Advertisement
০১ জুলাই ২০২৪
Hope Diamond

২০৮৭ কোটি টাকার ‘অভিশপ্ত হিরে’! ভারত থেকে কী ভাবে গেল আমেরিকায়?

কোহিনূরের মতো ‘হোপ ডায়মন্ড’ নামে এক রত্ন নিয়েও কৌতূহল রয়েছে অনেকের মনেই। এই হিরের সঙ্গে জড়িয়ে আছে অনেক অভিশপ্ত গল্প।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ জুন ২০২৪ ১৪:০০
Share: Save:
০১ ২৪
How this Rs 2087 crore cursed diamond reach US from India

ভারতকে এক সময় রত্নভান্ডার বলা হত। সোনা-রুপো থেকে হিরের সম্ভার দেখলে চোখ ধাঁধিয়ে যেত। শুধু তা-ই নয়, আরও অন্যান্য মূল্যবান রত্নও ছিল ভারতে। কিন্তু অতীতে ব্রিটিশ, ফরাসি, পর্তুগিজরা বিভিন্ন সময়ে ভারতে এসে লুটপাট না চালালে এই দেশকে হয়তো ‘সোনার পাখি’ বলা হত।

০২ ২৪
How this Rs 2087 crore cursed diamond reach US from India

বহু বিদেশি শক্তি ভারত থেকে নানা মূল্যবান রত্ন নিয়ে চলে গিয়েছে। ভারতের খুবই কম মন্দির এবং রাজকোষ ছিল, যেখানে বিদেশি শক্তি হানা দেয়নি। কোহিনুর হিরের গল্প সকলের জানা। কোহিনুরের মতো ‘হোপ ডায়মন্ড’ নামে এক রত্ন নিয়েও কৌতূহল রয়েছে অনেকের মনেই। এই হিরের সঙ্গে জড়িয়ে আছে অনেক অভিশপ্ত গল্প।

০৩ ২৪
How this Rs 2087 crore cursed diamond reach US from India

তবে সেই হিরের বাহার, রং, শোভা দেখলে মন ভরে যায়। অনেক দেশ ঘুরে এই হিরে এখন আমেরিকার এক সংগ্রহশালায় রয়েছে। একটি সূত্রের দাবি, এই হিরের বর্তমান মূল্য ভারতীয় মুদ্রায় ২০৮৬ কোটি টাকারও বেশি।

০৪ ২৪
How this Rs 2087 crore cursed diamond reach US from India

‘হোপ ডায়মন্ড’ নামে এই হিরে প্রথমে ‘ফ্রেঞ্চ ব্লু’ নামে পরিচিত ছিল। এই হিরের আসল সৌন্দর্য লুকিয়ে আছে তার নীলাভ আভায়। নয় গ্রামের এই হিরে নিয়ে মানুষের মধ্যে কৌতূহলের সীমা নেই। ‘হোপ ডায়মন্ড’কে নিয়ে রয়েছে অনেক ‘অভিশপ্ত’ গল্প। কেউ কেউ বলেন, তা অনেকাংশেই সত্যি, আবার কেউ কেউ ফুৎকারে উড়িয়ে দেন।

০৫ ২৪
How this Rs 2087 crore cursed diamond reach US from India

অনেকের দাবি, এই হিরে অনেকের হাতে গিয়েছে। যে সময় এই হিরে যার কাছে ছিল, তখনই সেই মালিকের জীবনে ‘অভিশাপ’ ডেকে এনেছে। রেহাই পাননি ফ্রান্সের চতুর্দশ লুই কিংবা ইংল্যান্ডের চতুর্থ জর্জের মতো রাজারা। অনেক ব্যবসায়ীও এই হিরের প্রভাবে সর্বস্বান্ত হয়েছেন।

০৬ ২৪
How this Rs 2087 crore cursed diamond reach US from India

বলা হয়, এই হিরের উৎপত্তি আমাদের দেশেই। অন্ধ্রপ্রদেশের গুন্টুর জেলার কল্লুর খনিতে খননের সময় শ্রমিকদের কোদালের আঘাতে বেরিয়ে আসে এই হিরে। তখন নাকি এই হিরের ওজন ছিল ২৩ গ্রাম। ১১৫ ক্যারাটের এই বিশাল হিরের শোভা দেখে পাগল হয়ে গিয়েছিলেন অনেকেই।

০৭ ২৪
How this Rs 2087 crore cursed diamond reach US from India

১৬৪২ সালে ভারতে আসেন ফরাসি পর্যটক জঁ ব্যাপ্টিস্ট ট্যাভার্নিয়ের। অনেকে বলেন, তিনি শুধু পর্যটকই ছিলেন না, একজন গহনা ব্যবসায়ী ছিলেন। বিভিন্ন দেশ ঘুরে সংগ্রহ করতেন নানা মূল্যবান রত্ন। ভারতে ঘুরতে ঘুরতেই ওই নীলাভ হিরে খুঁজে পান ট্যাভার্নিয়ের।

