Siachen Glacier: বিশ্বের সর্বোচ্চ যুদ্ধক্ষেত্রে মোটরবাইক নিয়ে যেতে চান? কী ভাবে যাবেন?
সিয়াচেনে যাওয়ার আগে কতগুলো বিষয় মাথায় রাখা জরুরি। সিয়াচেন হিমবাহে অক্সিজেনের মাত্রা সমতলের প্রায় দশ শতাংশ। তাই পৌঁছনোর পরই কমতে থাকে ওজন।
নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতাশেষ আপডেট: ১৬ মে ২০২২ ১৬:০৪
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২৬
ধরা যাক, আপনি মোটরবাইকে ঘুরতে ভালবাসেন। আরও ধরা যাক, আপনি পাহাড়ে যেতে চান। যদি আপনার গন্তব্য হয় বিশ্বের সর্বোচ্চ যুদ্ধক্ষেত্র, তা হলে কেমন হবে?
০২২৬
বিশ্বের সর্বোচ্চ যুদ্ধক্ষেত্র? আজ্ঞে হ্যাঁ। ঠিকই ধরেছেন। সিয়াচেন গ্লেসিয়ারের কথা হচ্ছে।
০৩২৬
বাইকে কলকাতা থেকে সিয়াচেনের দূরত্ব প্রায় ৩ হাজার কিলোমিটার। কী ভাবে যাবেন? কবে, কোথায় থাকবেন? কবে, কোথায় ঘুরবেন? রইল তার পূর্ণ তালিকা।
০৪২৬
প্রথম দিন বাইকে কলকাতা থেকে যাত্রা শুরু করে চলে যান বারাণসী। প্রায় সাড়ে সাতশো কিলোমিটার।
০৫২৬
দ্বিতীয় দিন ভোর বেলা বারাণসী থেকে যাত্রা শুরু করুন। পৌঁছে যান নয়ডা। আনুমানিক ৮০০ কিলোমিটার।
০৬২৬
তৃতীয় দিন নয়ডা থেকে যাত্রা শুরু করে চলে যান জম্মু। আনুমানিক প্রায় ৬০০ কিলোমিটার।
০৭২৬
পরের দিন জম্মু থেকে যাত্রা শুরু। এ বারের গন্তব্য ভূস্বর্গ কাশ্মীরের রাজধানী শ্রীনগর। শ্রীনগরে থাকাকালীন ঘুরে ফেলতে পারেন ডাল লেক-সহ অন্য দ্রষ্টব্য স্থান।
০৮২৬
পরের দিনের গন্তব্য কার্গিল। মনে পড়ছে কার্গিল যুদ্ধের কথা? সেই স্থানে বাইক নিয়ে যেতে আলাদা রোমাঞ্চ হয় না? কার্গিল যাওয়ার পথেই পড়বে বিশ্বের দ্বিতীয় শীতলতম বাসযোগ্য স্থান দ্রাস।
০৯২৬
তার পর দিন কার্গিল থেকে যাত্রা শুরু করে চলে যান শ্রীনগর-লেহ্। জাতীয় সড়ক দিয়ে পৌঁছে যান লেহ্। আনুমানিক দূরত্ব ৪০০ কিলোমিটার।
১০২৬
পরের দিন ঘুরে নিন লেহ্ শহরের চার দিক। যার মধ্যে রয়েছে ‘শান্তিস্তূপা’। দেখে নিন সেখানকার জনজীবনের একান্ত ছবি। বাইকে রওনা হলে যে ছবি দেখার সুযোগ মিলবে বেশি। এজন্য আপনাকে প্রয়োজনীয় পারমিটের ব্যবস্থা করতে হবে।
১১২৬
পরের দিন সকালে বেরিয়ে পড়ুন অচেনা জায়গার উদ্দেশে। যে জায়গায় হয়তো আপনার আগে বাইক নিয়ে কেউই যাননি। ফলে সে দিক থেকে দেখতে গেলে এই অভিজ্ঞতা হবে একেবারে নতুন। অভিনব।
১২২৬
শীতকালে এই স্থানের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা হয় হিমাঙ্কের নিচে ৬০ ডিগ্রি। সারা বছর তাপমাত্রা থাকে হিমাঙ্কের নিচে।
১৩২৬
আকসাই চিন এবং পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরকে পৃথক করছে সিয়াচেন। যে কারণে ভারতের ভূ-রাজনৈতিক দিক থেকে এই স্থানের গুরুত্ব অপরিসীম।
১৪২৬
নিরাপত্তার কারণে দীর্ঘ দিন এই স্থান পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত ছিল না। সম্প্রতি এই স্থান পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে।
