Hindenburg Research to Kenia electricity project here is a timeline of charges against Adani group dgtl
Adani Group Charges
হিন্ডেনবার্গ, কেনিয়ায় বিমানবন্দরের পর ঘুষকাণ্ড! ২২ মাসে তিন বার ধাক্কা খেলেন আদানি
গত বছরের (পড়ুন ২০২৩) জানুয়ারি থেকে এ বছরের নভেম্বর। কখনও হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ, কখনও আবার কেনিয়ার আদালত। বিভিন্ন জায়গায় ধাক্কা খেয়েছেন শিল্পপতি গৌতম আদানি।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতাশেষ আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০২৪ ০৯:৪৯
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৮
দেশের সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পের বরাত পেতে সরকারি আধিকারিকদের কোটি কোটি টাকা ঘুষের প্রস্তাব! এ হেন অভিযোগে বিদ্ধ আদানি গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান তথা ভারতের ধনকুবের শিল্পপতি গৌতম আদানি। তবে এ বারই প্রথম নয়। গত এক বছরে একাধিক বার গায়ে দুর্নীতির কালির ছিটে পড়েছে নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহের রাজ্য গুজরাতের এই ভূমিপুত্রের।
০২১৮
গত বছরের (পড়ুন ২০২৩ সাল) ২৪ জানুয়ারি আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে প্রথম বার শেয়ারে জালিয়াতির অভিযোগ আনে আমেরিকার সংস্থা ‘হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ’। এই নিয়ে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে তারা। সেখানে গৌতম আদানির বিরুদ্ধে বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ারদর ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে দেখানোর কথা উল্লেখ করেছিল সংশ্লিষ্ট সংস্থা।
০৩১৮
হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের ওই রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসতেই হু-হু করে পড়তে থাকে আদানিদের যাবতীয় সংস্থার স্টকের দাম। মুহূর্তে শেয়ার বাজার থেকে উবে যায় তাদের ১০ হাজার কোটি টাকা। বিশ্বের ধনকুবেরদের তালিকায় বেশ কয়েক ধাপ নীচে নেমে যান গৌতম আদানি।
০৪১৮
যুক্তরাষ্ট্রের সংস্থাটির তোলা অভিযোগের উপর ভিত্তি করে গত বছরের (পড়ুন ২০২৩ সাল) ১ মার্চ সুপ্রিম কোর্টে দায়ের হয় মামলা। তিন সদস্যের কমিটিকে এর তদন্তের নির্দেশ দেয় শীর্ষ আদালত। এর নেতৃত্বে ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এএম সাপ্রে। বাকি দু’জন হলেন কেভি কামাত এবং নন্দন নীলেকানি। শেয়ার বাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা ‘সিকিউরিটিজ় অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অফ ইন্ডিয়া’কেও (সেবি) আলাদা করে তদন্ত করতে বলে সুপ্রিম কোর্ট।
০৫১৮
২০২৩ সালের ৮ মে শীর্ষ আদালতে রিপোর্ট জমা করে সাপ্রে কমিটি। সেখানে শেয়ারদর ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে দেখানোর কোনও প্রমাণ মেলেনি বলে উল্লেখ করা হয়। ধীরে ধীরে স্টক মার্কেটে আদানি গোষ্ঠীর সংস্থাগুলির দর চড়তে শুরু করে। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন গৌতম আদানিও।
