Gautam Gambhir and Natasha Jain are perfect match for each other dgtl
cricket
ভেবেছিলেন ক্রিকেট ছেড়েই দেবেন, নাতাশাকে বিয়ের আগে একটাই শর্ত দেন গৌতম গম্ভীর
গম্ভীরেরও মনে হয়েছিল, নাতাশা তাঁর যোগ্য জীবনসঙ্গী হতে পারবেন। তাঁর সবথেকে ভাল লেগেছিল ক্রিকেট নিয়ে নাতাশার অনাগ্রহ। কোনও দিন তিনি ক্রিকেট নিয়ে কিছু আলোচনা করেননি গৌতমের সঙ্গে। এই দিকটাই গম্ভীর এবং নাতাশার সফল সম্পর্কের মূল রসায়ন।
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০২০ ১৩:২৭
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২৪
দুই ব্যবসায়ী পরিবারের আলাপ ছিলই। পারিবারিক সূত্রেই প্রথম পরিচয় গৌতম গম্ভীর এবং নাতাশা জৈনের। বিয়ের ক্ষেত্রে দুই পরিবারের সম্মতির পরেই দু’জনের মেলামেশা শুরু। অভিভাবকদের ঠিক করে দেওয়া ‘সম্বন্ধ’ হলেও বিয়ের আগে থেকেই একে অন্যের প্রেমে পাগল গম্ভীর এবং নাতাশা।
০২২৪
এক সাক্ষাৎকারে নাতাশা পরে জানান, তাঁদের দুই পরিবারের মধ্যে পরিচয় ৩ দশকের পুরনো। গম্ভীরের সঙ্গে আলাপের ২-৩ বছর পর থেকে তাঁরা বিয়ের কথা ভাবেন। ২০১০ সালে হয়ে গিয়েছিল বাগদান। বিয়ে হয় ১ বছর পরে।
০৩২৪
গম্ভীরের মতো জনপ্রিয় ক্রিকেটারের পরিচয় নিয়ে কিছুটা দ্বিধায় ছিলেন নাতাশা। কারণ তাঁর ক্রিকেটে কোনও আগ্রহ ছিল না। বরং তিনি মশগুল ছিলেন ফ্যাশন এবং মেক আপ নিয়ে। কিন্তু গৌতমের ব্যক্তিত্ব তাঁকে মুগ্ধ করেছিল। তাই দ্বিধা কাটিয়ে আকৃষ্ট হন তাঁর দিকে।
০৪২৪
তবে এই মুগ্ধতা যে প্রথম আলাপে এসেছে, তা একেবারেই নয়। তারকাসুলভ পরিচয়ের থেকেও গৌতমের সারল্য বেশি ভাল লেগেছিল নাতাশার। তারকা হয়েও সাধারণ জীবনযাপনের চেষ্টা দু’জনকে কাছাকাছি এনেছিল।
০৫২৪
গম্ভীরেরও মনে হয়েছিল, নাতাশা তাঁর যোগ্য জীবনসঙ্গী হতে পারবেন। তাঁর সবথেকে ভাল লেগেছিল ক্রিকেট নিয়ে নতাশার অনাগ্রহ। কোনও দিন তিনি ক্রিকেট নিয়ে কিছু আলোচনা করেননি গৌতমের সঙ্গে। এই দিকটাই গম্ভীর এবং নতাশার সফল সম্পর্কের মূল রসায়ন।
০৬২৪
তবে বিয়ের ক্ষেত্রে একটা শর্ত রেখেছিলেন গম্ভীর। এবং সেটা ছিল ক্রিকেট নিয়েই। তিনি জানিয়েছিলেন, বিয়ে করলে ২০১১ বিশ্বকাপের পরেই করবেন। তার আগে নয়। কারণ সেটা ছিল গম্ভীরের জীবনে ৫০ ওভারের ম্যাচের প্রথম ক্রিকেট বিশ্বকাপ।
০৭২৪
প্রথম বিশ্বকাপ অভিযানেই কাপজয়ের শরিক গম্ভীর। শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ফাইনালে জয়ের অন্যতম কারিগর ছিলেন তিনি। তাঁর ৯৭ রানের ইনিংস সহজ করে দেয় ২৮ বছর পরে ভারতের কাপজয়ের পথ।
০৮২৪
