India Pakistan T 20 World Cup match 3 major controversies dgtl
T 20 World Cup
শাকিবের আউট, কোহলির ‘ভুয়ো’ ফিল্ডিং... বিতর্কিত সিদ্ধান্ত কতটা বদলে দিল বিশ্বকাপের ভাগ্য
কখনও শাকিবকে এলবিডব্লু দেওয়া আবার কখনও পাঁচ বলে ওভার, বিতর্ক পিছু ছাড়ার নাম নেই। বিশ্বকাপে এখনও পর্যন্ত ঘটা বিতর্কের খানাতল্লাশি করল আনন্দবাজার অনলাইন।
সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লিশেষ আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০২২ ১২:৪৬
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৮
বিশ্বকাপ বলে কথা, বিতর্ক হবে না তা কি হয়! কখনও শাকিবের বিতর্কিত এলবিডব্লু, আবার কখনও কোহলির ‘ভুয়ো’ ফিল্ডিং— অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে টি-২০ বিশ্বকাপ যেন বিতর্কেরও বিশ্বকাপ। কিন্তু বিতর্কিত সিদ্ধান্তগুলোর কোনটা ছিল ঠিক আর কোনটা ভুল? ময়নাতদন্তে দেখে নেওয়া যাক ছয় বিতর্কের অন্দরের সত্য।
ছবি: এএফপি,আইসিসি, পিটিআই
০২১৮
বিশ্বকাপে এ যাবৎ যত ম্যাচ হয়েছে, মেলবোর্নে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে রবিবাসরীয় মোকাবিলা সবাইকে ছাপিয়ে গিয়েছে। দর্শক সংখ্যার দিক থেকে তো বটেই, খেলার মান থেকে শুরু করে বিতর্ক— সবেতেই দশে বারো পেয়ে বাকি সবাইকে বহু পিছনে ছেড়েছে দুই প্রতিবেশীর লড়াই। যদিও ক্রমতালিকায় এক নম্বরে থাকবে সাম্প্রতিকতম বিতর্ক, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে শাকিব কি আদৌ আউট ছিলেন?
ছবি: এএফপি,আইসিসি, পিটিআই
০৩১৮
মহাগুরুত্বপূর্ণ পাকিস্তান-বাংলাদেশ ম্যাচ। অ্যাডিলেড ওভালে রবিবার পাকিস্তানের শাদাব খানের ধীর গতির ফুলটস শাকিবের ব্যাটে লাগার পর পায়ে লাগে। শাদাব এলবিডব্লিউয়ের আবেদন করার পর মাঠের আম্পায়ার আউট দিয়ে দেন। শাকিব সঙ্গে সঙ্গে ডিআরএস নেন।
ছবি: এএফপি,আইসিসি, পিটিআই
০৪১৮
ডিআরএসে মনে হচ্ছিল বল আগে ব্যাটে লেগেছে। কিন্তু তৃতীয় আম্পায়ার বলে দেন, ব্যাটের সঙ্গে বলের কোনও যোগাযোগ হয়নি। স্নিকোমিটারে যা ধরা পড়েছে তা ব্যাটের মাটিতে আঘাতের শব্দ। বল সরাসরি শাকিবের পায়ে লেগেছে। তিনিও আউট দেন শাকিবকে। মাথা নাড়তে নাড়তে মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে যান শাকিব। তিনি থাকলে বদলে যেতেই পারত বাংলাদেশের স্কোর।
ছবি: এএফপি,আইসিসি, পিটিআই
০৫১৮
ভারত-পাক ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধ পুরোটাই বিরাট কোহলির। সেই ইনিংস চলাকালীনই ঘটে যায় তিন-তিনটি বড় ঘটনা যেগুলি কোহলির মহাকাব্যিক ইনিংসকেও প্রায় চাপা দিয়েছিল। সেই মুহূর্তে গৃহীত সিদ্ধান্ত কতটা সঠিক ছিল, তা দেখে নেওয়া যাক।
