Incestuous cult groomed to practice polygamy, everyone was forced to have children dgtl
Religious Cult
বহুকামিতায় ‘পুণ্য’, বেশি সন্তান হলে স্বীকৃতি পান নারীরা! অদ্ভুত এক গোষ্ঠীর গল্প শোনালেন তরুণ
নেফির বাবার নাম জন ড্যানিয়েল কিংস্টন। পডকাস্টে নেফি জানান, ড্যানিয়েলের কতগুলি সন্তান, তা সঠিক জানেন না কেউই। তবে ১০০ থেকে ২০০ জন সন্তান রয়েছেন বলে নিশ্চিত নেফি। তিনি ড্যানিয়েলের ১৩তম সন্তান।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২৩ জুলাই ২০২৪ ০৮:৫৫
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৯
কৈশোরে পা দিতে না দিতেই বিয়ে। এমনকি নিজের পিতাকেও বিয়ে করতে বাধ্য হয়েছে কিশোরীরা। শৈশব থেকেই তাদের শেখানো হয়েছে, গোষ্ঠীর অন্তর্গত কোনও মহিলা যত বেশি সন্তানের জন্ম দিতে পারেন, সমাজে তাঁদের মর্যাদা তত বেশি হয়। বহুকামিতাই যেন এই গোষ্ঠীর মূল সত্তা। গোষ্ঠীর নিয়মকানুন না মানলে নাকি ‘নরকবাস’ নিশ্চিত।
০২১৯
পশ্চিম আমেরিকার উটা প্রদেশের সল্ট লেক সিটি এলাকার ঘটনা। সেখানকার একটি প্রাচীন গোষ্ঠীর প্রাক্তন সদস্য নেফি রবিনসন। সম্প্রতি ইউটিউব মাধ্যমে একটি পডকাস্ট করে অতীত জীবনের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন তিনি।
০৩১৯
নেফি জানান, তিনি যে গোষ্ঠীর সদস্য ছিলেন তা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৩৫ সালে। যৌনতা নিয়ে গির্জার সঙ্গে মতবিরোধ হওয়ায় আলাদা ভাবে একটি ধর্মীয় গোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এলডেন কিংস্টন নামে এক ব্যক্তি।
০৪১৯
১৯৪৮ সালে এলডেনের মৃত্যুর পর গোষ্ঠীর দায়িত্ব পেয়েছিলেন জন ওর্টেল কিংস্টন। প্রায় চার দশক গোষ্ঠীর নেতৃত্বে থাকার পর মৃত্যু হয় তাঁর। ১৯৮৭ সালে গোষ্ঠীর ক্ষমতা হস্তান্তরিত হয় পল এলডেন কিংস্টনের হাতে। সম্পর্কে তিনি নেফির জেঠু।
০৫১৯
নেফির বাবার নাম জন ড্যানিয়েল কিংস্টন। পডকাস্টে নেফি জানান, ড্যানিয়েলের কতগুলি সন্তান রয়েছে, তা সঠিক জানেন না কেউই। তবে ১০০ থেকে ২০০ জন সন্তান রয়েছে বলে নিশ্চিত নেফি। তিনি ড্যানিয়েলের ১৩তম সন্তান।
০৬১৯
নেফির মা ড্যানিয়েলের তৃতীয় স্ত্রী। মোট ১৪ জন স্ত্রী রয়েছে ড্যানিয়েলের। নেফির মায়ের মোট ১৩ জন সন্তান। তাঁদের মধ্যে নেফি দ্বিতীয়। কৈশোরের স্বাদ পেতে না পেতেই নেফির উপর সংসারের দায়িত্ব এসে পড়ে। পরোক্ষে ভাইবোনদের অভিভাবক হয়ে যান তিনি।
০৭১৯
নেফির মা ড্যানিয়েলের ব্যবসা সংক্রান্ত কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও তিনি যা উপার্জন করতেন তা দিয়ে সংসারের খরচ চলত না। উপরন্তু বাড়িতে থাকার জন্য স্বামীকেই আলাদা করে ভাড়া দিতে হত নেফির মাকে। অর্থাভাব ঘোচাতে সংসারের হাল ধরেন নেফি।
০৮১৯
স্কুলে পড়াশোনা করার সময় নেফি বুঝতে পারতেন যে, মহিলাদের প্রতি আকর্ষণ বোধ করেন না তিনি। তিনি যে সমকামী তা বুঝতে পারলেও সে কথা প্রকাশ্যে বলতে পারেননি। নেফি বলেন, ‘‘আমি যে স্কুলে পড়তাম সেখানে সমকামী হওয়া মনে হয় অপরাধ ছিল। কোনও ছাত্র সমকামিতার পরিচয় দিলে তাকে মারধর করা হত। গোষ্ঠীর সদস্য হয়ে সমকামী হলে নাকি মৃত্যুর পর নরকে যেতে হবে। সে সব কারণে আমি সত্য লুকিয়ে রেখেছিলাম।’’
০৯১৯
মাত্র ১১ বছর বয়সে রোজগার করতে শুরু করেন নেফি। গোষ্ঠীর অন্তর্গত একটি কফিশপে কাজ করতেন তিনি। টিউশন থেকে শুরু করে স্কুল-কলেজের বেতন— সমস্ত খরচ নিজেই করেছেন নেফি। তিনি জানান, ড্যানিয়েলের সঙ্গে তাঁর পরিবারের সম্পর্ক খুব একটা ভাল ছিল না।
