Karen Jacobsen, the voice behind GPS systems and Siri dgtl
Karen Jacobsen
GPS Girl: প্রায় প্রতি দিনই শোনেন এই মহিলার কণ্ঠস্বর, চেনেন এঁকে?
সিনেমা হল থেকে বিলাসবহুল প্রমোদতরী, সফ্টওয়্যার অ্যাপ্লিকেশন হোক বা অডিয়োবুক— সবের নেপথ্যেই রয়েছেন ক্যারেন জেকবসন।
নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতাশেষ আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ১৬:৫১
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৬
জিপিএসচালিত যন্ত্রে তাঁর মোলায়েম কণ্ঠের নির্দেশেই অনেকে পথ খুঁজে পান। সিনেমা হল থেকে বিলাসবহুল প্রমোদতরী, সফ্টওয়্যার অ্যাপ্লিকেশন হোক বা অডিয়োবুক— সবের নেপথ্যেই রয়েছেন ক্যারেন জেকবসন। অনেকের কাছে যিনি ‘জিপিএস গার্ল’ নামে পরিচিত। এককালে যিনি নিজেও জানতেন না, জিপিএসচালিত যন্ত্রে তাঁর কণ্ঠস্বরই ব্যবহৃত হচ্ছে!
০২১৬
কেবলমাত্র জিপিএসের নেপথ্য কণ্ঠস্বর হয়েই শিরোনামে উঠে আসেননি ক্যারেন। অস্ট্রেলিয়ার একটি অখ্যাত শহর থেকে আমেরিকার গিয়ে হয়ে উঠেছেন খ্যাতনামী গায়িকা, ভয়েসওভার আর্টিস্ট। নিজের বক্তৃতার মাধ্যমে প্রেরণা জুগিয়েছেন বহু জনকে। কী ভাবে সাফল্যের পথে হাঁটা যায়, তা-ও লিখেছেন তাঁর দু’টি বইয়ের পাতায়।
০৩১৬
ছোটবেলা থেকেই অলিভিয়া নিউটন-জনের মতো হতে চেয়েছেন ক্যারেন। অস্ট্রেলিয়ার থেকে হলিউডে পাড়ি দিয়ে যিনি গানে-অভিনয়ে দুনিয়া মাতিয়েছেন। সাত বছর বয়সে টেলিভিশনে অলিভিয়াকে দেখামাত্রই স্থির করেন, তিনিও আমেরিকার যাবেন। অলিভিয়ার মতোই গান বেঁধে পেশাদারি মঞ্চে গাইবেন।
০৪১৬
অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ডের ম্যাকে শহরে বেড়ে উঠেছেন ক্যারেন। এক সময় সেখান থেকে আমেরিকায় পা়ড়ি দেন তিনি। স্বপ্নপূরণের যাত্রায় সঙ্গী বলতে ছিল একটি স্যুটকেস। এবং অবশ্যই মনের কোনায় ছিল সুরের ডালি।
০৫১৬
আমেরিকায় পাড়ি দেওয়ার আগে সঙ্গীতের তালিমও শেষ করেছিলেন ক্যারেন। কুইন্সল্যান্ড কনজাভেটোরিয়াম গ্রিফিথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কণ্ঠস্বর এবং পিয়ানো বাজানোয় স্নাতক ডিগ্রিলাভ। তার পর পিয়ানোয় জ্যাজ বাজানো নিয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যান।
০৬১৬
প্রথাগত শিক্ষার মাঝেই কুইন্সল্যান্ড ইয়ুথ কয়্যার-এর সদস্য হিসাবে পারফর্ম করতেন। সঙ্গীতকেই পেশা হিসাবে বেছে নেওয়ার প্রচেষ্টায় এক সময় নিজের শহর ছেড়ে সিডনিতে বসবাস করতে শুরু করেন। সেখানে ‘বাডি- দ্য বাডি হোলি স্টোরি’-র মতো মিউজিক্যাল থিয়েটারেও দেখা যেত ক্যারেনকে।
০৭১৬
এক সময় অস্ট্রেলিয়ার টেলিভিশনে শোয়ে নিয়মিত মুখ ছিলেন ক্যারেন। ‘গুড মর্নি অস্ট্রেলিয়া’ বা ‘আই ডু আই ডু’-র মতো শোয়ে পারফর্ম করার সময় কয়েকশো বিজ্ঞাপন বা রেডিয়োর অনুষ্ঠান করে ফেলেছেন। তবে পেশাদার গায়িকা হতে হাতছানি দিয়ে ডাকছিল আমেরিকা।