০৬১৮
এর পর সুপ্রিম কোর্টে তদন্ত রিপোর্ট জমা করে সেবিও। সেখানে আদানি গোষ্ঠীর স্টক নিয়ে ২২টি চূড়ান্ত এবং দু’টি অন্তর্বর্তী তদন্ত করা হয়েছে বলে জানায় এই কেন্দ্রীয় সংস্থা। আদানি গোষ্ঠীর শেয়ারে লগ্নি করা বিদেশি বিনিয়োগকারীদের ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে বলেও জানিয়ে দেয় সেবি। রিপোর্টে কোথাও শিল্পপতি আদানির সংস্থাকে ‘দুর্নীতিগ্রস্ত’ বলে উল্লেখ করেনি তারা।
০৭১৮
সুপ্রিম কোর্টে সেবির রিপোর্ট দাখিলের তারিখ ছিল ২০২৩ সালের ২৫ অগস্ট। ওই সময়ে এই ইস্যুতে তদন্ত চালিয়েছিল আমেরিকার সরকারি সংস্থা ‘ডেভেলপমেন্ট ফিন্যান্স কর্পোরেশন’। সেখানেও ক্লিনচিট পান শিল্পপতি আদানি। তাঁর সংস্থা ‘আদানি পোর্টস্’-এর বিরুদ্ধে হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ যে অভিযোগ এনেছিল, তা ভিত্তিহীন বলে জানিয়ে দেয় যুক্তরাষ্ট্রের তদন্তকারী সংস্থা।
০৮১৮
২০২৩ সালের ৫ ডিসেম্বর আমেরিকার ‘ডেভেলপমেন্ট ফিন্যান্স কর্পোরেশন’ ক্লিনচিট দেয় আদানিদের। চলতি বছরের জুনের মধ্যে লোকসানের পুরো টাকাটাই বাজার থেকে তুলতে সক্ষম হন তাঁরা। অন্য দিকে ভারতীয় আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে হিন্ডেনবার্গ রিসার্চকে নোটিস ধরায় সেবি। এ বছরের ২ জুলাই সেই নোটিস পাওয়ার কথা স্বীকার করে নেয় আমেরিকার সংস্থা।
০৯১৮
কিন্তু এর পরই অগস্টে নতুন করে বোমা ফাটায় হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ। আদানিদের টাকা সরানোর পিছনে সেবির চেয়ারম্যান মাধবী পুরী বুচের হাত রয়েছে বলে দাবি করে বসে এই আমেরিকান সংস্থা। এই নিয়ে এক্স হ্যান্ডলে (সাবেক টুইটার) একটি পোস্টও করে তারা। ফলে নতুন করে শুরু হয় জলঘোলা। তদন্তের মুখে পড়েন বুচ।
১০১৮
সেবির প্রধানের বিরুদ্ধে হিন্ডেনবার্গের ওই অভিযোগে অবশ্য আদানিদের তেমন কোনও ব্যবসায়িক লোকসান হয়নি। এ বছর কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবিতে জ়োমো কেনিয়াট্টা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর চুক্তিভিত্তিক অধিগ্রহণের কথা ছিল এই শিল্পগোষ্ঠীর। কিন্তু গত অক্টোবরে সেই চুক্তি বাস্তবায়নে সাময়িক স্থগিতাদেশ জারি করে দেশটির স্থানীয় একটি আদালত। ফলে পূর্ব আফ্রিকার দেশটিতে ধাক্কা খায় গৌতম আদানির ব্যবসা।
১১১৮
কেনিয়ার সঙ্গে ওই চুক্তি বাস্তবায়িত হলে আগামী ৩০ বছরের জন্য নাইরোবি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের মালিকানা থাকত ভারতীয় শিল্পগোষ্ঠীটির হাত। পূর্ব আফ্রিকার উড়ান কর্মীদের অবশ্য দাবি, কেনিয়ার সরকার দেশের অন্যতম বড় ও গুরুত্বপূর্ণ এই বিমানবন্দরটিকে পুরোপুরি বেসরকারি সংস্থার হাতে তুলে দিতে চায়। এ প্রসঙ্গে শ্রমিক ইউনিয়ন বলেছে, আদানির সঙ্গে চুক্তির ফলে চাকরি হারাতে হবে অনেক কেনীয় শ্রমিককে। এর ফলে কাজে যোগ দেওয়ার সুযোগ বাড়বে বিদেশি শ্রমিকদের।
১২১৮
