Sheikh Hasina and her party Awami League return to Bangladesh politics is almost impossible says experts dgtl
Bangladesh Crisis
পদ্মাপারে কি আর ক্ষমতায় ফিরতে পারবেন হাসিনা? মুজিব-কন্যার দলের ভবিষ্যৎ নিয়েও তুঙ্গে জল্পনা
ভারতে পালিয়ে আসা শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার ঘোর বিরোধী বাংলাদেশের ইউনূস সরকার। একই অবস্থান মুজিব-কন্যার দলের ঘোর বিরোধী বিএনপি এবং জামাতেরও।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতাশেষ আপডেট: ০৮ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৭:৫৭
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৮
চার মাস পেরিয়ে এখনও অগ্নিগর্ভ বাংলাদেশ। বার বার উঠছে সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর আক্রমণের অভিযোগ। এই পরিস্থিতিতে নতুন উদ্যমে ঘর গোছাতে ব্যস্ত আওয়ামী লীগ। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফের ক্ষমতায় ফেরাতে চাইছে তারা। যদিও বঙ্গবন্ধুর কন্যার ক্ষমতায় ফেরা একরকম অসম্ভব বলেই মনে করছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞেরা।
০২১৮
রাজনৈতিক বিশ্লেষকেদের একাংশের অনুমান, হাসিনার আওয়ামী লীগকে সম্পূর্ণ ভাবে নিষিদ্ধ করতে পারে ঢাকার অন্তর্বর্তিকালীন সরকার। প্রধান উপদেষ্টা হিসাবে যার মাথায় রয়েছেন নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূস। লীগের উপর কড়া পদক্ষেপ করলে বাংলাদেশি জনতার একটা বড় অংশের সমর্থন পাবেন তিনি। কারণ, চলতি বছরের ‘জুলাই বিদ্রোহ’-এর সময়ে চলা হিংসার জন্য হাসিনার দলকেই দায়ী করেন তাঁরা।
০৩১৮
সম্প্রতি অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিন পেরিয়ে যাওয়ায় একাধিক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমকে সাক্ষাৎকার দেন ৮৪ বছরের ইউনূস। যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত ‘টাইম ম্যাগাজ়িন’কে তিনি বলেন, ‘‘এ বছরের জুলাইয়ে নির্বিচারে খুনের নেপথ্যে যাঁদের হাত ছিল, তাঁদের বিচার হবে। এর আওতায় রয়েছেন ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরশাসক হাসিনাও। তার পর অবশ্য সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশগ্রহণ করলে আমরাই স্বাগত জানাব।’’
০৪১৮
পদ্মাপারের নোবেলজয়ী প্রধান উপদেষ্টার দাবি, মুজিব-কন্যার সঙ্গে রাজনৈতিক নীতি ও আদর্শের ভিত্তিতে লড়াই করবে দেশের অন্যান্য দল। ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ক্ষেত্রে লীগের কোনও বাধা নেই। তবে বর্তমানে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের উপর জোর দিয়েছেন তিনি। পুরনো ধ্যানধারণা বদলে মাইক্রো ফিন্যান্স এবং সামাজ়িক ব্যবসাকে দৃঢ় করার উপর জোর দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ইউনূস।
০৫১৮
এই ইস্যুতে ‘দ্য হিন্দু’র তরফে প্রশ্ন করা হলে বর্ষীয়ান নোবেলজয়ী বলেন, ‘‘আমরা আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে কোনও সিদ্ধান্ত নিতে চাই না। কারণ এ ব্যাপারে ‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল’-এর (বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি বা বিএনপি) আপত্তি রয়েছে। এটি দেশের অন্যতম বড় রাজনৈতিক দল। ফলে বিএনপির মতামতকে আমরা কখনওই অস্বীকার করতে পারব না।’’
০৬১৮
