RabindraNath Tagore's Shantinikatan's traditional Chhatimtala damaged here are the details dgtld
Chhatimtala
তিনি আমার প্রাণের আরাম, মনের আনন্দ, আত্মার শান্তি! দেবেন্দ্রনাথ-রবীন্দ্রনাথের ছাতিমতলার বেদি ভাঙল
শাল গাছ ভেঙে পড়ে ক্ষতি হয়েছে সেই ঐতিহ্যবাহী ফলকটিরও। ফলকে লেখা রয়েছে সেই বাণী— তিনি আমার প্রাণের আরাম, মনের আনন্দ, আত্মার শান্তি।
নিজস্ব সংবাদদাতা
বোলপুরশেষ আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১০:৪২
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২০
রাঙামাটি। যে দিকে চোখ যায়, শুধুই সবুজ গাছগাছালি। কোথাও কোথাও সুবিশাল সব গাছের ছায়া ভেদ করার সাধ্য নেই স্বয়ং সূর্যদেবেরও! প্রকৃতির এক অপার সৌন্দর্যের পীঠস্থান যেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শান্তিনিকেতন। বঙ্গজীবনের এক ঐতিহ্য বয়ে বেড়াচ্ছে এই স্থান। কিন্তু সেই ঐতিহ্যে ক্ষত তৈরি হল। দু’টি শাল গাছ পড়ে ভেঙে গেল শান্তিনিকেতনের ঐতিহ্যবাহী ছাতিমতলা বেদি।
০২২০
গত শনিবার, ১১ অগস্ট সকালে শাল গাছ ভাঙার ফলে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে ছাতিমতলার একাংশের। যে ঘটনায় বিশ্বভারতীর ঐতিহ্যের রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন আশ্রমিক, প্রাক্তনী ও পড়ুয়ারা।
০৩২০
শাল গাছ ভেঙে পড়ে ক্ষতি হয়েছে সেই ঐতিহ্যবাহী ফলকটিরও। ওই ফলকে লেখা রয়েছে, ‘তিনি আমার প্রাণের আরাম, মনের আনন্দ, আত্মার শান্তি’।
০৪২০
গাছ ভেঙে ছাতিমতলার ক্ষতি মেরামত করতে তৎপর হয়েছেন বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। তড়িঘড়ি ছাতিমতলার চারপাশ সবুজ কাপড় দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়েছে।
০৫২০
বেদির উপর ভেঙে পড়া গাছ রবিবার সরানো হয়েছে। মূল সৌধ যাতে খুব তাড়াতাড়ি পুনর্নির্মাণ করা যায় সে জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ বিভাগের (এএসআই) সঙ্গে ইতিমধ্যে যোগাযোগ করা হয়েছে বলে বিশ্বভারতী সূত্রে খবর।
০৬২০
শান্তিনিকেতনের অপার সৌন্দর্য, রূপ বরাবরই আকর্ষণীয়। বিশেষত ঋতু বদলের সঙ্গে সঙ্গে শান্তিনিকেতনের চেহারারও বদল ঘটে। শীত, বর্ষা, বসন্তে রবিঠাকুরের এই জায়গার দৃষ্টিনন্দন রূপ ভোলার নয়।
০৭২০
শান্তিনিকেতনের প্রাণকেন্দ্র বলা হয় ছাতিমতলাকে। রবীন্দ্র-জীবনীকারদের বিভিন্ন লেখা থেকে জানা যায়, রায়পুরের জমিদারের নিমন্ত্রণ গ্রহণ করতে যাওয়া বা ফেরার পথে এই ছাতিমতলায় অল্প ক্ষণের জন্য বিশ্রাম নিয়েছিলেন মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর।
০৮২০
ছাতিমতলার সঙ্গে বহু উজ্জ্বল স্মৃতিই জড়িয়ে রয়েছে। ছাতিমতলাকে মহর্ষির সাধনাবেদিও বলা হয়।
০৯২০
