Longest income tax raid on politician and businessman Sardar Inder Singh in 1981 dgtl
Arpita Mukherjee
Longest Income Tax Raid: কোটি কোটি টাকা, গয়না... ৪০ বছর আগে আয়কর হানায় উদ্ধার হয় কংগ্রেস নেতার বাড়ি থেকে
ভারতে দীর্ঘতম তল্লাশি অভিযানের ‘কৃতিত্ব’ কিন্তু ইডির নয়, আয়কর বিভাগের। কী ভাবে চলে এই অভিযান? উদ্ধার হওয়া মোট সম্পত্তির পরিমাণই বা কত ছিল?
নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতাশেষ আপডেট: ২৫ জুলাই ২০২২ ১৬:৪৪
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২০
সম্প্রতি রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী ‘পার্থ চট্টোপাধ্যায়-ঘনিষ্ঠ’ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের বাড়ি থেকে নগদ প্রায় ২২ কোটি টাকা উদ্ধার করেছে ইডি। প্রায় ২৪ ঘণ্টা ধরে তল্লাশি চালানো হয় তাঁর বাড়িতে। উদ্ধার করা হয় বহুমূল্যের গহনা এবং বৈদেশিক মুদ্রাও। এই ঘটনায় রাজ্য জুড়ে হইচই। পশ্চিমবঙ্গের বুকে এত বেশি পরিমাণে অর্থ এক জনের বাড়ি থেকে উদ্ধার করার নজির বিরল। তবে ভারতে দীর্ঘতম তল্লাশি অভিযানের ‘কৃতিত্ব’ কিন্তু ইডির নয়, আয়কর বিভাগের।
০২২০
কানপুরের আয়কর দফতরের এই দীর্ঘতম তল্লাশি অভিযান প্রায় তিন রাত এবং দুই দিন ধরে চলেছিল। আয়কর দফতরের তরফে সর্দার ইন্দর সিংহের বাড়িতে এই অভিযান চালানো হয়। সেই সময় ইন্দর ভারতের অন্যতম প্রভাবশালী নেতাদের মধ্যে এক জন ছিলেন।
০৩২০
বাড়িতে আয়কর হানার সময় ইন্দরের বয়স ছিল ৯১ বছর। ১৯৪৬ থেকে ১৯৫১ সাল পর্যন্ত তিনি পঞ্জাবের বিধায়ক ছিলেন। পরে কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ হন। কানপুরের শিল্পপতি ইন্দর উত্তরপ্রদেশের প্রথম স্টিল রি-রোলিং মিলের মালিক ছিলেন। ১৯৮১ সাল পর্যন্ত তিনি রাজ্যের বৃহত্তম স্টিল মিলের মালিক ছিলেন। দু’বার কানপুরের মেয়রও নির্বাচিত হন ইন্দর।
০৪২০
কী ভাবে চালানো হয়েছিল এই অভিযান? কী ভাবেই বা এই তল্লাশি অভিযান ভারতের বুকে চলা দীর্ঘতম তল্লাশি অভিযানের তকমা পেল?
০৫২০
১৯৮১ সালের ১৬ জুলাই সকালে ঘুম থেকে উঠে ইন্দর দেখেন, তাঁর কানপুরের বাড়ির বাইরে জড়ো হয়েছেন আয়কর দফতরের প্রায় ৯০ জন আধিকারিক।
০৬২০
ওই দিন সকাল ৮টা থেকে ইন্দরের বাড়িতে তল্লাশি অভিযান চালাতে শুরু করেন আয়কর কর্তারা। তবে আধিকারিকদেরও কোনও ধারণা ছিল না যে, তাঁরা কত সম্পত্তির খোঁজ পেতে চলেছেন।
০৭২০
ইন্দরের উপর চালানো আয়কর হানার নেতৃত্বে ছিলেন অলোককুমার বটব্যাল। গোয়েন্দা সংস্থার ডেপুটি ডিরেক্টর অলোক শুধু ৯০ জন আয়কর আধিকারিকই না, ২০০ জন পুলিশ এবং উঁচু পদের সরকারি কর্মীকেও এই অভিযানে নিয়ে যান।
০৮২০
ইন্দর এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা সমস্ত বাড়িতেই হানা চালায় আয়কর বিভাগ। বটব্যালের দলের অন্যান্য সদস্যরা কানপুরের লাজপত নগর, তিলক নগর, আর্য নগরে থাকা ইন্দরের বিভিন্ন বাড়িতে অভিযান চালান। একই সময়ে, ফজল গঞ্জ এবং পাঙ্কিতে থাকা ‘সিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস প্রাইভেট লিমিটেড’-এর কারখানাগুলিও তালা ঝুলিয়ে দেন আয়কর কর্তারা।
০৯২০
দিল্লি এবং মুসৌরিতে বিভিন্ন নামে থাকা ব্যাঙ্কের ১৫টি লকার খোলা হয়। অনেক দিন ধরে আটঘাট বেঁধেই এই অভিযানে নেমেছিল আয়কর বিভাগ।
