Oracle executive Pravin Bhateley alias Tarun Kumar Jinaraj, held in Bengaluru 15 years after he allegedly killed wife dgtl
Crime
Murder: ১৫ বছর আগে স্ত্রীকে খুন! ভুয়ো নামে ওর্যাকলে চাকরি, কী ভাবে পুলিশের জালে খুনি?
আমদাবাদের তরুণকুমার জিনারাজের দাবি ছিল, ডাকাতি করতে এসে বাধা পেয়ে দুষ্কৃতীরা তাঁর স্ত্রীকে শ্বাসরোধ করে খুন করেছে।
নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতাশেষ আপডেট: ২৫ মে ২০২২ ০৮:৪৬
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৯
বিয়ের চার মাসের মাথায় খুন হয়েছিলেন ২৬ বছরের সজনী জিনারাজ। আমদাবাদের ওই ব্যাঙ্ক এগ্জিকিউটিভের স্বামী তরুণকুমার জিনারাজের দাবি ছিল, ডাকাতি করতে এসে বাধা পেয়ে দুষ্কৃতীরা তাঁর স্ত্রীকে শ্বাসরোধ করে খুন করেছে। যদিও সজনীর ঘরে ছড়ানো-ছেটানো জিনিসপত্র দেখে খটকা লেগেছিল তদন্তকারীদের। কিন্তু খুনি কে?
০২১৯
১৫ বছর পর পুলিশের জালে ধরা পড়ে খুনি। তবে সজনীকে খুনের পর দীর্ঘ দিন কেটে গেলেও খুনির হদিস মেলেনি। ২০০৩ সালের ভ্যালেন্টাইন্স ডে-র সেই ঘটনার কেস ফাইলে ধুলো জমতে শুরু করেছিল।
০৩১৯
এই মামলায় তরুণের মা-বাবা, ভাই ও তাঁর স্ত্রী-সহ বেশ কয়েক জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছিল আমদাবাদ পুলিশ। তবে খুনি অধরাই থেকে গিয়েছিল।
০৪১৯
খুনের দিন কয়েকের মধ্যে তদন্ত চলাকালীন আচমকাই গায়েব হয়ে যায় তরুণ। পুলিশের কাছে সজনীর মা-বাবার দাবি ছিল, পণের দাবিতে মেয়েকে খুন করেছে তাঁদের জামাই। তবে তা প্রমাণ করার মতো কোনও তথ্যই তাঁদের কাছে ছিল না।
০৫১৯
তদন্তে গতি এলেও খুনিকে ধরতে পারেনি পুলিশ। প্রমাণাভাবে মামলার চার্জশিটে তরুণের বিরুদ্ধে পণের দাবি এবং খুনের অভিযোগও সরিয়ে ফেলেন তদন্তকারীরা। যা নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়ে পুলিশ-প্রশাসন। তবে কিছুতেই তরুণের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। এক সময় বাধ্য হয়েই এই কেস ফাইল বন্ধ করে দেয় পুলিশ।
০৬১৯
কেস বন্ধ হলেও সজনীর মা-বাবা নিজেদের দাবিতে অনড় ছিলেন। তাঁদের আরও দাবি, বান্ধবীর সঙ্গে সম্পর্ক গড়তেই স্ত্রীকে খুন করেছে তরুণ।
০৭১৯
শেষমেশ এ নিয়ে গুজরাতের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দ্বারস্থ হন সজনীর মা-বাবা। মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ হওয়ার পর মামলায় গতি আসে। পুরনো কেস ফাইল খুলে আবার তদন্ত শুরু করে পুলিশ। তত দিনে প্রায় ১৫ বছর পার গিয়েছে।
০৮১৯
নতুন করে তদন্তে নেমে তরুণের মা আন্নাম্মা চাকো-সহ বহু ঘনিষ্ঠের ফোন কল রেকর্ড করা শুরু করে পুলিশ। এক দিন তরুণের মা’র কাছে বেঙ্গালুরুর একটি অফিসের ল্যান্ডলাইন থেকে ফোন আসে। সেই সূত্র ধরেই এ বার এগোতে থাকেন তদন্তকারীরা।
০৯১৯
তদন্তকারীরা জানতে পারেন, মধ্যপ্রদেশের মন্দসৌরে আন্নাম্মা চাকোর কাছে ওই ফোন এসেছিল ওর্যাকলের বেঙ্গালুরুর শাখা থেকে। তরুণের মাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে পুলিশকে তিনি জানান, তাঁর দুই ছেলের মধ্যে এক জন দক্ষিণের এক রাজ্যে থাকেন, অন্য জন আমদাবাদে। তবে তত দিনে আমদাবাদ থেকে তো গায়েব হয়ে গিয়েছে তরুণ! তবে কি তথ্য গোপন করছেন তরুণের মা?
