Javed Iqbal: the notorious criminal of Pakistan dgtl
Javed Iqbal
বহু নাবালককে যৌন নির্যাতন করে খুন, প্রমাণ লোপাট করতে অ্যাসিডে ডোবানো হত দেহ!
জাভেদের জন্ম ১৯৫৬ সালে। এক মুসলিম মুঘল পরিবারে। জাভেদের বাবা-মার আট সন্তানের মধ্যে তিনি ছিলেন ষষ্ঠ। জাভেদের বাবা এক জন ব্যবসায়ী ছিলেন।
সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লিশেষ আপডেট: ২৪ মার্চ ২০২৩ ১০:২৮
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২০
জাভেদ ইকবাল। পাকিস্তানের জঘন্যতম অপরাধীদের তালিকায় তাঁর নাম রয়েছে উপরের দিকে। গ্রেফতার হওয়ার পর ৬ থেকে ১৬ বছর বয়সি শতাধিক নাবালককে যৌন নির্যাতন করে খুন করার কথা স্বীকার করেছিলেন জাভেদ।
০২২০
অভিযোগ উঠেছিল, নাবালকদের যৌন নির্যাতনের পর তাদের শ্বাসরোধ করে খুন করতেন জাভেদ। প্রমাণ লোপাট করতে তাদের দেহ টুকরো টুকরো করে ঢুবিয়ে দিতেন অ্যাসিডে।
০৩২০
দোষী প্রমাণিত হওয়ার পর জাভেদকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। তাঁকেও তাঁরই পন্থাতে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার দাবিও উঠেছিল। তবে কোনও সাজা কার্যকর হওয়ার আগেই জেল হেফাজতে ‘আত্মহত্যা’ করেন ইকবাল। তাঁর মৃত্যু নিয়েও তৈরি হয়েছিল একাধিক বিতর্ক।
০৪২০
জাভেদের জন্ম ১৯৫৬ সালে। এক মুঘল মুসলিম পরিবারে। জাভেদের বাবা-মায়ের আট সন্তানের মধ্যে তিনি ছিলেন ষষ্ঠ। জাভেদের বাবা এক জন ব্যবসায়ী ছিলেন।
০৫২০
লাহোরের ইসলামিয়া কলেজ থেকে তিনি পড়াশোনা শেষ করেন। ১৯৭৮ সালে পড়াশোনা করতে করতেই তিনি স্টিলের ব্যবসা শুরু করেছিলেন।
০৬২০
পড়াশোনা শেষ করে পুরোপুরি ব্যবসায় ঢোকার পর জাভেদ শাদবাগের একটি বাড়িতে থাকতেন। জাভেদের বাবা তাঁকে এই বাড়ি কিনে দিয়েছিলেন।
০৭২০
১৯৯৯ সালের ডিসেম্বরে লাহোরের পুলিশ এবং একটি সংবাদপত্রের প্রধান সম্পাদকের কাছে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছিল। পাঠিয়েছিলেন জাভেদ সেই চিঠি হাতে পেয়ে স্তম্ভিত হয়ে যায় পুলিশ এবং ওই সংবাদপত্রের প্রধান সম্পাদক।
০৮২০
সেই চিঠিতে ১০০ নাবালককে যৌন নির্যাতন করে খুনের কথা স্বীকার করেছিলেন জাভেদ। এ-ও স্বীকার করেন, তিনি যে নাবালকদের নির্যাতন করেছিলেন, তাদের সকলের বয়স ৬ থেকে ১৬-র মধ্যে ছিল।
০৯২০
চিঠিতে জাভেদ দাবি করেছিলেন, তিনি যাদের খুন করেছেন তাদের বেশির ভাগই বাড়ি থেকে পালিয়ে আসা এবং লাহোরের রাস্তায় বসবাসকারী অনাথ নাবালক। সেই নাবালকদের খুনের পর মৃতদেহগুলি হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিডে পুড়িয়ে বাকি দেহাবশেষ স্থানীয় নদীতে ফেলে দেওয়ার কথাও স্বীকার করেন জাভেদ।
১০২০
চিঠি পেয়েই জাভেদের বাড়িতে হানা দেয় পুলিশ। কিন্তু জাভেদ পুলিশ আসার আগেই পালিয়ে যান। জাভেদের বাড়ির ভিতরে পুলিশ এবং সাংবাদিকরা দেওয়াল এবং মেঝেতে রক্তের দাগ দেখতে পায়। সেই অস্ত্রও উদ্ধার হয় যা দিয়ে জাভেদ তার ‘শিকার’দের খুন করতেন।
১১২০
