IAS Harshika Singh is trying very hard to spread literacy in Mandla District of Madhya Pradesh dgtl
Madhya Pradesh District Literacy
গায়েব হচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা! প্রতারণা ঠেকাতে ‘অন্য দাওয়াই’ দিচ্ছেন জেলাশাসক
গ্রামে গ্রামে ঘুরে শিক্ষার প্রসার ঘটাতে উদ্যোগী হয়েছেন আইএএস হর্ষিকা। আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষজন, বিশেষত মহিলাদের শিক্ষিত করতে একপ্রকার চ্যালেঞ্জ নিয়ে ফেলেছেন তিনি।
নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতাশেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০২৩ ১৪:০৬
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৫
মধ্যপ্রদেশের মণ্ডলা জেলা। সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, ছত্তীসগঢ়ের সীমান্তঘেঁষা এই জেলার অধিকাংশ বাসিন্দাই আদিবাসী সম্প্রদায়ভুক্ত। শিক্ষার আলো এই জেলার গ্রামগুলিতে তেমন একটা ছড়ায়নি। প্রত্যন্ত এলাকায় স্বাক্ষরতা প্রায় নেই বললেই চলে।
০২১৫
মণ্ডলা জেলার জেলাশাসক হর্ষিকা সিংহ। মণ্ডলায় দায়িত্ব পেয়েই এই আইএএস আধিকারিক জেলার উন্নয়নের কাজে মনোনিবেশ করেছেন। সেই সঙ্গে কাঁধে তুলে নিয়েছেন বাড়তি দায়িত্ব।
০৩১৫
গ্রামে গ্রামে ঘুরে শিক্ষার প্রসার ঘটাতে উদ্যোগী হয়েছেন হর্ষিকা। আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষজন, বিশেষত মহিলাদের শিক্ষিত করতে একপ্রকার চ্যালেঞ্জ নিয়ে ফেলেছেন তিনি। লক্ষ্যে পৌঁছতে অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন।
০৪১৫
২০১১ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, মণ্ডলায় মহিলাদের স্বাক্ষরতার হার ছিল মাত্র ৫৬ শতাংশ। সামগ্রিক ভাবে ওই জেলার ৬৮ শতাংশ বাসিন্দা ছিলেন স্বাক্ষর। স্বাক্ষরতার এই পরিসংখ্যান ১০০ শতাংশে পৌঁছে দেওয়ার চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন জেলাশাসক হর্ষিকা।
০৫১৫
হর্ষিকা জানিয়েছেন, শিক্ষিত না হওয়ায় গ্রামে গ্রামে বহু মানুষ নিত্যদিন প্রতারিত হচ্ছেন। ব্যাঙ্কের কাজে তাঁদের ঠকিয়ে পরিশ্রমের অর্থ আত্মসাৎ করে নিচ্ছে দুষ্কৃতীরা। তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানোরও কেউ নেই।
০৬১৫
মণ্ডলার ৩৮ বছর বয়সি এক মহিলা জানান, তিনি প্রতি দিন পরিশ্রম করে একটু একটু করে ব্যাঙ্কে টাকা জমাচ্ছিলেন। ওই টাকা দিয়ে মেয়েকে স্কুলে যাওয়ার জন্য সাইকেল কিনে দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু মাঝপথেই থমকে গিয়েছে সঞ্চয়।
০৭১৫
এক দিন হঠাৎ ব্যাঙ্কে গিয়ে মহিলা জানতে পারেন, তাঁর অ্যাকাউন্টে পড়ে আছে মাত্র কয়েকশো টাকা। প্রতারিত হয়েছেন বুঝতে পেরেও কারও বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করার উপায় ছিল না। কারণ, মহিলা লেখাপড়া জানেন না। জানেন না অঙ্কের হিসাব। তাই তাঁকে যে যা বোঝান, তাই বুঝে নিতে হয়।
০৮১৫
হর্ষিকার মতে, শিক্ষিত না হওয়ায় গ্রামের মহিলাদের ঠকিয়ে বিভিন্ন কাগজপত্রে তাঁদের আঙুলের ছাপ নিয়ে নেওয়া হয়। তাঁরা কিসে সম্মতি দিচ্ছেন, কিসে ‘না’ বলছেন, তা নিজেরাও জানেন না। এর ফলেই পরিশ্রম করে উপার্জন করা অর্থ হারিয়ে ফেলতে হচ্ছে তাঁদের। একই কথা প্রযোজ্য গ্রামের পুরুষদের ক্ষেত্রেও।
০৯১৫
স্বাক্ষরতা প্রসারের এই কর্মসূচিতে গ্রামে গ্রামে ঘুরছেন হর্ষিকা নিজে। নিজের হাতে ধরিয়ে তিনি গ্রামবাসীদের অক্ষরজ্ঞান দিচ্ছেন। খোঁজ নিচ্ছেন অগ্রগতির। দিনে এবং রাতের বিভিন্ন সময়ে হর্ষিকাকে গ্রামে গ্রামে ঢুঁ মারতে দেখা যাচ্ছে।
১০১৫
হর্ষিকার উদ্যোগের কথা জানাজানি হওয়ার পর জেলার নানা প্রান্ত থেকে শিক্ষিতেরাও এগিয়ে এসেছেন। ইতিমধ্যে জোগাড় হয়ে গিয়েছে প্রায় ২৫ হাজার ভলান্টিয়ার। বেশির ভাগই বিনামূল্য গ্রামবাসীদের পড়াচ্ছেন, লেখা শেখাচ্ছেন।
১১১৫
শুধু নাম সই করাই নয়, মণ্ডলার আদিবাসি গ্রামবাসীদের টাকা গুনতে শেখানো হচ্ছে। তাঁরা শিখছেন, যোগ, বিয়োগের অঙ্কের হিসাব। হিন্দিতে লিখতে, পড়তে শেখানো হচ্ছে গ্রামের মহিলাদের।
১২১৫
শিক্ষার আলো গ্রামের আনাচকানাচে ছড়িয়ে দেওয়ার এই লড়াই সহজ ছিল না। হর্ষিকা জানিয়েছেন, অনেক ক্ষেত্রেই লেখাপড়ার ব্যবস্থা করতে হয়েছে গ্রামের মানুষজনের বসতি এবং কর্মক্ষেত্রের দিকে খেয়াল রেখে। কর্মক্ষেত্রের পাশেই বসেছে লেখাপড়ার আসর।
১৩১৫
গ্রামের নিরক্ষর পুরুষদের জন্য রাতের দিকে বিশেষ ক্লাসের ব্যবস্থা করেছেন হর্ষিকা। সেখানে মহিলারাও শিখতে আসেন। কোনও কোনও ক্ষেত্রে, পরিবারের এক জন সদস্যকে শিক্ষিত করে তোলার মাধ্যমে বাকিদের মধ্যেও শিক্ষার প্রসার ঘটানো হচ্ছে। পুত্রবধূর হাত ধরে লিখতে শিখছেন শাশুড়ি।
১৪১৫
গ্রামবাসীরা জানাচ্ছেন, অনেকেই প্রথম প্রথম লেখাপড়া শিখতে গিয়ে হোঁচট খেয়েছেন। হিন্দি বর্ণমালা তাঁদের মাথার উপর দিয়ে বেরিয়ে গিয়েছে। অঙ্কের হিসাব তাঁরা গুলিয়ে ফেলেছেন বার বার। ফলে শেখার আগ্রহও ছিল না শুরুর দিকে।
১৫১৫
কিন্তু দিন যত এগিয়েছে, গ্রামবাসীদের ভীতি দূর হয়েছে। উল্টে লেখাপড়ার প্রতি তাঁদের আগ্রহ তৈরি হয়েছে। বাবা, মা লিখতে শিখেছেন দেখে সন্তানেরাও উচ্ছ্বসিত। আঙুলের ছাপে তাঁদের জীবন যে আর সীমাবদ্ধ নেই, তা খুশিতে ভরিয়ে তুলেছে কচিকাঁচাদের মন। আইএএস হর্ষিকার উদ্যোগ প্রশংসা কুড়িয়েছে জেলা পেরিয়ে রাজ্য এমনকি জাতীয় স্তরেও।