০৮ ২৪
How this Rs 2087 crore cursed diamond reach US from India

ভারত থেকে ফ্রেঞ্চ ব্লু হিরে কিনে ফ্রান্সে ফেরেন ট্যাভার্নিয়ের। বিভিন্ন দেশ থেকে সংগ্রহ করা বিভিন্ন রত্নের সম্ভারের মধ্যে ছিল সেই হিরে। তৎকালীন ফ্রান্সের রাজা চতুর্দশ লুইয়ের কাছে সেটি বিক্রি করে দেন তিনি। রাজদরবারের অনেক নথিতে এই হিরের উল্লেখ আছে। রাজার মুকুটে এই নীলাভ হিরে শোভা পেত।

০৯ ২৪
How this Rs 2087 crore cursed diamond reach US from India

কথিত আছে, এই হিরে রাজার কাছে আসার পর থেকেই রাজার জীবনে নেমে আসে শোকের ছায়া। তাঁর অনেক সন্তানেরই নাকি অকালে মৃত্যু হয়। এমনকি শেষ পর্যন্ত রাজা লুইও রোগে ভুগে, যন্ত্রণা সহ্য করে মারা যান। উত্তরসূরি হিসাবে হিরে পঞ্চদশ লুইয়ের পর পান ষোড়শ লুই।

১০ ২৪
How this Rs 2087 crore cursed diamond reach US from India

ষোড়শ লুই এই হিরে তাঁর স্ত্রী মেরি অ্যান্তোনেটকে উপহার হিসাবে দেন। রানির নেকলেসে এই হিরে শোভাবর্ধন করে। কিন্তু লুইয়ের জীবনও সুখের কাটেনি। ফরাসি বিপ্লবের সময় রাজা এবং তাঁর পরিবার বন্দি হয়। সব সম্পত্তি চলে যায় বিপ্লবীদের কাছে। সেই রত্নভান্ডারে ছিল নীল হিরেটি।

১১ ২৪
How this Rs 2087 crore cursed diamond reach US from India

কিন্তু তার পর থেকে অনেক দিন পর্যন্ত এই হিরের সন্ধান কেউ পায়নি। কোথায় গেল, তা জানত না কেউই। আবার ১৮১৩ সালে লন্ডনের বাজারে হঠাৎই এই হিরে নিয়ে শোরগোল পড়ে যায়। কী ভাবে ফ্রান্স থেকে ওই হিরে ইংল্যান্ডে গেল তা জানা যায়নি। তখন ওই হিরের ওজন আরও অনেক কমেছে।

১২ ২৪
How this Rs 2087 crore cursed diamond reach US from India

যদিও ওই হিরেই ‘হোপ ডায়মন্ড’ কি না, তা নিয়ে অনেক বিতর্ক রয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত বিশ্বের একটি বড় মহল একে ‘হোপ ডায়মন্ড’ হিসাবে মেনে নেয়।

১৩ ২৪
How this Rs 2087 crore cursed diamond reach US from India

১৮২৩ সালে ব্রিটিশ ব্যবসায়ী ড্যানিয়েল অ্যালিসনের কাছে ওই হিরের সন্ধান পাওয়া যায়। তবে তিনি হিরে বিক্রি করে দেন ইংল্যান্ডের রাজপরিবারে। তৎকালীন ইংল্যান্ডের রাজা চতুর্থ জর্জের কাছে চলে যায় হিরেটি।

১৪ ২৪
How this Rs 2087 crore cursed diamond reach US from India

চতুর্থ জর্জ ওই হিরে পাওয়ার পরে বেশি দিন সুখে থাকতে পারেননি। শেষ জীবনে দেনার দায়ে জর্জরিত হয়ে যান তিনি। শোনা যায়, পাওনাদারদের টাকা মেটাতে নাকি সেই হিরে এক সময় বিক্রি করতে বাধ্য হন চতুর্থ জর্জ। তবে তিনি কার কাছে ওই হিরে বেচে দেন, তা নিয়ে রহস্যই রয়েছে।

১৫ ২৪
How this Rs 2087 crore cursed diamond reach US from India

রাজার মৃত্যুর পর থেকে আবার ওই হিরে অন্তরালে চলে যায়। ১৮৩৯ সালে ধনকুবের হেনরি ফিলিপ হোপের সংগ্রহশালাতে দেখতে পাওয়া যায় হিরেটিকে। তাঁর নামেই ওই হিরে নাম হয় ‘হোপ ডায়মন্ড’।

১৬ ২৪
How this Rs 2087 crore cursed diamond reach US from India

হেনরি অবিবাহিত ছিলেন। তাই ওই হিরের মালিকানা যায় তাঁর ভাগ্নে টমাস হোপের কাছে। তার পর কয়েক প্রজন্মের হাত ঘুরে ওই হিরে ফ্রান্সিস হোপের কাছে আসে। তবে জুয়াই ফ্রান্সিসের জীবনে অন্ধকার ডেকে আনে। শেষ পর্যন্ত ওই হিরে বেচতে হয় তাঁকে।

