Maldives president Mohamed Muizzu thanks India for debt relief dgtl
India-Maldives
ভারতকে ধন্যবাদ দিচ্ছেন, সাহায্য চাইছেন নয়াদিল্লির! চিনা বিপদের গন্ধ পেয়েই কি সুর নরম মুইজ্জুর?
মলদ্বীপের আকাশে আবার উড়তে শুরু করেছে ভারতের পাঠানো ডর্নিয়ার বিমান এবং হেলিকপ্টার। ডর্নিয়ার এয়ার অ্যাম্বুল্যান্স দিয়ে ইতিমধ্যেই রোগীদের শুশ্রূষা এবং এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়ার কাজ চালু হয়েছে আবার।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতাশেষ আপডেট: ০৪ অগস্ট ২০২৪ ০৮:৪৯
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২৩
ভোটপর্ব মিটতেই ভারতের কূটনীতির প্রভাব পড়তে শুরু করেছে প্রতিবেশী দেশগুলিতে। আর তার সূত্রপাত হয়েছে সেই মলদ্বীপ থেকে। দ্বীপরাষ্ট্রের উপর ভারতীয় প্রভাব-প্রতিপত্তি শেষ করে দেওয়ার অঙ্গীকার নিয়ে ক্ষমতায় আসা প্রেসিডেন্ট মহম্মদ মুইজ্জু ইতিমধ্যেই সুর নরম করেছেন। এমনকি সম্প্রতি সে দেশের স্বাধীনতা দিবসে জনসমক্ষে ভারতকে ধন্যবাদও জানিয়েছেন তিনি।
০২২৩
অন্য দিকে, মলদ্বীপের আকাশে আবার উড়তে শুরু করেছে ভারতের পাঠানো ডর্নিয়ার বিমান এবং হেলিকপ্টার। ডর্নিয়ার এয়ার অ্যাম্বুল্যান্স দিয়ে ইতিমধ্যেই রোগীদের শুশ্রূষা এবং এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়ার কাজ আবার শুরু হয়েছে।
০৩২৩
এই ডর্নিয়ার বিমান এবং হেলিকপ্টারগুলির মাধ্যমেই মলদ্বীপের আনাচকানাচে নজর রাখার অভিযোগ এনে ভারতের দিকে আঙুল তুলেছিল মুইজ্জু সরকার।
০৪২৩
একই সঙ্গে মঙ্গলবার থেকে ভারতে রোড-শো শুরু করছেন মলদ্বীপের পর্যটনমন্ত্রী ইব্রাহিম ফয়জ়ল। ‘ওয়েলকাম ইন্ডিয়া’ নামে ওই উদ্যোগের মূল উদ্দেশ্য মলদ্বীপ থেকে মুখ ফেরানো ভারতীয় পর্যটকদের আবারও মলদ্বীপমুখী করা।
০৫২৩
কিন্তু কী ভাবে খেলা ঘুরল? ভারতের দিকে বার বার বৈরিতার অভিযোগ তোলা এবং ভারতীয় সেনাদের সে দেশ থেকে ফেরত পাঠানোর মতো পদক্ষেপ করা মুইজ্জু আবার সুর নরম করতে শুরু করলেন কেন?
০৬২৩
মলদ্বীপের নবম প্রেসিডেন্ট মুইজ্জু। রাষ্ট্রপ্রধান হিসাবে শপথগ্রহণ করার পরেই তিনি জড়িয়ে পড়েন বিতর্কে। তাঁর আমলে ভারতের সঙ্গে মলদ্বীপের সম্পর্কের অবনতি হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠতে শুরু করে।
০৭২৩
চিনপন্থী বলে পরিচিত মুইজ্জু গত নভেম্বরে মলদ্বীপের প্রেসিডেন্ট পদে বসেন। তার পর থেকেই ভারতের সঙ্গে মলদ্বীপের কূটনৈতিক সম্পর্কে টানাপড়েন শুরু হয়। শপথ নেওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তিনি মলদ্বীপ থেকে ভারতীয় সেনা সরানোর প্রক্রিয়া শুরু করেন। দাবি উঠেছিল, চিনের উস্কানিতেই ভারতের থেকে দূরে সরছে মলদ্বীপ।
০৮২৩
মুইজ্জুর চিন-প্রীতি লক্ষ করা গিয়েছে বার বার। প্রেসিডেন্ট মনোনীত হওয়ার পরে প্রথা ভেঙে ভারতে না এসে তুরস্ক এবং চিন সফরে গিয়েছিলেন তিনি।
০৯২৩
দু’টি হেলিকপ্টার এবং ডর্নিয়ার বিমান পরিচালনা এবং রক্ষণাবেক্ষণের জন্য অনেক বছর ধরেই মলদ্বীপে ছিল ভারতীয় সেনা। ভারতের তরফে দ্বীপরাষ্ট্রকে উপহার দেওয়া হয়েছিল এই বিমান এবং কপ্টারগুলি। তবে সেই বিমান এবং হেলিকপ্টারগুলি গিয়ে নজরদারি চলছে বলে দাবি করে দেশের মানুষের কাছে মলদ্বীপ থেকে ভারতের সেনা সরিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মুইজ্জু।
১০২৩
দীর্ঘ আলাপ-আলোচনার পর সে দেশ থেকে সেনা সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ভারত। তার বদলে ভারত থেকে পাঠানো হয় প্রযুক্তিবিদদের।
১১২৩
এর মধ্যেই ভারতে লোকসভা ভোট নিয়ে প্রস্তুতি তুঙ্গে ওঠে। নির্বাচন শেষে সরকার গঠন করে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকার। তৃতীয় বারের জন্য প্রধানমন্ত্রী হন মোদী।
