Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪

ক্রিকেটের নেশায় ছাড়েন ঘরবাড়ি, দেশও! এক দশক পর প্রচারের আলোয় ‘ওমানের শোয়েব আখতার’

মহম্মদ ইমরানের বোলিংয়ের একটি ভিডিয়ো ভাইরাল হয়েছে। রান-আপ, বোলিং অ্যাকশন তো বটেই, ইমরানের দেহের গঠন বা চুলের কায়দায়ও যেন শোয়েব আখতারের ছোঁয়া।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
মাসকট শেষ আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৭:২৬
Share: Save:
০১ ২২
Image of Muhammad Imran and Shoaib Akhtar

বল হাতে ঘণ্টায় প্রায় দেড়শো কিলোমিটার গতিতে ২২ গজে দৌড়ে আসা হোক বা উইকেট তাক করে কর্কের সাদা বলটিকে গোলার মতো আছড়ে ফেলা— সবেতেই পাকিস্তানের প্রাক্তন পেসার শোয়েব আখতারকে মনে পড়িয়ে দেন তিনি। এমনকি, ব্যাটারকে সাজঘরে ফেরানোর পর উদ্‌যাপনের ভঙ্গিও হুবহু ‘রাওয়ালপিন্ডি এক্সপ্রেসের’ মতো। আজকাল এ নামেই সমাজমাধ্যমে প্রচারের আলো কাড়ছেন ওমানের পেসার মহম্মদ ইমরান।

ছবি: সংগৃহীত।

০২ ২২
Image of Muhammad Imran

রান-আপ থেকে বোলিং অ্যাকশন তো বটেই, ইমরানের দেহের গঠন বা চুলের কায়দাতেও যেন শোয়েবের ছোঁয়া। ওমানের ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি লিগের ইমরানের বোলিংয়ের একটি ভিডিয়ো সম্প্রতি ভাইরাল হয়েছে।

ছবি: সংগৃহীত।

০৩ ২২
Image of Shoaib Akhtar

ওমানে ক্রিকেট খেললেও আদতে শোয়েবের দেশের মাটিতে জন্ম ইমরানের। সেখানেই বড় হওয়া। তবে ক্রিকেটের নেশায় কিশোর বয়সেই ঘর ছেড়ে পালিয়েছিলেন। বোলার হয়ে ওঠার নেপথ্যকাহিনিও কম চমকপ্রদ নয়।

ছবি: সংগৃহীত।

০৪ ২২
Image of Pakistan

সংবাদমাধ্যম ‘ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’-এর কাছে একটি সাক্ষাৎকারে সেই কাহিনিই শুনিয়েছেন ইমরান। আদতে পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের ডেরা ইসমাইল খান গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন তিনি।

ছবি: সংগৃহীত।

০৫ ২২
Representational image of Pakistan army

ছোটবেলা থেকেই ক্রিকেটের প্রতি ঝোঁক ছিল ইমরানের। তবে পরিবারের সদস্যদের ইচ্ছা ছিল, ক্রিকেট নয়, পাক সেনাবাহিনীতে যোগ দেবেন তাঁদের ঘরের ছেলে। পরিবারের সে আশায় জল ঢেলে দিয়েছেন ইমরান।

—প্রতীকী চিত্র।

০৬ ২২
Representational image of kid

ক্রিকেট খেলার টানে ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে করাচিতে গিয়ে পৌঁছেছিলেন ১৮ বছরের কিশোর ইমরান। সেটা ছিল ২০১২ সালের এক শীতের রাত। তিনি জানিয়েছেন, ডিসেম্বরের সেই শীতের রাতে বাড়িতে কোনও একটা অনুষ্ঠান ছিল। সুযোগ বুঝে সেখান থেকে সরে পড়েন তিনি।

—প্রতীকী চিত্র।

০৭ ২২
Representational image of leaving home

ইমরানের কথায়, ‘‘যে দিন আমাদের বাড়িতে খাওয়াদাওয়া চলছিল, সে রাতেই কাউকে কিছু না জানিয়ে পালিয়ে গিয়েছিলাম।’’ তাঁর কারণও জানিয়েছেন ইমরান। তিনি বলেন, ‘‘বাবা সব সময়ই চাইত আমি সেনায় যোগ দিই। তবে আমি শুধুমাত্র ক্রিকেট খেলতে চেয়েছিলাম। তাই সকলে ঘুমিয়ে পড়লে গ্রামের বাড়ি ছেড়ে করাচিতে পালিয়েছিলাম।’’

