Meet Prafull Billore who makes crore by selling tea dgtl
Prafull Billore
বারবার ব্যর্থ ক্যাট পরীক্ষায়, স্রেফ চা বিক্রি করে আজ কোটিপতি এই ‘এমবিএ চাওয়ালা’
ভারতের প্রথম সারির বিজনেস স্কুলে ভর্তির সুযোগ পেতে প্রতি বছর কয়েক হাজার ছাত্রছাত্রী ক্যাট পরীক্ষায় বসেন। আশা থাকে ভাল চাকরি আর মোটা মাইনের।
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৪ জানুয়ারি ২০২১ ১২:২১
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৯
ভারতের প্রথম সারির বিজনেস স্কুলে ভর্তির সুযোগ পেতে প্রতি বছর কয়েক হাজার ছাত্রছাত্রী ক্যাট পরীক্ষায় বসেন। আশা থাকে ভাল চাকরি আর মোটা মাইনের।
০২১৯
যেমন মধ্যপ্রদেশের প্রফুল বিল্লোরে করেছিলেন। টানা তিন বছর মোটা মোটা বইয়ে মুখ গুঁজে পড়েছিলেন। প্রাণপণ চেষ্টা করে গিয়েছেন ক্যাট উত্তীর্ণ হওয়ার। আর প্রতিবারেই ব্যর্থতা দরজায় কড়া নেড়েছে তাঁর।
০৩১৯
ভাঙা হৃদয়ে শেষে রাস্তায় রাস্তায় চা বিক্রি করতে শুরু করলেন। হয়ে উঠলেন ভারতের জনপ্রিয় চা বিক্রেতা ‘এমবিএ চাওয়ালা’। সেরা বিজনেস স্কুলে সুযোগ পাননি ঠিকই, কিন্তু অন্যতম সেরা ব্যবসায়ী হয়ে উঠলেন।
০৪১৯
প্রফুলের চাওয়ালা হয়ে ওঠার নেপথ্যে রয়েছে ব্যর্থতা। ব্যর্থতাই জীবনকে অন্য ভাবে দেখতে শিখিয়েছিল। আজ বিশ্বের প্রথম সারির বিজনেস স্কুলে পড়ুয়াদের ভাষণ দিয়ে আসেন তিনি। প্রকৃত ব্যবসায়ী হয়ে ওঠার পাঠ নেন।
০৫১৯
২০১৪ সাল। এ পর্যন্ত টানা ৩ বছর ক্যাট-এর কাছে জীবনকে বন্ধক দিয়ে দেন প্রফুল। দিন রাত জেগে ক্যাট-এর প্রস্তুতি নিয়েছেন। কিন্তু ওই ৩ বারই তিনি ব্যর্থ হন।
০৬১৯
অত্যন্ত ভেঙে পড়েছিলেন। জীবনের মূল্য হারিয়ে ফেলেছিলেন। সিদ্ধান্ত নেন নিজেকে কিছু অবসর সময় দেওয়ার। বাবার থেকে টাকা নিয়ে ভারতের বিভিন্ন শহরে ঘুরে বেড়াতে শুরু করলেন।
০৭১৯
কিন্তু কতদিনই বা এ ভাবে কাটানো সম্ভব! এমবিএ করার ইচ্ছা ততদিনে মুছে ফেললেও বাড়িতে সেটা জানানোর সাহস ছিল না।
০৮১৯
শেষে আমদাবাদে এসে তিনি নিজের কিছু শুরু করার মনস্থির করলেন। প্রথমে ম্যাকডোনাল্ডের আউটলেটে ইন্টারভিউ দিয়ে একটা কাজ শুরু করলেন। সারাদিন ধরে ঝাড়ু দিতেন আউটলেটে। কখনও কখনও ক্রেতাদের থেকে অর্ডারও নিতেন এবং খাবার পরিবেশন করতেন।
০৯১৯
এ ভাবেই চলছিল। উপার্জনও হচ্ছিল। কিন্তু মনের শান্তি ছিল না। জীবন নিয়ে আক্ষেপ কিছুতেই কাটছিল না। নিজের কিছু করার ইচ্ছা থেকেই চা বিক্রির কথা মাথায় আসে তাঁর।
১০১৯