১৫২৬
কী ভাবে যাবেন? লেহ্ থেকে প্রথমে যেতে হবে খার্দুংলা। এক সময় খার্দুংলা ছিল বিশ্বের সর্বোচ্চ যান চলাচলের রাস্তা।
১৬২৬
খার্দুংলা থেকে খার্দুং গ্রাম হয়ে যেতে হবে নুব্রা উপত্যকায়।
১৭২৬
নুব্রা থেকে ওয়ারশি গ্রাম হয়ে আপনি পৌঁছবেন সেনা ছাউনিতে।
১৮২৬
সেনা ছাউনিতে ১৫ জন পর্যটকের জমায়েত হতে হবে। তবেই সিয়াচেন বেসক্যাম্প যাওয়ার ছাড়পত্র মিলবে।
১৯২৬
এই রাস্তাটির পুরোটাই মরুভূমিসদৃশ এবং জনপদহীন। ফাঁকা রাস্তার দু’দিকে পাহাড়। নুব্রা নদীর পাশ দিয়ে এই রাস্তা চলেছে সিয়াচেনের দিকে।
২০২৬
এই স্থানে একটি তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে। যেখানে লেখা, সিয়াচেন আপনাকে স্বাগত জানাচ্ছে। এই স্থান থেকেই দূরে দেখা যায় সিয়াচেন হিমবাহ।
২১২৬
সিয়াচেনে যাওয়ার আগে কতগুলো বিষয় মাথায় রাখা জরুরি। সিয়াচেন হিমবাহে অক্সিজেনের মাত্রা সমতলের প্রায় দশ শতাংশ। তাই পৌঁছনোর পরই কমতে থাকে ওজন। বমি হওয়ার পাশাপাশি খিদে থাকে না একেবারেই।
২২২৬
এই উচ্চতায় কোনও মানুষের বেঁচে থাকাটাই বিস্ময়ের। বিজ্ঞানের নিজস্ব নিয়মেই, পাঁচ হাজার মিটারের উপর শরীর পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারে না। এই উচ্চতায় পর্বতারোহীরা যান, কিন্তু আবহাওয়া ভাল থাকলে তবেই পাহাড়ে ওঠেন তাঁরা। কিন্তু সেনাবাহিনীকে থাকতে হয় সারা বছর। ফলে এখানে যাওয়ার আগে নিজের শারীরিক সক্ষমতা সম্পর্কে সচেতন হয়েই যাবেন।
২৩২৬
মনে রাখতে হবে, সিয়াচেনের ঝড় বড়ই ভয়ঙ্কর। সিয়াচেনে নিয়মিত ঘণ্টায় একশো মাইল বেগে ঝড় ওঠে। কখনও কখনও এই ঝড় টানা তিন সপ্তাহ স্থায়ী হয়। তুষারঝড়ে এই দীর্ঘ সময় ধরে পাঁচ হাজার মিটার উচ্চতায় কোনও মানুষের বেঁচে থাকার নজির খুবই কম।
২৪২৬
সিয়াচেনে খুবই কষ্ট করে থাকতে হয় সেনাদের। তুষার ঝড়ের সময় সেনা তাঁবুতে বসে থাকারও কোনও উপায় নেই। কারণ, তাহলে পুরো শিবিরই চলে যাবে বরফের তলায়। ঝড়ের মধ্যেই বেলচা হাতে নিয়ে বরফ সাফ করতে হয় সেনাদের। সারা বছরে সিয়াচেনে প্রায় ৩০-৪০ ফুট গভীরতার বরফ পড়ে । মাসের পর মাস স্নান না করে থাকেন ভারতীয় সেনারা। স্নান করলেই দুরারোগ্য ব্যধিতে আক্রান্ত হওয়া প্রায় নিশ্চিত।
২৫২৬
অক্সিজেন কম থাকায় স্মৃতি চলে যায় অনেক সেনার। এই শিবিরে একবার থাকলে সমতলে ফিরে আসার পরও স্বাভাবিক হয় না শরীর। তাপমাত্রা অত্যন্ত কম থাকায় শরীরে থাবা বসায় তুষারক্ষত। হাত-পা-আঙুল হারানোর ঘটনার নজির খুব একটা কম নয়। বিশেষ ভাবে তৈরি দস্তানা না পরে বন্দুকের ধাতব অংশ স্পর্শ করলেও থাবা বসাতে পারে তুষারক্ষত।
২৬২৬
তবে এতদ্সত্ত্বেও সিয়াচেনের অন্য সৌন্দর্য রয়েছে। যে সৌন্দর্যে মুগ্ধ হতে ইতিমধ্যেই সেখানে পাড়ি দিচ্ছেন পর্যটকরা।