কিন্তু ভাবার মৃত্যু নিয়ে দানা বেঁধেছিল নানা বিতর্ক। অনেকে মনে করেন, নিছক বিমান দুর্ঘটনা নয়, তাঁর মৃত্যুর নেপথ্যে ছিল পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র। তৎকালীন বিশ্ব রাজনীতির সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ শক্তিতে তিনি ভারতকে সমৃদ্ধ করতে চেয়েছিলেন। তাঁর এই প্রয়াস নাকি তৎকালীন ক্ষমতাবান রাষ্ট্রগুলির চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সেই কারণেই তাঁকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে বলে মনে করেন অনেকে।
১৯৬১ সালে চিনের সঙ্গে যুদ্ধে ভারতের পরাজয়ের পর পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্র হিসাবে ভারতকে গড়ে তুলতে উঠে পড়ে লাগেন ভাবা। ১৯৬৩ সালে রাজস্থানে ভারতের প্রথম পারমাণবিক শক্তি কেন্দ্র স্থাপনের বিষয়ে আন্তর্জাতিক চুক্তি হয়। চুক্তির শর্তে বলা হয়েছিল, যুদ্ধ বা কোনও রকম সামরিক ক্রিয়াকলাপে এই শক্তি কাজে লাগাতে পারবে না ভারত।
ফরাসি সরকারের তরফে এই বিমান দুর্ঘটনার যে রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়, তাতে বলা হয়েছিল, যান্ত্রিক গোলযোগের কারণে দুর্ঘটনা হয়। যে যন্ত্রের মাধ্যমে বিমান থেকে মাটির উচ্চতা নির্ণয় করা হয়, তাতে ত্রুটি ছিল। বিমান থেকে চালক কন্ট্রোল রুমে জানিয়েছিলেন, মাটি থেকে তাঁদের উচ্চতা ১৯ হাজার ফুট। সর্বোচ্চ শৃঙ্গ থেকে সে উচ্চতা ৩ হাজার ফুট বেশি। চালকের কথা শুনে বিমান নামাতে বলা হয় কন্ট্রোল রুম থেকে। তার পরেই ঘটে বিপত্তি।
২০০৮ সালে আমেরিকান গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ-র এক এজেন্টের প্রকাশিত সাক্ষাৎকারে ষড়যন্ত্রের তত্ত্ব জোরদার হয়। সেখানে বলা হয়েছিল, ভারতের পরমাণু শক্তি চর্চায় আমেরিকা খুব একটা খুশি হতে পারেনি। ১৯৪৫ সাল থেকে পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্র হিসাবে একারই রাজত্ব ছিল আমেরিকার। ১৯৬৪ সালে এই শক্তির অধিকারী হয় চিন এবং রাশিয়াও। তার পর ১৯৬৫ সালে ভাবা সাক্ষাৎকারে জানান, তিনিও পরমাণু বোমা তৈরি করতে সক্ষম।
২০১৭ সালে মঁ ব্লাঁ অঞ্চলে তল্লাশি চালান ড্যানিয়েল রাউশ নামে এক ফরাসি ব্যবসায়ী। বিমান দুর্ঘটনা বিষয়ে ব্যক্তিগত তদন্ত করা তাঁর শখ। রাউশ জানান, সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে তিনি একটি বিমানের ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পান, যার ককপিটে একটি পিস্তল, ক্যামেরা ও বেশ কিছু কাগজপত্র পাওয়া যায়। তবে রাউশের মতে, ভাবার বিমান দুর্ঘটনার পিছনে অন্য বিমানের সঙ্গে ধাক্কা লাগার বিষয়টি সত্য।
আজও হোমি ভাবার মৃত্যু রহস্যাবৃত। ১৯৬৬ সালেরই ১১ জানুয়ারি তৎকালীন সোভিয়েত রাশিয়ার তাসখন্দে ভারতের সেই সময়কার প্রধানমন্ত্রী লাল বাহাদুর শাস্ত্রী প্রয়াত হন। লাল বাহাদুরের মৃত্যুও রহস্যাবৃত বলে দাবি অনেকেরই। এর পক্ষ কালের মধ্যেই হোমি ভাবার মৃত্যুকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে দেখতে রাজি নন বহু মানুষ। লাল বাহাদুর বা হোমি ভাবা— কারও মৃত্যুরহস্যের কিনারাই আজ পর্যন্ত হয়নি বলে দাবি তাঁদের। আজও এই দুই মানুষের মৃত্যুকে ঘিরে ষড়যন্ত্র তত্ত্বে বিশ্বাসীরা খাড়া করে চলেছেন একের পর এক সম্ভাব্য যুক্তি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy