In 23 years 12 Chief Ministers changed in Jharkhand dgtl
Jharkhand Political Crisis
২৩ বছরে ১২ বার! ঘুরে ফিরে পদে বসেছেন সাত জন, ১০ দিনের মুখ্যমন্ত্রীও দেখেছে ঝাড়খণ্ড
গত ২৩ বছরে ১২ জন মুখ্যমন্ত্রী বদলানোর পাশাপাশি তিনটি রাষ্ট্রপতি শাসনও দেখেছেন ঝাড়খণ্ডবাসী। তবে রঘুবর দাস ছাড়া আর কেউ পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ করতে পারেননি।
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতাশেষ আপডেট: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৪:৩২
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২৫
বুধবার জমি জালিয়াতি সংক্রান্ত বেআইনি আর্থিক লেনদেন মামলায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডির হাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন ঝাড়খণ্ডের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন।
০২২৫
৬০০ কোটি টাকার ‘দুর্নীতি’র অভিযোগ রয়েছে হেমন্তের বিরুদ্ধে। সেই তদন্তের সূত্রে বুধবার দুপুরে হেমন্তের রাঁচীর বাড়িতে তল্লাশি চালায় ইডি। প্রায় সাত ঘণ্টা তল্লাশির পরে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। তার আগে রাজভবনে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেন হেমন্ত।
০৩২৫
মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে হেমন্তের ইস্তফার ২৪ ঘণ্টা পরেও জোটের নেতা চম্পই সোরেনের কাছে রাজ্যপাল সিপি রাধাকৃষ্ণণের থেকে সরকার গড়ার আমন্ত্রণ না আসায় তৈরি হয়েছিল নানা জল্পনা।
০৪২৫
অবশেষে সেই জল্পনার ‘অবসান’ ঘটেছে। শুক্রবার ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ নিলেন সিংভূম অঞ্চলের সেরাইকেলার বিধায়ক চম্পই।
০৫২৫
কংগ্রেসের পরিষদীয় নেতা আলমগির আলম আগেই জানিয়েছিলেন, শুক্রবার মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নেবেন চম্পই। তবে আগামী ১০ দিনের মধ্যে তাঁকে সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রমাণ দিতে হবে বিধানসভায়।
০৬২৫
তবে এই প্রথম না। ২৩ বছর ‘বয়সি’ ঝাড়খণ্ডে এর আগেও ১১ বার মুখ্যমন্ত্রী বদলেছে। এই নিয়ে ১২ নম্বর শপথপর্ব রাঁচীর রাজভবনে।
০৭২৫
ঝাড়খণ্ডের ‘জন্ম’ ২০০০ সালের ১৫ নভেম্বর। সে অর্থে বেশিরভাগ রাজ্যের তুলনায় ঝাড়খণ্ড বয়সে নবীন।
০৮২৫
প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও এবং প্রচুর পুঁজি থাকা সত্ত্বেও, ঝাড়খণ্ড রাজ্য তৈরির ২৩ বছর পরে উন্নয়নের মাপকাঠিতে খুব একটা এগোতে পারেনি সে রাজ্য। আর তার কারণ হিসাবে সে রাজ্যের রাজনৈতিক অস্থিরতাকেই দায়ী করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ।
০৯২৫
গত ২৩ বছরে ১২ জন মুখ্যমন্ত্রী বদলানোর পাশাপাশি তিনটি রাষ্ট্রপতি শাসনও দেখেছেন ঝাড়খণ্ডবাসী।
১০২৫
উল্লেখযোগ্য যে, ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে বিজেপির রঘুবর দাস ছাড়া আর কেউ পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ করতে পারেননি।
১১২৫
ঝাড়খণ্ড রাজ্য তৈরি হওয়ার সময়, সে রাজ্যের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী হন বিজেপি নেতা বাবুলাল মরান্ডি। প্রায় আড়াই বছর চলে বাবুলালের সরকার। তবে রাজ্যের ‘ক্লাস-তিন’ এবং ‘ক্লাস-চার’ পদের চাকরি শুধুমাত্র রাজ্যের বাসিন্দাদের জন্য পাকাপাকি করার নীতি চালু নিয়ে বড়সড় অসন্তোষের মুখোমুখি হন। তাঁকে নিয়ে সমালোচনাও হয় বিস্তর।
১২২৫
রাঁচীর ভিড় কমাতে ‘গ্রেটার রাঁচী’ তৈরির স্বপ্নও ঝাড়খণ্ডের বাসিন্দাদের প্রথম দেখিয়েছিলেন বাবুলাল। তবে মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে বাবুলালের কার্যকাল ছিল স্বল্পস্থায়ী। তবে ২০০৩ সালে জোটসঙ্গী জেডিইউ-এর চাপের মুখে পদত্যাগ করেন বাবুলাল।
১৩২৫
বাবুলালের পরে ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সিতে বসেন অর্জুন মুন্ডা। ২০০৩ সালের ১৮ মার্চ মুখ্যমন্ত্রী হন অর্জুন। তিনিও প্রায় দু’বছর মুখ্যমন্ত্রীর আসনে ছিলেন।
১৪২৫
এরপর কয়েক দিনের জন্য ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হন হেমন্তের বাবা তথা জেএমএমের প্রতিষ্ঠাতা শিবু সোরেন। কিন্তু একটি খুনের মামলার অভিযোগ ওঠায় মুখমন্ত্রী পদে বসার ১০ দিন পর তাঁকে পদত্যাগ করতে বলা হয়। ২০০৫ সালের ১২ মার্চ অর্জুন আবার প্রায় দেড় বছরের জন্য মুখ্যমন্ত্রী হন।
১৫২৫
অর্জুনের পর ২০০৬ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর ঝাড়খণ্ডের চতুর্থ মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ গ্রহণ করেন নির্দল বিধায়ক মধু কোড়া। তিনিও মেয়াদ শেষ করতে পারেননি।
১৬২৫
মধুর পরে ২০০৮ সালের ২৮ অগস্ট দ্বিতীয়বারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী হন শিবু সোরেন। দ্বিতীয়বার মুখ্যমন্ত্রীর পদে শিবু ছিলেন ছ’মাসের জন্য। ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে তামড় কেন্দ্রের উপনির্বাচনে ঝাড়খণ্ড পার্টির নেতা রাজা পিটারের কাছে হেরে ইস্তফা দিতে বাধ্য হন শিবু।
১৭২৫
শিবুর ইস্তফার পর ১৯ জানুয়ারি প্রথমবারের জন্য ঝাড়খণ্ডে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করা হয়েছিল। এর পর ২০০৯ সালের ডিসেম্বর মাসে আবার মুখ্যমন্ত্রী হন শিবু।
১৮২৫
এর পর ২০১০ সালের ১ জুন আবার মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে সরে যান শিবু। দ্বিতীয়বারের জন্য রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হয় সে রাজ্যে।
১৯২৫
এর পর ২০১০–এর ১১ সেপ্টেম্বর বিজেপির অর্জুন তৃতীয়বারের মতো মুখ্যমন্ত্রী হন। কিন্তু সেবারেও মুখ্যমন্ত্রী পদে পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ করতে পারেননি তিনি। আড়াই বছর পরেই মুখ্যমন্ত্রীর পদ ছাড়তে হয়েছিল তাঁকে।
২০২৫
অর্জুনের মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে সরার পর ২০১৩ সালের ১৮ জানুয়ারি তৃতীয়বারের জন্য রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হয় ঝাড়খণ্ডে।
২১২৫
এর পরে ২০১৩ সালের ১৩ জুলাই প্রথমবারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী হন শিবু-পুত্র হেমন্ত। কিন্তু দেড় বছরের মধ্যে তাঁকেও সেই পদ থেকে সরতে হয়েছিল।
২২২৫
২০১৪ সালের ২৮ ডিসেম্বর মাসে পূর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গড়ে বিজেপি। কিন্তু হেরে যান অর্জুন। প্রথম বার ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রীর পদ যায় অজনজাতি নেতা রঘুবর দাসের কাছে। তিনি পাঁচ বছরের মেয়াদ পূর্ণ করেছিলেন।
২৩২৫
তবে ২০১৯ সালে নির্বাচনে জেএমএম, কংগ্রেস এবং আরজেডি-র জোটের সরকার ক্ষমতায় আসে। দ্বিতীয়বারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী হন হেমন্ত। তবে ইডির হাতে গ্রেফতারির পর তিনি ইস্তফা দিয়েছেন।
২৪২৫
নতুন মুখ্যমন্ত্রী হতে চলেছেন চম্পই। তিনি হলেন রাজ্যের ১২তম মুখ্যমন্ত্রী।
২৫২৫
উল্লেখযোগ্য যে, হেমন্ত প্রথম নন। ঝাড়খণ্ডেই দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার হয়েছিলেন আরও দুই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। শিবু এবং মধু। ঘুষ নিয়ে কয়েকটি সংস্থাকে নিয়ম ভেঙে কয়লা ব্লকের বরাত পাইয়ে দেওয়া এবং সেই অর্থ বিদেশে পাচারের অভিযোগে ২০০৯ সালের নভেম্বরে গ্রেফতার করা হয়েছিল মধুকে। ২০১৭ সালে ওই মামলায় দোষী প্রমাণিত হয়ে তাঁর সাজাও হয়েছিল। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে দুর্নীতি এবং খুনের মামলায় গ্রেফতার হয়েছেন হেমন্তের বাবা তথা জেএমএম প্রতিষ্ঠাতা শিবুও। মুখ্যমন্ত্রিত্ব হারানোর কয়েক মাস পরে ২০০৬-এর নভেম্বরে একটি খুনের মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন শিবু। তিনি তখন কেন্দ্রে ইউপিএ সরকারের মন্ত্রী। ইস্তফা দিয়ে জেলে যেতে হয়েছিল তাঁকে। তার আগে সাংসদ কেনাবেচার মামলাতেও গ্রেফতার হয়েছিলেন শিবু।