Starfish Prime Nuclear Test: America’s nuclear test in America and its effects dgtl
Starfish Prime
ধ্বংস হয় বহু উপগ্রহ, ছড়িয়ে পড়ে শক্তিশালী কণা! মহাকাশেও পরমাণু বিস্ফোরণ ঘটায় আমেরিকা
সোভিয়েতের থেকে এক ধাপ এগিয়ে থাকার ইচ্ছা থেকে আমেরিকা ‘প্রজেক্ট ফিশবোল’ নামে একটি পরীক্ষা শুরু করে। মহাকাশে পারমাণবিক পরীক্ষা করলে কী হয়, তা জানতেই এই পরীক্ষা শুরু করেছিল আমেরিকা।
নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতাশেষ আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০২২ ১১:৪৪
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২১
৯ জুলাই, ১৯৬২। আজ থেকে ৬০ বছর আগে এই দিনেই প্রশান্ত মহাসাগর বরাবর মহাকাশে একটি পারমাণবিক বিস্ফোরণ ঘটায় আমেরিকা।
০২২১
আমেরিকার জনস্টন অ্যাটল থেকে এই পারমাণবিক বোমা উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল। আমেরিকা মহাকাশে এখনও পর্যন্ত মোট পাঁচটি বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। তবে এটিই ছিল মহাকাশে হওয়া বৃহত্তম পারমাণবিক পরীক্ষা।
০৩২১
মহাকাশে করা আমেরিকার এই পারমাণবিক পরীক্ষার নাম ছিল স্টারফিশ প্রাইম। আমেরিকা এবং সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে চলা ঠান্ডা যুদ্ধের আবহে এই পারমাণবিক পরীক্ষাটি করা হয়।
০৪২১
১৯৫৮ সালে পারমাণবিক অস্ত্রের বায়ুমণ্ডলীয় পরীক্ষার উপর নিষেধাজ্ঞার ডাক দেয় সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন। রাজনৈতিক চাপে আমেরিকাকেও এই সিদ্ধান্তে রাজি হতে হয়েছিল।
০৫২১
১৯৬১ সালের শেষের দিকে অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক চাপের কারণে সোভিয়েত আবারও মহাকাশে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে শুরু করে। ফলে আমেরিকার উপর থেকেও পরীক্ষা না করার বাধা সরে যায়।
০৬২১
নতুন করে মহাকাশে পরীক্ষা করতে নেমে আমেরিকার উদ্বেগ তৈরি হয়, সোভিয়েত মহাকাশে পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আমেরিকার আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্রগুলিকে ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস করতে পারে।
০৭২১
সেই থেকেই সোভিয়েতের থেকে এক ধাপ এগিয়ে থাকার ইচ্ছা থেকে আমেরিকা ‘প্রজেক্ট ফিশবোল’ নামে একটি পরীক্ষা শুরু করে। এরই মধ্যে একটি পরীক্ষার নাম ছিল স্টারফিশ প্রাইম। মহাকাশে পারমাণবিক বোমা ফাটালে কী হয় তা জানতেই ‘প্রজেক্ট ফিশবোল’ শুরু করেছিল আমেরিকা।
০৮২১
এর আগে মহাকাশে যে পরীক্ষাগুলি করা হয়েছিল, আমেরিকা তার ফলাফল নিয়ে অনিশ্চিত ছিল। আর সেই কারণেই আরও বড় বৈজ্ঞানিক পরীক্ষার জন্য তৈরি হচ্ছিল আমেরিকা।
০৯২১
