ভাইরাল হওয়া ভিডিয়োতে দেখা গিয়েছে, বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে নাচ-গান করছেন সানা।
নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতাশেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০২২ ১২:৩৬
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২০
বিতর্ক এবং সানা ম্যারিন, এই দুই যেন সমার্থক। সম্প্রতি পার্টিতে গিয়ে খোলামেলা পোশাকে ফূর্তি করার ভিডিয়ো প্রকাশ্যে আসতেই বিতর্কের মুখে এসে দাঁড়িয়েছেন ফিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী তথা বিশ্বের কনিষ্ঠতম প্রধানমন্ত্রী সানা মারিন।
০২২০
নেটমাধ্যমে ভাইরাল ভিডিয়োতে দেখা গিয়েছে, বন্ধুবান্ধব এবং ফিনল্যান্ডের সিনেমা জগতের তারকাদের সঙ্গে নাচ-গান করছেন মারিন।
০৩২০
ভিডিয়ো প্রকাশ্যে আসতেই বিরোধী দলগুলির পাশাপাশি আমজনতারও সমালোচনার বিদ্ধ তিনি। বেশিরভাগ সমালোচকেরই দাবি প্রধানমন্ত্রী সুলভ ‘আচরণ’ মারিন করেননি। অনেকে আবার মারিনের মাদক পরীক্ষার দাবি তুলেছেন।
০৪২০
কিন্তু যাঁকে নিয়ে এত বিতর্ক, সমালোচনার মুখে পড়ে তিনি নিজে কী বলছেন? ৩৬ বছর বয়সি মারিনের দাবি, তিনি এই পার্টিতে গিয়ে মদ্যপান করেন এবং উদ্দাম ভাবে নাচা-গানা করেন। তবে কোনও মাদক তিনি নেননি বলেই দাবি তাঁর।
০৫২০
সানা আরও জানান, পার্টিতে যে তাঁর নাচ-গানের ভিডিয়ো করা হচ্ছিল তা তিনি জানতেন। কিন্তু তিনি এটা কখনই ভাবতে পারেননি যে, এই ভিডিয়ো নেটমাধ্যমে ছেড়ে দেওয়া হবে।
০৬২০
এই প্রথম নয়, অতীতেও বহু বিতর্কে জড়িয়েছেন মারিন। গত বছরই কোভিড আবহে বন্ধুদের সঙ্গে ক্লাবে গিয়ে আমোদ করার জন্য তাঁকে ক্ষমা চাইতে হয়েছিল।
০৭২০
২০১৯ সালের ডিসেম্বর থেকে ক্ষমতায় রয়েছেন মারিন। দায়িত্ব নেওয়ার সময় বিশ্বের সবচেয়ে কনিষ্ঠ সরকার প্রধান ছিলেন তিনি। বর্তমানে এই খেতাব চিলির প্রেসিডেন্ট গ্যাব্রিয়েল বরিকের দখলে। সম্প্রতি জার্মান সংবাদমাধ্যম ‘বিল্ড’ মারিনকে বিশ্বের আকর্ষণীয় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে অভিহিত করে।
০৮২০
বিয়ের আগেই মা হন মারিন। দীর্ঘ দিন লিভ ইন করেছেন পার্টনার মার্কাস রাইকোনেনের সঙ্গে। ২০১৮ সালে তাঁর একটি কন্যাসন্তান হয়। ২০২০-তে দু’জনে বিয়ে করেন।
০৯২০
নতুন প্রজন্মের এই রাজনীতিবিদ নিজের সন্তানকে স্তন্যদানের ছবি ইনস্টাগ্রাম পোস্ট করার পর ব্যাপক ভাবে সমালোচনার শিকার হন।
১০২০
স্বচ্ছ ভাবমূর্তির জন্যই পরিচিত হওয়া সত্ত্বেও নিজের খাওয়াদাওয়ার খরচ জনগণের করের টাকায় মেটানোর অভিযোগ উঠেছিল ফিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে। প্রতি দিনের প্রাতঃরাশ বাবদ প্রায় ২৬ হাজার টাকা জনগণের কর থেকে তিনি ব্যবহার করেছিলেন বলে অভিযোগ ওঠে এক সময়। এ নিয়ে তদন্তও চলে বহু দিন।
১১২০
মারিন যে পরিবারে বড় হয়েছেন, তা-ও বেশ বৈচিত্রময়। তিনি নিজে সমলিঙ্গ দম্পতির সন্তান। দুই মা মিলে মানুষ করেন সানাকে।
১২২০