আশ্রম প্রতিষ্ঠার পর থেকে দীক্ষা দিবসের অনুষ্ঠান হয়ে আসছে এই ছাতিমতলায়। পৌষ উৎসবের সূচনাও এখান থেকেই।
১০২০
অতীতে পৌষ উৎসব, বাইশে শ্রাবণের মতো বিশেষ দিনে উপাসনা হত এখানে। পরবর্তী সময়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগ এড়াতে তা উপাসনাগৃহে সরানো হয়।
১১২০
পৌষের উপাসনা ও মহর্ষির প্রয়াণদিবস উপলক্ষে স্মারক বক্তৃতা অনুষ্ঠান এখনও ছাতিমতলায় পালিত হয়।
১২২০
রবি ঠাকুরের একাধিক লেখাতে ছাতিমতলার উল্লেখ রয়েছে। ১৯৩০ সালে ২৫ অক্টোবর ইন্দিরাদেবীকে লেখা কবির চিঠিতেও ছাতিমতলার উল্লেখ পাওয়া যায়।
১৩২০
চিঠিতে রবি ঠাকুর লিখেছিলেন, ‘‘আমার শ্রাদ্ধ যেন ছাতিম গাছের তলায় বিনা আড়ম্বরে বিনা জনতায় হয়— শান্তিনিকেতনের শালবনের মধ্যে আমার স্মরণের সভা মর্মরিত হবে, মঞ্জরিত হবে, যেখানে যেখানে আমার ভালোবাসা আছে, সেই সেইখানেই আমার নাম থাকবে।’’
১৪২০
রবীন্দ্রনাথের প্রয়াণের পর ১৯৪২ সালে চিনের সর্বময় কর্তা চিয়াং কাই শেক ও তাঁর স্ত্রী শান্তিনিকেতনে গিয়েছিলেন। রবীন্দ্রনাথের প্রতি তাঁদের অসীম শ্রদ্ধা ছিল। রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিরক্ষার্থে তাঁরা বিশ্বভারতীকে ৫০,০০০ টাকা অনুদান করেছিলেন।
১৫২০
বর্তমানে ছাতিমতলার যে চেহারা দেখা যায়, তখন তা ছিল না। সেই অর্থে ছাতিমতলার এই বেদি সংস্কার করা হয়েছিল।
১৬২০
ছাতিমতলার মতো এমন ঐতিহ্যবাহী স্থানের ক্ষতি হওয়ায় ব্যথিত আশ্রামিক, প্রাক্তনী ও পড়ুয়ারা। সঠিক পরিচর্যার অভাবেই এই পরিণতি বলে তাঁদের অনেকের দাবি।
১৭২০
শনিবার ঠিক কী কারণে ছাতিমতলায় দু’টি শাল গাছ ভেঙে পড়ল, তা অবশ্য জানা যায়নি। গাছ দু’টি বহু পুরনো হয়ে যাওয়ার ফলে গাছের উপরের অংশ ভেঙে পড়েছে, এমনটাই অনুমান বিশ্বভারতীর উদ্যান বিভাগের কর্তাদের।
১৮২০
শান্তিনিকেতন বরাবরই প্রিয় ছিল রবি ঠাকুরের। বাবার সঙ্গে প্রথম বার শান্তিনিকেতনে গিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। তখন কবির বয়স ১১।
১৯২০
বোলপুর স্টেশনে রাতে নেমে পাল্কিতে শান্তিনিকেতনে পৌঁছেছিলেন তিনি। নিশিযাপনের পর শান্তিনিকেতনের প্রথম সকাল প্রসঙ্গে কবি লিখেছেন, ‘ভোরের বেলা উঠেই বাইরে এসে দেখলুম—চারি দিকেই মাঠ, কোথাও ধানের চিহ্ন নেই। জায়গায় জায়গায় মাটি খোঁড়া, শুনলুম সেইসব জায়গায় চাষ হয়েছে।... সেই প্রথম বোলপুর দর্শনের কত কথাই মনে পড়ে। তখনো কবিতা লিখতুম...।’
২০২০
শান্তিনিকেতনকে মহর্ষি আবিষ্কার করেছিলেন। তার পর প্রথম প্রভাত দর্শনের পর তার রূপ-সৌন্দর্যে কবি এতটাই মুগ্ধ হয়েছিলেন যে, সেই ভালবাসা শেষ দিন পর্যন্ত অক্ষুণ্ণ রেখেছিলেন এবং প্রিয় শান্তিনিকেতনকে পৃথিবীর অন্যতম সেরা আকর্ষণীয় স্থান হিসাবে গড়ে তুলেছিলেন। রবি ঠাকুরের সেই স্মৃতি বিজড়িত শান্তিনিকেতনের আরেক ঐতিহ্য ছাতিমতলার এই ক্ষতিতে তাই অনেকেই আলোড়িত।