SSC: কী ভাবে ধরা পড়ল এসএসএসি-র ‘দুর্নীতি’! কী ভাবে এগোল মামলা আর তদন্ত
এক দিনে তো মামলার রায় প্রকাশিত হয়নি। এর নেপথ্যে ছিল দীর্ঘ দিনের কাহিনি। দেখে নেওয়া যাক, কোন পথে এল এই রায়।
নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতাশেষ আপডেট: ২২ মে ২০২২ ১৩:৩১
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২৫
হাই কোর্টে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের একক বেঞ্চের নির্দেশে শুক্রবার চাকরি যায় রাজ্যের শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী পরেশ অধিকারীর মেয়ে অঙ্কিতা অধিকারীর। যে ঘটনা নিয়ে রাজ্যের শিক্ষামহল তথা রাজনৈতিক মহল তোলপাড় হয়। এক দিনে তো এই মামলার রায় প্রকাশিত হয়নি। এর নেপথ্যে ছিল দীর্ঘ দিনের কাহিনি। দেখে নেওয়া যাক, কোন পথে এল এই রায়।
০২২৫
কোর্টের নির্দেশে পরেশ-কন্যা অঙ্কিতাকে এখনও পর্যন্ত দেওয়া সমস্ত বেতন ফেরত দিতে হবে বলেও নির্দেশ দেয় আদালত। পাশাপাশি পরেশকেও জেরা করা শুরু করেছে সিবিআই। শনিবার এই প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার আগে পর্যন্ত নিজাম প্যালেসে তিন বার হাজিরা দিতে হয়েছে পরেশকে।
০৩২৫
শুক্রবার এসএসসি-র নিয়োগ দুর্নীতির একটি মামলার নিষ্পত্তি হলেও এই মামলার সূত্রপাত হয়েছিল ২০১৯ সালে। আর দুর্নীতির শুরু তারও আগে। ২০১৭ সালে।
০৪২৫
২০১৬ সালে এসএসসি-র তরফে গ্রুপ সি, গ্রুপ ডি এবং নবম-দশম শ্রেণিতে শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়।
০৫২৫
পরীক্ষা হয় ২০১৭ সালে। সেই বছরের শেষেই পরীক্ষার ফলপ্রকাশ হয়। এর পর অনেক দিন নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত থাকার পর প্রায় দু’বছর পর ২০১৯ সালে কাউন্সিলিং প্রক্রিয়া শুরু হয়। কিন্তু ২০১৯-এর পয়লা নভেম্বরে এই প্যানেলের মেয়াদ শেষ হয়।
০৬২৫
এর পর পরই রাজ্যের তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নির্দেশে ৫ সদস্যের একটি নজরদারি ও তদারকি কমিটি তৈরি করা হয় (যদিও এই কমিটিকে বেআইনি বলেই জানিয়েছে উচ্চ আদালত)।
০৭২৫
এই কমিটির প্রধান উপদেষ্টা করা হয়, শান্তিপ্রসাদ সিন্হাকে। এ ছাড়াও এই কমিটিতে ছিলেন শিক্ষা দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর আলোক সরকার, শিক্ষা দফতরের আইন বিষয়ক অফিসার তাপস পাঁজা, শিক্ষা মন্ত্রী পার্থের ওএসডি প্রবীর বন্দ্যোপাধ্যায় এবং পার্থের আপ্ত সহায়ক সুকান্ত আচার্য।
০৮২৫
কিন্তু অভিযোগ ওঠে, ভুয়ো নিয়োগের জন্য এসএসসি থেকে সুপারিশপত্র গোলমাল করে এই কমিটিই মধ্যশিক্ষা পর্ষদের কাছে পৌঁছে দেয়।
০৯২৫
মধ্যশিক্ষা পর্ষদ সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে একটি দল (এসএসসি চেয়ারম্যান সৌমিত্র সরকার, এসএসসি সচিব আলোক কুমার সাহা, সমরজিৎ আচার্য, এসএসসি প্রোগ্রামিং অফিসার) তথ্য সাজিয়ে ভুয়ো নিয়োগের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বলেও অভিযোগ ওঠে।
১০২৫
২০২০ সালে এই অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা করা হয় উচ্চ আদালতে।
১১২৫
এই কমিটি গঠন করাকে বেআইনি বলে ঘোষণা করে আদালত। আদালতের নজরে পড়েন কমিটির স্রষ্টা প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থও। প্রথমে তাঁকে সিবিআইয়ের কাছে হাজিরা দেওয়ার নির্দেশ দিলেও পরে এই মামলা পাঁচ সপ্তাহের জন্য স্থগিত হয়।
১২২৫
এর পর পার্থের ভূমিকা নিয়ে মামলা আদালতে উঠলে ১৯ মে পার্থকে সিবিআই দফতরে হাজিরার নির্দেশ দেয় আদালত। ২০ মে-ও পার্থকে দ্বিতীয় বার তলব করে সিবিআই। ওই একই দিনে পার্থের আইনজীবী ডিভিশন বেঞ্চে সিবিআই হেফাজত থেকে রক্ষাকবচের আবেদন জানালেও সেই আর্জি খারিজ করে কলকাতা হাই কোর্ট।
১৩২৫
