Lashkar e Taiba commander Abu Qatal killed in Pakistan, know all about this wanted terrorist of India dgtl
Pakistan Terrorist Killed
ভূস্বর্গে রক্ত ছড়াতে দু’দশক আগে ভারতে পা, পাকিস্তানের ‘গর্বের’ জঙ্গি নেতা কে এই কাতাল?
২৬/১১-র মুম্বই হামলার মূলচক্রী হাফিজ় সইদের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ হিসাবে পরিচিত লশকর-এ-ত্যায়বার অন্যতম শীর্ষ জঙ্গি নেতা আবু কাতালকে পাকভূমিতেই নিকেশ করল অজ্ঞাতপরিচয় বন্দুকবাজের দল।
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১৬ মার্চ ২০২৫ ১৪:২৭
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৮
বালুচিস্তানে ট্রেন ছিনতাইয়ের ঘা এখনও দগদগে। তার মধ্যেই ফের পাকিস্তানে অজ্ঞাতপরিচয় বন্দুকবাজের হামলা। লশকর-এ-ত্যায়বার অন্যতম জঙ্গিনেতা আবু কাতালকে গুলিতে ঝাঁঝরা করে দেয় তারা। ভারতের জাতীয় তদন্তকারী সংস্থার (ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি বা এনআইএ) খাতায় ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ সন্ত্রাসবাদী হিসাবে নাম ছিল তাঁর। এ-হেন কাতালের মৃত্যু নিয়ে অবশ্য মুখে কুলুপ এঁটেছে ইসলামাবাদ।
০২১৮
এনআইএর দাবি, দীর্ঘ দিন ধরেই পাক সেনার কড়া নিরাপত্তার ঘেরাটোপে ছিলেন লশকরের এই জঙ্গি নেতা। গোয়েন্দাদের চোখে ধূলো দিতে একাধিক নাম ব্যবহার করতেন তিনি। যেমন ফয়সাল নাদিম বা জিয়া-উর-রহমান। জন্মসূত্রে পাক নাগরিক কাতালকে, সিন্ধি পদবি ব্যবহার করতেও দেখা গিয়েছে। তবে তাঁর ছোটবেলা সম্পর্কে তেমন কোনও তথ্য পাওয়া যায় না।
০৩১৮
গোয়েন্দা সূত্রে খবর, ২৬/১১-র মুম্বই হামলার মূলচক্রী হাফিজ় সইদের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ছিলেন কাতাল। ২০০০ সালের পর থেকে দু’জনের মধ্যে হৃদ্যতা বাড়তে শুরু করে। ফলে দ্রুত লশকর কমান্ডারদের তালিকায় নাম ওঠে তাঁর। এনআইএ জানিয়েছে, ২০০২-’০৩ সালে ভূস্বর্গে অনুপ্রবেশ ঘটে কাতালের। প্রথম দিকে মূলত পুঞ্চ এবং রাজৌরিতে সন্ত্রাসের বিষ ছড়ানোর কাজ করতেন তিনি। আর সবটাই হত ‘গুরু’ হাফিজ়ের নির্দেশে।
০৪১৮
২০২৩ সালের জানুয়ারিতে কাশ্মীরের রাজৌরি জেলার ঢাংরি গ্রামে নিরীহ নাগরিকদের উপর জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটে। ঠিক তার পরের দিন ওই এলাকায় আইইডি বিস্ফোরণ হয়। এর জেরে প্রাণ যায় দুই শিশু-সহ মোট সাত জনের। তদন্তে নেমে এনআইএ জানতে পারে, হামলার নেপথ্যে রয়েছে কাতালের হাত। সঙ্গে সঙ্গে তাঁর নামে জারি হয় ওয়ারেন্ট।
০৫১৮
