Pierre Trudeau father of Justin Trudeau also engaged in bitter relationship with India dgtl
India-Canada Relation
বিমান হামলায় জড়িতকে মুক্তি, ইন্দিরার সঙ্গে বিতর্ক! ভারতের ‘শত্রু’ ছিলেন ট্রুডোর বাবাও
নিজ্জর-হত্যায় ভারতের ‘এজেন্ট’দের অভিযুক্ত করেছেন জাস্টিন ট্রুডো। তবে ভারত-কানাডার সম্পর্কে বরফ জমেছিল তাঁর বাবা প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীনই।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতাশেষ আপডেট: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৮:২৫
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২১
খলিস্তানি জঙ্গি হরদীপ সিংহ নিজ্জরের হত্যাকাণ্ডে সরাসরি ভারতের দিকে আঙুল তুলেছে কানাডা। সে দেশের প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর অভিযোগের কড়া সমালোচনা করে নয়াদিল্লি। এর পর থেকেই দুই দেশের সম্পর্কের অবনতি হয়।
০২২১
নিজ্জর হত্যায় ভারতের ‘এজেন্ট’দের অভিযুক্ত করেছেন জাস্টিন। কানাডার এক ভারতীয় কূটনীতিককে বহিষ্কারও করা হয়। ইটের বদলে পাটকেল ছোড়ে ভারতও। দেশে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয় কানাডার এক কূটনীতিককে।
০৩২১
কানাডা এবং ভারতের সম্পর্কের অবনতির নেপথ্যে খলিস্তানি সমস্যাকেই তুলে ধরা হচ্ছে। কিন্তু দুই দেশের এই গোলমাল নতুন নয়। এর আগেও অন্য বিষয়ে কানাডার সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক খারাপ হয়েছিল।
০৪২১
ট্রুডো পরিবারের সঙ্গে ভারতের ইতিহাস সুখকর নয়। জাস্টিন ট্রুডোর বাবা তথা কানাডার প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী পিয়ের ট্রুডোর সময় থেকে কানাডা-ভারত সম্পর্কে বরফ জমতে শুরু করে। তিনিও ভারতের সঙ্গে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন।
০৫২১
১৯৭১ সালের জানুয়ারি মাসে কানাডার তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী হিসাবে পিয়ের ট্রুডো পাঁচ দিনের সফরে ভারতে এসেছিলেন। সে সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন ইন্দিরা গান্ধী। ভারত-কানাডা সম্পর্কের অবনতির বীজ লুকিয়ে ছিল সিনিয়র ট্রুডোর সেই সফরেই।
০৬২১
খলিস্তানি আন্দোলনের আগে কানাডা এবং ভারতের সম্পর্কের মাঝে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছিল অন্য একটি সমস্যা। পারমাণবিক শক্তিকে কেন্দ্র করে এই দুই দেশের মধ্যে প্রথম গোলমালের আঁচ পাওয়া গিয়েছিল।
০৭২১
ভারতকে পরমাণু শক্তিধর দেশ হিসাবে গড়ে তোলার নেপথ্যে কানাডার সহযোগিতা ছিল। নিজেদের স্বার্থেই আমেরিকা এবং কানাডা যৌথ ভাবে ভারতের অসামরিক পারমাণবিক কর্মসূচির সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল। কারণ, ভারতে পরমাণু শক্তি উৎপাদন করা অনেক সস্তা।
০৮২১
আমেরিকা, কানাডার সহযোগিতায় পরমাণু শক্তিকে কাজে লাগিয়ে বোমা তৈরিতে ভারতের সুবিধা হয়েছিল। ১৯৭১ সালে সিনিয়র ট্রুডো ভারতে এসে বলেছিলেন, এই সহযোগিতা শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে। একে কোনও অশান্তির কাজে লাগানো যাবে না।
০৯২১
ভারত যদি এই সহযোগিতাকে কাজে লাগিয়ে পরমাণু বোমা তৈরি করে, তবে পরমাণু শক্তি সংক্রান্ত সমস্ত সহযোগিতা কানাডা বন্ধ করে দেবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন জাস্টিন ট্রুডোর বাবা।
১০২১
ট্রুডোর ভারত সফরের তিন বছর পর ১৯৭৪ সালে পোখরানে ভারত পরমাণু বোমা পরীক্ষা করে। দিল্লির দাবি ছিল, এটি শান্তিপূর্ণ পরমাণু বিস্ফোরণ। কানাডার দেওয়া শর্ত তাই আদৌ লঙ্ঘিত হয়নি।
১১২১
কিন্তু সিনিয়র ট্রুডো ভারতের যুক্তিতে কর্ণপাত করেননি। তিনি তৎক্ষণাৎ ভারতের সঙ্গে পারমাণবিক সহযোগিতা ছিন্ন করেন। ভারতে পরমাণু শক্তি নিয়ে কাজ করা কানাডিয়ান আধিকারিকদেরও দেশে ফেরার নির্দেশ দেওয়া হয়।
১২২১
পরমাণু শক্তিকে কেন্দ্র করে ভারত-কানাডা সম্পর্কের এই ফাটল জোড়া লাগতে সময় লেগেছিল। ২০১০ সালে জি২০ সম্মেলন উপলক্ষে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের কানাডা সফরে আবার দুই দেশের মধ্যে পরমাণু সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
১৩২১
খলিস্তানি আন্দোলনও সিনিয়র ট্রুডোর সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক খারাপ করেছিল। এ বিষয়ে অনড় মনোভাব নিয়েছিলেন কানাডিয়ান প্রধানমন্ত্রী।
১৪২১
কানাডায় বরাবরই শিখ ধর্মাবলম্বীদের আধিপত্য রয়েছে। সত্তরের দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে ভারতের বহু শিখ কানাডায় চলে যান, সেখানে স্থায়ী নাগরিকত্বও লাভ করেন। বর্তমানে কানাডার মোট জনসংখ্যার একটা বড় অংশ শিখ।
১৫২১
অভিযোগ, ভারত থেকে ঘোষিত বেশ কিছু খলিস্তানি জঙ্গি কানাডায় গিয়ে আশ্রয় নেন এবং বিনা বাধায় সেখানে থাকতে শুরু করেন। তেমনই এক জন ছিলেন তলবিন্দর সিংহ পারমার। ১৯৮১ সালে পঞ্জাবের দুই পুলিশ আধিকারিককে খুন করে কানাডায় পালিয়ে গিয়েছিলেন তিনি।
১৬২১
নিষিদ্ধ খলিস্তানি সংগঠন বব্বর খালসার সদস্য ছিলেন তলবিন্দর। অভিযোগ, বিদেশে গিয়ে সাম্প্রদায়িক হিংসায় ইন্ধন জোগাচ্ছিলেন তিনি। ভারতীয় হিন্দুদের উপর হামলাতেও তাঁর নাম জড়ায়।
১৭২১
ভারত তলবিন্দরকে ফেরাতে চেয়ে কানাডা সরকারের দ্বারস্থ হয়েছিল। কিন্তু সিনিয়র ট্রুডো তাতে রাজি হননি। ভারতের গোয়েন্দারা কানাডায় যে সতর্কবাণী পাঠিয়েছিলেন, তা-ও পাত্তা পায়নি।
১৮২১
১৯৮৫ সালের ১ জুন ভারতের গোয়েন্দারা একটি সম্ভাব্য বিমান হামলার কথা জানিয়ে কানাডাকে সতর্ক করেছিল। সে দেশের সরকার তাতে কর্ণপাত করেনি। ওই মাসেরই ২৩ তারিখ এয়ার ইন্ডিয়ার লন্ডনগামী বিমানে বোমা বিস্ফোরণ হয় এবং ৩২৯ জন যাত্রীর মৃত্যু হয়।
১৯২১
এই বিমান হামলার নেপথ্যে ছিলেন তলবিন্দরই। তাঁকে এবং আরও কয়েক জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। কিন্তু পরে প্রায় সকলেই মুক্তি পেয়ে যান। ১৯৯২ সালে পঞ্জাব পুলিশের হাতে নিহত হন তলবিন্দর।
২০২১
এত বড় বিমান হামলাকে লঘু চোখে দেখার অভিযোগ ওঠে কানাডার বিরুদ্ধে। ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী এ নিয়ে ট্রুডোর কাছে অভিযোগও জানিয়েছিলেন।
২১২১
কালক্রমে কানাডার প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে বসেন সিনিয়র ট্রুডোর পুত্র জাস্টিন। কিন্তু খলিস্তানি সমস্যায় তাঁর অবস্থানও তাঁর বাবারই মতো। তিনিও এই সমস্যাকে লঘু চোখেই দেখেন। নেপথ্যে জড়িয়ে আছে তাঁর রাজনৈতিক স্বার্থ।