অন্য দিকে বিষয়টি নিয়ে মুখ খোলে কেনিয়ার সরকার। তাঁদের দাবি, বিমানবন্দর বিক্রি করা হচ্ছে না। শুধু তা-ই নয়, বিমানবন্দর সংস্কার চুক্তির ব্যাপারে চূড়ান্ত কোনও সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়নি। এটি আসলে একটা সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগ। বিমানবন্দর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব কার হাতে থাকবে তা-ও চূড়ান্ত নয়। ৩০ বছরের মেয়াদে আদানি এয়ারপোর্টের সঙ্গে ১৫ হাজার ৫২৬ কোটি টাকার চুক্তি করেছিল কেনিয়া সরকার।
১৩১৮
এ বছরের অক্টোবরে বিমানবন্দরের পর আদানি গোষ্ঠীর বিদ্যুৎ প্রকল্পের উপরেও স্থগিতাদেশ জারি করে কেনিয়ার আদালত। ‘আদানি এনার্জি সলিউশন্স’-এর সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে বিদ্যুৎ পরিকাঠামো প্রকল্প গড়ে তোলার কথা ছিল পূর্ব আফ্রিকার দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার। কিন্তু আদালতের রায়ে ধাক্কা খায় সেই চুক্তি।
১৪১৮
আদানি গোষ্ঠীর সঙ্গে ‘কেনিয়া ইলেকট্রিক্যাল ট্রান্সমিশন কোম্পানি’র (কেট্রাকো) চুক্তি হয়েছিল। এই প্রকল্পের জন্য আদানি এনার্জিকে ৭৩ কোটি ৬০ লক্ষ ডলার দিতে রাজি ছিল পূর্ব আফ্রিকার দেশটির সরকার। পরিকাঠামো প্রকল্পের মধ্যে ‘ট্রান্সমিশন লাইন’ তৈরির কথা ছিল আদানি গোষ্ঠীর। আদালতের রায়ে যা অনির্দিষ্ট কালের জন্য ঠান্ডা ঘরে গিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
১৫১৮
কেট্রাকো এবং আদানি গোষ্ঠীর মধ্যে হওয়া চুক্তি নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিল কেনিয়া ল’ সোসাইটি। চুক্তিটির শর্ত কর্মীদের সাংবিধানিক অধিকারের পরিপন্থী বলে অভিযোগ তোলে তারা। পাশাপাশি, নানা কারণে তা গোপনীয়তার দোষে দুষ্ট বলেও দাবি করা হয়। চলতি বছরের ২৬ অক্টোবর এই মামলার রায় ঘোষণা করে কেনিয়ার হাই কোর্ট।
১৬১৮
কেনিয়ার ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই ফের আর্থিক কেলেঙ্কারির অভিযোগ উঠল এই শিল্পগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে। এ দেশের সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য সরকারি আধিকারিকদের ২ হাজার ২৩৭ কোটি টাকা ঘুষের প্রস্তাব দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে গৌতম আদানির বিরুদ্ধে। তাঁর সংস্থা ‘আদানি গ্রিন এনার্জি’-এর বোর্ড সদস্য তথা ভাইপো সাগর আদানি এবং সিইও বিনীত জৈনের বিরুদ্ধেও একই অভিযোগ রয়েছে।
১৭১৮
এই ঘটনায় আদানিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে আমেরিকার আদালত। অভিযুক্তদের তালিকায় নাম রয়েছে রঞ্জিত গুপ্ত, রূপেশ আগরওয়াল, অস্ট্রেলিয়া ও ফ্রান্সের নাগরিক সিরিল ক্যাবানেস, সৌরভ আগরওয়াল এবং দীপক মলহোত্রের।
১৮১৮
উল্লেখ্য, ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতেই তাঁকে শুভেচ্ছা জানিয়ে সমাজমাধ্যমে পোস্ট করেন শিল্পপতি আদানি। শুধু তা-ই নয়, যুক্তরাষ্ট্রে পুনর্ব্যবহারযোগ্য শক্তির ক্ষেত্রে বিপুল লগ্নির কথা ঘোষণা করেন তিনি। কিন্তু তার পরই আর্থিক কেলেঙ্কারির অভিযোগ ওঠায় আমেরিকার বাজারে বন্ড ছাড়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে আদানি গ্রিন এনার্জি।