এর পর গত বছরের ৯ জুন কাশ্মীরের রেয়াসি জেলায় হিন্দু তীর্থযাত্রীদের বাসে হামলা চালায় লশকর জঙ্গিরা। নির্বিচারে গুলি চালিয়ে বেশ কয়েক জনকে খুন করে চম্পট দেয় তারা। এ বারও তদন্তে ঘটনার মূলচক্রী হিসাবে উঠে আসে কাতালের নাম। রেয়াসিকাণ্ডে এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে এনআইএ। সেখানে মোট পাঁচ জনের নাম রেখেছেন গোয়েন্দারা। যাঁদের মধ্যে তিন জন লশকর কমান্ডার।
০৬১৮
গোয়েন্দাদের একাংশের অনুমান, ২০২৩ সালে ঢাংরিতে হামলার পর নিয়ন্ত্রণরেখা (লাইন অফ কন্ট্রোল বা এলওসি) পেরিয়ে পাক অধিকৃত কাশ্মীরে (পিওকে) পালিয়ে যান কাতাল। সেখানে লশকরের খুরেতা লঞ্চপ্যাডের অন্যতম কমান্ডার ছিলেন তিনি। এনআইয়ের চার্জশিটে নাম থাকা দুই জঙ্গি নেতা সইফুল্লা ওরফে সাজিদ জাট এবং মহম্মদ কাশেমের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল তাঁর। এঁদের মধ্যে কাতাল এবং সাজিদ পাক নাগরিক বলে জানা গিয়েছে।
০৭১৮
সূত্রের খবর, ২০২৩ সালের পর থেকে পাক অধিকৃত কাশ্মীরে বসেই নানা ভাবে ভূস্বর্গকে রক্তাক্ত করার ছক কষতেন কাতাল। পাক সংবাদমাধ্যমগুলির দাবি, তাঁর কাজকর্মে বেজায় খুশি ছিলেন হাফিজ় সইদ। ফলে খুব দ্রুত ‘চিফ অপারেশনাল কমান্ডার’-এর দায়িত্ব পেয়ে যান তিনি। মূলত জম্মু-কাশ্মীরে জঙ্গি হামলা চালানো, বেছে বেছে তরুণ এবং যুবকদের জঙ্গিদলে নিয়োগ, এমনকি ভারতে জঙ্গি অনুপ্রবেশে মদত দেওয়া ছিল কাতালের মূল কাজ।
০৮১৮
সূত্রের খবর, গত বছরের জুনে রেয়াসিতে বাসে হামলার পর পাকিস্তান ফিরে যান কাতাল। এর পর থেকেই পাক সেনার কড়া নিরাপত্তার ঘেরাটোপে থাকছিলেন তিনি। তবে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ বন্ধ করেননি। ড্রোনের মাধ্যমে ভূস্বর্গে অস্ত্রপাচারে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে ছিলেন তিনি।
০৯১৮
পুঞ্চ এবং রাজৌরিতে থাকাকালীন লশকর জঙ্গিগোষ্ঠীর আড়ালে জম্মু-কাশ্মীরে পিপল্স অ্যান্টি ফ্যাসিস্ট ফোর্স (পাফ) এবং দ্য রেজিসট্যান্স ফোর্স (টিআরএফ) নামে দু’টি সন্ত্রাসবাদী সংগঠন তৈরিতে বড় ভূমিকা নেন কাতাল। এই দুই সংগঠনকে সামনে রেখে লশকর এবং জইশ জঙ্গি জম্মু-কাশ্মীরে আরও সক্রিয় হয়ে ওঠে। ২০১৯ সাল থেকে এই দুই সংগঠন বেশ কয়েকটি হামলার সঙ্গে জড়িত। ২০২৩ সালে পাফ-কে জঙ্গি সংগঠন হিসাবে ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।
১০১৮
চলতি বছরের ১৫ মার্চ পাকিস্তানের পঞ্জাব প্রদেশের ঝিলম জেলায় অজ্ঞাতপরিচয় দুষ্কৃতীরা গুলিতে ঝাঁঝরা করে দেয় তাঁর বুক। পাক সংবাদমাধ্যমগুলির প্রতিবেদন অনুযায়ী, গাড়িতে করে কোথাও যাচ্ছিলেন এই লশকর কমান্ডার। তখনই তাঁর উপর হামলা হয়। গুলিতে আরও এক জনের মৃত্যু হয়েছে। তবে তাঁর পরিচয় এখনও স্পষ্ট নয়।
১১১৮
