Iran 1st Supreme Leader Ruhollah Khomeini India connection know the details dgtl
Ruhollah Khomeini
ভারতের সঙ্গে নাড়ির যোগ! পারস্য উপসাগরের তীরে কী ভাবে পৌঁছলেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা খোমেইনি?
ইজ়রায়েলের সঙ্গে সংঘাতের আবহে খবরের শিরোনামে চলে এসেছেন ইরানের প্রথম সর্বোচ্চ নেতা রুহোল্লা খোমেইনি। ভারতের সঙ্গে নাড়ির যোগ রয়েছে তাঁর।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতাশেষ আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০২৪ ০৮:০৩
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২০
পশ্চিম এশিয়ায় ঘনাচ্ছে যুদ্ধের কালো মেঘ। যে কোনও মুহূর্তে সম্মুখসমরে নেমে পড়তে পারে ইরান-ইজ়রায়েল। চলছে হুমকি ও পাল্টা হুঁশিয়ারির পালা। সেই আগুনে ঘি দিয়েছেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতোল্লা আলি খোমেইনি। ইহুদি ভূমি ইজ়রায়েলকে শত্রু দেশ বলে উল্লেখ করে তার অস্তিত্ব বিলোপের ডাক দিয়েছেন তিনি।
০২২০
তেল আভিভ ও তেহরানের মধ্যে এই সাপে-নেউলে সম্পর্ক যে গোড়া থেকে ছিল, এমনটা নয়। একটা সময়ে শিয়া মুলুকটিতে বন্ধু রাষ্ট্র বলেই ভাবতেন ইহুদিরা। সেখানে পশ্চিমি সভ্যতার প্রভাব ছিল মারাত্মক। ফলে ইউরোপীয়দের মতোই জীবনযাপন করতেন ইরানিরা।
০৩২০
১৯৭৯ সালের আগে পর্যন্ত শিয়া মুলুকটিতে এই ছবি দেখা গিয়েছে। তখন ইরানের সমুদ্রসৈকতে বিকিনি পরিহিতাদের ঘোরাঘুরি করতে দেখা যেত। পানশালা, পাব ও নাইট ক্লাবে গভীর রাত পর্যন্ত বসত আসর। পশ্চিমি সংস্কৃতির বড় সমর্থক ছিলেন তৎকালীন শাসক তথা ইরানি রাজ পরিবার।
০৪২০
কিন্তু, ১৯৭৮-৭৯ সালের ইরানি বিপ্লবের পর পরিস্থিতি পুরোপুরি বদলে যায়। এই বিপ্লবের ফলে ১৯৭৯ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ইরানি রাজতন্ত্রের পতন ঘটে। রাতারাতি শিয়া কট্টরপন্থী ধর্মীয় একটি দেশে পরিণত হয় পারস্য উপসাগরের কোলের এই রাষ্ট্র।
০৫২০
ইরানের এই ইসলামীয় বিপ্লবের জনক ছিলেন রুহোল্লা মুসাভি খোমেইনি। বিপ্লবের পর তিনিই ছিলেন দেশটির সর্বোচ্চ নেতা। যাঁর সঙ্গে ভারতের বা আরও স্পষ্ট করে বলতে গেলে উত্তরপ্রদেশের বরাবাকি এলাকার রয়েছে আত্মার সম্পর্ক।
০৬২০
রুহোল্লা খোমেইনির দাদু সৈয়দ আহমদ মুসাভি হিন্দির জন্ম হয় লখনউ থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে বরাবাকির ছোট্ট গ্রাম কিন্টুরে। সালটি ছিল ১৮০০। যৌবনে পা দেওয়ার পর (১৮৩০ সাল) সেখান থেকেই ইরানে যান তিনি। ভারত থেকেই শিয়া ইসলামের যাবতীয় আধ্যাত্মিকতা সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন সৈয়দ আহমদ।