জানিয়ে দেয়, পার্থকে হেফাজতে নিতে পারে সিবিআই। বিচারপতি সুব্রত তালুকদার এবং বিচারপতি আনন্দকুমার মুখোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চে মামলাটির শুনানি চলছিল। সেখানেই এই রায় দেওয়া হয়।
১৪২৫
শিক্ষক নিয়োগ মামলা নিয়ে এসএসসি-র তৎকালীন উপদেষ্টা শান্তিপ্রসাদ সিংহের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির হিসাব-নিকেশ চেয়েছিল বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায়ের একক বেঞ্চ। সেই নির্দেশেও ডিভিশন বেঞ্চে স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়।
১৫২৫
এর পর ২০২১ সালের ২২ নভেম্বর গ্রুপ ডি পরীক্ষায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেন কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের একক বেঞ্চ। কিন্তু এই মামলা ৬ ডিসেম্বর স্থগিত হয়ে যায়। এই মামলাটি করেন সন্দীপ প্রসাদ।
১৬২৫
পরে অবশ্য গ্রুপ ডি নিয়ে দুর্নীতি হয়েছে কি না, তা নিয়ে রঞ্জিতকুমার বাগের নেতৃত্বে ‘বাগ কমিটি’ গঠন হয়। এই কমিটির মধ্যে ছিলেন মধ্যশিক্ষা পর্ষদ ডেপুটি সেক্রেটারি অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ও এসএসসি-র এক আধিকারিক।
১৭২৫
মামলা শুরু হয়, গ্রুপ সি নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগেও। মামলা করেন সাবিনা ইয়াসমিন। এই মামলাতেও চলতি বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি সিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেয় আদালত। কিন্তু এই মামলাটিও ২৮ ফেব্রুয়ারি স্থগিত হয়ে যায়।
১৮২৫
ঘটনাচক্রে, স্থগিত হয় নবম-দশম শ্রেণির শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে চলা মামলাও। মামলা করেছিলেন নাসরিন খাতুন এবং সেতাব উদ্দীন। এই মামলায় ২৮ ফেব্রুয়ারিই সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিল একক বেঞ্চ। ডিভিশন বেঞ্চে স্থগিত হয় ২ মার্চ।
১৯২৫
তবে নবম-দশমের ক্ষেত্রে ফের ৩ মার্চ সিবিআইকে তদন্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়। এক সপ্তাহ পর ১১ মার্চ স্থগিত হয়ে যায় এই রায়।
২০২৫
তবে এর পরই প্রকাশ্যে আসে এই মামলা নিয়ে তদন্ত করা বাগ কমিটির রিপোর্ট। বাগ কমিটি রিপোর্টে জানায়, গ্রুপ ডি-তে ৬২৪টি অবৈধ নিয়োগ হয়েছে। গ্রুপ সি নিয়োগের ক্ষেত্রে অবৈধ নিয়োগ হয় ৩৮১টি।
২১২৫
এর পরই নজরে আসে এসএসসির নতুন ভবন আচার্য সদন। অভিযোগ, আচার্য সদন ভবন থেকেই রমরমিয়ে চলত ভুয়ো নিয়োগের প্রক্রিয়া। আদালতের নির্দেশে এই ভবনের একাধিক ঘর ইতিমধ্যেই সিল করেছে সিবিআই। খতিয়ে দেখা হচ্ছে সমস্ত নথি এবং সিসি টিভি ক্যামেরাগুলিও।
২২২৫
এরপর বিচারপতি সুব্রত তালুকদার এবং বিচারপতি আনন্দকুমার মুখোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চে মামলাটি উঠলে, ডিভিশন বেঞ্চ একক বেঞ্চের রায় বহাল রাখার নির্দেশ দেয়।
২৩২৫
তবে এসএসসি-র নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় এখনও অবধি সব থেকে সফল মামলা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে দুর্নীতি মামলা। এই মামলাতেও সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের একক বেঞ্চ। মন্ত্রী পরেশ এবং মন্ত্রীকন্যা অঙ্কিতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামেন শিলিগুড়ির বাসিন্দা ববিতা সরকার।
২৪২৫
ববিতা ২০১৬ সালে স্কুলশিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষায় বসেন। মেধাতালিকা প্রকাশ হয়েছিল ২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর।
২৫২৫
মন্ত্রীকন্যার থেকে ১৬ নম্বর বেশি পেয়েও এসএসসি-র প্রকাশ করা নতুন তালিকায় ওয়েটিং লিস্টে নাম যায় ববিতার। প্রথম তালিকায় অবশ্য তিনি ছিলেন ২০ নম্বরে। এর পরই ২০২২-এ আদালতের দ্বারস্থ হয়ে মামলা করেছিলেন ববিতা।