১০২০
অভিযান শুরু করে হাঁ হয়ে যান তল্লাশি অভিযানে আসা আধিকারিকেরা। প্রথম দিনেই সমস্ত বাড়ি এবং ব্যাঙ্কের লকারে থাকা নগদ সম্পত্তির পরিমাণ দাঁড়ায় ৯২ লক্ষ টাকা।
১১২০
এ ছাড়াও ১১ লক্ষ টাকা মূল্যের ৩ কিলো সোনা, ৯ লক্ষ টাকা মূল্যের দুটি সোনার বার, ৭.৫৪ লক্ষ টাকার সোনার গয়না, ১.৮৫ লক্ষ টাকার ১৪৪টি সোনার মুদ্রা এবং প্রায় ৭ লক্ষ টাকার স্থায়ী আমানতও বাড়ি এবং ব্যাঙ্ক মিলিয়ে উদ্ধার করা হয় ইন্দরের কাছ থেকে।
১২২০
দিল্লির একটি ব্যাঙ্কের লকার থেকে নগদ ৭২ হাজার টাকা এবং ১.১ লক্ষ টাকার স্থায়ী আমানতের রসিদও উদ্ধার করা হয়। সব মিলিয়ে, উদ্ধারের অর্থ বেড়ে দাঁড়ায় ১ কোটি ১৩ লক্ষ টাকা। কানপুরে ব্যাঙ্কের দু’টি লকার থেকে ৩০ লক্ষ টাকা মূল্যের আরও ছয়টি সোনার বার উদ্ধার করা হয়।
১৩২০
আয়কর দফতরের তরফে মনে করা হয়েছিল, ১৮-২০ ঘণ্টার মধ্যে এই অভিযান শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু তল্লাশি শেষ হতে প্রায় আড়াই দিন লেগেছিল।
১৪২০
আয়কর দফতরের কর্মকর্তারা জানান, এই অভিযানে ৫৮ লক্ষ টাকার বন্ড বাজেয়াপ্ত করা হয়নি। এ ছাড়া মাটি লেগে থাকা দেড় লক্ষ টাকাও এই হিসাবে যোগ করা হয়নি।
১৫২০
তবে উদ্ধার করা নগদ এবং অন্যান্য সম্পত্তির পরিমাণ এত বেশি ছিল যে, অলোক বুঝতে পারেন এই টাকা গোনা তাঁদের সাধ্যের বাইরে। এর পরই রিজার্ভ ব্যাঙ্কের (আরবিআই) সঙ্গে যোগাযোগ করে সাহায্য চেয়ে পাঠায় আয়কর বিভাগ। আরবিআইয়ের তরফে সশস্ত্র বাহিনী এবং টাকা নিয়ে যাওয়ার ভ্যান পাঠানো হয় ইন্দরের বাড়িতে।
১৬২০
নগদ গোনার দায়িত্ব দেওয়া হয় ৪৫ জন অফিসারকে। সময় লেগেছিল মোট ১৮ ঘণ্টা।
১৭২০
১৮ ঘণ্টার গণনা শেষে কানপুরের আয়কর দফতর জানায়, তল্লাশি চালিয়ে মোট ১.৬ কোটি টাকা উদ্ধার হয়েছে। কানপুর আয়কর দফতরের তৎকালীন কমিশনার শারদাপ্রসাদ পাণ্ডে জানিয়েছিলেন, সেই সময়ের আগে আর কোনও জায়গায় অভিযান চালিয়ে এক সঙ্গে এত সম্পত্তি উদ্ধার করা হয়নি।
১৮২০
ইন্দর এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টগুলিও বাজেয়াপ্ত করা হয়। এই তল্লাশি অভিযানে থাকা আয়কর আধিকারিক প্রেম প্রকাশ শ্রীবাস্তবের মতে, ইন্দরের পরিবারের আরও ১৫ জন সদস্যের সম্পত্তিতে অভিযান চালানো হয়েছিল, যা প্রায় এক মাস ধরে চলেছিল। ইন্দর সিংহ, তাঁর স্ত্রী মহিন্দর কৌর, তাঁর চার ছেলে, দুই জামাই এবং পরিবারের আরও ১২ জন সদস্যকে নোটিশ ধরানো হয়।
১৯২০
ইন্দরের স্ত্রী মহিন্দর ছিলেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জগজীবন রামের ছেলে সুরেশ রামের শ্যালিকা। সংবাদসংস্থা সূত্রে খবর ছিল, ইন্দর পারিবারিক অনেক সমস্যাতে জর্জরিত ছিলেন। এ-ও জানা যায় যে, তাঁর পরিবারেরই কোনও সদস্য প্রচুর পরিমাণ সম্পত্তি লুকিয়ে রাখার বিষয়ে খবর দেন আয়কর দফতরে। তবে আয়কর কর্মকর্তারা বরাবরই এ বিষয়ে চুপই ছিলেন।
২০২০
এই ঘটনার উপর ভিত্তি করে ২০১৮ সালে অজয় দেবগণ অভিনীত ‘রেড’ সিনেমাটি মুক্তি পায়। এই সিনেমায় আয়কর দফতরের কর্তার ভূমিকায় অভিনয় করেন অজয়। হানা চালানো হয়, রামেশ্বর সিংহ নামের এক সাংসদের বাড়িতে। রামেশ্বরের ভূমিকায় অভিনয় করেন সৌরভ শুক্ল।