India in trade deficit with nine of top 10 trading partners in 2023-24 dgtl
India in Trade Deficit
চেনা শত্রুই ‘ভিলেন’! বন্ধু দেশের সঙ্গে ব্যবধান কমলেও বেজিংয়ের সঙ্গে বেড়েই চলেছে ভারতের বাণিজ্য ঘাটতি
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, যে ১০টি দেশের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রফতানি হয়, গত অর্থবর্ষে (২০২৩-২৪) তাদের মধ্যে ন’টির সঙ্গেই বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে ভারতের।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতাশেষ আপডেট: ২৯ মে ২০২৪ ০৮:০৯
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২০
ভারতের কাছে এখন সবচেয়ে বড় মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে দেশের বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ। বিশ্ব বাজারে ভারতীয় সংস্থাগুলির ব্যবসার হাল কিছুটা খারাপ। যার জেরে চাপে পড়ছে দেশের অর্থনীতি।
০২২০
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, যে ১০টি দেশের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রফতানি হয়েছে, গত অর্থবর্ষে (২০২৩-২৪) তাদের মধ্যে ন’টির সঙ্গেই বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে ভারতের। আর সেই তালিকায় সবচেয়ে উপরে রয়েছে চিন।
০৩২০
চিন, রাশিয়া, ইরাক, সৌদি আরব, ইন্দোনেশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি, হংকং, সিঙ্গাপুর এবং আমেরিকা— এই ১০টি দেশের মধ্যে আমেরিকা বাদে বাকি সবগুলি দেশের সঙ্গেই ভারতের বাণিজ্যিক ঘাটতি রয়েছে।
০৪২০
পরিসংখ্যান বলছে, ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে ভারতের বাণিজ্যিক ঘাটতির পরিমাণ ২৩ হাজার ৮৩০ কোটি ডলার। যা ভারতের জন্য খুবই খারাপ বিজ্ঞাপন বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদদের একাংশ।
০৫২০
অনেকের কাছেই বাণিজ্য ঘাটতির ধারণা স্পষ্ট নয়। বাণিজ্যের সুস্থ ভারসাম্য যে কোনও দেশের অর্থনীতিকে টিকিয়ে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে কোনও দেশ যদি বাণিজ্যিক ঘাটতিতে চলে, তখন তার প্রভাব সর্বক্ষেত্রে পড়ে।
০৬২০
দেশের আমদানি যখন রফতানিকে ছাপিয়ে যায়, তখনই বাণিজ্য ঘাটতি দেখা দেয়। কোনও দেশ কত আমদানি করছে এবং কত রফতানি করছে— তার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করা খুবই জরুরি। ভারতের ক্ষেত্রে যা নেতিবাচক ইঙ্গিত দিচ্ছে।
০৭২০
অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি কোনও দেশ কাঁচামাল আমদানি করে নিজেদের উৎপাদন বৃদ্ধি করে এবং সেই সূত্রে রফতানি মাথা তোলে, তা হলে এই খাতে হওয়া ঘাটতিকে ততটা খারাপ বলা চলে না। তবে এতে স্থানীয় মুদ্রার উপরে চাপ বাড়ে। ভারতের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটছে।
০৮২০
পরিসংখ্যান বলছে, চিনের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ সাড়ে আট হাজার কোটি ডলার। চিনা বাজারে ভারতীয় সংস্থার জিনিসপত্র খুবই কম বিক্রি হয়। সে তুলনায় চিন থেকে অনেক বেশি জিনিস ভারত আমদানি করে। ভারতের বাজারে চিনা প্রভাব স্পষ্ট।
০৯২০
চিনের পরেই রয়েছে রাশিয়া। এই দেশের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্যিক ঘাটতির পরিমাণ পাঁচ হাজার ৭০০ কোটি ডলারের কিছু বেশি। বিশেষজ্ঞদের মতে, রাশিয়া থেকে ভারত অনেক গুরুত্বপূর্ণ জিনিস কেনে। সবচেয়ে বেশি আমদানি করে অপরিশোধিত তেল। এ ছাড়া সামরিক ক্ষেত্রেও রাশিয়ার সাহায্য পায় ভারত।
১০২০