০৭২০
খোমেইনির দাদু মুসাভি আজীবন তাঁর পদবিতে ‘হিন্দি’ শব্দটি ব্যবহার করে গিয়েছেন। ভারতের সঙ্গে নাড়ির টান বোঝাতে পদবিতে এটি ব্যবহার করতেন তিনি। তাঁর বাবা দিন আলি শাহ মধ্য ইরান থেকেই উত্তরপ্রদেশে এসেছিলেন। আঠারো শতকে ভারতভূমিতে পা রাখেন তিনি। তখন দেশের শাসন ব্যবস্থা ধীরে ধীরে কব্জা করতে শুরু করেছে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি।
০৮২০
৩০ বছরের মধ্যেই শিয়া ধর্মগুরু হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেন খোমেইনির দাদু। ইসলামের পুনরুজ্জীবনে বিশ্বাস করতেন তিনি। ইরাকের নজাফ এলাকার আলির সমাধিস্থল চাক্ষুষ করতে ভারত ছাড়েন তিনি। মূলত ইসলামীয় তীর্থযাত্রী হিসাবে পশ্চিম এশিয়ায় পাড়ি জমান আহমদ হিন্দি। ইরাক থেকে ইরানে গিয়ে থিতু হন এই শিয়া ধর্মগুরু। আঠারো শতকে যাকে পারস্য দেশ হিসাবেই চিনত গোটা বিশ্ব।
০৯২০
ভারত ত্যাগের প্রায় চার বছরের মাথায় ইরানে যান আহমদ হিন্দি। সেখানকার খোমেন এলাকায় একটি বাড়ি কিনে থাকতে শুরু করেছিলেন তিনি। তিন স্ত্রী ও পাঁচ সন্তান ছিল তাঁর। সাংবাদিক বাকেরের লেখা বই অনুযায়ী, ১৯০২ সালে তাঁর নাতি রুহোল্লা খোমেইনির জন্ম হয়। যাঁর বাবা ছিলেন মোস্তাফা।
১০২০
খোমেইনির জন্মের আগেই ইহলোক ছা়ড়েন তাঁর দাদু আহমদ হিন্দি। সালটা ছিল ১৮৬৯। কিন্তু তত দিনে পরিবারের সমস্ত সদস্যের মধ্যে শিয়া আধ্যাত্মিকতা ছড়িয়ে দিতে পেরেছিলেন তিনি। যার শিক্ষা থেকে খোমেইনিও বঞ্চিত হননি। ছোটবেলায় অবশ্য ধর্মীয় শিক্ষাই নিয়েছিলেন তিনি।
১১২০
রুহোল্লা খোমেইনির জীবনীকার হামিদ আলগারের দাবি, বেশ কিছু গজ়ল ও কবিতা লিখেছিলেন ইরানের এই সর্বোচ্চ নেতা। সেখানেও ‘হিন্দ’ উপাধি ব্যবহার করেছিলেন তিনি। এটা ভারতের প্রতি ভালবাসা থেকে কিনা, তা অবশ্য বইতে উল্লেখ করেননি আলগার।
১২২০
মাত্র পাঁচ বছর বয়সে বাবাকে হারান খোমেইনি। স্থানীয় এক জমিদারের নির্দেশে মোস্তাফাকে হত্যা করা হয়। এই ঘটনা তাঁর জীবনে গভীর প্রভাব ফেলেছিল। এর পর থেকে আরও বেশি করে শিয়া ইসলামীয় আধ্যাত্মিকতা ও কট্টরপন্থার দিকে আকৃষ্ট হন রুহোল্লা। ফলে খুব অল্প দিনের মধ্যেই ধর্মগুরু হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন তিনি।
১৩২০