১০১৯
নেফি বলেন, ‘‘বাবা আমাদের বাড়িতে মাসে এক বার আসতেন। বাবা এলেই বাড়ির পরিবেশ অন্য রকম হয়ে যেত। বাবার সঙ্গে তাঁর সন্তানদের যেমন সম্পর্ক হয়, তা আমাদের মধ্যে ছিল না। তিনি মাঝেমধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করতেন, কিন্তু তা খুব চোখে লাগত। বরং বাবা বাড়িতে এলেই আমার চিন্তা হত।’’
১১১৯
নেফির কথায়, ‘‘মায়ের বেডরুমের তলায় আমার ঘর ছিল। বাবা যখন মায়ের সঙ্গে থাকতেন তখন আমি সব আওয়াজ শুনতে পেতাম। বুঝতে পারতাম ঘরের ভিতর কী হচ্ছে। আমার ভয় হত যে মা আবার অন্তঃসত্ত্বা না হয়ে পড়েন।’’
১২১৯
নেফিকে বিয়ে করার জন্য জোর করেছিলেন ড্যানিয়েল। অনিচ্ছা সত্ত্বেও বিয়ে করেছিলেন তিনি। সন্তানের জন্ম দেওয়াই বিয়ের আসল উদ্দেশ্য ছিল। নেফি বলেন, ‘‘আমি স্ত্রীর প্রতি আকর্ষণ বোধ করতাম না। কিন্তু আমার সন্তান জন্ম নিলে দুর্দান্ত অনুভূতি হত। মনে হত জীবনে এর চেয়ে দামি কিছুই নেই।’’
১৩১৯
সাত সন্তানের জন্ম দেন নেফির স্ত্রী। তার পর নেফিকে আবার বিয়ের জন্য জোর করতে থাকেন ড্যানিয়েল। তিনি আর বিয়ে করতে চান না, সে কথা ড্যানিয়েলকে জানান। তিনি যে সমকামী, তা-ও বাবাকে বলেন নেফি। কিন্তু ড্যানিয়েলকে বোঝাতে পারেননি।
১৪১৯
নেফির উদ্দেশে ড্যানিয়েল বলেন, ‘‘তুমি সমকামী নও। তুমি অত্যধিক কাজ করো। ক্লান্ত হয়ে যাও। তাই এ সব তোমার মনে আসে। তোমার স্ত্রীর প্রতিও ভালবাসা ফুরিয়ে গিয়েছে। আবার বিয়ে করলে সব ঠিক হয়ে যাবে। আর তুমি যদি সত্যিই সমকামী হয়ে থাকো তা হলে মৃত্যুর পর নরকের কীট হয়ে পচবে।’’
১৫১৯
৩৩ বছর বয়সে গোষ্ঠী থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করার সিদ্ধান্ত নেন নেফি। নেফির স্ত্রী তাঁকে আটকানোর বহু চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হন। নেফিকে তাঁর স্ত্রী বলেন, ‘‘তোমার দায়িত্ব বংশবৃদ্ধি করা। আবার বিয়ে করো। পুণ্য অর্জন করো। যদি তা না পারো তা হলে গোষ্ঠী ছেড়ে বেরিয়ে যাও।’’
১৬১৯
নেফির সঙ্গে তাঁর স্ত্রীর বিচ্ছেদের এক বছরের মাথায় আবার বিয়ে করেন তরুণী। আসলে নেফির প্রাক্তন স্ত্রীর বদ্ধমূল ধারণা ছিল যে, যত দিন তাঁর সন্তানধারণের ক্ষমতা থাকবে, তত দিন তিনি সন্তানের জন্ম দিয়ে যাবেন। এর ফলে গোষ্ঠীতে তাঁর মর্যাদা বৃদ্ধির পাশাপাশি পুণ্য অর্জনও হবে।
১৭১৯
নেফি জানান, মোটা টাকা দিয়ে তিনি তাঁর সন্তানদের সঙ্গে দেখা করার অনুমতি পেয়েছেন। তাঁর কন্যাসন্তানেরা ধীরে ধীরে বিবাহযোগ্যা হয়ে উঠছেন। নেফির কথায়, ‘‘আমার সমবয়সিরা এখন আমার মেয়েদের বিয়ে করার প্রস্তাব নিয়ে আসে। আমি অবাক হয়ে যাই। কী বলব বুঝতে পারি না।’’
১৮১৯
নেফি গোষ্ঠী ছেড়ে বেরিয়ে এসে নিজের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছেন। তবে তিনি বুঝতে পেরেছেন যে এখনও পর্যন্ত স্থায়ী সম্পর্কে থাকার মতো মানসিক অবস্থা নেই তাঁর। এক তরুণের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন তিনি। কিন্তু কয়েক মাসের মধ্যে সেই সম্পর্কে দাঁড়ি পড়ে যায়।
১৯১৯
নেফি বলেন, ‘‘আগে আমি আমার সব ভাইবোনকেই চিনতাম না। রাস্তায় হাঁটাচলা করতে গিয়ে আলাপ হলে জানতে পারতাম। এখন সেই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছি। বিষয়টি নিয়ে আর বিশেষ ভাবিই না। নিজের সঙ্গে সময় কাটিয়ে, নিজেকে আরও ভাল করে চিনতে চাই আমি।’’