রাজনীতির আঙিনায় পা দেওয়ার আগে সংবাদপত্র বিক্রেতা এবং বেকারি কর্মী হিসাবেও কাজ করেছেন সানা। ছোটবেলা কেটেছিল অভাব-অনটনে।
১৩২০
২০০৪ সালে ১৯ বছর বয়সে তিনি স্নাতক হন। অতঃপর, ট্যাম্পারে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পান। সেখানে তিনি প্রশাসনিক বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করেন। পড়াশুনার সময়ই তিনি রাজনীতিতে যুক্ত হন। পরিশ্রম করলে শুধু তাঁর নিজের জীবন নয়, অন্যের জীবনেও পরিবর্তন আনা সম্ভব। বিশেষ করে মহিলাদের জীবনে। এই ভাবনা থেকেই রাজনীতিতে যোগ দেন মারিন।
১৪২০
অতঃপর, সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট দলে যোগ দেন এবং ২০০৬ সালে সদস্যপদ লাভ করেন। ২০১০ সালে তিনি দলের ভাইস-প্রেসিডেন্ট হিসাবে নির্বাচিত হন। ২০১২ পর্যন্ত তিনি ওই পদেই থাকেন। সানার রাজনৈতিক জীবন কিন্তু শুরু হয়েছিল পরাজয় দিয়ে। ২২ বছর বয়সে তিনি ট্যাম্পারে সিটি কাউন্সিলের নির্বাচনে লড়েন। কিন্তু সেই নির্বাচনে তিনি হেরে যান। জেতেন পরবর্তী নির্বাচনেই। ২০১২ সালে তিনি জয়ী হন এবং কাউন্সিল চেয়ারম্যান পদে উন্নীত হন। ওই পদে তিনি ২০১৩ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ছিলেন।
১৫২০
২০১৫ সালে তিনি ফিনল্যান্ডের পার্লামেন্টের সাংসদ হন। ২০১৯ সালে দ্বিতীয় বার জিতে তিনি পরিবহণ ও যোগাযোগ মন্ত্রী হন। এর পর মাত্র ৩৪ বছর বয়সে তিনি পাঁচ জোটের নেতা হিসাবে ফিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী হন।
১৬২০
প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর তাঁর নেওয়া উদ্যোগ আম্তর্জাতিক মহলেও প্রশংসা কুড়িয়েছে। তাঁর আমলেই বাড়ানো হয়েছে পিতৃত্ব-মাতৃত্বকালীন ছুটি। স্কুল ছেড়ে যাওয়ার বয়সও বাড়িয়ে আঠারো করা হয়েছে। কোভিডের সময় তিনি যে ভাবে সঙ্কট সামলেছেন, তা-ও প্রশংসিত হয়েছে।
১৭২০
তাঁর পার্টি করা নিয়ে বিতর্কের পর সানা এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘‘আমি পার্টিতে নাচ-গান করেছি। এটি কখনই আইন-বহির্ভূত কাজ নয়। আমি মদ্যপান করেছিলাম, কিন্তু অন্য কোনও ধরনের মাদক নিইনি। অন্য কেউ নিয়েছিলেন কি না, তা জানা নেই।’’
১৮২০
সানা আরও বলেন, ‘‘আমার একটি পারিবারিক জীবন আছে, আমার একটি কর্মজীবন আছে এবং আমার বন্ধুদের সঙ্গে কাটানোর জন্য আমার অবসর সময়ও আছে। এই পার্টিতে আমার বয়সি অনেক মানুষ ছিলেন।’’
১৯২০
এই ভিডিওতে, প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও গায়ক আলমা, র্যাপার পেট্রি নাইগার্ড এবং টিভি সঞ্চালক তিন্নি উইকস্ট্রমও উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়াও সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টির আরও বেশ কয়েক জন নেতা এবং সাংসদও উপস্থিত ছিলেন।
২০২০
তবে এ সব সত্ত্বেও সমালোচকদের হাত থেকে নিস্তার পাচ্ছেন না মারিন। বিরোধী দলনেতা রিকা পুরা দাবি করেছেন, প্রধানমন্ত্রীর উচিত স্বেচ্ছায় মাদক পরীক্ষা করানো। কারণ প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে সন্দেহ আরও ঘনীভূত হচ্ছে।