চিন, রাশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া এবং হংকংয়ের ক্ষেত্রে বাণিজ্য ঘাটতি ২০২২-’২৩ সালের থেকেও বেড়েছে। তবে সামগ্রিক ভাবে দেখলে গত বছর ভারতের বাণিজ্য ঘাটতি ২৬,৪৯০ কোটি ডলার থেকে কমে হয়েছে ২৩,৮৩০ কোটি ডলার।
১১২০
কেন্দ্রীয় সরকার এই পরিসংখ্যানকে সামনে রেখে দেশের অর্থনীতির উন্নতি ঘটেছে বলে দাবি করেছে। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন সোমবার এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে পোস্ট করে বলেন, ‘‘সাধারণ মানুষের থেকে সংগ্রহ করা প্রতিটি টাকার ন্যায্য এবং কার্যকরী খরচ করেছি আমরা। তার স্বচ্ছ হিসাবও পেশ করেছি।’’
১২২০
তবে দেশের বাণিজ্যিক ঘাটতির পরিসংখ্যানকে হাতিয়ার করে নরেন্দ্র মোদী সরকারের বিরুদ্ধে সুর চড়াতে শুরু করেছে বিরোধীরা। পাশাপাশি, প্রধানমন্ত্রীর ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ নিয়েও কটাক্ষ করতে ছাড়ছে না তারা। একই সঙ্গে চিনের সঙ্গে বাণিজ্য বৃদ্ধি পাওয়া নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।
১৩২০
ভারত এবং চিনের মধ্যে সীমান্ত বিরোধ বহু দিনের। লাল ফৌজের আগ্রাসন নীতি নিয়ে চিন্তায় থাকে নয়াদিল্লি। সীমান্তে ভারতীয় সেনা মোতায়েন বৃদ্ধি করা তারই উদাহরণ বলা চলে। বেজিং প্রায়ই নয়াদিল্লিকে প্রচ্ছন্ন হুমকি দিতে থাকে।
১৪২০
তার পরও কেন চিনের সঙ্গে ব্যবসা বৃদ্ধির পথে হাঁটছে মোদী সরকার, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিরোধীরা। তাদের প্রশ্ন, গালওয়ানের সংঘর্ষের পরেও চিন থেকে আমদানির বহর এত বাড়ল কী ভাবে? তা হলে ঢাকঢোল পিটিয়ে মেক ইন ইন্ডিয়া প্রকল্পের প্রচারের অর্থ কী? মোদী সরকারের কি সত্যিই চিন থেকে আমদানি কমানোর সদিচ্ছা আছে?
১৫২০
ক্ষমতায় আসার পর মোদী সরকার ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ প্রচার শুরু করেছিল। অর্থাৎ ভারতে তৈরি জিনিস দিয়েই ভারতীয়দের চাহিদা মেটানোর প্রচেষ্টা। বিভিন্ন ক্ষেত্রে অন্য দেশ থেকে আমদানি কমানোই লক্ষ্য ছিল মোদীর। দেশের তৈরি জিনিস ভারতীদের কাছে সহজলভ্য হবে বলেও দাবি করেছিলেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ।
১৬২০
ধরা যাক, কোনও গাড়ি তৈরি করতে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম যদি ভারতেই প্রস্তুত হয়, তবে আমদানি শুল্ক দিতে হবে না। ফলে সেই গাড়ির বাজারমূল্য তুলনায় অনেকটাই কম হবে। একই সঙ্গে ভারতের অর্থনীতিও মজবুত করবে।
১৭২০
বাণিজ্য ঘাটতি নিয়ে সাধারণ মানুষের তেমন আগ্রহ নেই। কিন্তু দেশের বাণিজ্য ঘাটতি যত বৃদ্ধি পাবে, ততই চাপ বাড়বে সাধারণ মানুষের উপর। জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধিও প্রকারান্তরে এই বাণিজ্য ঘাটতির উপর নির্ভর করে।
১৮২০
কী ভাবে ভারতের বাণিজ্য কমানো সম্ভব? অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, আমদানির থেকে রফতানি বৃদ্ধি করতে হবে। সে ক্ষেত্রে চিন এবং দক্ষিণ কোরিয়াকে বাদ রেখেই পরিকল্পনা করতে হবে ভারতীয় ব্যবসায়ীদের।
১৯২০
চিন কখনই নিজেদের বাজারে ভারতীয়দের ‘দাদাগিরি’ পছন্দ করবে না। সে দিক থেকে দক্ষিণ কোরিয়াও রক্ষণশীল। নিজেদের দেশের জিনিসের উপরই বেশি নির্ভর করে তারা।
২০২০
তবে তালিকায় থাকা বাকি দেশগুলিতে, যেমন রাশিয়া, ইরাক, সৌদি আরব, ইন্দোনেশিয়ায় আরও বেশি রফতানি করতে পারে। বিশেষত, অটোমোবাইল ক্ষেত্রে ভারতের রফতানি বৃদ্ধি করার সম্ভাবনা রয়েছে। বিশ্ব গাড়ির বাজারে ভারত নিজের অবস্থান আরও মজবুত করতে পারে।