—প্রতীকী চিত্র।

০৮ ২২
Image of truck

হাড়কাঁপানো শীতের রাতে বাড়ি থেকে বেরিয়ে একটি ট্রাকে উঠে প়ড়েছিলেন ইমরান। সঙ্গে ছিল নামমাত্র টাকাপয়সা। এর পর প্রায় হাজার কিলোমিটার পেরিয়ে করাচি পৌঁছন। সেখানকার একটি ট্রায়ালে যোগ দিতেই ঘর ছেড়েছিলেন ইমরান।

—প্রতীকী চিত্র।

০৯ ২২
Image of truck

করাচি পৌঁছতে তিন দিন ট্রাকে কাটিয়েছিলেন তিনি। তিন দিন পর করাচির কেডিএ ক্রিকেট মাঠে পৌঁছন ইমরান। ওই মাঠে যে ট্রায়াল চলছে, সে খবর জানিয়েছিলেন মহম্মদ নইম নামে এক প্রাক্তন ক্রিকেটার।

—প্রতীকী চিত্র।

১০ ২২
Image of Cricket gear

জাতীয় দলে সুযোগ না পেলেও স্বাধীনতার পর উত্তর-পশ্চিম পাকিস্তানের জনজাতি অধ্যুষিত এলাকায় ক্রিকেট খেলতেন নইম। তাঁর পরামর্শেই করাচিতে ভাগ্যপরীক্ষার জন্য পৌঁছন ইমরান। রাতের বেলা সেখানে পৌঁছলে তাঁকে পরের দিন সকালে আসতে বলা হয়।

—প্রতীকী চিত্র।

১১ ২২
Representational image of Cricket match

ইমরান বলেন, ‘‘কেডিএ-তে পৌঁছলে ওঁরা আমাকে পরের দিন আসতে বলে। সে সময় আমি বলেছিলাম, ‘ভাইজান, ঘরবাড়ি ছেড়ে এসেছি। আমার কাছে থাকারও জায়গা নেই। এখন ট্রায়াল নেবেন?’ ’’

—প্রতীকী চিত্র।

১২ ২২
Representational image of winter night

সে রাতে ইমরানের ট্রায়াল না হলেও কেডিএ-র মাঠে থাকার অনুমতি পেয়েছিলেন ইমরান। তিনি বলেন, ‘‘করাচিতে সেই রাতটা কোনও দিন ভুলব না। হাড়কাঁপানো ঠান্ডায় জমে যাচ্ছিলাম। ঘুমোতেও পারিনি। মনে মনে প্রার্থনা করছিলাম, রাতটা যেন কোনও রকমে কেটে যায়। বোধ হয় সে রাতটাই আমার জীবনের সবচেয়ে দীর্ঘ রাত ছিল!’’

—প্রতীকী চিত্র।

১৩ ২২
Representational image of cricket trial

পরের দিন ট্রায়ালে সকলের নজরে পড়েন ইমরান। করাচির অনূর্ধ্ব-১৯ দলে জায়গাও পেয়ে যান। ইমরানের কথায়, ‘‘ছ’ম্যাচে ২১ উইকেট নিয়েছিলাম। রশিদ লতিফ অ্যাকাডেমির বিরুদ্ধে এহসান আলি, সাদ আলি, ফরাজ় আলি-সহ চার জনকে আউট করেছিলাম। এহসানরা সকলেই এখন পাকিস্তান ক্রিকেট লিগে খেলেন।’’

—প্রতীকী চিত্র।

১৪ ২২
Image of Wasim Akram

২০১৩ সালে পাকিস্তানের একটি মোবাইল প্রস্তুতকারক সংস্থার তরফে দেশ জুড়ে জোরে বোলারদের জন্য একটি ট্রায়াল হয়েছিল। সেটি দেখভালের দায়িত্বে ছিলেন প্রাক্তন পাক বোলার ওয়াসিম আক্রম।

ছবি: সংগৃহীত।

১৫ ২২
Image of Wasim Akram

সেই ট্রায়ালে আরও এক বার নজর কেড়েছিলেন ইমরান। তিনি বলেন, ‘‘ঘণ্টায় ১৪৩ কিলোমিটার গতিতে বল করে গোটা দেশে আমি দ্বিতীয় হয়েছিলাম। আক্রম পর্যন্ত বলেছিলেন, এর থেকেও বেশি গতিতে বল করতে পারি আমি।’’

ছবি: সংগৃহীত।

১৬ ২২
Representational image of Cricket gear

ইমরানের আক্ষেপ, ‘‘ভেবেছিলাম, এ বার বুঝি জীবন বদলে যাবে। তবে সে সব কিছুই হয়নি।’’ তাঁর দাবি, ‘‘পাকিস্তান ক্রিকেটে যে কী ধরনের রাজনীতি চলে... এখানে ঠিক লোকজনের সঙ্গে পরিচিতি না থাকলে বেশি দূর এগোনো যায় না।’’