বিএনপি ছাড়া বাংলাদেশের মাটি থেকে আওয়ামী লীগকে মুছে ফেলার বিরোধী কট্টরপন্থী ‘জামাত-ই-ইসলামি’ও। উল্টে পদ্মাপারের রাজনীতিতে মুজিব-কন্যার দল সক্রিয় থাকুক, এমনটাই চাইছেন তাঁরা। এর মধ্যে বিএনপির ভূমিকা সবচেয়ে আশ্চর্যজনক। হাসিনার আমলে কোণঠাসা হয়ে পড়ে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জ়িয়ার পার্টি। লীগ সরকারের বিরুদ্ধে বার বার নির্বাচনে কারচুপি, দলের সদস্য-সমর্থকদের গুম-খুন এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে সবচেয়ে সরব ছিলেন তাঁরা।
০৭১৮
বিএনপির দাবি, মিথ্যা মামলায় তাদের ৫০ লক্ষ কর্মীকে জেলে পুরেছিল হাসিনা প্রশাসন। কিন্তু তা সত্ত্বেও বর্তমানে লীগের সঙ্গে ‘শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান’ চাইছে খালেদা জ়িয়ার দল। শুধু তাই নয়, জামাত আবার মুজিব-কন্যার দলকে ‘আমাদের পরিবারের অংশ’ বলে উল্লেখ করেছে। জামাতের মতো কট্টরপন্থী এই রাজনৈতিক দলকে পদ্মাপারের মাটি থেকে নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টাতেও খামতি রাখেননি বলে হাসিনার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে।
০৮১৮
এই ইস্যুতে মুখ খুলেছেন দুই রাজনৈতিক দলের নেতা-নেত্রীরা। বিএনপির মহাসচিব মির্জ়া ফখরুল ইসলাম আলমগীর ‘ফ্যাসিস্ট’ বলে লীগকে খোঁচা দিতে ছাড়েননি। তবে তাঁর কথায়, ‘‘হাসিনার দলকে নিষিদ্ধ করা কখনওই গণতন্ত্রের পক্ষে শুভ নয়।’’ একই সুর শোনা গিয়েছে জামাতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ারের গলায়। মুজিব-কন্যার শাসনকালে কট্টরপন্থী এই রাজনৈতিক দলের একাধিক নেতার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে তৎকালীন বাংলাদেশ প্রশাসন।
০৯১৮
আওয়ামী লীগকে নিয়ে বিএনপি এবং জামাতের এই উদারতার নেপথ্যে একাধিক কারণের কথা বলেছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞেরা। তাঁদের আশঙ্কা, হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশ জুড়ে অস্থিরতার সুযোগ নিয়ে নতুন রাজনৈতিক দলের উত্থানের সম্ভাবনা রয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতা দখল করা সেই দলের পক্ষে খুব একটা কঠিন হবে না। অন্য দিকে পদ্মাপারে মুজিব-কন্যার ফেলে যাওয়া কুর্সিতে বসতে বদ্ধপরিকর জামাত ও বিএনপি।
১০১৮
রাষ্ট্রপুঞ্জের সমীক্ষা অনুযায়ী, কোনও রাজনৈতিক দলের প্রতি সে ভাবে আস্থাশীল নয় বাংলাদেশের তরুণ সমাজ। দেশটির জনসংখ্যার ৬৪ শতাংশেরই বয়স ৩৫ বছরের কম। অভিযোগ, হাসিনার আমলে এই যুব সমাজের খুব অল্প সংখ্যকই নির্বাচনী অধিকার প্রয়োগ করতে পেরেছেন। কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে তাঁরা সাবেক প্রধানমন্ত্রী জিয়াকে খুব পছন্দ করেন।
১১১৮
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের দাবি, এই পরিস্থিতিতে নির্বাচনে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে কী ভাবে ক্ষমতা দখল করা যায়, তার ছক কষছেন জিয়া ও জামাতের শীর্ষ নেতৃত্ব। আর তাই মিষ্টি কথায় আমজনতা এবং আওয়ামী লীগের ভরসা পাওয়ার চেষ্টা করছেন তাঁরা। দ্বিতীয়ত, হাসিনা ভারতে আশ্রয় নেওয়া ইস্তক গত চার মাসে তাঁর দলের প্রায় ৪০০ নেতা-কর্মী খুন হয়েছেন। স্বাভাবিক ভাবেই এ ক্ষেত্রে আঙুল উঠেছে বিএনপি এবং জামাতের বিরুদ্ধে।
১২১৮