আমদাবাদের এক এমবিএ কলেজে ভর্তি হওয়ার কথা বলে বাবার কাছ থেকে ৮ হাজার টাকাও জুটিয়ে নেন। ওই টাকায় কেটলি, কাপ, ট্রে এবং চা তৈরির সমস্ত কাঁচামাল কিনে পরদিন থেকেই রাস্তায় বিক্রি করতে শুরু করেন।
১১১৯
প্রথম দিন কোনও গ্রাহক পাননি। পরদিন ফের রাস্তায় দোকান দিলেন। এ বার নিজে গ্রাহকের কাছে চলে যেতে শুরু করলেন। গ্রাহকের কাছে গিয়ে অর্ডার নেওয়া এবং তাঁদের হাতে চা পৌঁছে দিলেন।
১২১৯
ইংরেজি বলা চাওয়ালাকে পছন্দ করতে শুরু করলেন মানুষ। প্রথম দিন ৫ জন গ্রাহক, পর দিন ২০ জন, তার পর দিন ১০০ জন... এ ভাবে ক্রমে বাড়তে থাকে বিক্রিবাটা। দু’সপ্তাহের মধ্যে তাঁর ব্যবসা এতটাই ফুলে ফেঁপে ওঠে যে আশেপাশের চা বিক্রেতাদের ঈর্ষার কারণ হয়ে উঠলেন।
১৩১৯
জোর করে তাঁর দোকান তুলে দেওয়া হল। পরের কয়েক সপ্তাহ আর দোকান দিতে পারেননি তিনি। সে সময় গ্রাহকেরাই তাঁকে খুঁজতে শুরু করলেন। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করতে শুরু করেন অনেকে।
১৪১৯
ফের চায়ের কেটলি নিয়ে আমদাবাদের অন্য জায়গায় দোকান দেন তিনি। এ বার আমদাবাদের এক হাসপাতালের ভিতর দোকান দেন। প্রতি মাসে এক হাজার টাকা ভাড়াও দিতেন। প্রফুল শুধু চা বেচতেন না, গ্রাহকদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের নিত্যনতুন ভাবনা নিয়ে হাজির হতেন।
১৫১৯
এর মাঝে ব্যবসা বাড়ানোর জন্য বাবাকে মিথ্যা বলে ফের ৫০ হাজার টাকা চেয়ে নিয়েছিলেন। বাবা জানতেন, ছেলে আমদাবাদের এক এমবিএ কলেজে ভর্তি হয়েছেন। বাবা যাতে তাঁর ব্যবসায় বাধা হয়ে না দাঁড়ান তাই আমদাবাদের এক কলেজে ভর্তি হয়েও নেন। কিন্তু কয়েকদিন ক্লাস করার পর আর কলেজের চৌহদিতে পা রাখেননি।
১৬১৯
নিজের দোকানের নামকরণ করলেন ‘এমবিএ চাওয়ালা’। এমবিএ-র পুরো অর্থ মিস্টার বিল্লোরে আমদাবাদ। বিল্লোরে তাঁর পদবী। আমদাবাদে চায়ের দোকান এবং পদবীর আগে ‘মিস্টার’ শব্দ জুড়েছিলেন। এ বার প্রতিটি শব্দের প্রথম অক্ষর নিয়েই তৈরি হয়েছিল এমবিএ।
১৭১৯
অনেকেই বুঝতে পারতেন না এর প্রকৃত অর্থ। চাওয়ালা তাও আবার এমবিএ! এমবিএ করে চা বিক্রি! এ সব নানা কথা নিয়ে হাসাহাসিও করতেন। তাতে ব্যবসায় কোনও প্রভাব পড়েনি যদিও।
১৮১৯
আমদাবাদে ৩০০ বর্গ ফুটের দোকান রয়েছে তাঁর। তাতে এখন ২০ জন কর্মচারী কাজ করেন। সেরা বিজনেস স্কুলে ভর্তি না হয়েও প্রফুল আজ কোটিপতি। ২০১৯-’২০ সালে ব্যবসার টার্নওভার ছিল ৩ কোটি টাকা।
১৯১৯
পড়ুয়াদের ভাষণ দিতে আইআইএম কিংবা হার্ভার্ড বিজনেস স্কুলে প্রায়ই ডাক পান। তাঁর কাহিনি মনোবল বাড়ায় পড়ুয়াদের।