পাক সংবাদমাধ্যমগুলি জানিয়েছে, পঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন জ়িনাত হোটেলের কাছে অজ্ঞাতপরিচয় দুষ্কৃতীরা কাতালের গাড়িতে চড়াও হয়। ১৫ থেকে ২০ রাউন্ড গুলি চালায় তারা। ফলে লশকরের জঙ্গি নেতা ঘটনাস্থলেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।
১২১৮
ওই ঘটনার পর কাতালের সঙ্গে নিহত দ্বিতীয় ব্যক্তি তাঁরই ‘গুরু’ হাফিজ় সইদ বলে গুজব ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু ২৬/১১-র মূলচক্রী যে অক্ষত রয়েছেন, তা ইতিমধ্যেই স্পষ্ট করেছে পাক গণমাধ্যম। সইদকে লাহৌরের নিরাপদ আশ্রয়ে পাক সেনা লুকিয়ে রেখেছে বলে সূত্র মারফৎ মিলেছে খবর। নিহত দ্বিতীয় ব্যক্তি কাতালের দেহরক্ষী ছিলেন বলে মনে করা হচ্ছে।
১৩১৮
এ বছর মার্চের প্রথম সপ্তাহেই বালোচিস্তানের তুরবতে অজ্ঞাত বন্দুকধারীদের গুলিতে মৃত্যু হয় কট্টরপন্থী ধর্মীয় নেতা মুফতি শাহ মিরের। নমাজ শেষে মসজিদ থেকে বেরিয়ে আসার সময় সশস্ত্র হামলাকারীরা গুলিতে ঝাঁঝরা করে দেয় তাঁর বুক।
১৪১৮
তবে শুধু ধর্মীয় নেতা নন, পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই-এর হয়েও কাজ করতেন মুফতি। ২০১৬ সালের ৩ মার্চ গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে ভারতীয় নৌসেনার প্রাক্তন অফিসার কূলভূষণ যাদবকে গ্রেফতার করে পাক সেনা। ইরান থেকে অপহরণ করে তাঁকে ইসলামাবাদে উড়িয়ে আনা হয়। কুলভূষণকে অপহরণে বড় হাত ছিল মুফতির।
১৫১৮
অভিযোগ, বালুচিস্তানের তুরবাত এলাকার বাসিন্দা মুফতি আইএসআইয়ের নির্দেশে মানব পাচারের ব্যবসা চালাতেন। এর আড়ালে চলত মাদক ও অস্ত্র পাচারও। পাকিস্তানের বিভিন্ন সন্ত্রাসী প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলিতে নিয়মিত যাতায়াত ছিল তাঁর।
১৬১৮
সূত্রের খবর, আইএসআইয়ের নির্দেশে আফগানিস্তান সফর করেন মুফতি। সেখান থেকে বহু তথ্য পাক সেনাবাহিনীকে পাচার করতেন তিনি। বালোচ বিদ্রোহীদের দমনে সক্রিয় ভূমিকা ছিল তাঁর। পাক সন্ত্রাসীদের ভারতে অনুপ্রবেশ করার ক্ষেত্রেও নাকি অগ্রণী ভূমিকা পালন করতেন তিনি।
১৭১৮
মনে করা হয়, মুফতির পাচার করা তথ্যের ভিত্তিতেই সাম্প্রতিক সময়ে বিদ্রোহী দমন করতে কড়া পদক্ষেপ করছে পাকিস্তানের সেনা। সেগুলি এমন পদক্ষেপ ছিল, যা সঠিক তথ্য ছাড়া করা সম্ভব ছিল না।
১৮১৮
মুফতি হত্যার পর নাম না করে ভারত এবং আফগানিস্তানের তালিবান সরকারকে নিশানা করে পাকিস্তানের শাহবাজ় শরিফ সরকার। ঠিক তার এক সপ্তাহের মধ্যে প্রায় একই কায়দায় কাতালের মৃত্যু হওয়ায় ইসলামাবাদ এ ব্যাপারে ফের এক বার সুর চড়াবে বলেই মনে করা হচ্ছে। যদিও গোটা বিশ্ব জানে কী ভাবে সন্ত্রাসের আঁতুড়ঘরে পরিণত হয়েছে গোটা পাকিস্তান।