ছবি: এএফপি,আইসিসি, পিটিআই
০৬১৮
জিততে হলে তখন ভারতের দরকার ছিল ১৩ রান। হাতে মাত্র ৩ বল। বল করছেন পাকিস্তানের মহম্মদ নওয়াজ। ব্যাট হাতে কোহলি। পরিস্থিতির হিসাবে ওভারের প্রথম ৩টি বল ভালই করেছেন নওয়াজ। কী হয়, কী হয় আবহে কোহলিকে লক্ষ্য করে একটি উঁচু ফুলটস করেন নওয়াজ। কোহলি সোজা তা উড়িয়ে দেন স্কোয়ার লেগের উপর দিয়ে।
ছবি: এএফপি,আইসিসি, পিটিআই
০৭১৮
বাউন্ডারি লাইনে লাফিয়েও বলের নাগাল পাননি ফিল্ডার। ছক্কা! নাটকের শুরু তার পরেই। বলের উচ্চতা ছিল কোমরের উপরে, এই দাবি করে আম্পায়ারের দিকে কিছু ইঙ্গিত করেন কোহলি। কিন্তু লেগ আম্পায়ার মারাইস ইরাসমাস নো বল দেননি।
ছবি: এএফপি,আইসিসি, পিটিআই
০৮১৮
কোহলির আপত্তির পর দুই আম্পায়ার নিজেদের মধ্যে শলাপরামর্শ করেন। তার পর বলটিকে নো ডাকেন। এতে হতচকিত হয়ে পড়েন বাবর আজ়মরা। আম্পায়ারকে তাঁরা বলতে থাকেন, কোহলি যখন নো ডাকতে বললেন, তখনই আপনারা নো বল দিলেন! কিন্তু আম্পায়াররা পাকিস্তানের খেলোয়াড়দের কথা মানেননি।
ছবি: এএফপি,আইসিসি, পিটিআই
০৯১৮
ভারতের লক্ষ্য কমে এসে দাঁড়ায় ৩ বলে ৬ রান। কিন্তু এ ক্ষেত্রে নিয়ম কী বলছে? এ বিষয়ে আইসিসির নির্দেশিকা কী? আসুন, দেখে নেওয়া যাক। ক্রিকেট আইনের বইয়ের ৪১ ধারার ৭-এর ১ উপধারা অনুযায়ী, যে কোনও বল যদি পিচে না পড়ে সোজা ব্যাটারের কাছে গিয়ে পৌঁছয় এবং ব্যাটার যদি ‘পপিং ক্রিজে’র মধ্যে থাকেন, তা হলে তা অন্যায়। এতে ব্যাটার শারীরিক ভাবে আহত হতে পারেন। তাই এ রকম বলকে আম্পায়ার সঙ্গে সঙ্গে নো বল ডাকবেন।
ছবি: এএফপি,আইসিসি, পিটিআই
১০১৮
মজার ব্যাপার হল, কোহলি যদি ক্রিজের বাইরে দাঁড়িয়ে এই শটটি খেলতেন তা হলে আম্পায়ার তাকে নো বল ডাকতেন না। কোহলি ক্রিজের বাইরে ছিলেন না ঠিকই কিন্তু ক্রিজের ভিতরেও ছিলেন কি? আসলে কোহলি ছিলেন দাগের উপরে। ক্রিকেটিয় পরিভাষায়, ‘অন দ্য লাইন’।
ছবি: এএফপি,আইসিসি, পিটিআই
১১১৮
আর এখানেই আইনের ফাঁক গলে নো বল পেয়ে গেল ভারত। কারণ, নিয়মের বইতে বলা রয়েছে, ব্যাটারকে ‘পপিং ক্রিজে’র মধ্যে থাকতে হবে। ‘অন দ্য লাইন’ থাকলে কী হবে তা বলা নেই। অতএব, যথার্থ ভাবেই ফ্রি হিট পেল কোহলির ভারত।
ছবি: এএফপি,আইসিসি, পিটিআই
১২১৮
বিতর্ক আরও ঘনীভূত হল ফ্রি হিটে। প্রথম বলটি ওয়াইড করার পর নওয়াজ ফ্রি হিটের দ্বিতীয় বলটি করেন লেংথে। স্লগ স্যুইপ করতে গিয়ে বোল্ড হয়ে যান কোহলি। বল উইকেটে লেগে চলে যান থার্ড ম্যান চত্বরে। দৌড়ে রান নেন কোহলিরা। আবার আম্পায়ারকে ঘিরে ধরেই পাকিস্তানি খেলোয়াড়রা। তাঁদের দাবি, বোল্ড হওয়ার পর বল তো ডেড। তা হলে কোহলি রান নেন কী করে?