শিয়া ধর্মগুরু হিসাবে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার পর ধীরে ধীরে রাজনীতিতে হাত পাকাতে শুরু করেন খোমেইনি। ওই সময়ে পশ্চিমি আধুনিকতায় গোটা দেশকে সাজিয়ে তুলতে চাইছিলেন ইরানের শাসক শাহ মহম্মদ রেজা পাহলভি। যার দু’রকমের প্রভাব দেখা গিয়েছিল।
১৪২০
ইরানি শাহের (পড়ুন রাজা) এই আধুনিকীকরণ শহরাঞ্চলে দারুণ ভাবে গৃহীত হয়েছিল। কিন্তু পারস্য উপসাগরের কোলের দেশটির গ্রামের বাসিন্দারা তা একেবারেই মেনে নিতে পারেননি। ফলে সেখানে দানা বাঁধতে শুরু করে বিক্ষোভ। যাতে হাওয়া দেন কট্টর শিয়া ধর্মগুরু খোমেইনি।
১৫২০
১৯২০-র দশকে ইরানে ক্ষমতায় আসে পাহলভি রাজবংশ। যার শাহ, মহম্মদ রেজাকে আমেরিকার হাতের পুতুল বলে মনে করতেন আম ইরানিদের একটা বড় অংশ। তাঁর ধর্মনিরপেক্ষ নীতি তাঁদের কাছে ছিল বড় বেশি উদ্বেগের।
১৬২০
১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হতে না হতেই আমেরিকা ও রাশিয়ার মধ্যে বেধে যায় ঠান্ডা লড়াই। সেই সময়ে পশ্চিম এশিয়ায় প্রভাব বাড়াতে ইরানে পশ্চিমি আধুনিকীকরণকে প্রবল ভাবে হাওয়া দিতে শুরু করে ওয়াশিংটন। যাকে সন্দেহের চোখে দেখেছিলেন খোমেইনি-সহ অন্য ধর্মগুরুরা।
১৭২০
১৯৬০ এবং ১৯৭০ দশকে নানা অস্থিরতার মধ্যে দিয়ে এগিয়েছিল ইরানের রাজনীতি। এই সময়ে শাহের শাসনের বিরুদ্ধে বার বার রাস্তায় নেমে ছাত্র সমাজ, বিদ্বজ্জন ও ধর্মগুরুদের গলা ফাটাতে দেখা গিয়েছিল। এর মধ্যে রাজতন্ত্রের সবচেয়ে বড় সমালোচক ছিলেন খোমেইনি।
১৮২০
এই পরিস্থিতিতে খোমেইনিকে গ্রেফতার করে জেলবন্দি করে শাহ প্রশাসন। যদিও তাঁকে চুপ করানো যায়নি। উল্টে প্রবাসী ইরানিদের সমর্থন আদায় করতে সক্ষম হন তিনি। শেষ পর্যন্ত পারস্য উপসাগরের তীরের দেশটিতে রাজতন্ত্রের অবসান ঘটে।
১৯২০
শাহর শাসন শেষ হওয়ার পর রুহোল্লা খোমেইনি হন দেশটির সর্বোচ্চ নেতা। পরবর্তী কালে তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন আয়াতোল্লা। যিনি ইরানে কট্টরপন্থাকে আরও বাড়িয়েছেন বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ।
২০২০
দেশের সর্বোচ্চ নেতার এই ভারতে যোগের বিষয়টি অবশ্য বর্তমানের যুদ্ধ পরিস্থিতিতে ভোলেনি ইরান। সম্প্রতি এই ইস্যুতে মুখ খোলেন সেখানকার রাষ্ট্রদূত। তিনি বলেন, ‘‘ইজ়রায়েলের সঙ্গে নয়াদিল্লির সম্পর্ক খুবই ভাল। আর তাই দুই দেশের মধ্যে সংঘাত বন্ধ করতে মধ্যস্থতার ভূমিকা পালন করতে পারে ভারত।’’ যা নিয়ে নরেন্দ্র মোদী সরকারের থেকে এখনও কোনও প্রতিক্রিয়া মেনেনি।