০৮১৬
আমেরিকার জন্মদিনে নিউ ইয়র্কে শহরে গিয়ে উঠেছিলেন তিনি। সালটা ছিল ২০০০। নতুন শহরে কাজের খোঁজও শুরু করেন ক্যারেন। চলত গান লেখা বা রেকর্ডিংও। ধীরে ধীরে ন’টি নিজস্ব গান রেকর্ডিং করিয়ে ফেলেন।
০৯১৬
তবে ২০০২ সালে একটি চাকরির ইন্টারভিউ দিতে গিয়ে ক্যারেনের জীবন আমূল বদলে যায়। কী কাজ? তা স্পষ্ট জানানো হয়নি। তবে ফোনে বলা হয়েছিল, ভয়েসওভার আর্টিস্টের মতো একটানা সংলাপ বলে যেতে হবে। কর্মদাতার আরও শর্ত ছিল, আমেরিকার বসবাসকারী অথচ অস্ট্রেলিয়ার মহিলা হতে হবে। রাজি হয়ে যান ক্যারেন।
১০১৬
প্রায় ৫০ ঘণ্টা ধরে একটি স্টুডিয়োতে চলে রেকর্ডিং। টেক্সট-টু-স্পিচ ভয়েস সিস্টেমের সামনে বসে ক্যারেন একটানা কথা বলে চলেন। কিন্তু, কী কারণে তা বুঝতে পারেন না। তবে তা নিয়ে বিশেষ কথাবার্তা প্রকাশ্যে বলা যাবে না বলেও নির্দেশ ছিল কর্মদাতার। অদ্ভুত লাগলেও তা-ই করেছিলেন ক্যারেন।
১১১৬
সে বছরই জিপিএস প্রযুক্তিতে চালিত যন্ত্রে ক্যারেন কণ্ঠস্বরকে বেছে নেয় বেশ কয়েকটি বহুজাতিক সংস্থা। আমেরিকার সংবাদমাধ্যমে তাঁর নাম হয়ে যায় ‘ড্যাশবোর্ড ডিভা’ বা ‘গ্যাজেট গার্ল’।
১২১৬
ওই চাকরির ইন্টারভিউয়ের পর দীর্ঘকাল কেটে গিয়েছে। আচমকাই এক পরিচিত ক্যারেনকে বলেন, ‘‘জিপিএস ডিভাইসে তোমার কণ্ঠস্বর শোনা যাচ্ছে।’’ তখনই সে দিনের রহস্যজনক ইন্টারভিউয়ের মর্মোদ্ধার করতে পেরেছিলেন ক্যারেন।
১৩১৬
তত দিনে অবশ্য আমেরিকায় নিজের জমি পাকা করে নিয়েছেন তিনি। কোটি কোটি জিপিএসচালিত যন্ত্রের আড়ালে ক্যারেনের কণ্ঠস্বর শোনা গেলেও পারফর্ম করে ফেলেছেন নোরা জোনস বা নিল সেকাডা, সিন্ডি লপার, ডেবরা কক্স বা র্যাচেল সেজের মতো খ্যাতনামী শিল্পীদের সঙ্গে। অ্যান্ডি জুলা, ডেভিড জিপেল, সিন ও’বয়েল বা অ্যামি পাওয়ার্সের মতো তারকাদের সঙ্গে মিলে কাজ করে ফেলেছেন। ‘ডসন’স ক্রিক’-এর মতো জনপ্রিয় টেলি-সিরিজেও গান গেয়ে নিয়েছেন ক্যারেন।
১৪১৬
গায়িকা হওয়ার স্বপ্নপূরণেও থেমে থাকেননি। টেডএক্স-এর মঞ্চে উঠে অনুপ্রেরণার বার্তা দিয়েছেন ক্যারেন। নিজের জনপ্রিয়তাকে একটি ব্র্যান্ডনেম-এ পরিণত করেছেন। ‘দ্য জিপিএস গার্ল’-এর নামে স্বত্বও কিনে নিয়েছেন ক্যারেন। জিপিএস ছাড়াও অ্যাপল-এর মোবাইল বা যন্ত্রেও ‘সিরি’-র কণ্ঠও তাঁর।
১৫১৬
এরই ফাঁকে ক্যারেনের কাছে অন্য সুযোগও এসেছে। ম্যাডিসন স্কোয়্যার গার্ডেনের মতো বড়সড় একাধির স্টেডিয়ামে খেলার সময় জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনা করতে হবে তাঁকে। তাতেও রাজি ক্যারেন।
১৬১৬
নিজের জীবনের সাফল্যের কাহিনি অন্যদের সঙ্গে ভাগ করে নিতে দু’টি বই লিখেছেন ক্যারেন। ‘দ্য জিপিএস গার্ল’স রোড ম্যাপ ফর ইয়োর ফিউচার’ এবং ‘রিক্যালকুলেট-ডিরেকশনস ফর ড্রাইভিং পারফরম্যান্স সাকসেস’। এ দু’টিতেই সফল হওয়ার পথ দেখিয়েছেন ক্যারেন।