১৭ ২৪
How this Rs 2087 crore cursed diamond reach US from India

পরে জানা যায় ‘হোপ ডায়মন্ড’ চলে যায় নিউ ইয়র্কের ব্যবসায়ী সাইমন ফ্র্যাঙ্কেলের কাছে। তিনি তুরস্কের সংগ্রাহক সেলিম হাবিব সাইমনের থেকে ওই হিরে কিনে নেন। তাঁকে টাকা জুগিয়েছিলেন তুরস্কের তৎকালীন সুলতান আব্দুল হামিদ। যদিও শেষ জীবন কষ্টে কাটে তাঁর। হিরেটিকে নিলামে তুলতে বাধ্য হন।

১৮ ২৪
How this Rs 2087 crore cursed diamond reach US from India

তার পর কয়েক হাত ঘুরে ১৯১০ সালে ‘হোপ ডায়মন্ড’ কিনে নেন পিয়েরে কার্টিয়ের। তিনিই এই হিরের সঙ্গে জড়িয়ে দেন নানা ‘অভিশাপে’র গল্প। রটে যায়, চতুর্দশ লুইয়ের যন্ত্রণাদায়ক মৃত্যু, এবং গিলোটিনে ষোড়শ লুই আর স্ত্রী মেরির প্রাণদণ্ড, রাজা জর্জের দারিদ্র, ফ্রান্সিস হোপের দেনা — সবই নাকি এই হিরের জন্যই!

১৯ ২৪
How this Rs 2087 crore cursed diamond reach US from India

পিয়েরে সেই হিরে নিয়ে আবার চলে যান আমেরিকায়। সেখানকার অভিজাত সমাজের এক ব্যবসায়ী ইভিলিন ম্যাকলিনকে ওই হিরে বিক্রি করতে চান পিয়েরে। অনেক কাঠখড় পোড়ানোর পর ‘হোপ ডায়মন্ড’ ইভিলিন এবং তাঁর স্বামী নেড ম্যাকলিনকে বিক্রি করতে সক্ষম হন তিনি। ১৯১২ সালে হিরের হাতবদল হয়।

২০ ২৪
How this Rs 2087 crore cursed diamond reach US from India

ইভিলিনের কাছে ওই হিরে ছিল গর্বের বিষয়। পিয়েরের শোনানো ‘অভিশাপে’র গল্প বলে বেড়াতেন সকলকে। কথিত আছে, তাঁর জীবনেও একটা বিপর্যয় নেমে এসেছিল। মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েন তিনি। এমনকি মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয় তাঁকে। সেখানেই মৃত্যু হয় তাঁর।

২১ ২৪
How this Rs 2087 crore cursed diamond reach US from India

১৯৪৭ সালে ইভিলিনের মৃত্যুর পর তাঁর সমস্ত সম্পত্তি নিলামে তোলা হয়। হ্যারি উইনস্টন ইনকর্পোরেট নামে এক সংস্থা ‘হোপ ডায়মন্ড’ কিনে নেয়। তার পর এক দশক পর ১৯৫৮ সালের ১০ নভেম্বর হিরেটি আসে ওয়াশিংটনের স্মিথসোনিয়ান মিউজ়িয়ামে। সেই থেকে সেখানেই আছে সেটি।

২২ ২৪
How this Rs 2087 crore cursed diamond reach US from India

জানা গিয়েছে, সেই থেকে এখনও পর্যন্ত মাত্র চার বার হিরেটিকে মিউজিয়ামের বাইরে বার করা হয়েছে। বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন উৎসবে শোভা পেয়েছে হিরেটি।

২৩ ২৪
How this Rs 2087 crore cursed diamond reach US from India

তবে ‘হোপ ডায়মন্ড’-এর সঙ্গে জড়িত সব গল্প বিশ্বাস করতে রাজি নন স্মিথসোনিয়ান মিউজিয়াম কর্তৃপক্ষ। ওই মিউজিয়ামের এক গবেষক রিচার্ড কিউরিনের মতে, সব গল্পই ভুয়ো। আর পিয়েরের মস্তিষ্কপ্রসূত।

২৪ ২৪
How this Rs 2087 crore cursed diamond reach US from India

এখন এই হিরেটিকে নেকলেসের আকার দিতে তার সঙ্গে ১৬ টি সাদা হিরে জোড়া হয়েছে। স্মিথসোনিয়ান মিউজিয়াম কর্তৃপক্ষের মতে, ওই হিরে তাঁদের কাছে আসার পর থেকে তাঁরা উপকৃত হচ্ছেন। প্রতি বছর ৭০ লাখ মানুষ এটি দেখতে আসেন।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement

Share this article

CLOSE