১০১৯
তদন্তকারীরা এ বার তরুণের মা’র গতিবিধি সম্পর্কে খোঁজখবর করে জানতে পারেন, আন্নাম্মা প্রায়শই কেরল এবং বেঙ্গালুরু যান। ফোনকলের সূত্র ধরে এ বার তদন্তকারীরা পৌঁছে যান বেঙ্গালুরু। তবে ছদ্মবেশে।
১১১৯
তদন্তকারীরা জানতে পারেন, তরুণের মায়ের কাছে বেঙ্গালুরুর ওই তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার নামে নথিভুক্ত একটি ল্যান্ডলাইন থেকে ফোন আসত। এ ছাড়া একটি মোবাইল নম্বর থেকে ফোন আসত, যা নিশা নামে এক মহিলার নামে ছিল। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে কর্মী সেজে ওর্যাকলে তদন্তকারীরা ঢুকলেও তরুণের হদিস মেলেনি। তরুণের বয়স তত দিনে ৪২। তবে তার চেহারার সঙ্গে মিল রয়েছে, ওর্যাকলের অফিসে এমন কোনও ব্যক্তির দেখা মেলেনি। দেখা হয়েছিল প্রবীণ ভটেলে নামে এক সিনিয়র ম্যানেজারের সঙ্গে!
১২১৯
তরুণের মতো একমাথা ঘন চুল বা মোটা গোঁফ ছিল না প্রবীণের। বদলে মাথার সামনের চুল পাতলা হয়ে টাক পড়তে শুরু করেছে। চশমা এবং ফ্রেঞ্চকাট গোঁফদাড়িতে তরুণের তুলনায় প্রবীণ বরং বেশ ভারিক্কি চেহারার। তা সত্ত্বেও সে দিন তাকেই সজনীকে খুনের অভিযোগে গ্রেফতার করে পুলিশ।
১৩১৯
সেন্ট্রাল ক্রাইম ব্রাঞ্চ এবং আমদাবাদ পুলিশের যৌথ দলের তদন্তকারীদের মধ্যে কিরণ চৌধরি নামে এক আধিকারিক ওর্যাকলের কর্মী সেজে প্রবীণের ডেস্কে গিয়েছিলেন। তাঁকে গ্রেফতারের আগে কিরণের নাটকীয় মন্তব্য ছিল, ‘‘হ্যালো তরুণ, খেলা শেষ! এ বার চলো।’’
১৪১৯
কী ভাবে প্রবীণবেশী তরুণকে পাকড়াও করল তদন্তকারীরা? সে সময় সংবাদমাধ্যমের কাছে আমদাবাদ ক্রাইম ব্রাঞ্চের স্পেশাল পুলিশ কমিশনার জেকে ভট্ট বলেছিলেন, ‘‘মধ্যপ্রদেশে নিজের শহরের এক কলেজের বন্ধুর নাম-পরিচয় ভাঁড়িয়েছিল তরুণ। এর পর গত ছ’বছর ধরে বেঙ্গালুরুতে ওর্যাকলের সংস্থায় রাতের শিফ্টে কাজ করত সে। বিশেষ কারও সঙ্গে মেলামেশাও করত না।’’
১৫১৯
তদন্তকারীদের দাবি, বান্ধবীর সঙ্গে সম্পর্ক পাকা করতে ‘উপহার’ হিসাবে স্ত্রীকে খুন করেছিল তরুণ। ২০০৩ সালের ভ্যালেন্টাইন্স ডে-তে ওই খুনের ঘটনায় গুজরাত জুড়ে আলোড়ন ফেলে দিয়েছিল। খুনের ১৫ বছর পর অবশেষে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে ধরা পড়ে সে। তত দিনে নাম-পরিচয় ভাঁড়িয়ে ওর্যাকলের মতো বহুজাতিক সংস্থায় উঁচু পদে প্রায় ছ’বছর কাজ করে ফেলেছে সে। কোন ভুলে পুলিশের জালে পড়ল খুনি?
১৬১৯
জেকে ভট্ট বলেন, ‘‘যে বান্ধবীর সঙ্গে সম্পর্কের জন্য খুন করেছিল তরুণ, তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলাম আমরা। তবে তরুণকে বিয়ে করেননি ওই মহিলা। পুণেতে থাকার সময় নিশা নামে এক জনকে বিয়ে করে তরুণ। দম্পতির দুই সন্তান রয়েছে।’’ নিশার নামে রেজিস্টার করা ফোন থেকেই মাকে ফোন করেছিল তরুণ।
১৭১৯
গ্রেফতারির পরেও গোড়ায় সজনীকে খুনের অভিযোগ অস্বীকার করেছিল তরুণ। শেষমেশ নিজের অপরাধের কথা স্বীকার করে সে।
১৮১৯
পুলিশ জানিয়েছে, আমদাবাদ থেকে পালিয়ে প্রথমে দিল্লি এবং পরে পুণের সংস্থায় কাজ করত তরুণ। এর পর ওর্যাকলের বেঙ্গালুরু শাখায় বছরে ২২ লক্ষ টাকা বেতনের কাজ শুরু করে।
১৯১৯
মোটা মাইনের চাকরি। অভিজাত এলাকায় স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে সুখেই কাটছিল তরুণের জীবন। তবে একটি ফোনকলেই ফেঁসে যায় সে। যদিও গ্রেফতারির পরেও তরুণের আসল পরিচয় জানতেন না তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী নিশা!