কিন্তু, এই কালি গায়ে মাখতে নারাজ পদ্মাপারের দুই রাজনৈতিক দল। আর তাই আওয়ামী লীগের প্রতি ‘নরম’ মনোভাব দেখিয়ে বিএনপি ও জামাত দায়মুক্ত হওয়ার মরিয়া চেষ্টা করছে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। তা ছাড়া লীগের আস্থাভাজন হতে পারলে হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে তাঁর নিজের দলের অন্দরেই চাপ তৈরি করা যাবে বলে মনে করছেন তাঁরা।
১৩১৮
বিশেষজ্ঞদের একাংশ আবার মনে করেন, শুধুমাত্র হাসিনা পরিচালিত রাজনৈতিক ব্যবস্থার বিরুদ্ধেই জুলাইয়ের গণবিক্ষোভ আছড়ে পড়েনি। বরং পদ্মাপারের বিভিন্ন ধরনের সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক ব্যাপারও এর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে। নতুন এই ‘হাওয়া’ কোন দিকে মোড় নেবে তা এখনও বুঝে উঠতে পারছেন না বিএনপি ও জামাত নেতৃত্ব। লীগকে নিষিদ্ধ করার কথা বলে তাঁদেরও অবস্থা মুজিব-কন্যার মতো হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তাঁরা।
১৪১৮
গত দেড় দশক ধরে হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে সরাতে কম চেষ্টা করেনি জামাত ও বিএনপি। কিন্তু বাংলাদেশি জনতা যে দারুণ ভাবে তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছে এমনটা নয়। দু’টি দলেরই বহু নেতা এখনও মনে করেন বর্তমান আর্থ-সামাজিক এবং সমাজমাধ্যমের রমরমার যুগে আমজনতার নাড়ি বুঝতে ঢের সময় লাগবে। আর তাই অগণতান্ত্রিক বা বিতর্কিত কোনও মন্তব্য করে পরিস্থিতি জটিল করতে চাইছেন না তাঁরা।
১৫১৮
সরকারি ভাবে নিষিদ্ধ না হলেও পদ্মাপারে যে ভাবে লীগকে কোণঠাসা করা হয়েছে, তাতে পরবর্তী নির্বাচনে হাসিনার দলের পক্ষে পূর্ণশক্তিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা কার্যত অসম্ভব। এই পরিস্থিতিতে অস্তিত্বহীন রাজনৈতিক শত্রুর পরাজয় এবং ভোটে জেতার সুযোগ ছাড়তে নারাজ বিএনপি। ক্ষমতার শীর্ষে যাওয়ার আগে যাবতীয় অস্বস্তিকর প্রশ্ন এড়াতে চাইছে তারা।
১৬১৮
কিছু বিএনপি নেতা-নেত্রীর সন্তান বা আত্মীয়ের সঙ্গে আবার বৈবাহিক সূত্রে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। আর তাই ক্রমাগত মুজিব-কন্যার দল আক্রান্ত হলে জিয়ার দলেও ফাটল ধরার আশঙ্কা থাকবে। জামাত আবার এই সুযোগে ১৯৭১ সালের ‘গণহত্যার’ বিচারের দাবিতে অনড়। আর এর মাধ্যমে লীগের নেতা-নেত্রীদের বিরুদ্ধে ‘যুদ্ধপরাধ’-এর মতো অভিযোগ আনতে চাইছেন তাঁরা।
১৭১৮
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞেরা মনে করেন, নিকট ভবিষ্যতে ক্ষমতায় ফিরবে না আওয়ামী লীগ। এর জন্য প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী হাসিনাকেই দায়ী করেছেন তাঁরা। সম্প্রতি, মুজিব-কন্যার একটি অডিয়ো ফাঁসের খবর প্রকাশ্যে এসেছে। সেখানে বাংলাদেশ প্রশাসনকে ‘হুমকি’ দিতে শোনা গিয়েছে তাঁকে। পাশাপাশি, সহ-নাগরিকদের ‘মূর্খ’ বলেছেন তিনি। যদিও ওই অডিয়ো টেপের সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন।
১৮১৮
অডিয়ো টেপ অনুযায়ী, বছর ৭৭-এর হাসিনা দাবি করেছেন, দেশের খুব কাছেই রয়েছেন তিনি। ঠিক সময়ে পদ্মাপারে পা পড়বে তাঁর। দুর্বৃত্তদের কাউকে ক্ষমা করবেন না বলেও জানিয়েছেন তিনি। তাঁর এ হেন মনোভাবকে প্রতিহিংসাপরায়ণ বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। চলতি মাসেই ভার্চুয়াল মাধ্যমে নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশ স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে ভাষণ দেন মুজিব-কন্যা। সেখানে ইউনূস প্রশাসনকে ‘গণহত্যাকারী’ বলে তোপ দেগেছেন তিনি।