ছবি: সংগৃহীত।

১৭ ২২
Image of Shoaib Akhtar

বল করতে গিয়ে ‘রাওয়ালপিন্ডি এক্সপ্রেসে’র মতো হুবহু ভাবভঙ্গি কী ভাবে রপ্ত করলেন তিনি? ইমরান বলেন, ‘‘ছোটবেলা থেকে শোয়েবের খেলা দেখে বড় হয়েছি। আমাদের গ্রামের অনেকেই ওঁর মতো বল হাতে দৌড়য়। তবে একমাত্র আমিই নিখুঁত ভাবে শোয়েবের মতো ছুটতে পারি।’’

ছবি: সংগৃহীত।

১৮ ২২
Image of Shoaib Akhtar

ইমরান বলেন, ‘‘ছোটবেলায় টেনিস বলের উপর টেপ জড়িয়ে বল করতাম। ২০১০ সালে গ্রামের একটি টুর্নামেন্টে বল করার সময় এক জন বলেছিলেন, একেবারে শোয়েব আখতারের মতো বল করি আমি।’’ গতি বা বোলিং অ্যাকশনে মিল থাকলেও শোয়েবের মতো পাকিস্তানের জাতীয় দলে জায়গা পাননি ইমরান। পাকিস্তানের হয়ে অনূর্ধ্ব-২৩ এবং অনূর্ধ্ব-২৫ দলে জায়গা পেলেও প্রথম শ্রেণির প্রতিযোগিতা বা জাতীয় দলের সুযোগ অধরাই থেকে গিয়েছে।

ছবি: সংগৃহীত।

১৯ ২২
Image of Aaqib Javed

২০১৭ সালে পাকিস্তান ক্রিকেট লিগে ‘লাহোর কলন্দর্স’-এর ট্রায়ালে প্রাক্তন পাক পেসার আকিব জাভেদের নজরে পড়েন ইমরান। তিনি বলেন, ‘‘ট্রায়ালে প্রথম বার বল করার পরেই আকিব ছুটে এসে বলেছিলেন, ‘আপকি বোলিং মে জা‌ন হ্যায়।’ কলন্দর্স-এর তরফে এক জন আমার ফোন নম্বরও চেয়ে নিয়েছিলেন। তবে সেই ফোন আর আসেনি।’’

ছবি: সংগৃহীত।

২০ ২২
Image of Muhammad Imran

২০১৯ সালে তাঁর বোলিংয়ের ভিডিয়ো ইউটিউবে আপলোড করেছিলেন ইমরানের এক বন্ধু। সেটি ছড়িয়ে পড়ার পর ওমানের টি-টোয়েন্টি লিগে খেলার জন্য ফোন পেয়েছিলেন তিনি। ওমানে খেলার সুযোগ পেলেও শুধুমাত্র ক্রিকেটে সংসার চলছিল না ইমরানের। ক্রিকেটের পাশাপাশি সিসি ক্যামেরা লাগানোর কাজ করেন তিনি। তাতে মাসে ৭০,০০০ পাকিস্তানি টাকা রোজগার করেন ইমরান।

ছবি: সংগৃহীত।

২১ ২২
Image of Muhammad Imran

ইমরান বলেন, ‘’১২ ঘণ্টার শিফ্‌ট করে বেতনের অর্ধেক পরিবারের কাছে পাঠাতে হয়।’’ আজকাল ওমানে আজ়াইবা একাদশের হয়ে বল করেন ইমরান। তাঁর কথায়, ‘‘আচমকাই আমার ভিডিয়ো ভাইরাল হয়ে গিয়েছে। ফলে রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে গিয়েছি আমি। তা ছাড়া, এই ফ্র্যাঞ্চাইজ়ির তরফে খেলার জন্য এখন ছ-সাত ঘণ্টা কাজ করলেই চলে। ফলে আজকাল বেশি ক্রিকেট খেলতে পারছি।’’

ছবি: সংগৃহীত।

২২ ২২
Image of Cricket ball

আজও স্বপ্নের পিছনে ছুটছেন ২৯ বছরের ইমরান। তিনি বলেন, ‘‘আজ়াইবার প্রধান কোট দলীপ মেন্ডিস এবং তাঁর ডেপুটি মজ়হর সালেম খান খুব সাহায্য করছেন। তাঁরা বলেছেন, বিশ্বের যে কোনও টি-টোয়েন্টি লিগে খেলার যোগ্যতা রয়েছে আমার।’’ এখনও পর্যন্ত ওমানের জাতীয় দলের শিবিরে পৌঁছতে পেরেছেন ইমরান। তাঁর বাকি স্বপ্ন পূরণ হবে কি?

—প্রতীকী চিত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy