ভারত এবং পাকিস্তানের দ্বন্দ্ব অন্তহীন। এই দ্বন্দ্বে এ বার ভারতের বিরুদ্ধে পরমাণু অস্ত্রকে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হিসাবে দেখছে পাকিস্তান।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
ইসলামাবাদশেষ আপডেট: ৩১ জুলাই ২০২৩ ০৯:১২
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৯
পাকিস্তান বরাবরই তাদের সামরিক শক্তিকে প্রাধান্য দিয়ে এসেছে। দেশের অর্থনীতি, রাজনীতির চেয়েও পাকিস্তানে সেনার কদর অনেক বেশি। সামরিক ব্যবস্থাপনা অনেক সময় প্রশাসনিক পরিকাঠামোর চেয়েও বেশি গুরুত্ব পেয়ে থাকে।
০২১৯
অর্থাৎ, দেশ চালানোর জন্য পাকিস্তান সুষ্ঠু সরকারের চেয়েও শক্তিশালী সামরিক বাহিনীর উপর বেশি ভরসা করে থাকে। আর পাকিস্তানের এই সামরিক বাহিনীর প্রধান লক্ষ্য অবশ্যই ভারত।
০৩১৯
ভারত এবং পাকিস্তানের দ্বন্দ্ব অন্তহীন। ভারতের বিরুদ্ধে প্রায়ই নানা সামরিক পরিকল্পনা সাজায় পাকিস্তান। সম্প্রতি একটি অনুষ্ঠানে অবসরপ্রাপ্ত পাক লেফটেন্যান্ট জেনারেলের কথায় তেমনই এক পরিকল্পনার কথা প্রকাশ্যে এসেছে।
০৪১৯
পাকিস্তানের প্রথম সফল পারমাণবিক পরীক্ষার ২৫তম বার্ষিকী উপলক্ষে গত মে মাসে ইসলামাবাদের ইনস্টিটিউ অফ স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল খালিদ কিদওয়াই সেখানে ভাষণ দেন।
০৫১৯
খালিদ তাঁর ভাষণে পাকিস্তানের দীর্ঘমেয়াদী পারমাণবিক নীতি নিয়ে আলোচনা করেছেন। জানিয়েছেন, স্থল, জল এবং আকাশপথে ভারতের বিরুদ্ধে ত্রিমুখী প্রতিরোধে প্রস্তুত তাঁর দেশ।
০৬১৯
ভারতের বিরুদ্ধে পরমাণু অস্ত্রকে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হিসাবে দেখছে পাকিস্তান। খালিদের বক্তৃতা অনুযায়ী, স্থল, জল এবং আকাশপথের লড়াইয়ে ব্যবহারের উপযোগী পরমাণু অস্ত্র তাদের কাছে আছে।
০৭১৯
স্থলভাগে পরমাণু অস্ত্র নিয়ে ভারতকে ঠেকাতে প্রস্তুত আর্মি স্ট্র্যাটেজিক ফোর্স কমান্ড (এএসএফসি)। জলপথে তৈরি আছে নেভাল স্ট্র্যাটেজিক ফোর্স কমান্ড (এনএসএফসি) এবং আকাশে প্রতিরোধে প্রস্তুত এয়ার ফোর্স স্ট্র্যাটেজিক কমান্ড (এএফএসসি)।
০৮১৯
এ ছাড়াও, কৌশলগত এবং প্রয়োগমূলক ভাবে ভারতের বিরুদ্ধে সবরকম প্রতিরোধ গড়ে তুলতে প্রস্তুত পাকিস্তান, জানিয়েছেন খালিদ। প্রতি ক্ষেত্রেই জোর দেওয়া হচ্ছে পরমাণু অস্ত্রে।
০৯১৯
মনে করা হচ্ছে, ভারতের বিরুদ্ধে ত্রিমুখী প্রতিরোধ গড়ে তুলে পাকিস্তান একটি ‘পারমাণবিক ছাতা’ তৈরি করছে। যা দিয়ে পড়শি ‘শত্রু’কে ঘিরে ফেলতে চাইছে ইসলামাবাদ।
১০১৯
সাম্প্রতিক সময়ে সামরিক কৌশলে কিছু পরিবর্তন এনেছে পাকিস্তান। তারা জিরো-রেঞ্জ কৌশলে ভারতের সীমা বরাবর পারমাণবিক ল্যান্ডমাইন পুঁতে রাখার নীতি নিতে পারে।
১১১৯
তবে এই সবই এখনও সম্ভাবনার পর্যায়ে। পাকিস্তান তাদের পারমাণবিক ক্ষেত্রের পরিকল্পনা খুব একটা প্রকাশ্যে আনে না। পাক পরমাণু তৎপরতা বরাবরই ধোঁয়াশায় ঢাকা।
১২১৯
পারমাণবিক অগ্রগতিকে আড়ালে রেখে পাকিস্তান বরাবর তাদের ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ এবং প্রস্তুতির দিকগুলিকে প্রচারের আলোয় আনে। এটিও তাদের সামরিক কৌশলের অঙ্গ।
১৩১৯
পাকিস্তানে পরমাণু অস্ত্রের তৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে ২০১৯ সাল থেকে। বালাকোটে ভারতের বিমানহানার পর পাক সেনা পারমাণবিক শক্তিতে আরও বেশি জোর দিচ্ছে বলে খবর।
১৪১৯
পাকিস্তানে পারমাণবিক অস্ত্র নির্মাণের অবাধ ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়েছিল সত্তর-আশির দশকে। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন আফগানিস্তান আক্রমণ করলে পরমাণু অস্ত্র নিয়ে চর্চার দুয়ার খুলে যায় পাকিস্তানের সামনে।
১৫১৯
ভারত বা পশ্চিমি দুনিয়া চায়নি পাকিস্তান পরমাণু শক্তিধর হয়ে উঠুক। কিন্তু আফগানিস্তানে সোভিয়েতের আক্রমণের পর তাদের ঠেকাতে পড়শি পাকিস্তানের উপর নির্ভর করতে হয়েছিল আমেরিকাকে।
১৬১৯
সেই সময় আমেরিকা-সহ পশ্চিমি দুনিয়া অনিচ্ছা সত্ত্বেও পাকিস্তানের পরমাণু শক্তি চর্চায় বাধা দিতে পারেনি। পাকিস্তানও সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে পরমাণু বোমার সফল পরীক্ষা করে ১৯৯৮ সালে।
১৭১৯
তবে পাকিস্তানের যাবতীয় কৌশল এবং পরিকল্পনা কার্যক্ষেত্রে কতটা প্রভাব ফেলতে পারবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। কারণ, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বজায় রেখে চলতে হলে পারমাণবিক অস্ত্র তারা প্রয়োগ করতে পারবে না।
১৮১৯
পাক সেনা যতই শক্তিশালী হোক, ভারতের বিরুদ্ধে এখনও পর্যন্ত কোনও যুদ্ধ তারা জিততে পারেনি। ‘পারমাণিক ছাতা’র নীচে তাই সন্ত্রাসবাদকে হাতিয়ার করছে ইসলামাবাদ। সন্ত্রাসবাদীদের পারমাণবিক অস্ত্রের সুরক্ষা এবং আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে। ভারতের বিরুদ্ধে পদক্ষেপে ইন্ধনও জোগাচ্ছে পাক সরকার।
১৯১৯
পরমাণু শক্তিকে হাতিয়ার করে পাকিস্তানের এই সন্ত্রাসবাদের রণকৌশল ভারতের বিরুদ্ধে কতটা কার্যকরী হবে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গেই তার উত্তর মিলবে।