি দিয়েছে আমেরিকার প্রতিনিধিদলকে। পরে তাদের সঙ্গে দেখা করেছেন খোদ মোদী।
১৭১৯
আমেরিকার প্রতিনিধি দলের ভারতে আগমনের দিন কয়েক আগেই সে দেশে একটি বিল পাশ করানো হয়েছে। হাউস অফ রিপ্রেজ়েনটেটিভস বিলটি পাশ করিয়েছে। তাতে দাবি তোলা হয়েছে, তিব্বতের নেতাদের সঙ্গে চিনকে কথা বলানোর জন্য চাপ দিতে হবে। তার পরেই আমেরিকার প্রতিনিধি দলের ভারত সফরে চটে যায় চিন।
১৮১৯
প্রশ্ন হচ্ছে, কেন এত কড়া পদক্ষেপ করছে ভারত? এত দিন বেজিংয়ের ‘এক চিন নীতি’ নিয়ে ভারত প্রকাশ্যে কোনও চ্যালেঞ্জ ছোড়েনি। কিন্তু এখন চিনকে বার্তা দিতে চাইছে যে, ভারতের ভূখণ্ডগত অখণ্ডতাকে মর্যাদা না দিলে ছেড়ে কথা বলা হবে না। ভারতের তিব্বত এবং তাইওয়ান নিয়ে সাম্প্রতিক নীতি তেমনই বলছে।
১৯১৯
লন্ডনের কিংস কলেজের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক হর্ষ পন্থ মনে করছেন, ভারত আগেই বার্তা দিয়েছিল যে, তিব্বত এবং তাইওয়ান ইস্যুতে তারা চাপ তৈরি করতে পারে চিনের উপর। এ বার স্পষ্টই বুঝিয়ে দিল যে, এ দেশের স্বার্থ যদি চিন না দেখে, তবে তাদের স্বার্থেও আঘাত হানতে পারে নয়াদিল্লি।