১২২৩
এর পরেই খেলা আবার ঘুরতে শুরু করে। লোকসভা ভোটে জয়ের জন্য মোদীকে অভিনন্দন জানান মুইজ্জু। ভারতের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করার ইচ্ছাও প্রকাশ করেন। মোদীর শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে দিল্লি উড়ে এসেছিলেন মুইজ্জু। রাষ্ট্রপতি ভবনে অতিথি ছিলেন তিনি। পরে প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে একান্ত বৈঠক করেন মলদ্বীপের প্রেসিডেন্ট। সূত্রের খবর, দু’দেশের সম্পর্ক উন্নতির বিষয়ে দুই রাষ্ট্রনেতার মধ্যে আলোচনা হয়েছে।
১৩২৩
মোদীর পাশাপাশি রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু এবং বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গেও বৈঠক করেন মুইজ্জু। রাষ্ট্রপতি ভবনে নৈশভোজের সময় মোদীর পাশের আসনটি বরাদ্দ ছিল তাঁর জন্যই। তার পর থেকেই দু’দেশের সম্পর্ক নিয়ে নতুন করে চর্চা শুরু হয় বিশ্ব কূটনৈতিক মহলে।
১৪২৩
২৬ জুলাই মলদ্বীপের স্বাধীনতা দিবসের দিন মুইজ্জু জনসমক্ষে ভারতকে ধন্যবাদ জানান। ভারতের প্রতি কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করেন। পাশাপাশি কার্যকর করা হয় ডর্নিয়ার বিমান এবং হেলিকপ্টারগুলিও।
১৫২৩
ভারতীয় সেনাদের ফেরত পাঠানোর পর থেকেই ডর্নিয়ার বিমান এবং হেলিকপ্টারগুলির উড়ান কার্যত বন্ধ হয়ে গিয়েছিল মলদ্বীপে। কারণ ওই বিমান এবং হেলিকপ্টার চালানোর জন্য যে দক্ষতা প্রয়োজন, তা মলদ্বীপ সেনার কাছে ছিল না।
১৬২৩
এয়ার অ্যাম্বুল্যান্স চলাচল বন্ধ হওয়ায় মলদ্বীপের বেশ কয়েক জন রোগীর মৃত্যুর খবরও আসে। ফলে দেশের মধ্যেই সমালোচনার মুখোমুখি হতে হয় মুইজ্জু সরকারকে।
১৭২৩
মলদ্বীপ দ্বিতীয় ধাক্কা খায় ভারতের বাজেট ঘোষণার দিন। প্রতি বছরই বাজেটে প্রতিবেশী দেশগুলির জন্য মোটা টাকা বরাদ্দ করে ভারত। সেই তালিকায় থাকে মলদ্বীপও।
১৮২৩
২০২২-’২৩ এবং ২০২৩-’২৪-এর বাজেটে মলদ্বীপের জন্য অর্থ বরাদ্দ করেছিল ভারত। ২০২৩-’২৪ সালে মলদ্বীপের জন্য বরাদ্দের পরিমাণ ছিল ৭৭০ কোটি। তবে ২০২৪-’২৫ অর্থবর্ষের বাজেটে দেখা যায় গত বছরের তুলনায় বরাদ্দ কমিয়ে ৪০০ কোটি করা হয়েছে।
১৯২৩
চিনের সঙ্গে মলদ্বীপের দহরম-মহরম শুরুর পর সে দিকে নজর পড়ে সারা বিশ্বের। আন্তর্জাতিক অর্থ ভান্ডার (আইএমএফ) সাবধান করে, চিনের ঋণের জালে জড়িয়ে পড়তে পারে মলদ্বীপ। কারণ চিনের থেকে দু’হাতে ঋণ নিলেও তা ফেরত দেওয়ার ক্ষমতা নেই মলদ্বীপের। এতেও নাকি টনক নড়ে মুইজ্জু সরকারের।
২০২৩
অন্য দিকে, মলদ্বীপের অর্থনীতির সিংহভাগই পর্যটন শিল্পের উপর নির্ভর করে। ভারতীয়েরা মলদ্বীপের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার পর থেকেই সে দেশের অর্থনীতিতে প্রভাব পড়তে শুরু করে।
২১২৩
ভারতের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করার প্রস্তাব দিয়েছে মলদ্বীপ। যার ফলে মলদ্বীপের পণ্য ভারতে এলে কোনও রফতানি শুল্ক লাগবে না।
২২২৩
এই সব কিছু মিলিয়েই নাকি নড়েচড়ে বসেন মুইজ্জু। আন্তর্জাতিক কূটনীতিকদের মতে, ভারতের সঙ্গে বৈরিতা রেখে যে বেশি দিন টিকে থাকা সম্ভব নয়, সেই আভাস পেয়েই চাল বদলেছেন মুইজ্জু। চিন-প্রীতি সরিয়ে রেখে আবার ভারতের দিকে ঝুঁকছে তাঁর সরকার।
২৩২৩
মলদ্বীপের ঋণ পরিশোধ সহজ করার জন্য ভারতকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন মুইজ্জু এবং আশা প্রকাশ করেছেন, ভবিষ্যতে নয়াদিল্লি এবং মলদ্বীপের সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হবে। দু’দেশের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে বলেও মুইজ্জু আশা প্রকাশ করেছেন।