১৯৬২-র ৯ জুলাই আমেরিকার হাওয়াইয়ের প্রায় ১৫০০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত জনস্টন দ্বীপ থেকে একটি থর ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ করে আমেরিকা। এর নাম দেওয়া হয় স্টারফিশ প্রাইম।
১০২১
ক্ষেপণাস্ত্রটি ১১০০ কিমির বেশি উচ্চতায় উঠে মাটির দিকে ফিরে আসে। আগে থেকেই ঠিক করে রাখা ৪০০ কিমি উচ্চতায় প্রবল আওয়াজে কেঁপে ওঠে আকাশ। ক্ষেপণাস্ত্র থেকে বিস্ফোরিত হয় ১.৪ মেগাটনের পারমাণবিক বোমা।
১১২১
১.৪ মেগাটনের ওই পরমাণু বোমা ছিল ১৪ লক্ষ টনের টিএনটি বিস্ফোরণের সমতুল্য। এই বিস্ফোরণের প্রভাব এতই মারাত্মক ছিল যে, এর পর থেকে আমেরিকা মহাকাশে আর পরমাণু পরীক্ষার কথা ভাবেনি।
১২২১
বিস্ফোরণের প্রভাবে আশপাশের হাজার হাজার কিলোমিটার জুড়ে আলোর ছটা দেখা গিয়েছিল।
১৩২১
বিস্ফোরণের ফলে কিছু শক্তিশালী বিটা কণা পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্র অনুসরণ করে। আবার কিছু উচ্চশক্তির ইলেকট্রন পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে আটকে পড়ে এবং পৃথিবীর চারপাশে একটি তেজস্ক্রিয় বলয় তৈরি করে।
১৪২১
একই সঙ্গে পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথে থাকা তিনটি কৃত্রিম উপগ্রহও নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়। এর পরই উদ্বেগ বাড়ে আমেরিকার। শক্তিশালী ইলেকট্রনগুলি অবশ্য মাত্র কয়েক দিনের জন্য বায়ুমণ্ডলে ছিল।
১৫২১
বিস্ফোরণের প্রভাবে পরবর্তী কয়েক মাসে আরও কয়েকটি কৃত্রিম উপগ্রহ বিকল হয়ে পড়ে। তেজস্ক্রিয় বিকিরণে এই উপগ্রহগুলির বিভিন্ন যন্ত্রাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। আর সেই কারণেই কর্মক্ষমতা হারায় উপগ্রহগুলি।
১৬২১
এই বিস্ফোরণে পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্রও প্রভাবিত হয়েছিল।
১৭২১
বিস্ফোরণের ফলে বিকল হয়ে পড়া উপগ্রহগুলির মধ্যে ব্রিটেনের একটি বাণিজ্যিক উপগ্রহও ছিল। আমেরিকা প্রমাদ গুনতে শুরু করে। বুঝতে পারে যে এই কর্মকাণ্ডের জন্য তাদের অনেক দেশকে জবাবদিহি করতে হবে।
১৮২১
কোথাও পরমাণু বোমা ফেললে তার ভয়াবহতা কী হতে পারে, সেই সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা অবহিত থাকলেও মহাকাশে এর প্রভাব সম্পর্কে তেমন কিছু জানতেন না।
১৯২১
বিস্ফোরণের পরে তৈরি হওয়া তেজস্ক্রিয় বলয় এবং বায়ুমণ্ডলে আটকে পড়া ইলেকট্রনগুলির বিকিরণ থেকে তৈরি হওয়া সম্ভাব্য প্রতিকূল প্রভাব সম্পর্কে অনেক অনিশ্চয়তা এবং বিতর্ক ছিল।
২০২১
পারমাণবিক বোমা সাধারণ রাসায়নিক বিস্ফোরক থেকে মৌলিক ভাবে আলাদা। পরমাণু বোমাগুলি তাপ এবং আলো তৈরি করার পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণে এক্স রে এবং গামা রশ্মি উৎপন্ন করে, যা মানুষের জন্য ক্ষতিকর।
২১২১
ওই বিস্ফোরণের প্রভাবের কথা মাথায় রেখে আমেরিকা বা অন্য কোনও দেশ আর কখনও মহাকাশে পরমাণু পরীক্ষা করার কথা চিন্তা করেনি।