নিজের কৃতিত্বের পিছনে মামা পবন গুলাটির অবদান ভুলতে পারেন না গম্ভীর। দিল্লিতে মামার বাড়িতেই তিনি বড় হয়েছেন। সদ্যজাত গম্ভীরকে নিয়ে নিজের বাবা মায়ের কাছে এসেছিলেন গম্ভীরের মা। এর পর নাতিকে নিজের কাছেই রেখে দেয় গুলাটি পরিবার।
০৯২৪
দিল্লিতেই গম্ভীরের জন্ম ১৯৮১ সালের ১৪ অক্টোবর। এই শহরেই মামার বাড়িতে দাদু দিদার কাছে বেড়ে ওঠা। গম্ভীরের বাবা দীপক দিল্লির প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। মা, সীমা গম্ভীর গৃহবধূ।
১০২৪
সঞ্জয় ভরদ্বাজ এবং রাজু টন্ডনের কাছে প্রাথমিক প্রশিক্ষণের পরে গম্ভীর বেঙ্গালুরুর ন্যাশনাল ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতেও প্রশিক্ষণ নেন। জাতীয় দলে অভিষেক ২০০৩ সালে। সে বছর প্রথম ওয়ানে ডে খেলেন বাংলাদেশের বিপরীতে। টেস্ট দলে সুযোগ পান পরের বছরই। প্রথম ম্যাচে প্রতিপক্ষ ছিল অস্ট্রেলিয়া।
১১২৪
২০০৭ সালেই ক্রিকেট বিশ্বকাপে গম্ভীরের সুযোগ পাওয়া কার্যত নিশ্চিত ছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে তিনি বাদ পড়েন। গম্ভীর পরে জানান, এর ফলে মানসিক ভাবে এতটাই ভেঙে পড়েন, তিনি ক্রিকেট খেলা ছেড়ে দেওয়ার কথাও ভেবেছিলেন।
১২২৪
কিন্তু অন্য কোনও জীবিকায় কিছু করতে পারবেন না ভেবে রয়ে যান ক্রিকেটেই। ২০০৭ বিশ্বকাপে ভারতের ভরাডুবির পরে পরবর্তী বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সিরিজে সুযোগ পান গম্ভীর। তিনি ধরে নিয়েছিলেন এটাই তাঁর শেষ সুযোগ।
১৩২৪
সেই সিরিজে নিজেকে উজাড় করে দিয়েছিলেন তিনি। ফলও পেয়েছিলেন। ধীরে ধীরে দলে নিজের জায়গা পোক্ত করেন তিনি। তবে এর পরেও মাঝে মাঝেই বাদ পড়েছেন চোট বা খারাপ ফর্মের জন্য।
১৪২৪
২০০৮ থেকে বীরেন্দ্র সহবাগের জুটি হিসেবে টেস্টে ওপেনার হিসেবে নিজের জায়গা মজবুত করেন গম্ভীর। ২০০৯ সালে তাঁকে ‘আইসিসি টেস্ট প্লেয়ার অব দ্য ইয়ার’ খেতাব দেওয়া হয়।
১৫২৪
২০১০ সালে দেশের মাটিতে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজে তিনি ছিলেন অধিনায়ক। অধিনায়ক এবং ব্যাটসম্যান, দু’টি ভূমিকাতেই গম্ভীরের ফর্ম এই সিরিজে ছিল দুরন্ত। ৫-০ ফলাফলে জিতে নেওয়া সিরিজে গম্ভীরই ছিলেন ‘ম্যান অব দ্য সিরিজ’। ২০১০ সালের ডিসেম্বরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে সিরিজেও তিনিই ছিলেন অধিনায়ক।
১৬২৪
এর পর ২০১১ সালের বিশ্বকাপ। ৪ বছর আগের না পাওয়ার দুঃখ এই প্রতিযোগিতায় সুদে আসলে তুলে নিয়েছিলেন তিনি। বিশ্বকাপ জয়ের পরে সে বছরই ২৯ অক্টোবর নাতাশাকে বিয়ে করেন গম্ভীর।
