Kaleem Ullah Khan: Mango man of India has breed 300 different mango in hundred year old tree and named them after renowned persons dgtl
Mango
Kaleem Ullah Khan: একটি গাছে ৩০০ প্রজাতির আম! পাশাপাশি ‘মোদী’, ‘সনিয়া’ ফলিয়ে তাক লাগালেন কলিমউল্লাহ
ছোটবেলায় স্কুলছুট হন কলিমউল্লাহ। তবে কলম চাষ করে বিভিন্ন আম গাছের মিশ্রণে কী করে নতুন জাতের উৎপাদন করা যায় তা নিয়ে পরীক্ষা চালানো শুরু করেন।
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২১ জুলাই ২০২২ ১১:৫৫
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২০
প্রতি দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে প্রার্থনা করেন কলিমউল্লাহ খান। প্রার্থনা সেরে প্রায় দেড় কিমি দূরে পাড়ি দেন অশীতিপর বৃদ্ধ। সেখানেই রয়েছে তাঁর ‘প্রাণভোমরা’। একটি ১২০ বছরের আম গাছ।
০২২০
শত বসন্ত পার করা এই আম গাছটিকে প্রাণ দিয়ে আগলে রেখেছেন কলিমউল্লাহ। শুধু তাই নয়, এই গাছে বছরের পর বছর ধরে প্রায় ৩০০টি আলাদা আলাদা প্রজাতির আম উৎপাদন করেছেন তিনি।
০৩২০
প্রিয় আম গাছের কাছে পৌঁছে ঝাপসা চোখে গাছটিকে রোজ ভাল করে পর্যবেক্ষণ করেন কলিমউল্লাহ। পাতাগুলিকে আদর করার পর আম পেকেছে কি না, তা দেখার জন্য তাঁর চোখ তীক্ষ্ণ হয়ে ওঠে। আম পেকেছে দেখলে সেই চোখ হয়ে যায় আরও উজ্জ্বল।
০৪২০
উত্তরপ্রদেশের মলিহাবাদে নিজের বাগানে বসেই ৮২ বছর বয়সি বৃদ্ধ কলিমউল্লাহ এক সংবাদ মাধ্যমকে জানান, ‘‘কয়েক দশক ধরে প্রখর রোদে দাঁড়িয়ে কঠোর পরিশ্রম করার পুরস্কার এই গাছের ভিন্ন ভিন্ন জাতের আম।’’
০৫২০
তিনি আরও বলেন, ‘‘খালি চোখে দেখলে মনে হবে এটি একটিমাত্র গাছ। কিন্তু কেউ যদি মনের দরজা খুলে দেখেন তা হলে বুঝতে পারবেন এটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় আমের প্রতিষ্ঠান।’’
০৬২০
কৈশোরেই স্কুলছুট হন কলিমউল্লাহ। তবে কলম চাষ করে আলাদা আলাদা আম গাছের মিশ্রণে কী করে নতুন নতুন জাতের আমের উৎপাদন করা যায়, তা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাতে শুরু করেন।
০৭২০
সাতটি নতুন জাতের আম উৎপাদনের জন্য একটি গাছের যত্ন নেওয়া শুরু করেন কলিমউল্লাহ। কিন্তু সেই গাছ ঝড়ে পড়ে যায়।
০৮২০
১৯৮৯ সালে এই বহু পুরনো গাছের খোঁজ পান কলিম। পরীক্ষা করে বুঝতে পারেন এই গাছ আলাদা আলাদা জাতের আম উৎপাদন করতে সক্ষম।
০৯২০
এর পর থেকে এই গাছে প্রায় ৩০০ ভিন্ন প্রজাতির আম উৎপাদন করেছেন কলিম। প্রত্যেকটির স্বাদ, গঠন, রং, আকার আলাদা।