ছবি: এএফপি,আইসিসি, পিটিআই
১৩১৮
আবার নিজেদের মধ্যে শলাপরামর্শ করেন আম্পায়াররা। দৌড়ে নেওয়া ৩ রানকে বাই হিসাবে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। আবার বিতর্ক। বাবর, নওয়াজদের দাবি ছিল, ব্যাটার আউট হলে বল ডেড হওয়া উচিত। যদিও ক্রিকেট আইনের বইয়ে ফ্রি হিটে কী হয়, তা বলা নেই। আবার এমনও নয় যে আউট হলেই বল ডেড হয়। তা হলে বাউন্ডারির ধারে ব্যাটার ক্যাচ আউট হওয়ার আগে পর্যন্ত দৌড়ন কেন! নিয়ম বলছে, ব্যাটার বল খেলার আগে হাওয়ার বেগে বা অন্য কোনও কারণে উইকেট থেকে বেল পড়ে গেলে বল ডেড ঘোষিত হবে। তাই ফ্রি হিট যেমন আইনি, তেমনই ফ্রি হিটে আউট হয়েও রান নেওয়া আইনি।
ছবি: এএফপি,আইসিসি, পিটিআই
১৪১৮
পরতে পরতে উত্তেজনায় ভরা এই ম্যাচে তৃতীয় তথা সর্বশেষ বিতর্ক অক্ষর পটেলের রান আউটকে ঘিরে। যা ভারতের বিরুদ্ধে যায়। শাদাব খানের গুগলি মিড উইকেটে ঠেলে এক রান নিতে চান অক্ষর। কিন্তু উল্টো দিকে থাকা কোহলি তাঁকে ফেরত পাঠান। তত ক্ষণে উইকেট ভেঙে দিয়েছেন মহম্মদ রিজ়ওয়ান। অথচ আনন্দে মেতে ওঠার বদলে রাগের বহিঃপ্রকাশ রিজ়ওয়ানের মুখে! রান আউট করতে না পারলে ঠিক যেমন প্রতিক্রিয়া দেখা যায় খেলোয়াড়দের মধ্যে। রিপ্লেতে দেখা গেল, রিজ়ওয়ান ঠিক মতো বলটি ধরতে পারেননি। তার বদলে বল এসে তাঁর গ্লাভসে লাগে এবং সেখান থেকে ছিটকে গিয়ে স্ট্যাম্প ভেঙে দেয়। একই সঙ্গে রিজ়ওয়ানের হাতও উইকেট ভেঙে দেয়।
ছবি: এএফপি,আইসিসি, পিটিআই
১৫১৮
বল যদি রিজ়ওয়ানের গ্লাভসে থাকা অবস্থায় উইকেট ভাঙত, তা হলে বিতর্কের জায়গা থাকত না। অথবা যদি গ্লাভসে লাগার আগে বল উইকেট ভেঙে দিত, তা হলেও আউট দিতে দেরি করতেন না আম্পায়ার। কিন্তু এ ক্ষেত্রে অস্পষ্ট, বল আগে উইকেটে লেগেছে না কি গ্লাভস দিয়ে আগে উইকেট ভাঙা হয়েছে। কারণ দু’টি আলাদা আলাদা কোণ থেকে রিপ্লেতে দু’রকম দেখা গিয়েছে।
ছবি: এএফপি,আইসিসি, পিটিআই
১৬১৮
পরের বিতর্ক অস্ট্রেলিয়া বনাম আফগানিস্তান ম্যাচে। এ বার আম্পায়ার ৫ বলেই ওভার ডেকে দেন। অস্ট্রেলিয়ার ইনিংসের চতুর্থ ওভারে ব্যাট করছিলেন মিচেল মার্শ এবং ডেভিড ওয়ার্নার। দু’জনেই প্রথম দু’টি বলে এক রান করে নেন। এর পর ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্ট দিয়ে বাউন্ডারি মারেন মার্শ। পরের বলে তিন রান নেন। পঞ্চম বলে কোনও রান হয়নি। এর পরেই আম্পায়ার ওভার ডেকে দেন।
ছবি: এএফপি,আইসিসি, পিটিআই
১৭১৮
বাংলাদেশের ইনিংসের সপ্তম ওভারে ঘটে এই ঘটনা। অক্ষরের বলে রান নিতে যান লিটন। কোহলি দাঁড়িয়েছিলেন পয়েন্টে। আরশদীপ বল ছুড়ে ফেরত পাঠানোর সময়েই কোহলি বল কুড়িয়ে ছুড়ে দেওয়ার ভঙ্গি করেন। মাঠের দুই আম্পায়ার মারাইস ইরাসমাস এবং ক্রিস ব্রাউনের নজর এড়িয়ে যায় এই ঘটনা। তৃতীয় আম্পায়ারও আপত্তি করেননি। বাংলাদেশের দুই ব্যাটারের তরফে কোনও প্রতিবাদ আসেনি।
ছবি: এএফপি,আইসিসি, পিটিআই
১৮১৮
এ নিয়ে বিতর্ক ঘনায় ম্যাচ শেষের পর। আইসিসির ৪১.৫ ধারা অনুযায়ী, ব্যাটারকে কোনও ভাবে বাধা দিলে বা বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করলে আম্পায়াররা ঘটনার গুরুত্ব বুঝে বিপক্ষ দলকে পাঁচ রান পাইয়ে দিতে পারেন। এ ক্ষেত্রে মাঠের দুই আম্পায়ার মনে করেননি, কোহলি কোনও অপরাধ করেছেন। তাই শাস্তিও দেওয়া হয়নি।