প্লাস্টিকের ব্যাগে এবং কিছু ডায়েরিতে জাভেদের হাতে খুন হওয়া অনেক নাবালকের ছবি উদ্ধার করে পুলিশ। মানব দেহাবশেষ-সহ দু’টি অ্যাসিডের ট্যাঙ্কও পুলিশের নজরে আসে। বেশ কয়েকটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছিল, কর্তৃপক্ষের হাতে প্রমাণ তুলে দিতেই ইচ্ছা করে সব প্রমাণ প্রকাশ্যে রাখা হয়েছিল।
১২২০
এর পরই জাভেদকে ধরতে পাকিস্তানের ইতিহাসে অন্যতম বড় পুলিশি অভিযান শুরু হয়। এর মধ্যেই ১৯৯৯ সালের ৩০ ডিসেম্বর এক সংবাদমাধ্যমের অফিসে গিয়ে দেখা করেন জাভেদ।
১৩২০
এর প্রায় এক মাস পর তিনি পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন। তাঁর দাবি ছিল, তিনি সংবাদপত্রের কাছে প্রথম আত্মসমর্পণ করেছিলেন, কারণ তিনি ভেবেছিলেন পুলিশ তাঁকে প্রথম ধরলে মেরে ফেলবে।
১৪২০
জাভেদের পর তাঁর কয়েক জন সহযোগীকেও গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতারির পর পুলিশকে ইকবাল জানান, ১০০ নাবালককে খুনের পিছনে তাঁর বিশেষ এক উদ্দেশ্য ছিল।
১৫২০
জাভেদ পুলিশকে জানান, নব্বইয়ের দশকে তাঁর বিরুদ্ধে নিখোঁজ এক নাবালকের উপর যৌন নির্যাতনের অভিযোগ আনে লাহোর পুলিশ। তবে শেষ পর্যন্ত সেই অপরাধ প্রমাণ হয়নি। কিন্তু জাভেদের মা ছেলের গ্রেফতারির ধাক্কা সহ্য করতে পারেননি। হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান তিনি।
১৬২০
এর পরই জাভেদ নাকি প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, ১০০ জন মায়ের কোল উজাড় করে তাঁদের কাঁদতে বাধ্য করবেন তিনি। আর সেই কারণেই তিনি এই ১০০ নাবালককে অত্যাচার করে খুন করেন বলে জাভেদ দাবি করেন।
১৭২০
আদালতে জাভেদকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। আদালতের তরফে সাজা ঘোষণা করার সময় বলা হয়, ‘‘যে বাবা-মায়ের সন্তানদের তুমি হত্যা করেছিলে, তাদের সামনেই তোমাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হবে। তার পর তোমার শরীরকে ১০০ টুকরো করে অ্যাসিডে ছুড়ে ফেলা হবে। ঠিক যে ভাবে তুমি ওই নাবালকদের হত্যা করেছিলে।’’
১৮২০
যদিও এই শাস্তি অনুমোদন পায়নি। বিচারাধীন অবস্থাতেই ২০০১ সালের ৯ অক্টোবর জাভেদ এবং তাঁর সহযোগী সাজিদ আহমদকে কোট লাখপত কারাগারে নিজ নিজ কক্ষে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।
১৯২০
বিতর্ক তৈরি হয়েছিল যে, কারাগারেই খুন করা হয়েছে জাভেদ এবং তাঁর সহযোগীকে। যদিও কারা কর্তৃপক্ষ জানান, আত্মহত্যা করেছেন জাভেদ এবং তাঁর সহযোগী। জাভেদের মৃত্যুর পর তাঁর মৃতদেহ নিতে কেউ আসেননি।
২০২০
২০২২ সালের ২৪ জানুয়ারি পাকিস্তানে ‘জাভেদ ইকবাল: দ্য আনটোল্ড স্টোরি অফ এ সিরিয়াল কিলার’ নামে একটি ছবি মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মুক্তির এক দিন আগে সেই সিনেমার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। জাভেদের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন পাক অভিনেতা ইয়াসির হুসেন। ছবিটি পরিচালনা করেন আবু আলেহা।