১০২০
বলিউড তারকা ঐশ্বর্য রাই বচ্চনের নামানুসারে কলিমউল্লাহ একটি আমের নাম দিয়েছিলেন ‘ঐশ্বর্য’। তাঁর দাবি, এই আমই ছিল তাঁর জীবনের সর্বোৎকৃষ্ট সৃষ্টি।
১১২০
কলিমউল্লাহের মতে, ‘‘এই আম অভিনেত্রীর মতোই সুন্দর। এক একটি আমের ওজন প্রায় এক কেজি। এই আমগুলির বাইরের ত্বকে লাল রঙের আভা রয়েছে। এই আম খুবই সুস্বাদু এবং মিষ্টি।’’
১২২০
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং সচিন তেন্ডুলকারের নামেও আমের নাম রেখেছেন কলিমউল্লাহ। তালিকায় রয়েছেন সনিয়া গাঁধী, অমিত শাহ এবং অখিলেশ যাদবের নামও। তিনি জানান, মানুষ নশ্বর। কিন্তু আম চিরকালীন। মানুষ যখনই ‘সচিন’ আম খাবে, তখনই তাঁরা ক্রিকেটার সচিনকে মনে করবেন।
১৩২০
দ্বিস্তর শাঁসযুক্ত ‘আনারকালি’ আম-ও উৎপাদন করেছেন কলিমউল্লাহ। সেই আমের দু’টি স্তরের স্বাদ এবং গন্ধ আলাদা।
১৪২০
ন’মিটার উচ্চতার এই আম গাছটির পুরু শাখাগুলিতে থাকা ঘন পাতা গরমকালে মনোরম ছায়া দেয়। গাছের পাতাগুলিও ভিন্ন ভিন্ন ধরনের। কোনও কোনওটা হলুদাভ, তো কোনও কোনও পাতা গাঢ় সবুজ রঙের।
১৫২০
কলিমউল্লাহ জানান, আলাদা আলাদা জাতের আম মিশিয়ে সংকর আম তৈরির প্রক্রিয়া খুবই জটিল। খুব মনোযোগ দিয়ে একটি নির্দিষ্ট জাতের আম গাছের শাখাকে মূল গাছ থেকে কেটে নেওয়া হয়। পরে অন্য একটি জাতের শাখাকে ওই শাখার সঙ্গে জুড়ে টেপ দিয়ে আটকে রাখা হয়।
১৬২০
দুই শাখার সংযোগস্থল শক্ত হয়ে গেলে ওই টেপ সরিয়ে নিতে হয়। পরে সেই দুই শাখা থেকে নতুন ডালপালা গজিয়ে নতুন জাতের আমের জন্ম দেয়।
১৭২০
কলিমউল্লাহ গর্বের সঙ্গে দাবি করেছেন, তিনি চাইলে মরুভূমিতেও আম চাষ করতে পারবেন। তবে তিনি যেখানে আম চাষ করেন সেই জায়গা থেকে ভারতের সব থেকে বেশি আমের উৎপাদন হয়।
১৮২০
মলিহাবাদে প্রায় ৩০ হাজার হেক্টরেরও বেশি জায়গা জুড়ে আমের বাগান রয়েছে। ভারতের মোট আমের উৎপাদনের প্রায় ২৫ শতাংশ এখান থেকেই হয়।
১৯২০
তবে জলবায়ুর পরিবর্তন নিয়েও যথেষ্ট উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন কলিমউল্লাহ। তাঁর দাবি, বছরের পর বছর ধরে জলবায়ুর পরিবর্তনের জন্য আম উৎপাদনের উপর যথেষ্ট প্রভাব পড়েছে। আমের উৎপাদন কমেছে বলেও তিনি দাবি করেছেন।
২০২০
উদ্যান চাষে অনবদ্য অবদানের জন্য ভারত সরকার কলিমউল্লাহকে ২০০৮ সালে দেশের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মান ‘পদ্মশ্রী’ প্রদান করে।