১৭২৪
পঞ্জাবি বিয়ের সনাতনী বিয়ের রীতিনীতি সাতপাকে বাঁধা পড়েন তাঁরা। তবে বিয়ের অনুষ্ঠান ছিল ঘরোয়া। গম্ভীরের অনুরোধে আমন্ত্রিতের সংখ্যা রাখা হয়েছিল মাত্র ১০০। পরিজন এবং ঘনিষ্ঠ বন্ধুরাই শুধু ছিলেন সেখানে।
১৮২৪
গম্ভীর এবং নাতাশার বড় মেয়ে আজীনের জন্ম ২০১৪ সালের মে মাসে। ৩ বছর পরে জন্ম হয় তাঁদের দ্বিতীয় সন্তান, আনাইজার। স্ত্রী এবং দুই মেয়ের ঘেরাটোপে গম্ভীর আদ্যন্ত ফ্যামিলিম্যান। তারকা পরিচয়ের সেখানে প্রবেশ নিষিদ্ধ।
১৯২৪
কেরিয়ারের নানা ভাঙাগড়ায় পারিবারিক সমর্থন সবথেকে বেশি গুরিত্বপূর্ণ গম্ভীরের কাছে। ক্রিকেটমহলের একাংশের অভিযোগ, প্রাক্তন অধিনায়ক ধোনির সঙ্গে সুসম্পর্ক না থাকার মাশুল দিতে হয়েছিল স্পষ্টবক্তা গম্ভীরকে। যতটা দীর্ঘ হওয়ার সম্ভাবনা ছিল, তার আগেই থেমে যায় তাঁর কেরিয়ার।
২০২৪
জাতীয় দল থেকে বেশ কিছু দিন দূরে থাকার পরে ২০১৬ সালে আবার নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজে সুযোগ পান গম্ভীর। তবে এর পর মাত্র ২ বছর স্থায়ী ছিল তাঁর কেরিয়ার। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে তিনি অবসর নেন সব ধরনের ক্রিকেট থেকে।
২১২৪
৫৮ টেস্টে তাঁর সংগ্রহ ৪১৫৪ রান। সর্বোচ্চ ২০৬। ১৪৭টি ওয়ানডে-তে তিনি মোট রান করেছেন ৫২৩৮। সর্বোচ্চ অপরাজিত ১৫০। ঘরোয়া ক্রিকেটে নিজের শেষ ম্যাচে অন্ধ্রপ্রদেশের বিরুদ্ধে তিনি দিল্লির হয়ে ১১২ রান করেন। ঘরোয়া ক্রিকেটে এটা ছিল তাঁর ৪৩তম শতরান। ক্রিকেটে তাঁর অবদানের জন্য ২০১৯ সালে তিনি সম্মানিত হন ‘পদ্মশ্রী’ সম্মানে।
২২২৪
আইপিএল-এ গম্ভীর খেলতে শুরু করেছিলেন দিল্লির হয়ে। ২০১১ সালে আকাশছোঁয়া মূল্যে তাঁকে কিনে নেয় কলকাতা নাইট রাইডার্স। এর পর ২০১৭ অবধি তিনি ছিলেন নাইটবাহিনীর অধিনায়ক।
২৩২৪
তাঁর অধিনায়কত্বেই ২০১২ এবং ২০১৪ সালে আইপিএলজয়ী হয় কলকাতা। ২০১৬ এবং ২০১৭ সালে পৌঁছেছিল প্লে অফে। ২০১৮ সালে গম্ভীর ফিরে যান দিল্লি ডেয়ারডেভিলস-এ। নাইট রাইডার্সের তরফ থেকে জানানো হয়, গম্ভীর নিজেই ফিরে যেতে চেয়েছিলেনন। তাঁর ইচ্ছে ছিল, যে দলে আইপিএল শুরু করেছেন, সেই দলের হয়ে খেলেই আইপিএল অভিযান শেষ করা।
২৪২৪
অবসর নেওয়ার পরে বিজেপি-তে যোগ দেন গম্ভীর। ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে তিনি ইস্ট দিল্লি কেন্দ্রে পরাজিত করেন নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আপ-এর আতিশী মারলেনা-কে। প্রাক্তন ক্রিকেটার, সাংসদের পাশাপাশি সমাজসেবী ভূমিকাতেও উজ্জ্বল গম্ভীরের ভাবমূর্তি।